দেশে হচ্ছেটা কী? এই নিয়ে ফেসবুক গরম, টক শোগুলো সরগরম, পত্রপত্রিকাগুলো গরমাগরম। আমরা গদ্যকার্টুনের সিরিয়াস আলাপ করব না। কৌতুক করব।
একজন তাঁর সামনে বসা মানুষদের বললেন, ‘আপনাদের মধ্যে যদি এমন কেউ থেকে থাকেন, যিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি দাঁড়ান।’
পুরো ক্লাস সটান বসে থাকল।
একজন দাঁড়াল।
‘আপনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?’
‘স্যার, আপনাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খারাপ লাগল, তাই আমিও দাঁড়ালাম।’
এই কৌতুকটা এভাবেও বলা যায়। আপনাদের মধ্যে কেউ কি ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় কয়েকটা ফ্ল্যাট, কয়েক শত বিঘা জমি, রিসোর্ট ইত্যাদির মালিক হয়েছেন?
একজন দাঁড়াল?
আপনি এই রকম বড় দুর্নীতিবাজ?
স্যার, আপনাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খারাপ লাগল। তাই দাঁড়ালাম।
আচ্ছা, কেন ওই লোক একা দাঁড়িয়ে আছেন?
এই কৌতুকটা শুনুন।
একটা নাপিতের দোকানে একটা ছোট ছেলে ঢুকল। নাপিত তখন দোকানে উপস্থিত অন্য খদ্দেরদের উদ্দেশে বলল, এই ছেলেটা হলো বোকার বোকা।
তাই নাকি?
আপনাদের প্রমাণ দেখাচ্ছি।
তখন নাপিত এক হাতে ৫০ টাকার নোট আরেক হাতে ১০০ টাকার নোট ধরে বলল, তুমি যেকোনো একটা নিতে পারো। কোনটা নেবে নাও।
ছেলেটা ৫০ টাকার নোট নিয়ে চলে গেল।
নাপিত বলল, দেখলেন, কী রকম বোকা।
ছেলেটা টাকা নিয়ে আইসক্রিমের দোকানে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম কিনছে। একজন খদ্দের সেখানে গেলেন। তাকে বললেন, খোকা, তুমি ১০০ টাকা না নিয়ে ৫০ টাকা নিলে কেন?
ছেলেটা বলল, নাপিত ভদ্রলোক এই খেলা প্রায়ই আমার সঙ্গে খেলেন। আমি যদি ১০০ টাকার নোট নিই, এই খেলা সেদিনই শেষ হয়ে যাবে। ৫০ টাকা নিই বলে প্রায় নিয়মিতই খেলাটা চলে।
এই কৌতুক থেকে দুটো উপদেশ পাচ্ছি। ১. টাকা সরাতে হবে। তবে তা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। ২. নিজেকে বেশি চালাক বলবার কোনো কারণ নেই।
কাকতাড়ুয়া টাঙানো হয়েছে, যাতে কোনো কাক আসতে না পারে।
দুটো কাক সেদিকে তাকাচ্ছে।
১ম কাক: দেখো তো, ওইটা কি সত্যিকারের মানুষ, নাকি কাকতাড়ুয়া।
২য় কাক: মনে হচ্ছে না সত্যিকারের মানুষ। এইটা খড়কুটো হাঁড়ি দিয়ে বানানো একটা মূর্তিমাত্র।
১ম: কী করে বুঝলে ওটা মানুষ নয়?
২য় কাক: ওর হাত দুটো লক্ষ করো। হাতে কোনো মোবাইল ফোন নাই।
এটা বোধ হয় বাঙালির জন্যই প্রযোজ্য। বাঙালির আছে মোবাইল ফোন। এবং বাঙালির আছে ফেসবুক। যা-ই ঘটুক না কেন, তারা একটা কাজই করবে। ফেসবুকে যাবে এবং ওই বিষয়ে তার মতটা জানাবে। এর মাধ্যমে সে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক এবং বিশ্বনাগরিকের দায়িত্ব পালন করছে। গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলছে, দেশে দুর্নীতি প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদির বিরুদ্ধে তার যে কঠিন প্রতিবাদ করার কথা, তা সে সাফল্যের সঙ্গেই করে ফেলতে পারছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখলেন একটা জায়গায় ভীষণ বড় একটা লাইন। তিনিও গিয়ে লাইনের পেছনে দাঁড়ালেন।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারলেন না তিনি। সামনের জনকে ট্রাম্প জিগ্যেস করলেন, এই কিউ কেন? কী দেয়া হচ্ছে এখানে?
কানাডার ভিসা। তবে আপনি যদি কানাডার ভিসা নেন, তাহলে আমাদের আর কষ্ট করে কানাডার ভিসা সংগ্রহ করে রাখতে হবে না।
বাইডেন-ট্রাম্প বিতর্কের পর এই কৌতুকটা আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বটে।
আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলছে। একজন গ্যালারিতে দামি আসনে বসে আছেন। তার পাশের আসন ফাঁকা। আরেকজন দর্শক তাঁকে জিগ্যেস করলেন, আপনার পাশের সিট ফাঁকা কেন?
আসলে এই সিটের টিকেটও আমার পকেটে। ওটা আমার স্ত্রীর জন্য কেনা হয়েছিল। তিনি আর্জেন্টিনার খুব ভক্ত ছিলেন।
আহা। তাঁর স্মরণে আপনি দুটো টিকিট কিনে রেখেছেন। একটা ফাঁকা রাখলেন। তা এটা আপনার কোনো বন্ধুকে দিলেও তো পারতেন।
আমার বন্ধুদের কথা আর বলবেন না। তাঁরা আমার স্ত্রীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়াটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন।
আসলেই সবই প্রায়োরিটির ব্যাপার। কোনটাকে আপনি অগ্রাধিকার দেবেন!
ড্রাইভার নিয়ে যখন দেশ ওলট-পালট হচ্ছে, তখন ড্রাইভারকে নিয়ে আইনস্টাইনের কৌতুকটা মনে করা যেতে পারে।
আইনস্টাইনের ড্রাইভার বলল, আপনি সব জায়গায় একই লেকচার দেন। আমি পেছনের আসনে বসে প্রতিবার শুনি। আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আমি আপনার বদলে লেকচার দিতে পারব।
একটা সভায় আইনস্টাইন গিয়ে বসলেন পেছনের সিটে। আর তাঁর ড্রাইভার বক্তৃতা দিতে শুরু করল। সে নির্ভুলভাবে আইনস্টাইনের লেকচার দিয়ে ফেলতে পারল।
এবার প্রশ্নোত্তর পর্ব।
একজন প্রশ্ন করল। ড্রাইভার তো আর নতুন প্রশ্নের উত্তর জানে না। সে বলল, এত সহজ একটা প্রশ্ন। এর উত্তর আমার ড্রাইভার দিতে পারবে। সে হলরুমের পেছনের আসনে বসে আছে। ড্রাইভার উত্তরটা দিয়ে দাও তো।
আইনস্টাইন উত্তর দিলেন।
পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস করে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের একটা রুমে রাখা হতো। সেখানে প্রশ্ন ও উত্তর দুটোই শিখিয়ে দেয়া হতো। একজন ড্রাইভার বাসা ভাড়া করা ইত্যাদি সামলাতেন। এই ড্রাইভার দেখা যাচ্ছে আইনস্টাইনের ড্রাইভারের চেয়েও স্মার্ট।
শেষ কৌতুক। ঠিকমতো কানে শুনতে পান না, এমন দুই ব্যক্তি কথা বলছেন।
‘কী ভাই, হাটে যান?’
‘না ভাই, হাটে যাই।’
‘ও, আমি ভেবেছিলাম, আপনি হাটে যান।’
ছাত্ররা কোটা–সংস্কার চায়, সরকার কোটা–সংস্কার চায়, সুশীল সমাজ কোটা–সংস্কার চায়! বাতিল কেউই চান না। তারপরেও দেশে হচ্ছেটা কী?
আমাদের আসলে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার সেই শিশুটিকে দরকার:
শিশুটি কোথায় গেল? কেউ কি কোথাও তাকে কোনো
পাহাড়ের গোপন গুহায়
লুকিয়ে রেখেছে?
নাকি সে পাথর-ঘাস-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতে
ঘুমিয়ে পড়েছে
কোনো দূর
নির্জন নদীর ধারে, কিংবা কোনো প্রান্তরের গাছের ছায়ায়?
যাও, তাকে যেমন করেই হোক
খুঁজে আনো।
সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
নির্ভয়ে দাঁড়াক।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক:
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?
আনিসুল হক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক