প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের সম্পর্কের আরও কিছু দিক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজের কর্মজীবন নিয়ে বিচার ও প্রশাসন: ভেতর থেকে দেখা নামে একটি বই লিখেছেন। ২০০৭ সালে যখন সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, তখন তিনি ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। কিছুদিন পর একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। তিনি এ বইয়ে সেই সময়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তাঁর বই থেকে চুম্বক অংশগুলো নিয়ে তিন পর্বের একটি লেখা গত ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন ধারাবাহিকভাবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। সেটার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই লেখা লিখেছেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন

ফখরুদ্দীন আহমদ ও মইন ইউ আহমেদ

এক–এগারোর পর সেনা–সমর্থিত অসামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল দুই বছর (২০০৭ ও ২০০৮ সাল)। ২০০৮ সালের শেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই সরকার বিলুপ্ত হয়। আমার বন্ধু কাজী হাবিবুল আউয়াল, যিনি এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্ত আছেন, তাঁর নিজ কর্মজীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন। 

তাঁর বইয়ে এক–এগারো সরকারের সময় তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে ‘চুম্বক অংশ’ নিয়ে প্রথম আলোতে তিন পর্বে লেখা বেরিয়েছে সম্প্রতি। এর তৃতীয় পর্বের শিরোনাম ছিল, ‘কেমন ছিল প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের সম্পর্ক’। এই সম্পর্ক নিয়ে খুবই সীমিত আকারে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন তিনি বিধৃত করেছেন। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পাঠকের আগ্রহ নিরসনে সহায়ক হতে পারে।

তবে সবার আগে প্রথম পর্বে উল্লিখিত তাঁর দুটি অনিচ্ছাকৃত ভুল তথ্য বরং সংশোধন করে নিই। এক–এগারোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন আলী ইমাম মজুমদার, সোলেমান চৌধুরী নন। দ্বিতীয়ত, সেদিন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের অফিসকক্ষে প্রবেশ করে সামরিক–অসামরিক যে কর্মকর্তাদের তিনি ‘ঠাসাঠাসি করে’ বসে থাকতে দেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আমি ছিলাম না। 

সেদিন সন্ধ্যায় আমি সস্ত্রীক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম সংসদ সদস্য ক্লাবে। আমাদের নিমন্ত্রণদাতাকে আমি বলছিলাম যে রাত ১০টা থেকে কারফিউ থাকবে, এর আগেই যেন তিনি অনুষ্ঠান শেষ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ সময় আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন আমি কোথায়? উত্তর দেওয়ার পর তিনি নির্দেশ দিলেন খাওয়া শেষ হলে আমি যেন বঙ্গভবনে চলে আসি। আমি যখন বঙ্গভবনে সামরিক সচিবের অফিসে পৌঁছালাম, তখন রাত ১০টার মতো বাজে। কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যরা এর আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বিচারপতি কুদ্দুস চৌধুরীসহ। 

■ প্রস্তাবটি যখন ড. ফখরুদ্দীনকে দেওয়া হয়, তিনি সিদ্ধান্ত দিতে খানিকটা সময় চেয়েছিলেন। এরপর তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি এই পদ গ্রহণে সম্মতি প্রদান করেন। 

■ সম্পূর্ণ শিখণ্ডী হয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করতে হবে, এমনটি মনে হয় কখনো ভাবেননি ফখরুদ্দীন সাহেব। 

■ স্পষ্টতই সম্পর্কটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ফখরুদ্দীন সাহেব সরে যাওয়ার কথাও চিন্তা করছিলেন। 

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। সভা শেষে বেশ রাতে যখন আমরা বের হয়ে আসছি, তখন মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জিজ্ঞাসা করলাম, প্রধান উপদেষ্টা কে হচ্ছেন। নিশ্চয়তা না দিয়ে তিনি বললেন, প্রফেসর ইউনূস। পরদিন শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনে যাওয়ার আগেই অবশ্য জানা গেল অধ্যাপক ইউনূস রাজি না হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা হচ্ছেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। 

বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে কানাঘুষায় একটি কথা শোনা গেল যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রস্তাব দিতে হয়েছিল অনেকটা বাধ্য হয়ে। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় এক–এগারোর কুশীলবেরা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে ড. ইউনূসের উচ্চ অবস্থানের কারণে তাঁকে সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে—তাঁরা এমনটা মনে করেছিলেন।

বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে আমি জেনেছি যে প্রস্তাবটি যখন ড. ফখরুদ্দীনকে দেওয়া হয়, তিনি সিদ্ধান্ত দিতে খানিকটা সময় চেয়েছিলেন। এরপর তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি এই পদ গ্রহণে সম্মতি প্রদান করেন। 

ড. ইফতেখার আহমদ চৌধুরী তখন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত। তাঁকে ঢাকায় ‘কনসাল্টেশনে’ ডাকতে বলা হয়। কেন ডাকা হচ্ছে তা অবশ্য আমি জানতাম। ঢাকায় আসার পর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন, দায়িত্ব পেলেন পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।

পরের সপ্তাহে ডাক পড়ল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। সেই সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত বিপুলসংখ্যক রাষ্ট্রদূতের ঠিকুজি কুষ্ঠি সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হলো আমাকে। প্রধান উপদেষ্টার কক্ষে যখন ঢুকলাম, তখন তাঁর টেবিলের উল্টো দিকে মুখোমুখি বসা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, তাঁর ডানে সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, আর বাঁয়ের চেয়ারটা খালি। বলা বাহুল্য, ওটা আমার জন্য নির্ধারিত ছিল। 

আমার কাজ হলো প্রত্যেক রাষ্ট্রদূতের বিস্তারিত উপস্থাপন করা, কত দিনের চুক্তিতে আছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কতটা সময় পার হয়েছে, আর কতটা বাকি ইত্যাদি। একটু দীর্ঘদিন যাঁদের বাকি অথবা যাঁরা সদ্য চুক্তিতে গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের চুক্তি বাতিল করে ফেরত আনার সিদ্ধান্ত হলো আর অল্প কয়েকজনের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল। 

ফেরত আসছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ উচ্চ পেশাদারত্বসম্পন্ন রাষ্ট্রদূতেরাও ছিলেন, যেমন ছিলেন দুজন সেনা কর্মকর্তাও। তাঁদেরকে সেটা জানানোর বিব্রতকর দায়িত্বও দেওয়া হলো আমাকে। উপদেষ্টা মহোদয় কথা বলছিলেন কম, অধিকাংশ সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন সেনাপ্রধান, প্রধান উপদেষ্টা খানিকটা গম্ভীরভাবে মেনে নিচ্ছিলেন। 

দু-একটা ক্ষেত্রে যেখানে তাঁর নিজস্ব দ্বিমত ছিল, সেটা তিনি উপস্থাপন করছিলেন সেনাপ্রধানের দিকে তাকিয়ে, অনেকটা সুপারিশ ও অনুরোধের স্বরে। সেনাপ্রধানও আর সে ক্ষেত্রে আপত্তি করছিলেন না। কিন্তু সেই কক্ষে কার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ ছিল না। 

এটা প্রথমবারের ঘটনা। এরপর বেশ কয়েকবার প্রধান উপদেষ্টার নেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়েছে সেনা সদর থেকে আসা নির্দেশনায়। যেসব মিশনপ্রধানের পদ খালি হলো, সেসবে নিয়োগের উদ্যোগ নিলাম। সেনা কর্মকর্তা কজনের নাম এল এবং বিনা বাক্যব্যয়ে তাঁদের পদায়ন করা হলো। 

পররাষ্ট্র ক্যাডারের একজন বেশ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তখন ভুটানে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন বিমর্ষ চিত্তে। তাঁকে উদ্ধারের জন্য কুয়েত প্রস্তাব করলাম। যথারীতি উপদেষ্টার স্বাক্ষর এবং প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নেওয়া হলো। হঠাৎ জেনারেল মইনের ফোন পেলাম। তিনি বললেন, ‘উনি তো কোনো কাজের না, উনাকে কেন পাঠাচ্ছেন কুয়েতে? ওটা বাতিল করুন।’ 

এ রকম অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের শরণাপন্ন হলাম। তিনি খুব বাস্তববাদী মানুষ। বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে বললেন।
কদিন পর এনডিসিতে আমার সহপাঠী ছিলেন এক মেজর জেনারেল, তাঁকে মনোনীত করা হলো কুয়েতের জন্য। 

একবার এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। লন্ডনে হাইকমিশনার ছিলেন সাবিহউদ্দিন সাহেব। তাঁকে ফেরত এনে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হলো পররাষ্ট্র ক্যাডারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে। তিনি অবসরে যাবেন ২০০৮ সালের নভেম্বরে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে, এরপর নতুন সরকার।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় হঠাৎ আমার সামনেই প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার নাম প্রস্তাব করে বসলেন। আমি বললাম, ‘এটা ঠিক হবে না। লন্ডন একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশন, সেখানে কাকে পাঠাবে, নতুন সরকার এসে বরং সেই সিদ্ধান্ত নিক (পরে তাই হয়েছিল)। এখন যিনি আছেন, তাঁকে আমরা ছয় মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে দিতে পারি।’

সে মতোই সিদ্ধান্ত হলো আর প্রধান উপদেষ্টার সুপারিশসহ ফাইল গেল রাষ্ট্রপতির কাছে। কারণ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তাঁর অনুমোদন লাগে। সেখান থেকে ফাইল আর নড়ে না। ফোনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুসন্ধান হয়। মনে হলো অতি দুর্বল ম্রিয়মাণ রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন হঠাৎ বাঘে পরিণত হয়েছেন। 

অবশেষে জানতে পারলাম, ‘তাদের’ না জানিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সেনা সদর রুষ্ট। তখন হাইকমিশনারকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়ার সময়ও নেই। ‘সার্ভিস ব্রেক’ হয়ে গেলে তিনি পেনশন–সুবিধাদি নিয়ে সমস্যায় পড়বেন। ‘এক্স পোস্ট ফ্যাক্টো’ বা পরবর্তী সময়ে নির্দেশ জারি করে নিয়মিতকরণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হয়েছিল পরে। 

সম্পূর্ণ শিখণ্ডী হয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করতে হবে, এমনটি মনে হয় কখনো ভাবেননি ফখরুদ্দীন সাহেব। সেনা নিয়ন্ত্রণ থাকবে এটা তিনি নিশ্চয় জানতেন। কিন্তু তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে তাঁকে অবিরাম নির্দেশনা শুনতে হবে, এটা সম্ভবত তাঁর কল্পনায় ছিল না। তাঁর কার্যালয়ে গেলে আমরা অপেক্ষা করতাম তাঁর একান্ত সচিবের কক্ষে (যিনি সরকারের অতিরিক্ত সচিব)। সেখানে গল্পগুজবে বোঝা যেত ফখরুদ্দীন সাহেব তাঁর পরিস্থিতিতে মোটেই খুশি নন। একদিন বিকেলে হঠাৎ তাঁর ফোন, ‘তৌহিদ, তোমার কি একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে, গুলশানে ভাড়া দেওয়ার জন্য? 

আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। আমি এখন যেখানে থাকি, এটা সেই ফ্ল্যাট। ভাড়াটে ছিল, চলে গেছে, নতুন ভাড়াটে খুঁজছি—ফখরুদ্দীন সাহেবের তো সেটা জানার কথা নয়। বললাম, ‘জি, স্যার।’ ‘কত ভাড়া চাও?’ জিজ্ঞেস করলেন উনি। আমি বললাম, ‘স্যার, কার জন্য, তার ওপর নির্ভর করবে।’ ‘আমার জন্য’, বললেন উনি।

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি তাঁকে একটা অঙ্ক বললাম। উনি বললেন, ‘তুমি আপাতত কাউকে ভাড়া দিয়ো না, আমি তোমাকে জানাব।’ এক সপ্তাহ পর বললেন, ‘ঠিক আছে তৌহিদ, তোমার অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া
দিয়ে দাও।’ স্পষ্টতই সম্পর্কটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ফখরুদ্দীন সাহেব সরে যাওয়ার কথাও চিন্তা করছিলেন। 

জেনারেল মইন ভারত সফরে যান ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অনেক লাফঝাঁপ, মাইনাস টু, কিংস পার্টি ইত্যাদি সেরে তত দিনে তিনি এবং তাঁর সভাসদদের বোধোদয় হয়েছে যে তাঁদের ক্ষমতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। নির্বাচন হলে অনুমিতভাবেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরবে। 

দুর্মুখরা বলেন যে তিনি ভারত গিয়েছিলেন এই নিশ্চয়তা পেতে যে পরবর্তী সরকারের আমলে তাঁকে সম্মানজনক এবং নিরাপদ প্রস্থানপথ দেওয়া হবে। ছয় দিন সফরের প্রথম দিনটি ছিল গতানুগতিক। কিন্তু পরদিন থেকে তাঁকে সর্বোচ্চ আতিথেয়তা দেওয়া হয় এবং তিনি ফিরে আসেন ভারতীয় সেনাপ্রধানের কাছ থেকে কতিপয় ঘোড়া উপহার নিয়ে, হয়তো সঙ্গে সেই নিশ্চয়তাও।

তারিখটা মনে নেই, ২০০৯ সালের মার্চের কোনো একদিন জেনারেল মইন আমাকে ফোন করেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, আমি নিজেও পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব ত্যাগের দিন গুনছি। তিনি বললেন, ‘তৌহিদ সাহেব, নিউইয়র্কে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে আমার নিয়োগের কথাবার্তা হচ্ছে, এ ব্যাপারে আপনার সহায়তা দরকার।’

আমি বললাম, ‘আপনি তো জানেন এ ধরনের নিয়োগের সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্রসচিব নেন না।’ উনি বললেন, ‘আমি সেটা জানি, আমি শুধু চাই যে যদি আমার নাম প্রস্তাব করা হয়, তা হলে আপনি আপত্তি করবেন না।’ 

মানুষের আশার শেষ নেই। ইফতেখার চৌধুরী সাহেবও ভাবছিলেন তিনি আবার আগের সেই পদে ফিরে যেতে পারবেন এবং সেই লক্ষ্যে তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমাত জাহানকে বদলির নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়েছিল। দুজনেরই আশার গুড়ে বালি। ইসমাত বদলি হলেন বেলজিয়ামে। আর সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগ বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ড. আবদুল মোমেনকে নিয়োগ দেওয়া হয় নিউইয়র্কে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে। 

মো. তৌহিদ হোসেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব