বিশ্লেষণ
পশ্চিমের তোড়জোড়, এশিয়াসহ বাকি দুনিয়ার অনীহা
সুইজারল্যান্ডে এ সপ্তাহে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে যে শান্তি সম্মেলন হচ্ছে, অনেক চেষ্টা করেও চীন এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দেশকে সেখানে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইউক্রেন শান্তি সম্মেলন নিয়ে এশিয়া ও বাকি দুনিয়ায় দেশগুলোর কেন অনীহা তা নিয়ে লিখেছেন শাকিল আনোয়ার
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থার আয়োজনে একটি নিরাপত্তা সম্মেলন চলার সময় হঠাৎ প্রায় না বলেই সেখানে হাজির হন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। উদ্দেশ্য ছিল জুনের ১৫-১৬ তারিখে সুইজারল্যান্ডে তাঁর দেশে যুদ্ধ বন্ধে যে শান্তি বৈঠক হতে যাচ্ছে, তাতে এশিয়া থেকে যত বেশি সম্ভব অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সুইজারল্যান্ড যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু কাজ তেমন হয়নি। নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি পান শুধু সিঙ্গাপুর, পূর্ব তিমুর ও ফিলিপাইনের কাছ থেকে। পরে অবশ্য থাইল্যান্ড অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়াও হয়তো যেতে পারে। কিন্তু শুধু পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা ছাড়া বাকি তিনটি দেশই সরকারের নিচু পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু ভারত সুইজারল্যান্ডে শান্তি বৈঠকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে, তবে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী মধ্য পর্যায়ের কোনো সরকারি কর্মকর্তা প্রতিনিধিত্ব করবেন। যদিও আয়োজক দেশ সুইজারল্যান্ড ও ইউক্রেন বিশেষভাবে দেনদরবার করেছিল নরেন্দ্র মোদি যেন যান। কাজ হয়নি। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা—সবাই চুপ।
তবে আয়োজকদের জন্য সবচেয়ে বড় হতাশা তৈরি করেছে চীন। বেইজিং বেশ কিছুদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়ার অনুপস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো শান্তি বৈঠক অর্থহীন। সুতরাং তারা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সিঙ্গাপুরে শাংরিলা নিরাপত্তা সম্মেলনে উপস্থিত চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। চীনা মন্ত্রী পাত্তা দেননি।
জেলেনস্কি এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ চাঁছাছোলা ভাষায় বলেন, শান্তি বৈঠক ব্যর্থ করতে রাশিয়ার চেষ্টায় চীন সাহায্য করছে। সম্মেলন বর্জনে বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ তৈরি করছে। বেইজিং অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে কড় জবাব দিয়ে বলেছে, এই অভিযোগ মনগড়া।
ইউক্রেন এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকেরা সুইজারল্যান্ডে শান্তি বৈঠকে এশিয়ার দেশগুলোকে আনতে বিশেষ আগ্রহী ছিল।
বেইজিং বেশ কিছুদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়ার অনুপস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো শান্তি বৈঠক অর্থহীন।
এই বৈঠকে ইউক্রেনের পারমাণবিক নিরাপত্তা, খাদ্য রপ্তানির নিরাপত্তা এবং বন্দী বিনিময় গুরুত্ব পাবে।
বৈশ্বিক দক্ষিণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোকে পক্ষে টানার জন্য আমেরিকা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রথম দিকে হুমকি দিয়ে, গালমন্দ করে কাজ না হওয়ায় এখন কূটনৈতিক দেনদরবারের পথ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপে,আমেরিকায় যে আবেগ আর তৎপরতা, জাপানের মতো হাতে গোনা দু-চারটি দেশ ছাড়া ইউরোপের বাইরে অন্য কোথাও তা দেখা যায়নি। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এসব অঞ্চলে যেটুকু উদ্বেগ, তার পেছনে কাজ করেছে জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা। তা–ও এসব দেশের সিংহভাগই মনে করে যুদ্ধ না যতটা, তার চেয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এর জন্য বেশি দায়ী।
সে কারণে সুইজারল্যান্ডের বৈঠকে বৈশ্বিক দক্ষিণের অংশগ্রহণের দিকে বিশেষ তৎপরতা ছিল ইউক্রেনসহ আমেরিকা ও ইউরোপের। গত কয়েক মাসে চীন, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, সৌদি আরবের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে কয়েকটি দেশে গেছেন। এসব দেশকে ভরসা দেওয়া হয়েছে, রাশিয়াকে পরের দফার বৈঠকে অবশ্যই সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে। বৈঠকটি যেন শুধু দোষারোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়ে পড়ে, সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই বৈঠকে ইউক্রেনের পারমাণবিক নিরাপত্তা, খাদ্য রপ্তানির নিরাপত্তা এবং বন্দী বিনিময় গুরুত্ব পাবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডের সরকার জানিয়েছে, আমন্ত্রিত ১৬০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে ৯০টি তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, যে দেশগুলো যাচ্ছে, তার অর্ধেকই ইউরোপের, যারা এমনিতেই ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। যেসব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা যাচ্ছেন, তাঁর সিংহভাগই ইউরোপের।
ইউক্রেন নিয়ে এশিয়ায় অনীহা কেন
কোনো সন্দেহ নেই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে একঘরে করে ফেলার ব্যাপারে শুধু জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং কিছুটা সিঙ্গাপুর আমেরিকানদের কণ্ঠ মেলালেও এশিয়ায় বাকিরা সরাসরি কোনো দলাদলিতে অংশ নিতে অস্বীকার করে চলেছে।
এ কারণে ইউক্রেন এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকেরা সুইজারল্যান্ডে শান্তি বৈঠকে এশিয়ার দেশগুলোকে আনতে বিশেষ আগ্রহী ছিল। ২ জুন সিঙ্গাপুরে সাংবাদিকেরা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে যখন জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি সেখানে এসেছেন, তাঁর জবাব ছিল, এশিয়ার সমর্থনের জন্য তিনি উদ্গ্রীব। ‘আমরা চাই এশিয়া এই শান্তি বৈঠকে শক্ত ভূমিকা রাখুক। আমার এই সফর সফল হবে যদি দেখি এশিয়া থেকে নেতারা যোগ দিয়েছেন।’ সুইজারল্যান্ডে গিয়ে তিনি নিশ্চয়ই হতাশ হবেন।
চীন এবং হালে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মেরুকরণ নিয়ে এক নিবন্ধে গবেষণা সংস্থা এশিয়া সোসাইটি অস্ট্রেলিয়ার নির্বাহী পরিচালক রিচার্ড মড লিখেছেন, ‘এই বিবাদে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো খুব সচেতনভাবে মাঝামাঝি একটি অবস্থান বেছে নিয়েছে।’ আমেরিকান ও পশ্চিমারা হয়তো মনে করছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই অবস্থান সেকেলে, নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে অচল কিন্তু এ অঞ্চলের সিংহভাগ দেশই মনে করছে, এমন অবস্থানই তাদের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে।
চীনকে কোণঠাসা করার চেষ্টার কৌশলের অংশ হিসেবে আমেরিকা অনেক বছর ধরেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে শক্তভাবে তাদের প্রভাববলয়ে ঢোকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। হালে ফিলিপাইন এবং কিছুটা সিঙ্গাপুর ছড়া অঞ্চলের বাকি ৯টি দেশকে তেমন টলাতে পারেনি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউট পরিচালিত এ বছরের এপ্রিলে করা এক জনমত জরিপে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পরাশক্তিগুলোর রেষারেষিতে নিজেদের সরাসরি না জড়ানোর মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, অঞ্চলের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করে আমেরিকা-চীনের রেষারেষিতে যদি তাদেরকে কোনো একটি পক্ষ নিতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তারা চীনকে বেছে নেবে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রশ্নেও সেই একই অবস্থান নিয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। রিচার্ড মড বলছেন, এ অঞ্চলের সিংহভাগ দেশই মনে করছে, এই যুদ্ধ ‘দূরের একটি সংকট’এবং এখানে কারও পক্ষে স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেওয়ার কোনো অর্থ নেই। পাশাপাশি রয়েছে ঐতিহাসিক কিছু বাস্তবতা, যা এখনো প্রাসঙ্গিক।
ভিয়েতনাম ও লাওস সামরিক দিক বিষয়ে বহুদিন ধরে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। মিয়ানমার শক্তভাবে চীনা শিবিরে। হালে তারা মস্কোরও ঘনিষ্ঠ। কম্বোডিয়া অর্থনীতি ও সামরিক দিক নিয়ে চীনের দিকে তাকিয়ে থাকে। থাইল্যান্ড এখন রাশিয়া ও চীনের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে ঢোকার জন্য চেষ্টা করছে। ফলে এসব দেশের অগ্রাধিকারের সঙ্গে পশ্চিমাদের অগ্রাধিকার মিলছে না।
দক্ষিণ এশিয়ার চিত্রও একই রকম। চীনের বিরোধিতায় ভারত এখন আমেরিকা ও পশ্চিমের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সহযোগী দেশ ঠিকই কিন্তু সামরিক দিক দিয়ে ভারত এখনো রাশিয়ার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। শীতল যুদ্ধের সময় থেকেই রাশিয়া ভারতের বিশ্বস্ত মিত্র। সে কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের সব চাপ অগ্রাহ্য করে ভারত রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো পক্ষ নেয়নি। বরং আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে দুই হাতে রাশিয়ার জ্বালানি তেল কিনে চলেছে।
আমেরিকার অনুরোধ–হুমকির তোয়াক্কা করেনি। তা ছাড়া চীনের ওপর রাশিয়ার নির্ভরতা যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। নিজেকে রাশিয়ার কাছে চীনের একটি বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে ভারত এখন বিশেষভাবে উদ্গ্রীব। সুতরাং কোনোভাবেই তারা মস্কোকে চটাতে চায় না। রাশিয়ার নিন্দা করে আনা জাতিসংঘের সব কটি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত।
বাংলাদেশও একই ধরনের অবস্থান নিয়ে রয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার চাপ যখন তুঙ্গে, তার মধ্যেই সেপ্টেম্বরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ঢাকা সফর করেছেন। মার্চে পুতিন নতুন করে নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মার্চে মিউনিখে শেখ হাসিনা জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। যুদ্ধ বন্ধে তাঁর পুরো সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরাসরি কোনো পক্ষে অবস্থান নেয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের অবস্থানই কমবেশি একই রকম।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের এক জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শালিনি সিং লিখেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে আমেরিকা এবং চীন-রাশিয়া অক্ষের দ্বন্দ্বে দক্ষিণ এশিয়া এখনো জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করে চলেছে।’
পশ্চিমের গাজা বনাম ইউক্রেন নীতি
জেলেনস্কির সংকট শুধু চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেকগুলো কারণে তাঁর দেশ নিয়ে এশিয়ায় আবেগ সমর্থন এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। প্রথম কথা, বিশ্বব্যবস্থার স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং অভিন্ন আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ নিয়ে যেসব স্লোগান পশ্চিমা দেশগুলো দেয়, তার সততা নিয়ে এশিয়ার দেশগুলোতে আস্থা কম।
শাংরিলা সম্মেলন চলার সময় সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের গবেষক সি রাজা এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকার দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এ অঞ্চলে গত শতকের ইতিহাসের বিভিন্ন সময় পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের স্বার্থ হাসিলে নির্যাতন, জবরদস্তি থেকে শুরু করে নৃশংস স্বৈরাচারীদের সমর্থন দিয়েছে।
ফলে ইউক্রেন যুদ্ধকে প্রথম থেকেই গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের লড়াই বলে দেখানোর যে চেষ্টা প্রেসিডেন্ট বাইডেন করে গেছেন, তা এশিয়ায় তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। গাজায় সামরিক অভিযানে ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকা ও ইউরোপের অকুণ্ঠ সমর্থন সেই সন্দেহে ইন্ধন জুগিয়েছে। পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা সিঙ্গাপুরে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে শান্তি বৈঠকে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু গাজার যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ দেখছে ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমারা যতটা উদ্বিগ্ন, গাজা নিয়ে ততটা নয়। ‘এই আচরণে বহু মানুষ ক্ষুব্ধ।’
ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় দেখা যায়, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে গাজার যুদ্ধ নিয়ে মানুষের অনেক বেশি উদ্বেগ, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও ইন্দোনেশিয়ায়। অঞ্চলের প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করছে গাজার যুদ্ধে আমেরিকা এবং পশ্চিমারা ইসরায়েলকে যেভাবে সমর্থন দিচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
বেশি আশা যেন কেউ না করে: শলৎজ
এশিয়া ও আফ্রিকার অনীহা দেখে শান্তি বৈঠকের আয়োজক সুইজারল্যান্ড নিজেরাই বলছে, এখান থেকে বড় কোনো অর্জনের আশা করা ঠিক হবে না। সুইস প্রেসিডেন্ট ভায়োলা এমহার্ড গত শুক্রবার জার্মান দৈনিক ফ্রাঙ্কফুর্টর জেইটুং এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন মীমাংসার টেবিলে ইউক্রেন-রাশিয়া দুই পক্ষকে বসতে হবে। তিনি বলেন, এই সম্মেলন থেকে কোনো চুক্তি হবে না, এটা শুধুই একটি সূচনা। গত মাসে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ স্থানীয় এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে এই বৈঠক থেকে কোনো ফলাফলের আশা না করার পরামর্শ দেন।
ওদিকে সুইজারল্যান্ডের বৈঠক নিয়ে যখন শেষ সময়ের তোড়জোড় চলছে, সে সময় রাশিয়ার নিজনি নোভগোরোদ শহরে ১১-১২ জুন ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে এই জোটে ইরান, সৗদি আরব, ইউএই, ইথিওপিয়া ও মিসরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্যপদ দেওয়া হয়। ব্রিকসের বৈঠকে আমেরিকান ডলারের বদলে স্থানীয় মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানিতে বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক দক্ষিণের বর্তমান অগ্রাধিকার ঠিক কোথায়, সে ইঙ্গিত পরিষ্কার।
●শাকিল আনোয়ার সাংবাদিক