সময় ও জীবন আল্লাহর দান। সময়ের হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে আছে; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)
কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘প্রাচুর্যময় তিনি, যাঁর হাতে সব ক্ষমতা। তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান, যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যাতে পরীক্ষা করবেন তোমাদের মাঝে কাজে কারা ভালো। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা-৬৭ মুলক, আয়াত: ১-২)
জীবনে সময়ের মূল্য সবচেয়ে বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, ‘সৌভাগ্যবান কারা?’ তিনি বললেন, ‘সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে।’ পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘দুর্ভাগা কারা?’ তিনি বললেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি: ২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৭৩৪, হিলইয়াতুল আউলিয়া-৬: ১১১, মিশকাত: ২২১০, সহিহ আলবানি)
মানুষকে তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক কদমও নড়তে পারবে না। তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না।’ (তিরমিজি-৪: ৬১২/২৪১৬, মিশকাত: ৫১৯৭, ইবনে হিব্বান, সহিহ আলবানি) কিন্তু মানুষ মোহাচ্ছন্ন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় অত্যাসন্ন; কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে। যখনই তাদের নিকট তাদের রবের পক্ষ থেকে কোনো উপদেশ, নিদর্শন বা সতর্কবার্তা আসে, তখন তারা তা দেখে ও শোনে খেলাচ্ছলে। তাদের অন্তর অমনোযোগী। আর জালিমেরা গোপনে কুমন্ত্র দেয়।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ১-৩)
প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। সেগুলো হলো যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে। (বায়হাকি, শোআবুল ইমান: ১০২৪৮, মুসনাদে হাকিম: ৭৮৪৬, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, ৪: ২০৩, সহিহ আলবানি)
সময়ের প্রতি অবহেলা সম্পর্কে সাবধান করে আল্লাহ তাআলা কোরআন আজিমে বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহ দেখতে পাও (তোমাদের মৃত্যু হয়)। এটি কখনো সংগত নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবারও বলি, এটি মোটেই সমীচীন নয়; তা তোমরা অনতিবিলম্বে জানতে পারবে। না, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা মোহগ্রস্ত হতে না। তোমরা (সময়ের প্রতি উদাসীন, কর্মে অবহেলাকারীগণ) অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে (তাতে প্রবেশ করবে)। পুনশ্চ! অবশ্যই অতি অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম চাক্ষুষ দেখে (তাতে প্রবেশ করে তার শাস্তি ভোগ করে) প্রত্যয় লাভ করবে। অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের প্রদত্ত সব নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা-১০২ তাকাসুর, আয়াত: ১-৮)
প্রায় সময় আমরা নানা ব্যস্ততায় ব্যতিব্যস্ত থাকি। সময় চলে গেলে তা আর কখনো ফিরে আসে না। যেকোনো উপলক্ষে অবসর যখন আসে, তা আমাদের জন্য মহামূল্যবান নিয়ামত। সময় আমাদের জীবনের এমন একটি মূলধন, যা বিনিয়োগ করলে আমরা ইহকাল ও পরকালে লাভবান হব; আর এটি হেলায় নষ্ট করলে উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হব।
আমরা অবসরে যে আমলগুলো করতে পারি, তা হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত যথাসময়ে আদায় করা। পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ—তাহাজ্জত, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল, আউয়াবিন ও সালাতুত তাসবিহসহ অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামাজ পড়া। অজু, গোসল ও নামাজের মাসআলা মাসায়েল, সুরা-কিরাআত ও দোয়া–কালাম ভালোভাবে জানা।
যাঁরা অবসরজীবন যাপন করছেন, তাঁদের কর্তব্য হলো ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করা। পারিবারিক পরিমণ্ডলে নিয়মিত দ্বীনি তালিমের আয়োজন করব। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইবাদতে আগ্রহ তৈরি হবে। পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে এবং নানান রকম মন্দ আকর্ষণ, আসক্তি ও হতাশা থেকেও রক্ষা পাবে; সময়ও ভালো কাটবে, শরীর ও মন ভালো থাকবে। আনন্দঘন সময় ইবাদতে পরিণত হবে। আল্লাহর রহমত লাভ হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবি হাসিল হবে।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম