বিশেষ সাক্ষাৎকার: সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ
অতি উৎসাহীদের কারণে বাংলা একাডেমির এ সংকট
ভাষাবিদ, শিক্ষক ও গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক। ২০০৭ সালের মে থেকে ২০০৯ সালের মে পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন এ প্রতিষ্ঠানে। প্রবন্ধ ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। অমর একুশে বইমেলা ২০২৩–কে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের মধ্যকার কথোপকথন নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের সীমা নিয়ে। সেসব প্রসঙ্গে জানতে প্রথম আলো কথা বলেছে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম।
প্রশ্ন :
বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রসঙ্গটি নিশ্চয়ই শুনেছেন। আপনার কী মনে হয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: গত সোমবারের বাংলা একাডেমির ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। না ঘটাই উচিত ছিল। তবে আমার মনে হয়, এটা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়। গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে এটি ঘটানো হয়নি। এমন ঘটনা জনপ্রশাসকদের দক্ষতার ঘাটতি হলে ঘটে।
প্রশ্ন :
সরকারের এই সিল ব্যবহার কি খুব প্রয়োজন ছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানই জনগণের এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের। সেখানে যে প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করা হবে, ওটাও তো সরকারের পক্ষ থেকেই তৈরি করা। বাংলা একাডেমির মনোগ্রামও তো সরকারের অনুমোদন পাওয়াই। সিল না দিয়েও হস্তক্ষেপ করা যায়, সেটা আপনারা জানেন। তবে ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে জনপ্রশাসকদের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাংশের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের পরিচয় পাওয়া যায়।
বাংলা একাডেমির বিশেষ মর্যাদা সমুন্নত রাখাটা জাতির জন্য জরুরি। আমি আশা করি যে এটা হয়তো সাময়িক একটা ভুল-বোঝাবুঝি। আশা করি না, সরকারের নীতিতে এমন কিছু ঘটবে, যাতে বাংলা একাডেমির মর্যাদাহানি হবে। শিষ্টাচার আর নৈতিকতা থাকতে হবে উভয় পক্ষ থেকেই
প্রশ্ন :
সরকার বা মন্ত্রণালয় অথবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেখা যায়, মাঝেমধ্যে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করে। এসব ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ হওয়া উচিত কি না?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: বাংলা একাডেমি সব সময়ই বাঙালির মননচর্চার একটা প্রধান কেন্দ্র। বাঙালির সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। তবে এমন চাপ তৈরির ঘটনা এখনই প্রথম নয়। একাডেমির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখবেন, একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তান আমল বা স্বাধীন বাংলাদেশ বলুন, অনেকবার নানা রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের সময় বাংলা একাডেমির ওপর বিচিত্র সব চাপ তৈরি হয়েছিল। ১৯৬১ সালে ঢাকা শহরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা গেলেও বাংলা একাডেমি তা উদ্যাপন করতে পারেনি।
আশির দশকের আরেকটি ঘটনা বলি। একাডেমি কর্তৃপক্ষ আহমদ শরীফকে একটি বিশেষ বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যে ভাষণটি তিনি দেবেন, সেটা আগে ছাপা হচ্ছিল প্রেসে। সেই ভাষণে বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে আহমদ শরীফ দুজন বাঙালি নেতাকে বিশেষ সাহসী বলে মন্তব্য করেছিলেন। সুভাষ বসু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছাপার সময় মন্ত্রণালয় জানতে পারে সেটি এবং ওই বক্তৃতা আর আহমদ শরীফের দেওয়া হয়নি।
বাংলা একাডেমির নির্বাহী কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধি সব সময়ই ছিল। আমি যখন মহাপরিচালক ছিলাম, তখন পদাধিকারবলে ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব। এর কারণ হচ্ছে যে পুরো আর্থিক বিষয়টি সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে কোনো ক্ষতি দেখি না। আসলে বুঝতে হবে, হস্তক্ষেপ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে?
অনুষ্ঠানে কোন গান বাজানো হবে অথবা সেমিনারে কে প্রবন্ধ পাঠ করবেন, সেটা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কিন্তু কোন খাতে টাকা ব্যয় হচ্ছে বা পর্যাপ্ত আয় হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে মন্ত্রণালয় তো পরামর্শ দিতেই পারে। কেননা প্রতিষ্ঠানটির আয়ের প্রধান উৎস সরকারের দেওয়া অর্থ। আবার দেখুন, অনেক সময় আমরাই কিন্তু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কারণে-অকারণে ডেকে ডেকে এনেছি। তাঁদের খুশি করতে চেষ্টা করছি বিভিন্ন সময়। আমরা যাঁরা বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকি, তাঁদেরও এটার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য সতর্কভাবে চলা নৈতিক কর্তব্য। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি যে বাংলা একাডেমির মর্যাদা রক্ষা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত সব নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব।
প্রশ্ন :
সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলেও বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মতো মহৎ চেতনা থেকে। এ প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকবে না?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: আমার কাছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মর্যাদার দুটি স্মারক। একটি শহীদ মিনার, অন্যটি বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমি একটি অন্য রকম প্রতিষ্ঠান। এর স্বতন্ত্র মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুলি চলার পর যুক্তফ্রন্টের দেওয়া ২১ দফা দাবির অন্যতম ছিল, বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশের জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ হবে বাংলা ভাষার সাহিত্য নিয়ে গবেষণা। প্রতিষ্ঠানটি তাদের এই মূল কাজ খুব বেশি করতে পারছে না। অনেকটাই অনুষ্ঠাননির্ভর হয়ে গেছে এই প্রতিষ্ঠান। তাদের মূল কাজ যেমন গবেষণা এবং গবেষণা উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, সেসব জায়গায় নজর দেওয়া দরকার।
দীর্ঘদিন ধরে আয়োজন করতে করতে বইমেলা নিয়ে একাডেমির একটা দক্ষতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বইমেলা আসলে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত।
প্রশ্ন :
কিন্তু ২০১৩ সালে পাস হওয়া বাংলা একাডেমি আইনের ৩ নম্বরে একাডেমি প্রতিষ্ঠার ধারায় বলা আছে, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। প্রসঙ্গটি সহজ করে বলুন আমাদের জন্য। এই আইন দিয়ে কী বোঝাচ্ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই উদ্যোগ ছিল, বাংলা একাডেমি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হবে। ১৯৫৫ সালে এ জন্য পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক আইন পরিষদে উত্থাপন করতে একটি খসড়া বিধিও প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো আইনে স্পষ্ট বলা হলো না যে এটা স্বায়ত্তশাসিত। পূর্ব পাকিস্তান আমলে বাংলা একাডেমির আইন হয়েছে। পরে বাংলাদেশ সময়ে অধ্যাদেশ হয়েছে। সেসব রহিত করে আবার ২০১৩ সালে হয়েছে বাংলা একাডেমি আইন। কোথাও ‘স্বায়ত্তশাসন’ শব্দটি স্পষ্টভাবে আসেনি। বলা হয়েছে, সংবিধিবদ্ধ; অর্থাৎ এই যে আইন করা হলো, সে অনুযায়ী চলবে প্রতিষ্ঠানটি। তবু কিন্তু অধিকার এবং দায়বোধের একটি অলিখিত সীমারেখা রয়েছে। অতি উৎসাহী হয়ে কেউ এর অতিরিক্ত করতে গেলেই সংকট হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাগজে–কলমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বায়ত্তশাসিত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বুঝতে হবে, সব শুধু কাগজে লেখা আইনে থাকা বা না থাকা প্রসঙ্গ ধরে হয় না। প্রচলিত রীতি বা ঐতিহ্যের একটি ধারাবাহিকতা থাকে। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। এটা নির্ভর করে কারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন এবং সরকারের দিক থেকে কোন ধরনের মানুষ এর সঙ্গে সম্পর্কিত—এসবের ওপর। বাংলা একাডেমিতে সব সময়ই একাডেমিশিয়ানদের প্রাধান্য ছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ওই মাপের নেতা, তিনিও তখনকার বুদ্ধিজীবী এবং লেখক-সাহিত্যিকদের প্রাধান্য দিতেন একাডেমির কর্মকাণ্ড ও নীতিনির্ধারণে। একসময় এসব দায়িত্বে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা অনেক বেশি দক্ষ ও সম্মানী মানুষ ছিলেন। যেমন ধরুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় শিক্ষাসচিব ছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। তারপরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অনেক বিজ্ঞজনকে। আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন ছিলেন বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফেরদৌস খান ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব; অর্থাৎ শিক্ষা, সংস্কৃতি বা বিজ্ঞান—এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁরা যদি নিজেরাও ওই রকম বোদ্ধা মানুষ হন, তাহলেও এ সমস্যাগুলো হয় না বা অনেক কম হবে। এই ব্যাপারগুলো শুধু আইনে উল্লেখ থাকা বা না থাকা দিয়ে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন :
তাহলে সরকারের দিক থেকে এই চাপ তৈরির ঘটনাটার সূত্রপাত সম্প্রতি কবে থেকে শুরু হয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: সেভাবে তো তারিখ বলা সম্ভব নয়। তবে নানা ঘটনার কথা বলা যায়। এরপর ২০০২ সালে সরকারের কারও মাথায় ঢুকেছিল যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে একাডেমির সভাপতির পদ থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান পদত্যাগ করেছিলেন। তবু সরকার তার সিদ্ধান্ত বদলায়নি। সরকার ওই সময় থেকে মন্ত্রী দিয়েই সভাপতিত্ব করানো শুরু করে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ রকম চলে। এমনও হয়েছে যে বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানে একাডেমির মহাপরিচালককে মঞ্চেই স্থান দেওয়া হয়নি।
২০০৮ সালে আমি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী নন, ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রস্তুতি সভায় আলোচনা হলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যিনি উপদেষ্টা ছিলেন, তিনি বইমেলার উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতিত্ব করবেন। তখন আমরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম এবং সরকার সেটা মেনেও নিয়েছিল। ফলে ২০০৮ সাল থেকে আবার বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব পান সভাপতি।
প্রশ্ন :
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কে হবেন, সেটাও তো সরকার নির্ধারণ করে দেয়।
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: সব সময়ই সরকার সেটি নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এর ভালো-মন্দ নির্ভর করে মানুষটা কে, তার ওপর। ধরুন, মুহম্মদ এনামুল হককে তো সরকারই নির্বাচন করে দিয়েছিল। কবীর চৌধুরীকে তো সরকারই মনোনীত করেছে। সরকার ছাড়া তো বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নির্ধারণ করার আর কোনো পদ্ধতি নেই।
সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে প্রয়োজনে সভাপতির পদত্যাগের উদাহরণও তো আছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকদের মধ্যে। আমার মনে হয় একাডেমি যে কারণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখান থেকে সরে এসেছে। প্রতিষ্ঠান যে কারণে তৈরি হয়েছিল, সেসব কাজে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সে অনুযায়ী গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড বাড়াতে পারলে এবং প্রকাশনার মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে একাডেমির আর্থিক দিকটা মজবুত করতে পারলে, তা মর্যাদা রক্ষায় সহায়ক হবে।
প্রশ্ন :
আপনার কি মনে হচ্ছে, এ ঘটনায় তাহলে বাংলা একাডেমিরও গাফিলতি আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: এটা আমাদের চলমান অবক্ষয়িত মনোবৃত্তির একটি প্রকাশ। যেকোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পরিশীলিতভাবেও দেওয়া যায়। আবার যা খুশি গ্রহণ বা মেনে নিয়ে খুশি করার প্রবণতাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর এখানে দায়িত্বরতদের কেমন ভূমিকা থাকা উচিত, তা নিয়ে আগেই বলেছি। সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে প্রয়োজনে সভাপতির পদত্যাগের উদাহরণও তো আছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকদের মধ্যে। আমার মনে হয় একাডেমি যে কারণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখান থেকে সরে এসেছে। প্রতিষ্ঠান যে কারণে তৈরি হয়েছিল, সেসব কাজে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সে অনুযায়ী গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড বাড়াতে পারলে এবং প্রকাশনার মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে একাডেমির আর্থিক দিকটা মজবুত করতে পারলে, তা মর্যাদা রক্ষায় সহায়ক হবে।
প্রশ্ন :
বর্তমান যে পরিস্থিতি, এর সমাধান কেমন করে হবে মনে হয়?
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: এটা সবাই জানে যে বাংলা একাডেমি সরকারের, মানে জনগণের প্রদত্ত করের টাকায় চলছে। তারা তো সরকারবিরোধী কিছু করছে না। সাহিত্য-সংস্কৃতির কাজ করছে। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া শুভ কিছু নয়। আমি মনে করি, আমাদের স্বাধীন দেশে এই যে আমলা, নন-আমলা, প্রশাসক, শাসক, জনগণ, সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী—তাঁদের মধ্যে যে দূরত্বগুলো সৃষ্টি হয়েছে, এগুলো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি বিকাশের জন্য প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ। এটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝেছিলেন। তিনি শিক্ষাসচিব করেছিলেন কবীর চৌধুরীকে এবং অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে শিক্ষাসচিব হওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছিলেন। যাঁরা সচিব বা এসব পর্যায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত, এসব বিষয়ে আরও বেশি জানা থাকা দরকার।
বাংলা একাডেমির বিশেষ মর্যাদা সমুন্নত রাখাটা জাতির জন্য জরুরি। আমি আশা করি যে এটা হয়তো সাময়িক একটা ভুল-বোঝাবুঝি। আশা করি না, সরকারের নীতিতে এমন কিছু ঘটবে, যাতে বাংলা একাডেমির মর্যাদাহানি হবে। শিষ্টাচার আর নৈতিকতা থাকতে হবে উভয় পক্ষ থেকেই।
প্রশ্ন :
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।