আমি কয়েক বছর ধরে চলা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলাম।
সম্প্রতি একটি জাতীয় টিভি চ্যানেলে প্রচারিত শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাহেবের বক্তব্যের একটি ভিডিও আমার চোখে পড়েছে। সেখানে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে তিনি আংশিকভাবে আগের শিক্ষাক্রমে ফেরত যাওয়ার কথা বলেছেন।
সেই প্রসঙ্গেই এই লেখা। যদিও শিক্ষা উপদেষ্টা নতুন শিক্ষাক্রমের ‘ভালো দিকগুলো’ রেখে দেওয়ার কথা বলেছেন, তবু আমি বলব নতুন শিক্ষাক্রমের উদ্যোগটি মোটাদাগে ব্যর্থ হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের দর্শনটি আমার পছন্দ হয়েছিল, যে কারণে আমি গত চার বছর বিনা পয়সায় কাজ করে গেছি। কিন্তু গণতন্ত্রে ভালোর কোনো ধারণা নেই। সবাই যেটি চায়, সেটিই বাস্তবায়ন করতে হয়।
এই লেখার উদ্দেশ্য হলো, করদাতাদের পয়সায় নেওয়া উদ্যোগের স্বচ্ছতার স্বার্থে কিছু পাবলিক রেকর্ড তৈরি করা। নতুন শিক্ষাক্রমে আমার কাজগুলোকে আমি দুই ভাগে ভাগ করেছিলাম।
প্রথম দিকটি হলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আমার কাছে যা চেয়েছে, সেটি দেওয়া। অন্য দিকটি হলো যতটুকু সম্ভব প্রামাণ্যকরণ করা, যাতে পরবর্তী সময়ে যিনি আমার জায়গায় আসবেন, তিনি যেন অতীত পটভূমিটি জানতে পারেন (এর বাইরে এই পাতাসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও পডকাস্টে আমার সাক্ষাৎকার বা লেখাতেও এই পাবলিক রেকর্ড তৈরি করার চেষ্টা করেছি।)। তাকে যেন আমার মতো শূন্য থেকে শুরু করতে না হয়।
আমি ধরে রেখেছিলাম, ২০৩০ সালের আগে সেই সময় আসবে না। দেখা যাচ্ছে ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে আমি খুবই দুর্বল!
এই লেখায় আমি দুটি বড় রকমের ভুলের কথা বলব। প্রথমটি হলো নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে জড়িত আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের মনে হয়েছে যে আমরা তাদের গাছে তুলে দিয়ে মইটি কেড়ে নিয়েছি।
আর দ্বিতীয়টি হলো, আমাদের অভিভাবকদের মনে হয়েছে, তাঁদের উৎকণ্ঠার কোনো মূল্য আমাদের কাছে নেই, তাঁদের কথা শোনার কেউ নেই।
প্রথমটি দিয়ে শুরু করি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রশাসক, মন্ত্রী, আমলা এসব মানুষ তুলনামূলকভাবে কম সময় জড়িত থাকে।
একমাত্র শিক্ষকেরাই থাকেন ৩০-৪০ বছর ধরে। কাজেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের যে কর্মযজ্ঞ, সেটি শিক্ষকদের ঘিরে আবর্তিত হতে হবে। সবার আগে তাদের সুবিধা-অসুবিধা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সেটি কি আমরা রেখেছিলাম?
অভ্যন্তরীণ সভা বা আড্ডাগুলোয় আমি প্রায়ই বলতাম যে সব কোচিং সেন্টার ব্যবসায়ী আমাদের এই কারিকুলাম দেখে মহাখুশি। আগের শিক্ষাক্রমে শুধু একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিত শিখতে হতো। এখন সবাইকে বিজ্ঞান ও গণিত শিখতে হবে। আর বিজ্ঞান ও গণিতের কোচিং ব্যবসা হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসাগুলোর একটি।
তার মানে হলো, নতুন শিক্ষাক্রম ম্যাজিকের মতো রাতারাতি একটি ব্যবসার সর্বোচ্চ বাজার (ইংরেজিতে বলে টোটাল অ্যাড্রেসেবল মার্কেট) কয়েক গুণ করে দিয়েছে!
আমরা তো বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলেছিলাম যে কোচিং ব্যবসায়ীদের লালবাতি জ্বলে যাবে। তাহলে এখন এ কথা বলছি কেন?
কোচিং ব্যবসায়ীদের লালবাতি জ্বলত যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য যতটুকু হওয়ার কথা, ততটুকু করা হতো। কিন্তু সেটি চার বছরেও হয়নি।
আমি মানছি পৃথিবীর কোনো দেশেই এত বড় একটি উদ্যোগ রাতারাতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে অতিরিক্ত চাপে থাকা শিক্ষকদের জন্য শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, বিনয়, আত্মসমালোচনা, আর্থিক প্রণোদনা—এই ব্যাপারগুলো কি ছিল?
আমি জানি, প্রশিক্ষণের ভাতা বাড়ানো হয়েছিল এবং লেনদেনটি ডিজিটাল করার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বড়কর্তাদের কমিশন খাওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটি তো এককালীন। প্রশিক্ষণের বাইরে গোটা বছর ধরে শিক্ষকদের এই অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য কিন্তু আমরা কোনো সম্মানী দিতে পারিনি।
অনেকে বলবেন, শনিবার বিদ্যালয়গুলোয় সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়ার কারণে তো ঐকিক নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকেরা আগের চেয়ে কম কাজ করেও একই বেতন পাচ্ছেন।
কাজেই আপেক্ষিকভাবে বেতন বেড়ে গেছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা এতটাই নগণ্য যে সবকিছু হিসাব করলে এটি বোধ হয় গরু মেরে জুতো দানের মতো হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে শিক্ষকদের ওপর বেড়ে যাওয়া কাজের চাপ আমরা যেমন কমানোর ব্যবস্থা করতে পারিনি, ঠিক তেমনি আগামী কত বছরের মধ্যে সেই কাজের চাপ সহনীয় পর্যায়ে আনা হবে, সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও কিন্তু আমরা শিক্ষকদের জানাতে পারিনি।
কাজের চাপ কতটুকু বেড়েছে, সেটি মাপারও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কাজেই আমরা শুধু শিক্ষকদের কষ্টটা বাড়াইনি। আমরা তাদের আস্থার জায়গাটিও অর্জন করতে পারিনি। কোনো উদ্যোগ যে ছিল না, তা নয়। যেমন পাঠ্যবইয়ের সহলেখক হিসেবে আমি এমন শিক্ষককে পেয়েছি, যিনি আসলেই বিষয়টি ক্লাসরুমে পড়াবেন।
এতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে শিক্ষকদের জীবনমান যেন আরও খারাপের দিকে না যায়, এটি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। আমার আসলেই মনে হয়েছে আমরা শিক্ষকদের গাছে তুলে দিয়ে মইটি কেড়ে নিয়েছি।
এবার আসি দ্বিতীয় ভুলে। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগটি কি অভিভাবকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পেরেছিল?
আগস্টের প্রথম সপ্তাহে যখন প্রতিদিন বিগত সরকারের টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা দ্রুত কমে আসছিল, আমি কেবল আগের বিভিন্ন লেখা ও সাক্ষাৎকারে যা যা প্রস্তাব করেছিলাম, সেগুলো এক এক করে ভাবছিলাম।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অন্য একটি জাতীয় দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, ‘...নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যেকোনো বিরোধিতার মূল পুঁজি হলো সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর অভিভাবকদের বিশ্বাসের অভাব। এই অবিশ্বাস তৈরি হয় যখন অভিভাবকেরা মনে করেন, তাঁরা যথেষ্ট তথ্য পাচ্ছেন না। অথবা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে তাঁদের সন্তানদের জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। ... এ কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে আরও তৎপর হতে হবে...একজন অভিভাবকের চাওয়া খুব সহজ। তাঁরা চান, অন্তত ছেলে-মেয়ে যেন পাস করে ভালো চাকরি পায়। আর তাঁরা যেটি চান না সেটি হলো আগে থেকে না জানিয়ে কোনো কিছু পাল্টানো। কেন নতুন শিক্ষাক্রম তাদের সন্তানকে পাস করে ভালো চাকরি পেতে সাহায্য করবে, এটি সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্ব। ... এর আগে যখন বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; একমুখী শিক্ষা, সৃজনশীল কারিকুলাম, বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তরণ—এগুলোর সবই হয় বিতর্কিত হয়েছে, না হয় ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই এবার অভিভাবকেরা কেন তাদের বিশ্বাস করবেন, সেটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকেই নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।’
আমার একটা ভুল ছিল। সেই সাক্ষাৎকারে শেষ যে বাক্যটি বলেছিলাম, তা হলো ‘এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমি আশাবাদী যে সরকার সেটি করবে।’
এ বছরের মার্চে দ্বিতীয় একটি জাতীয় দৈনিকে বলেছিলাম, ‘নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়নের মূল চ্যালেঞ্জ দুটি। শিক্ষকদের চাকরির সন্তুষ্টি আর অভিভাবকদের আস্থা বাড়ানো। সবার মাথায় যা রাখতে হবে, সেটি হলো শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য আর চাকরির সন্তুষ্টির ওপর আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। আমরা যদি বুড়ো বয়সে সন্তানদের ওপর নির্ভর করতে চাই, তাহলে আমাদের দরকার চিত্তে আর বিত্তে সচ্ছল সন্তান। কাজেই শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোকে দান-খয়রাতের দৃষ্টিতে দেখলে হবে না। … শিক্ষা প্রশাসনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা এসব বিবেচনায় রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস।’ দেখা যাচ্ছে আমি কেবল বিশ্বাস রেখেই যাচ্ছি!
গত মার্চে এই পাতায় অভিভাবকদের উৎকণ্ঠাকে সহমর্মিতা জানানোর জন্য গোটা একটি লেখা ফেঁদে বসেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম, ‘পৃথিবীর যেকোনো সরকারই সীমাবদ্ধ সম্পদ নিয়ে কাজ করে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই কাজ করা আরও কঠিন।’
আমি লিখে দিতে পারি, এই দেশের প্রতিটি মানুষ এই বাস্তবতা বোঝেন।
কাজেই সরকার যখন একটি নতুন উদ্যোগ নেয়, এতে প্রাথমিক ত্রুটিবিচ্যুতি যদি থাকে, সবাই বোঝেন যে এতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। কিন্তু মানুষ কষ্ট পান, যখন দেখেন কোথাও অবহেলা করা হচ্ছে, অথবা তাঁদের কথা কেউ শুনছেন না কিংবা চুরিচামারি করে তাঁদের করের টাকা শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু এই কষ্ট (একমুখী শিক্ষা, সৃজনশীল শিক্ষা, আগের দশকের প্রশ্নপত্র ফাঁস অস্বীকার করা, বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের দুর্নীতি, নিম্নমানের শিক্ষা উপকরণ ক্রয়—আরও কত কিছু!) ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পেয়েছে।
আমি আশা করব, আমরা যাঁরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে কাজ করছি, তাঁরা সবাই এই ইতিহাস মনে রেখে, শ্রদ্ধেয় অভিভাবকদের উৎকণ্ঠার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তাঁদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নতুন শিক্ষাক্রমে তাঁদের সন্তান যে দক্ষতা, জ্ঞান ও মানসিকতা নিয়ে প্রবেশ করবে, বের হওয়ার সময় যেন তা বহুগুণে বিকশিত হয়, এই প্রতিজ্ঞা যেন আমাদের প্রতিটি নিশ্বাসে থাকে।
কেন আমি জানুয়ারিতে সেই লেখাটি লিখেছিলাম! আমার অবচেতন মন কি তবে ধরে নিয়েছিল যে এই শিক্ষাক্রমের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে?
সর্বশেষ এপ্রিলে এই পাতাতেই লিখেছিলাম, ‘...লেখকের এই লেখা প্রকাশের পরপর সোশ্যাল মিডিয়ার তোলপাড় এবং তার ভিত্তিতে সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তোড়জোড় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে একটি স্থায়ী সোশ্যাল মিডিয়ামুখী জনসংযোগ অধিদপ্তর প্রয়োজন...।’ এই অধিদপ্তর আর হয়নি। আশা করি, নতুন সরকার সেটি করবে।
ভেতরে-বাইরে এই যে ঘ্যানর ঘ্যানর করে যাচ্ছিলাম, একটু যদি উঁচু পর্যায়ের কেউ একজন কোনো একজন অভিভাবকের সঙ্গে একই কাতারে নেমে আসতেন, তাহলে কী হতো? এই আন্দোলনের সময় দেখলাম অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের পানি আর খাবার দিচ্ছেন। কেন তাঁরা ঘরের বাইরে নেমে এসেছিলেন? তাদের ক্ষোভের জায়গাটি কী ছিল? পুলিশের গুলি আর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী আক্রমণ যে বারুদে আগুন জ্বালিয়েছিল, সেই বারুদ কত দিনে জমেছিল?
এই লেখার শিরোনাম ‘তিনটি বড় ভুল’ও হতে পারত! গত এপ্রিলের কথা। ঘটনাচক্রে আমি দেশে। এর মধ্যে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একটি কর্মশালার কারণে সাভার গেলাম। সেখানে আমাকে কিছু কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আমি তখন কিছু লেখচিত্র দেখিয়েছিলাম কীভাবে জিপিএ ব্যবস্থা চালু করার পর থেকে আমাদের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল আদর্শ বেল কার্ভ (পরিসংখ্যানের একটি ধারণা) না হয়ে প্রথম বছরগুলোয় খারাপ ফলাফলের দিকে স্কিউড বা একটু ঝুঁকে থাকা বেল কার্ভ দিয়ে শুরু করে (অর্থাৎ বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী খারাপ করেছে), মাঝখানে বাইমোডাল বেল কার্ভ হয়ে (আমার অনুমান এটি আসলে দুটি বেল কার্ভের সংমিশ্রণ— ধনী আর গরিব বাচ্চাদের মধ্যে বৈষম্যের চিত্র) সবশেষে উল্টো দিকে স্কিউড বেল কার্ভ হয়ে গেছে (অর্থাৎ সবাইকে ঢালাও জিপিএ-৫ দেওয়া হচ্ছে)।
আমি সেই কর্মশালায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম, যদি আমরা মূল্যায়নটি ঠিকমতো করতে ব্যর্থ হই তাহলে আমরা ২০২৫ সালের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে (নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা) আবার বাইমোডাল বেল কার্ভে ফেরত যাব অর্থাৎ এই নতুন কারিকুলাম ধনী ও গরিব বাচ্চাদের মধ্যে আবার বৈষম্য সৃষ্টি করবে এবং দুটি চূড়া দুই আর্থসামাজিক স্তরের গড় ফলাফল দেখিয়ে দেবে। তার আগেই নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে গেল। এক দিক দিয়ে ভালোই হলো—বড় ব্যর্থতার সংখ্যা দুইয়ে আটকে রইল।
নতুন শিক্ষা উপদেষ্টাকে অভিনন্দন। এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবি থেকেই তিনি ধারণা করতে পারছেন, কত কঠিন একটি দায়িত্বে আছেন। আশা করি, শিক্ষাক্রম নিয়ে সরকারের ব্যর্থতার হার তিনি একটু হলেও কমিয়ে আনতে পারবেন।
ওমর শেহাব নিউইয়র্কের আইবিএম টমাস জে ওয়াটসন রিসার্চ সেন্টারে একজন তত্ত্বীয় কোয়ান্টাম কম্পিউটারবিজ্ঞানী। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্সসহ একাধিক এজেন্সির অনুদান পাওয়া গবেষক।