এক দশক ধরেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি উঠছে। এই দাবির পেছনে যুক্তি নেহাত কম নয়। তাঁর আমলে ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য, আবাসনসংকট, তাঁর নিজের নোংরা জনতুষ্টিবাদী আচরণ, দুর্নীতির অভিযোগ ছিলই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ।
বারবারই নেতানিয়াহু বেঁচে গেছেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। এর মধ্যে আবারও নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি ওঠে। নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জোয়ায়েভ গ্যালান্ত ও বিরোধীদলীয় নেতা বেনি গ্যান্তজকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। গত শনিবার রাতে এই মন্ত্রিসভার প্রথম সংবাদ সম্মেলন ছিল। নিষ্প্রভ ওই সম্মেলনে নেতানিয়াহুকে অসংলগ্ন মনে হয়েছে। এরপর যখন সাংবাদিকেরা কড়া কড়া প্রশ্ন করতে শুরু করেন, তখন তিনি দ্রুত সরে যান।
এরপর তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে একটি ধৃষ্টতাপূর্ণ বার্তা পোস্ট করেন। ওই পোস্টে তিনি ৭ অক্টোবরের হামলা ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, হামাসের হামলা বা যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। এই দাবি শতভাগ সত্য নয়। নেতানিয়াহু জেনারেলদের ওপর দায় চাপানোয় ইসরায়েলের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। পরদিন তিনি অথবা তাঁর কার্যালয়ের কেউ ওই মন্তব্যটি মুছে ফেলে পোস্টটির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
৬২ বছর বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল নোয়াম তিবন তাঁর ছেলের পরিবারকে রক্ষার জন্য কিবুতজে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি এখন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করছেন। তিনি ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল ১২-তে বলেছেন, ‘মানুষ নিরাপত্তা বোধ করছে কি না, সেটা জরুরি। তাদের নিশ্চিত হতে হবে যে এই যুদ্ধে তারা জয়ী হবে। আমার মনে হয় না নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে আমরা জয়ী হব।’
ইসরায়েলের বামপন্থী সংবাদপত্র হারেৎজ সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে তারা লিখেছে, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দুটি বস্তুই ইসরায়েলের দখলে। একটা হলো ডেড সি আর অন্যটি হলো নেতানিয়াহুর আচরণ। একটা প্রাকৃতিক বিস্ময়, অন্যটি রাজনৈতিক গোঁজামিল।’ লিকুদের বেশ কয়েকজন সদস্য নাম না প্রকাশ করে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন পত্রিকাটিকে। সেখানে তাঁরা বলেছেন, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন।
যুদ্ধের কারণে স্থানচ্যুত ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ এবং হামাসের হাতে জিম্মি ২৪০ জনের ব্যাপারে উদাসীনতা এই ক্ষোভকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
শনিবারের সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল নেতানিয়াহুর সমর্থন দ্রুত কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কথাবার্তা ও মধ্যরাতে করা টুইট তাঁর সমর্থনে ধস নামিয়েছে। রেইখম্যান ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর লিবার্টি অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটি হামাসের হামলার ১০ দিন পর একটি জরিপ চালায়। ওই জরিপের ফলাফল হলো হামাসের হামলার পর নেতানিয়াহু সরকারের কার্যক্রমে ইসরায়েলের ৭৬ শতাংশ মানুষ বিরক্ত। নেতানিয়াহুর সমর্থন তলানিতে, ১০-এ তিনি পেয়েছেন ৩.৯।
নেতানিয়াহু স্বেচ্ছায় পদ ছাড়বেন, এমন সম্ভাবনা নেই। হয়তো সরকারের ভেতর থেকে আস্থা ভোট হবে, তাতে তিনি পদ ছাড়তে বাধ্য হবেন। তখন হয়তো আরও মধ্যপন্থী একটি সরকার হবে।
গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ
● বেথান মেকারনানগার্ডিয়ান-এর জেরুজালেম প্রতিনিধি