কিছুদিন ধরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংঘটিত অতিবৃষ্টির কারণে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এর মধ্যে ভারত, চীন, জাপান, কোরিয়া ও কম্বোডিয়ার চলমান বন্যা এবং গত বছরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বন্যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৪ জুলাই ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ডসহ উত্তর ভারতে ভারী বর্ষণ এবং বন্যার কারণে ১৪৫ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে, অনেকে নিখোঁজ এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ১৬ জুলাই আল-জাজিরার প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় চার দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে গত বছরের শেষার্ধে পাকিস্তানে যে বন্যা হয়, তা ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে ভয়াবহতম। অতিবৃষ্টির কারণে সে বন্যায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ মানুষকে জীবন দিতে হয়, যার মধ্যে অনেকেই ছিলেন আফগান শরণার্থী। এ ছাড়া প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি গবাদিপশু প্রাণ হারায়। আর হাজার কিলোমিটার রাস্তা ধ্বংস হয়। বন্যার কারণে প্রায় ৩ দশমিক ৫ কোটি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়। এসব মানুষের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বিভিন্ন রিলিফ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে নিদারুণ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ধ্বংস হয় এবং বন্যা-পরবর্তী সময়ে দূষিত পানি পান করে অসংখ্য মানুষ ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত হন।
এ বছর জুন মাসেও পাকিস্তানে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আফগানিস্তানেও গত বছর অতিবৃষ্টিতে বন্যা ও ভূমিধস দেখা দেয়। এ বন্যা পাকিস্তানের মতো অতটা ভয়াবহ না হলেও আফগান সরকারের ভাষ্যমতে, এটা ছিল এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ঘটনা। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যায় প্রায় ১৮০ জন প্রাণ হারান। অন্যদিকে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে ভূমিধস নেপালে একটা নিয়মিত ঘটনা হলেও সেখানে গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আকস্মিক বন্যায় নেপালে ৭৭ জন প্রাণ হারান।
লক্ষণীয় হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ অতিবৃষ্টি সংশ্লিষ্ট দেশে বা অঞ্চলে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস, এশিয়া প্যাসিফিকের ১১ জুলাই তারিখের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বর্তমান বর্ষা মৌসুমে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হিমাচল প্রদেশে বছরের এ সময়ের গড় বৃষ্টির ১০ গুণেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। জাপানের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থার মতে, এ মাসে জাপানের কুরুমি শহরে এক দিনে রেকর্ড ৪০২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তিন বছর আগেও অতিবৃষ্টির কারণে বন্যায় জাপানে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশে দেশে কেন এত বৃষ্টি হচ্ছে?
এ প্রসঙ্গে জাপানের অতিবৃষ্টির কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির ওপর দ্য ইকোনমিক টাইমসের এ মাসের ১১ তারিখের একটি প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ উল্লেখযোগ্য। পত্রিকাটি অতিবৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত হিসেবে তাপমাত্রার বৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী খরা একটি সাধারণ প্রবণতা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এখন দীর্ঘস্থায়ী অনাবৃষ্টি চলছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি কেন হয়, সেটি আরেক প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বর্ধিত তাপমাত্রা বৃষ্টির তীব্রতা বৃদ্ধি করে। কারণ, উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণ পানি থাকে, যা ভারী বৃষ্টিপাত ঘটায়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষত বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে এ অভিঘাতের মাত্রা বেশি অথচ মোকাবিলা করার সম্পদ কম, সেসব দেশে বিষয়টি বাস্তবিকভাবেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় গৃহীত পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট সব ধরনের বিশেষজ্ঞ মতামতের অন্তর্ভুক্তি থাকা প্রয়োজন।
এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসা যাক। ভাটির দেশ হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদীগুলো ফুলে ওঠে কূল ভেঙে। কূলের বাঁধ ভেঙে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া বাংলাদেশের জন্য একটা নিয়মিত ঘটনা। মাঝেমধ্যে এর সঙ্গে যোগ হয় বড় আকারের বন্যা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে দেশের নিচু এলাকার হাজার হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। ২০২২ সালের মে মাসের শেষ দিকে সিলেটে যে বন্যা দেখা দেয়, তাতে প্রায় ৩৫ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাওরের পানি বেড়ে হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে যাওয়া প্রতিবছরের দুশ্চিন্তার কারণ।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১৮% এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয় এবং প্রায় প্রতি ১০ বছর অন্তর একটা করে বড় বন্যা আসে। এ বছর এরই মধ্যে দেশের বেশ কয়েক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ১৪ জুলাই তারিখে কুড়িগ্রামে বন্যায় প্রায় এক লাখ ও চিলমারীতে পাঁচ হাজার পানিবন্দী মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছিল (প্রথম আলো ১৫ জুলাই, ২০২৩)। তা ছাড়া লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। দুধকুমার ও ধরলার পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সমানে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত হিসেবে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে সম্ভাব্য যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা সত্যিই দুশ্চিন্তার কারণ। অন্যদিকে আমাদের নদ-নদী ও জলাভূমির বর্তমান অবস্থার দিকে তাকালে এ দুশ্চিন্তা আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। যমুনার পানি উপচে সৃষ্ট দিল্লির বর্তমান বন্যার কারণ বিশ্লেষণে যা বলা হচ্ছে, তা একটু খেয়াল করলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
মোটদাগে দুটি বিষয়কে দিল্লির বন্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রথমত, অতিবৃষ্টি আর দ্বিতীয়ত হাতনিকুন্দ বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়া। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন যে হাতনিকুন্দ বাঁধের ওপারের পানি ছাড়তে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, বাঁধটি হরিয়ানা রাজ্যের যমুনানগর জেলায় যমুনা নদীর ওপর নির্মিত, যা ২০০৪ সালে চালু হয়। এ বাঁধের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা পানি হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশের কৃষিকাজ এবং উজানে যমুনার শাখা নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
যাহোক, বিশ্লেষকেরা অবশ্য শুধু অতিবৃষ্টি ও বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়াকে দিল্লিতে বন্যার কারণ বলতে রাজি নন। তাঁদের মতে, দিল্লির বন্যার জন্য আর যেসব কারণ দায়ী, সেগুলোর মধ্যে আছে দিল্লিতে ২২ কিলোমিটারের মধ্যে যমুনা নদীর ওপর ২৫টি সেতু নির্মাণ; নদী দখল, জলাভূমি ও প্লাবনভূমি কমে যাওয়া; প্লাবনভূমিতে আবর্জনা ফেলা; ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ত্রুটি ইত্যাদি। যাহোক, অতিবৃষ্টি যে যমুনার বর্তমান পানি বাড়ার জন্য একটা বড় কারণ, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। হাতনিকুন্দ বাঁধের উজানে অতিরিক্ত পানির চাপের প্রধান কারণও এই অতিবৃষ্টি।
কিন্তু ওপরের কারণগুলো একসঙ্গে করলে যা দাঁড়ায় তা হলো, যমুনা নদীর পানি ধারণ ও পানি বহনক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এ হ্রাসের পেছনে যে মৌলিক কারণ, তা ওপরের বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়নি। সে কারণটি হলো হাতনিকুন্দ বাঁধ। যে উদ্দেশ্যেই হোক, বাঁধ দিয়ে একটা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ যখন ব্যাহত করা হয়, তখন বাঁধের পরের অংশে পানির প্রবাহ কমে আসে, ফলে নদীর গভীরতা তথা পানি ধারণক্ষমতা এবং পানি বহনক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পায়। তখন যেকোনো উৎস থেকে আসা পানি উপচে দুই কূল প্লাবিত হয় আবার শীত-গ্রীষ্মে শুকিয়ে যাওয়া নদী খুব স্বাভাবিকভাবেই দখল আর দূষণের স্বীকার হয়।
একটু গভীরভাবে দেখলে বোঝা যাবে যে আমাদের নদ-নদীর অবস্থা দিল্লিতে যমুনার অবস্থার চেয়ে কোনো অংশেই ভালো নয়; বরং অনেকাংশেই খারাপ। যথেষ্ট পানিপ্রবাহের অভাবে আমাদের অনেক নদী এখন ক্ষীণ স্রোতোধারায় পরিণত হয়েছে। আমরা ছোটবেলায় যেসব খাল-বিল দেখেছি, তার অনেকগুলোর কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। আমাদের বড় নদীগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে লিখেছিলেন, ‘পদ্মার অতল তল কেউ কোনো দিন দেখে দেখেনি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে সেই পদ্মার বুকে এখন গরুর গাড়ি চলে।’ হাতনিকুন্দ বাঁধ ভারতের অনেক গভীরে বলে এ বাঁধ থেকে ছাড়া পানি সরাসরি বাংলাদেশকে প্রভাবিত করেনি। কিন্তু এমন বাঁধ আছে, যার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত গঙ্গা নদীর ওপরে অবস্থিত ফারাক্কা ব্যারেজ বাংলাদেশের শিবগঞ্জ থেকে মাত্র ১১ মাইল দূরে অবস্থিত। এখান থেকে পানি ছাড়লে বা প্রত্যাহার করলে তার প্রভাব প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এ দেশে পড়ে। অন্যদিকে যথেষ্ট পানিপ্রবাহের অভাবে নদ-নদী যখন স্রোত হারায়, তখন সহজেই সেগুলো দখল ও দূষণের স্বীকার হয়। আমাদের জলাভূমি ও প্লাবন ভূমিরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। নিচু জমি ভরাট করে ইমারত নির্মাণের উৎসব যথারীতি বহাল আছে। তা ছাড়া সড়ক ও বাঁধ নির্মাণে দূরদর্শিতায় ঘাটতি থাকায় বৃষ্টির সময় নিচু এলাকায়, বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে সহজেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আর ‘দরিয়া মে ঢাল’-এর সংস্কৃতি তো আমাদের আছেই। তাই জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো আমাদের এ বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ হওয়া দরকার।
আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। তা হলো, জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাত হয় চরম এবং বহুমুখী। এটা শুধু অতিবৃষ্টি সৃষ্টি করে না, তীব্র তাপপ্রবাহ ও দাবদাহও সৃষ্টি করে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত এপ্রিলে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকা এমন তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছিল, যা বছরের ওই সময়ে ওই অঞ্চলে আগে কখনো দেখা যায়নি। তখন ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল।
এদিকে ইউরোপে সর্বকালের সর্বাধিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে (আল-জাজিরা ১৬ আগস্ট)। ইতালি, স্পেন ও গ্রিসে চলছে উচ্চ তাপপ্রবাহ। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাজধানী রোমসহ ১৬টি শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ক্যালিফোর্নিয়া ও কানাডার সাম্প্রতিক বৃহত্তর দাবানলকে ইন্ধন দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ১০টি বৃহত্তম দাবানলের মধ্যে ৮টি ঘটেছে ২০১৭ সালের পর, যার মধ্যে ৫টিই ঘটেছে ২০২০ সালে। তাই দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের এক প্রান্ত পোড়াচ্ছে আর অন্য প্রান্ত ডোবাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষত বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে এ অভিঘাতের মাত্রা বেশি অথচ মোকাবিলা করার সম্পদ কম, সেসব দেশে বিষয়টি বাস্তবিকভাবেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় গৃহীত পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট সব ধরনের বিশেষজ্ঞ মতামতের অন্তর্ভুক্তি থাকা প্রয়োজন। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় বাজেটে যুক্তিসংগত বরাদ্দ থাকা অপরিহার্য। সঙ্গে সঙ্গে এ-সম্পর্কিত নীতিমালা ও কর্মপন্থা বাস্তবায়নে কোনোরূপ শৈথিল্য বা দুর্নীতির বিষয়ে আক্ষরিক অর্থেই শূন্য সহনশীলতা দেখানো দরকার।
সেখ মোজাফফর হোসেন: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক