গণতন্ত্র অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। গণতন্ত্র রক্ষার্থে সরকারের জবাবদিহি অপরিহার্য। জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জরুরি হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং।
এসব প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে একদিকে সরকার তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের খবর সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে, অপর দিকে সাংবাদিকেরা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সরকারকে জবাবদিহিতে বাধ্য করে।
প্রেস ব্রিফিং সরকারকে তাদের প্রস্তাবিত লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে সাহায্য করে এবং সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনে সময়মতো আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। প্রেস ব্রিফিং দেশ ও সরকার উভয়কেই সমৃদ্ধ করে।
আমাদের দেশের ইতিহাস হচ্ছে, সরকার একবার ক্ষমতায় বসে গেলে তাদের আর কোনো জবাবদিহি থাকে না। সে ক্ষেত্রে সরকার কেবল নিজেদের প্রয়োজনে জনগণের সামনে আসে।
এসে মূলত নিজেদের বয়ান দেয়, আর সেই সব সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেয়, যারা সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করে। এতে করে সরকার ধীরে ধীরে স্বার্থপর হয়ে ওঠে, জনগণ থেকে সম্পৃক্ততা হারায়, আর দানবে পরিণত হয়।
যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়, তাই তাদের মনে হতে পারে যে জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি কম। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাদের দিকে সারা দেশ আর জাতি অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। সবাই জানতে চান, ইউনূস সরকার কোন কোন লক্ষ্যে কাজ করছেন, সেসব কাজ কোন গতিতে এগোচ্ছে। তাদের কাজের সময়সীমা কম, আর পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের ভেঙে ফেলা রাষ্ট্রীয় কাঠামো মেরামতের কাজ অনেক।
যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়, তাই তাদের মনে হতে পারে যে জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি কম। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাদের দিকে সারা দেশ আর জাতি অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।
সবাই জানতে চান, ইউনূস সরকার কোন কোন লক্ষ্যে কাজ করছেন, সেসব কাজ কোন গতিতে এগোচ্ছে। তাদের কাজের সময়সীমা কম, আর পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের ভেঙে ফেলা রাষ্ট্রীয় কাঠামো মেরামতের কাজ অনেক।
তাই বলে তাদের স্পেস দিয়ে ‘ট্রাস্ট মি ব্রো’ ফিলসফিতে থাকা দেশের জন্য অকল্যাণকর। আমরা জানতে চাই, সরকার কোন কোন কাজ করছে, কীভাবে করছে, কোন কোন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে ইত্যাদি।
আর সেই লক্ষ্যে দরকার ইউনূস সরকারের সপ্তাহে দুই দিন, প্রতি মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার, প্রেস ব্রিফিং। প্রেস ব্রিফিং দেবেন তাঁর প্রেস সেক্রেটারি।
ইতিমধ্যে জানতে পারছি, এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিং করা হবে। এটি খুবই আশাব্যাঞ্জক।
এ প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকেরা। নিশ্চয়ই যেসব প্রশ্নের উত্তরে গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রয়োজন, তা সরকারি মুখপাত্র সুনির্দিষ্টভাবে উত্তর দেবেন।
এতে জনতা, মানে আমরা যেমন সরকারের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারব, তেমনি সরকারও জানবে, জনগণ সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করে।
এতে করে একটা দ্বিপক্ষীয় গণসংযোগ তৈরি হবে, যার একদিকে থাকবে সরকার, আরেক দিকে জনগণ, আর মাঝখানে জনবান্ধব সাংবাদিকেরা।
আশা করব, একইভাবে আলাদা আলাদা প্রেস ব্রিফিং দেবেন স্বরাষ্ট্র, আইন, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের মুখপাত্ররা।
কিছু কিছু ব্যাপারে এসব মন্ত্রণালয়ের গোপনীয়তার প্রয়োজন হবে, সে ক্ষেত্রে মুখপাত্ররা সরাসরি জানিয়ে দেবে যে এই প্রশ্নের উত্তর সংগত কারণে সরাসরি জনগণকে জানাতে তাঁরা পারবেন না, তবে এর ওপর কাজ হচ্ছে কি হচ্ছে না, তা জানাবেন।
আর সাংবাদিকেরাও জোর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন সব জটিল প্রশ্নের উত্তর সরকারের কাছ থেকে বের করে আনার। একবারে না পারলে, বিভিন্নভাবে দিনের পর দিন এসব জটিল প্রশ্ন তাঁরা করে যাবেন।
সব সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এভাবেই সরকারের জবাবদিহি তৈরি করা হয়। ইউনূস সরকার এ ব্যাপারে সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলে, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার তা চালিয়ে নিতে পারবে। আর না করলে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য জনগণের কাছে উন্মোচিত হবে।
সময় হয়েছে দেশের সরকারকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার, জনগণের কল্যাণে কাজ করার আর এই লক্ষ্যে তাদের ক্রমাগত চাপে রাখার। যার ফল দীর্ঘ মেয়াদে দেশ আর জাতি ভোগ করবে। এতে করে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি রোল মডেল দেশে পরিণত হবে।
সাবিনা আহমেদ প্রোগ্রাম ম্যানেজার, জিডি-অ্যাডভান্সড রকেট ডিভিশন, যুক্তরাষ্ট্র