রাজনৈতিক ভাষার একটা কাজ হচ্ছে সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করা। এ কাজ সবচেয়ে ভালো করতে সক্ষম দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীরা। তাঁরা জনপ্রিয়, সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজার পক্ষ নিয়ে তেমন কোনো বুদ্ধিজীবী যখন কলম ধরেন, তা তিনি কবি, সাংবাদিক বা অভিনেতা যা–ই হোন, তাঁর কথা লোকে মন দিয়ে শোনে, সে কথায় আস্থা স্থাপন করে। তাঁদের ওকালতিতে শুধু মিথ্যা নয়, ঠান্ডা মাথার গুম-খুনও পার পেয়ে যায়।
কথাটা আমার নয়, জর্জ ওরওয়েলের। অ্যানিমেল ফার্ম নামের প্রহসনে তিনি ব্যাপারটা আমাদের হাতে-কলমে ধরিয়ে দিয়েছেন। অন্য আরেক স্মরণীয় গ্রন্থ ১৯৮৪-তেও বুদ্ধিজীবীরা কীভাবে স্বৈরাচারকে আগলে রাখে, তার সবিস্তার বিবরণ দিয়েছেন তিনি। উভয় গ্রন্থেই মুখ্যত স্তালিনের সোভিয়েত আমলের কথা তিনি বলেছেন, কিন্তু তাঁর সে কথা পৃথিবীর যেকোনো স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বেলাতেই প্রযোজ্য। এ অভিজ্ঞতা আমাদের বাংলাদেশেও।
শূকরপাল ও তাদের নেতাদের গল্প
অ্যানিমেল ফার্ম এক শূকরের খোঁয়াড় নিয়ে গল্প, যার বাসিন্দারা খোঁয়াড়মালিক মিস্টার জোন্সের নিষ্ঠুর ব্যবহারে অতিষ্ঠ। খামারের পুরোনো বাসিন্দা ওল্ড মেজর, সে প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ। অন্য শূকরদের ডেকে সে বোঝায়, তাদের বর্তমান হতদরিদ্র দশার কারণ মি. জোন্স। অবস্থা বদলাতে হলে এই লোকের কবজা থেকে মুক্ত হতে হবে। তার প্রেরণায় খামারের শূকরেরা এক সফল বিদ্রোহে মি. জোন্সকে তাড়িয়ে খোঁয়াড়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় খোঁয়াড়ের দুই চতুর শূকর—স্নোবল ও নেপোলিয়ন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই এই দুজনের মধ্যে নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। অধিক চতুর নেপোলিয়ন তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্নোবলকে তাড়িয়ে দেয়।
খামারের অন্য সদস্যরা টিকে থাকার জন্য নেপোলিয়নের কর্তৃত্ব মেনে নেয়। তার নেকনজর ও বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এ কাজে সবচেয়ে এগিয়ে থাকে স্কুইলার নামের এক শূকর। তার দায়িত্ব ছিল খামারের নতুন নেতা নেপোলিয়নকে নিয়ে সত্য-মিথ্যা গল্প বানিয়ে অন্য শূকরদের প্রভাবিত করা।
১৯৮৪ গ্রন্থে ওরওয়েল যে মিনিস্ট্রি অব ট্রুথের কথা লেখেন, স্কুইলার হচ্ছে সে মিনিস্ট্রির সেরা খাদেম। তার নেতৃত্বে নতুন যে প্রচার-ভাষার জন্ম হয়, ওরওয়েল তাকেই নিউজস্পিক নাম দিয়েছিলেন। যে অনুগত বুদ্ধিজীবীদের কথা গোড়ায় বলেছি, স্কুইলার তাদেরই একজন।
বোঝা কঠিন নয়, এই রূপকের ওল্ড মেজর কার্ল মার্ক্স ও লেনিন, যাঁরা এক শোষণহীন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্নোবল সম্ভবত ট্রটস্কি ও অন্যান্য কমিউনিস্ট নেতা, যাঁরা লেনিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন সোভিয়েত সমাজ গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। আর নেপোলিয়ন অবশ্যই স্তালিন, যাঁর ক্ষমতার ক্ষুধার বলি হয়েছিলেন ট্রটস্কির মতো অসংখ্য স্বপ্নতাড়িত মানুষ। নেপোলিয়ন নিজে নিজেই ওরওয়েলের শূকর খামারের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে বসেনি। তাকে সেই কাজে সাহায্য করেছে স্কুইলারের মতো অসংখ্য সেবক। বস্তুত স্কুইলার সেসব লেখক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতিনিধি, যাঁরা নগদ পাওনার লোভে চোখ বুজে, কখনো কখনো চোখ খুলে সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বানিয়েছেন।
ওরওয়েল বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা প্রশ্নে বারবার ফিরে গেছেন। আর তা মুখ্যত এই বেদনা থেকে যে বিশ শতকের প্রায় প্রতিটি বৃহৎ ট্র্যাজেডি, যেমন স্তালিনীয় একনায়কতন্ত্র ও হিটলারীয় নাৎসিবাদ—তার কোনোটাই সফল হতো না যদি বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে সক্ষম হতেন। তিনি এ বিষয়ে প্রবল সচেতন যে বিপ্লব বা ইতিবাচক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আবার তাঁরাই বা তাঁদের কেউ কেউ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একনায়কের রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। উভয় ক্ষেত্রেই, অর্থাৎ বিপ্লবপূর্ব ও বিপ্লবোত্তর সময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে ও বিপক্ষে তাদের হাতিয়ার কিন্তু একটাই—ভাষা।
ওরওয়েল তাঁর ‘নোটস অন ন্যাশনালিজম’ প্রবন্ধে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেছেন। সব সময়েই একদল বুদ্ধিজীবী মুখ উঁচিয়ে থাকেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হাত মেলাতে। আদর্শগতভাবে নৈকট্যের কারণে তাঁরা কোনো বাদবিচার ছাড়াই তাঁদের পছন্দের শাসকদের গুণকীর্তনে বিন্দুমাত্র অস্বস্তি অথবা বিবেকের তাড়না বোধ করেন না। প্রবল উষ্মা ও বিদ্রূপের সঙ্গে তিনি লিখেছেন, একমাত্র বুদ্ধিজীবীদের পক্ষেই সেসব গালগপ্প বলা বা বিশ্বাস করা সম্ভব। ‘নো অর্ডিনারি ম্যান কুড বি সাচ আ ফুল।’ অর্থাৎ কোনো সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এমন নির্বোধ হতে পারে না।
স্বৈরাচার তোষণকারী বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্লেষ ও বিদ্রূপ করেই ওরওয়েল অ্যানিমেল ফার্ম প্রহসনটি লিখেছিলেন, কিন্তু এর সঙ্গে গভীর বেদনা ও বঞ্চনার এক অলিখিত অধ্যায়ও জড়িয়ে আছে। বামপন্থী ও প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি নিজে একসময় স্তালিনীয় বন্দনায় অংশ নিয়েছিলেন। একই চেতনাবোধ থেকে ১৯৩৬ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক ব্রিগেডে নাম লিখিয়েছিলেন। সেই যুদ্ধের সময়েই তিনি স্তালিনীয় স্বৈরাচারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হন। এই যুদ্ধে ভিন্নমত পোষণের জন্য আন্তর্জাতিক ব্রিগেডের অনেক সদস্যই মস্কোপন্থী স্প্যানিশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হন। মস্কো নির্দেশিত নীতি অনুসরণে অনাগ্রহী অনেক কমরেড হতাহত হন। ১৯৩৭ সালে সংঘটিত ব্যাটল অব বার্সেলোনা সেই রক্তাক্ত ও লজ্জাকর ইতিহাসের সাক্ষী। এ অভিজ্ঞতাই ওরওয়েলকে স্বৈরাচারের পক্ষে ও বিপক্ষে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা প্রশ্নে সচেতন করে তোলে।
আমাদের শূকরের খোঁয়াড়
গল্পটা আমাদের খুব পরিচিত। জুলাই-আগস্টের গণজাগরণে বিতাড়িত শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরে আমরা অসংখ্য স্কুইলারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। স্বৈরশাসকের সমর্থনে তাঁর বলা গল্পটাই এই স্কুইলাররা আমাদের নানাভাবে, নানা ভঙ্গিতে শুনিয়েছেন। আমরা সে গল্প শুনেছি এবং বহুলাংশে বিশ্বাসও করেছি। কিন্তু আমরা লিঙ্কনের মাধ্যমে তো এই কথাও জানি যে কিছু লোককে অনন্তকাল বোকা বানানো যায়, অনেক লোককে কিছুদিনের জন্য বোকা বানানো যায়। কিন্তু সব লোককে অনন্তকাল বোকা বানিয়ে রাখা যায় না।
যেমন যায়নি বাংলাদেশে। আগামী দিনের গবেষক ও ছাত্ররা যখন লিঙ্কনের কথার প্রমাণ খুঁজতে ইতিহাসের পাতা হাতড়াবেন, তাঁরা নির্ঘাত বাংলাদেশের উদাহরণটিকেও হিসাবে আনবেন।
হাসিনা সরকারের পতনের দিন দশেক আগে বাংলাদেশের নামজাদা কয়েকজন সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা বিগত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন। এর দিন দু-এক আগে একদল প্রথম সারির বুদ্ধিজীবী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক বিবৃতিতে ছাত্র আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী চক্রান্তের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। প্রায় একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক উপাচার্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় অভিনবত্ব কিছুই নেই। স্বৈরাচারের ১৫ বছর অথবা তারও আগে আমরা অনুগত বুদ্ধিজীবীদের দেখেছি, যাঁরা বরাবর কথা ও যুক্তি দিয়ে আমাদের বুঝিয়েছেন, কেন এই স্বৈরাচার আমাদের নিজের স্বার্থেই প্রয়োজন। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এ পরিস্থিতিতে বড় রকমের পরিবর্তন আসে। এটা এমন এক সময়ের কথা, যখন ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাখির মতো নিহত হচ্ছে মানুষ। হেলিকপ্টার থেকে এলোপাথাড়ি ছোড়া হচ্ছে গুলি, মারা যাচ্ছে মায়ের কোলের শিশুকেও। এই অভাবিত হত্যাকাণ্ডে ভীত না হয়ে দেশের লাখ লাখ মানুষ স্বৈরাচারের পতন দাবি করে বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছেন।
স্বৈরাচারের শেষ সময়েও আমাদের এই সেরা বুদ্ধিজীবীরা জনতার দাবির যৌক্তিকতা ও তাঁদের প্রতিবাদের তীব্রতা টের পাননি। তাঁরা জনবিযুক্ত, এমন একটা অভিযোগ বরাবরই ছিল, কিন্তু তাঁরা যে জনতার পাশে দাঁড়ানোর বদলে স্বৈরাচারের পক্ষাবলম্বন শ্রেয় ভাববেন, সে কথা ভাবা কঠিন। এই বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে স্বৈরাচারের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন। অনুমান করি, তাঁরা হয়তো ধরে নিয়েছিলেন বিগত ১৫ বছরের মতো এবারও শক্তি প্রয়োগ করে স্বৈরাচারের পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে। হলো না, এর দিন কয়েকের মধ্যেই পতন ঘটে স্বৈরাচারী সরকারের।
জর্জ ওরওয়েল বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশের এই বুদ্ধিজীবীদের নিয়েই লিখতেন আরেক অ্যানিমেল ফার্ম। আমাদের এই শূকরের খোঁয়াড়ে কে হবেন স্নোবল, কে হবেন নেপোলিয়ন এবং কে বা কারা হবেন স্কুইলার, সে কথা অনুমান করা খুব কঠিন নয়। আমাদের বিবেক বলে যাঁদের ভেবেছি, যাঁদের কলমে রচিত হয়েছে বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের রূপরেখা ও বহিঃকাঠামো, সংকটের সময় তাঁদের জনতার মিছিলে পেলাম না। এর চেয়ে বড় পরিহাস, যাঁরা এ সরকারের সমর্থনে ‘সবকিছু করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেতু ভেঙে বানের জল প্রবেশ করতে না করতেই ভীতসন্ত্রস্ত সেই বুদ্ধিজীবীরা হয় দেশ ছেড়ে পালালেন, অথবা ইঁদুরের গর্তে লুকালেন। এই গল্প একই সঙ্গে বেদনার ও বঞ্চনার।
স্বৈরাচারের দোসর
স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ বা কর্তৃত্ববাদ—যে নামই তাকে দিই না কেন, বিগত সরকার বলতে বোঝাত দেশের সব ক্ষমতা এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া। এ ব্যবস্থাকে আমরা অলিগার্কিও বলতে পারি, যেমন আজকের রাশিয়ার পুতিন সরকার। নামমাত্র গণতান্ত্রিক হলেও এ এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে এক ব্যক্তিকে ঘিরে হাতে গোনা কয়েকজন ক্ষমতার প্রতিটি ক্ষেত্রের ওপর নিজেদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তাদের মূল লক্ষ্য দেশের আর্থিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন, তাকে নিয়ে যা খুশি করার অধিকার কবজা করা। সে জন্য চাই আইন ও বিচারব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ, তথ্যব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ, এমনকি মানুষের ভাবনাচিন্তার ওপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য।
ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা যত শক্তিধর ও বিত্তশালী হন না কেন, ক্ষমতার কেন্দ্রে যে একনায়ক ও তাঁর সঙ্গে যে হাতে গোনা গোষ্ঠীপতি, তাঁদের একার পক্ষে এই নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ অর্জন ও স্বচ্ছন্দ বিচরণ সম্ভব নয়। এর জন্য চাই বিস্তৃত একটি নেটওয়ার্ক, যাদের একটি বড় অংশ হলেন সেই সব মানুষ, যাঁদের আমরা সম্ভবত পরিহাসভরে বুদ্ধিজীবী বলে থাকি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন লেখক, সাংবাদিক, ও সংস্কৃতিকর্মী। তাঁদের কেউ কেউ যথার্থই প্রতিভাবান, কেউ কেউ হয়তো দেশের বাইরেও তাঁদের প্রতিভার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন।
স্বৈরাচারের কাছে এমন লোকের মূল্য অন্য সব ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা পেটোয়া বাহিনীর চেয়ে অধিক মূল্যবান। কারণ, তাঁরা যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে বোঝাতে সক্ষম, কেন এই স্বৈরাচার শুধু বৈধ ও ন্যায্য নয়, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কেন তা অপরিহার্য। গত ১৫ বছর আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ ঠিক এ কাজই করে গেছেন।
বুদ্ধিজীবীরা কেন জনগণের পাশে থাকার পরিবর্তে স্বৈরাচারের ঢাল হয়ে দাঁড়ায়? বিশ শতকে রুশ বিপ্লবের পর আমরা দেখেছি, মায়াকোভস্কি বা এরেনবুর্গের মতো প্রথিতযশা লেখক, যাঁরা তাঁদের নিকট বন্ধুদের ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে ঢলে পড়তে দেখেছেন, প্রকাশ্যে তা নিয়ে কথা না বলে বিপ্লবের নির্মমতাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন।
আরেক বিখ্যাত লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি, লেনিন বেঁচে থাকতে ঢালাও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান, কিন্তু স্তালিনের ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই স্বৈরশাসককে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে গেছেন। মার্টিন হাইডেগারের মতো দার্শনিক, অথবা লেনি রেফিনিস্তালের মতো চিত্রপরিচালককে হিটলারের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখেছি।
চীনা বিপ্লবের পর, বিশেষত তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর সীমাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা জেনেও তা নিঃশব্দে মেনে নিয়েছেন বা প্রকাশ্যে তাঁর পক্ষে সাফাই গেছেন সে দেশের প্রধান কবি গুয়ো মরু ও বিখ্যাত লেখক মাও দুন। পাকিস্তান আমলে সামরিক স্বৈরাচারকে স্বাগত জানিয়েছেন আলতাফ হোসেনের মতো যশস্বী সাংবাদিক। একই চিত্র একাত্তরের গণহত্যার সময়।
বুদ্ধিজীবী কেন স্বৈরাচারের পক্ষে
নোয়াম চমস্কির কথায়, বুদ্ধিজীবীদের একটা কাজ হলো সত্যের পক্ষে থাকা। আমি অন্য আরেকটি কাজের কথা বলব, তা হলো দেশের মানুষের পক্ষে থাকা। অথচ সত্য প্রকাশের বদলে সে সত্য ঢাকতে অথবা ভিন্ন সত্য প্রকাশে এবং দেশের মানুষের পক্ষে থাকার বদলে ক্ষমতাধরদের পক্ষাবলম্বনে কোনো কোনো লেখক-বুদ্ধিজীবীর এমন আগ্রহ কেন?
আমরা এর তিনটি সম্ভাব্য কারণের কথা বলতে পারি, বস্তুগত ফায়দা, ভীতি ও আদর্শগত আনুগত্য।
বস্তুগত ফায়দার ব্যাপারটা বোঝা সহজ। মোটা উৎকোচ, ভালো সরকারি পদ (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অথবা বিদেশে রাষ্ট্রদূত), সস্তায় সরকারি জমি, অথবা নিদেনপক্ষে সরকারপ্রধানের সঙ্গে নিখরচায় বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ—এমন ফায়দা যাঁরা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তো আমাদের জানাশোনা অনেকেই আছেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের অনেককে দেখেছি হাত কচলে চৌদ্দবার ‘মাননীয় নেত্রী’ বলে ঢোক গিলতে। অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তাঁরাই আবার ভিন্নকথা বলেছেন। কিন্তু স্বৈরাচারের হাত থেকে একবার যাঁরা সুবিধা নিয়েছেন, তাঁদের পক্ষে মত ও পথ বদলানো কঠিন। বার্নাড শর একটি উক্তি কিছুটা ঘুরিয়ে বলতে পারি, একবার যে সতীত্ব হারিয়েছে, তার পক্ষে সতীত্ব ফিরে পাওয়া অসম্ভব।
ভীতির ব্যাপারটাও বোঝা কঠিন নয়। স্তালিনের সোভিয়েত রাশিয়া বা হিটলারের জার্মানিতে স্বৈরতন্ত্রের প্রতিবাদ করায় জীবন গেছে, এমন উদাহরণ অসংখ্য। নিকোলাই বুখারিন বা আইজাক বাবেলের মতো অসাধারণ লেখক ও চিন্তাবিদকে জান দিতে হয়েছে শুধু রাজনৈতিক মতান্তরের কারণে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কার্ল ভন ওসিয়েতজস্কিকে হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে কার্যত না–খেয়ে মরতে হয়েছে। পালাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের মতো দার্শনিক।
ফলে দৈহিক নিষ্পেষণের ভয়ে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সখ্য বা সমঝোতা অভাবিত নয়। একাত্তরে ঠিক এ কারণে প্রবল ঘৃণা সত্ত্বেও কেউ কেউ সামরিক অধিগ্রহণের পক্ষে কলাম লিখেছেন, অথবা রেডিও বা টিভির টক শোতে অংশ নিয়েছেন। জ্যঁ পল সার্ত্রের মতো দার্শনিক অবশ্য বলবেন, কঠিনতম সময়েও বুদ্ধিজীবীর বা সব নাগরিকের জন্যই ‘কলাবরেশন’ বা সোজা বাংলায় দালালি একমাত্র পথ নয়। ব্যক্তি জন্মগতভাবে স্বাধীন—‘ম্যান ইজ কনডেমন্ড টুবি ফ্রি’—সে মুক্ত হতে বাধ্য। সে কারণে যে সিদ্ধান্তই সে নেয়, তার দায়দায়িত্ব একা তার। মুক্ত মানব হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভেতর দিয়েই আমাদের মানবিকতা প্রকাশিত হয়, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণেই আমাদের ‘স্বাধীনতা’ নিহিত।
কোনো ব্যক্তি যখন স্বৈরতন্ত্রের হাতে নিজেকে সঁপে দেন, সেটিও মুক্ত মানুষ হিসাবে তাঁর স্বাধীনতারই প্রকাশ। কিন্তু তাঁকে দালাল হতেই হবে, এ কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বিকল্প হিসেবে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের পথও তাঁর সামনে খোলা আছে। কেউ সে পথ বেছে নিতে গিয়ে জেলে যান, কেউ দেশত্যাগ করেন, কেউবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। যেমন আত্মহত্যা করেছিলেন মায়াকোভস্কি। এ সবই ব্যক্তির ‘মুক্ত ইচ্ছার’ প্রকাশ।
বাংলাদেশের স্বৈরাচার সম্ভবত স্তালিন বা হিটলারের মতো নির্মম ও দক্ষ নন, কিন্তু নিষ্পেষণের অস্ত্র ও উপকরণ তাঁর হাতেও কম ছিল না। ‘আয়নাঘরের’ কথা আমরা জানি। হারুনের ডিবি অফিসের কথা জানি। গুম-খুনের উদাহরণও কম নয়। ভয়-ভীতি থেকে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ স্বৈরাচারের পক্ষাবলম্বন করেন, এ কথা মানতে আমাদের কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু এমন উদাহরণও কম নয়, যেখানে শুধু ‘গুড লাইফ’, অর্থাৎ পকেটে কিছুটা বাড়তি পয়সা, মাসে দু-চারটে টিভি অনুষ্ঠান, নিদেনপক্ষে ঢাকা ক্লাবে অন্যের পয়সায় মদ্যপানের সুযোগ—এসব কারণেও কেউ কেউ দালালির পথ বেছে নেন।
বাকি থাকল আদর্শগত আনুগত্যের বিষয়টি। বিপ্লবে গভীরভাবে বিশ্বাস থেকে কেউ কেউ সজ্ঞানে স্বৈরাচারের সঙ্গে সহযোগিতার পথ বেছে নেন, এমন লোকের সংখ্যাও তো কম নয়। আমরা নিকোলাই বুখারিনের কথা জানি, তিনি রুশ বিপ্লবে গভীর আস্থাবান ছিলেন, এর সোনালি ভবিষ্যতে নিশ্চিত ছিলেন। বিদেশি চর হিসেবে মিথ্যা মামলার সম্মুখীন হয়েও সে বিপ্লব ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এই বিবেচনায় প্রকাশ্যে স্তালিনের বিরুদ্ধাচরণ করেননি।
অথবা আমরা আর্জেন্টিনার লেখক হুলিও করতাজারের কথা ভাবতে পারি। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের আগে তিনিই আমাদের ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ উপহার দিয়েছেন। লাতিন আমেরিকার যে কয়জন লেখক-বুদ্ধিজীবীকে আমরা কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রধান সমর্থক বলে জানি, তিনি তাঁদের একজন। ফিদেল কাস্ত্রোর শাসনামলে তাঁর অনেক নিকট বন্ধু নিগৃহীত হয়েছেন, এমন প্রমাণ তাঁর হাতে থাকা সত্ত্বেও করতাজার সে বিপ্লবের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করেননি। ১৯৭১ সালে বিখ্যাত কিউবান লেখক হেবার্তো পাদিয়াকে বিপ্লববিরোধী কবিতা ও বক্তব্যের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।
পশ্চিমের অনেক লেখক, যাঁরা একসময় কিউবার বিপ্লবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, পাদিয়ার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাঁদের অনেকে কাস্ত্রো প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেন। কিন্তু করতাজার তাঁর অবস্থান বদলাননি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, যত সন্দেহ ও উদ্বেগই থাকুক না কেন, আমি কিছুতেই কিউবার বিপ্লবের প্রতি আমার বিশ্বাস পরিবর্তন করব না। কোনো বিপ্লব সর্বশুদ্ধ নয়, কিন্তু শুদ্ধতার চেয়ে অনেক জরুরি সাম্রাজ্যবাদের প্রতিরোধ।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের আদর্শিক আনুগত্য
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ বরাবর জনতার পাশে থেকেছেন, সামরিক ও বেসামরিক দুঃশাসনের প্রতিবাদ করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, যা আসলে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ, তার নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্রবিরোধী নির্দেশের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে গণজাগরণ, তার নেতৃত্বেও বুদ্ধিজীবীশ্রেণি। এমনকি স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তাঁর প্রস্তাবিত বাকশালি রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন শামসুর রাহমান, আনিসুজ্জামান, আহমদ শরীফ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মতো খ্যাতিমান লেখক, বুদ্ধিজীবী। তাঁদের কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর নিকটজন ও আদর্শের অনুসারী, তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক বল তাঁদের ছিল। সে জন্য বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাঁদের উদ্দেশ্যে আমরা এখনো মাথা নোয়াই।
সেই বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ, সম্ভবত বৃহদাংশ কেন গত দেড় যুগ শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন শুধু মেনেই নেননি, তাঁর প্রতি কথায় ও কাজে নানাভাবে সমর্থন জানিয়ে গেছেন?
অনুমান করি, নগদ লাভ ও ভীতি থেকেই অধিকাংশ সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবী স্বৈরাচারের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে সেসব সুবিধাভোগীদের বাইরে এমন অনেক বুদ্ধিজীবী ছিলেন, যাঁরা শুদ্ধ আদর্শিক কারণেও হাসিনা সরকারের প্রতি অনুগত ছিলেন। তাঁদের অনেককেই আমরা চিনি। তাঁরা সেই সব মানুষ, যাঁরা এই সরকারের কাছ থেকে চিহ্নিত করা যায়, এমন কোনো সুবিধাভোগ করেছেন, তা বলা যাবে না। নগদ কোনো সুবিধাও পাননি। স্বল্পমূল্যে সরকারি জমিও পাননি। তাঁরা নির্বোধ নন।
হাসিনা সরকার যে খোলামেলাভাবে স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত, এর একমাত্র লক্ষ্য পরিবারতন্ত্র ও তাঁর অলিগার্কিক নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখা, এ কথা তাঁরা খুব ভালোভাবেই জানতেন। তা জানা সত্ত্বেও তাঁরা সচেতনভাবে বিগত সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক দুঃশাসনকে সমর্থন দিয়ে গেছেন সম্ভবত এই বিশ্বাস থেকে যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা ও মৌলবাদ প্রতিরোধে হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
এই বুদ্ধিজীবীদের প্রতি করুণা ছাড়া আর কোনো অনুভূতি আমার নেই। বিগত সরকারের হাতে মুক্তিযুদ্ধের সব মূল্যবোধ নিরন্তর ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, সে কথার তারাও সাক্ষী। এই সরকারের হাতে বাক্স্বাধীনতা হরণ হয়েছে, হরণ হয়েছে ভোটাধিকার।
বিচার বিভাগ থেকে পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তম্ভ অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। শুধু আদর্শিক ভিন্নতার জন্য কারাগারে বছরের পর বছর কাটিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এর কোনোটাই গোপনে বা খুব চালাকির সঙ্গে করা হয়েছে, তা নয়। কোনো কিছুই গোপন নয়, কোনো কিছুই অপ্রকাশিত নয়। তারপরও বুদ্ধিজীবীরা যখন নিজেদের পছন্দের ‘আইডিওলজি’ রক্ষিত হবে, এই বিশ্বাস থেকে স্বৈরাচারের ঢাল হয়ে দাঁড়ায়, তখন তাঁদের করুণা করা ছাড়া আর কী করতে পারি!
আনাক্সিওস
বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আমার প্রিয় নায়কদের একজন হলেন চেকোস্লোভাকিয়ার বিবেকী লেখক ভাসলাভ হাভেল। স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করায় তাঁকে বারবার জেলে যেতে হয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, বুদ্ধিজীবী হলো এমন ব্যক্তি, যে পৃথিবীর সব দুর্ভোগের সাক্ষী, যে সব রকম আপসবিরোধী, যে সব গোপন চাপ ও চালবাজির বিপক্ষে, যে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে সবার আগে সন্দেহ ও প্রতিবাদী কণ্ঠ উচ্চারণ করে, যে ক্ষমতাধরদের নিরন্তর মিথ্যাচারের সরব সাক্ষী।
সেই রকম একজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন সক্রেটিস। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯৯ সালে, অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় সাড়ে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিসের অত্যাচারী শাসকদের নির্দেশ মানার পরিবর্তে তিনি বিষের পানপাত্র তুলে নিয়েছিলেন। সমঝোতা বা পালাবার পরামর্শ তাঁকে অনেকেই দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজ সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন সক্রেটিস। মৃত্যুর আগে তাঁর মন্তব্য ছিল, প্রশ্ন না করে আত্মসমর্পণের যে জীবন, তা অর্থহীন।
সক্রেটিস মহামতি, তাঁকে অনুসরণ করে এ কথা অনায়াসেই বলা যায়, আমাদের আপসবাদী বুদ্ধিজীবীরা যে জীবন যাপন করেছেন, তা অর্থহীন। সক্রেটিসের ভাষায় ‘আনাক্সিওস’।
হাসান ফেরদৌস প্রাবন্ধিক