পর্যালোচনা
জাসদের রাজনীতি: গৌরবের স্মৃতি, নাকি দায় স্বীকার
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমদের প্রতিনায়ক: সিরাজুল আলম খান বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সিরাজুল আলম খান এবং জাসদ সম্পর্কে লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান তাঁর পর্যালোচনা ও জিজ্ঞাসা তুলে ধরেছেন এই লেখায়। দুই পর্বের লেখাটির শেষ কিস্তি আজ প্রকাশিত হলো।
বাংলাদেশে যখন জাসদের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা করছেন, তাঁদের বক্তব্য, বিবৃতি ও দলীয় প্রচারপত্রে ভারতকে আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে যে তারা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে, তখন তাদের রাজনৈতিক গুরুর আশ্রয়কেন্দ্র ছিল কি না ভারত সরকারের বিশেষ আস্থাভাজন একজন ব্যক্তি চিত্তরঞ্জন সুতারের বাড়ি।
(উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর দিল্লিতে মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত চিত্ত সুতারের ৫৩ বছরের জীবনের ৩৯ বছরই কেটেছে ভারতে এবং ভুজঙ্গ ভূষণ রায় নামে ভারতীয় পাসপোর্ট ধারণ করে। স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তিনি অবশ্য ‘পার্থ সামন্ত’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন।) এসব তথ্য কি সেদিনও যাঁরা জানতেন কিংবা আজ যাঁরা জানছেন, জাসদের এমন সব নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগায় না, তাঁদের আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করায় না?
জাসদ সম্পর্কে এ দেশের ভারতবিরোধী, বিশেষ করে বামধারার দলগুলোর গোড়া থেকেই একটা সন্দেহ ও সমালোচনা ছিল যে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে ভারতই এ দলকে গড়ে তুলেছে। সে সন্দেহের সবটাই তাদের ঈর্ষা বা হীনম্মন্যতাজাত ছিল এমন কথা আর বলা যাবে কি? কূটনীতির ভাষায়, ‘সব ডিম এক ঝুড়িতে না রাখা’র কৌশল থেকে কিংবা স্বাধীনচেতা জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে চাপে রাখতে এমনটা করা হয়ে থাকতে পারে, এ সন্দেহকেও কি এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায়?
২.
জাসদ গঠনের (১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর) পর এই দলের উদ্যোগে বা সংশ্লিষ্টতায় যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও, গণবাহিনী (১৯৭৪) ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা (১৯৭৩) গঠন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থান ও সিপাহিদের হাতে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা, ভারতীয় দূতাবাসে কমান্ডো হামলা ও রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে জিম্মি করার অপচেষ্টা (১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর)।
সমালোচনাকারীদের মতে, অজস্র তরুণের অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু, তথা স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের বিপুল অপচয়ের পাশাপাশি এসব হঠকারী বা অতিবিপ্লবী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জাসদ দল হিসেবে নিজেদের জন্যও দ্রুত বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ফাঁসির মঞ্চে এক কর্নেল তাহেরের বীরোচিত মৃত্যুর দৃষ্টান্ত দিয়ে যে পরাজয়ের ইতিহাসকে আড়াল করা যাবে না।
অন্যদিকে জাসদের সাবেক ও বর্তমান নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে অনেকে হয়তো আছেন, যাঁরা আজও অতীতের সেই লড়াই-সংগ্রামের দিনগুলোকে তাঁদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে বিবেচনা করেন এবং সেই গৌরবের স্মৃতি আঁকড়ে জীবনের বাকি দিনগুলো পার করে দিতে চান। ইতিহাসের নিরাসক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনার গুরুত্ব তাঁদের কাছে কম, কিংবা একেবারে নেই বললেই চলে। তো জানি না, এই শেষোক্তদের মুখ চেয়েই কিনা উপরিউক্ত ঘটনাগুলো কিংবা তাতে তাঁর নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সিরাজুল আলম খান অনেক ক্ষেত্রেই নিরুচ্চার অবস্থান গ্রহণ করেছেন, আমাদের অন্ধকারে রাখতে চেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি, সিপাহি বিদ্রোহের নামে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যদের দিয়ে সেনানিবাসে অফিসার হত্যা কিংবা জাসদের গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মুক্তি আদায়ের লক্ষ্যে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার মতো ঘটনাগুলোকে সিরাজুল আলম খান ও তাঁর তৎকালীন রাজনৈতিক অনুসারীরা পরে কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন, এর পেছনে ‘দাদা’র কতটা সায়-সমর্থন ছিল, তা জানার অধিকার সাবেক ও বর্তমান জাসদ কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি দেশবাসীরও আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ফারুক-রশিদদের সঙ্গে কর্নেল তাহেরের সাক্ষাতের বিষয়টি হয়তো তিনি আগে থেকে জানতেন না (কারণ, তখন তিনি ভারতে অবস্থান করছিলেন)। কিন্তু অন্য ঘটনাগুলো তাঁর নির্দেশ, অনুমোদন বা সম্মতি ছাড়া কিংবা তাঁর অজান্তে ঘটেছিল, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। জানি না সময়ের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে তিনি কাজগুলোকে ভুল মনে করেছেন কি না। এর জন্য অনুতপ্ত ছিলেন কি না। কিন্তু শামসুদ্দিন পেয়ারা কিংবা মহিউদ্দিন আহমদ উভয়ের বইয়েই অন্তর্ভুক্ত তাঁর সাক্ষাৎকার থেকে সে দায় স্বীকারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
৩.
সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে লেখা মহিউদ্দিন আহমদের সম্প্রতি প্রকাশিত বই প্রতিনায়ক-এ লেখক একাধিকবার এমন মন্তব্য করেছেন যে তাঁর সঙ্গে আলাপে সিরাজুল আলম খান অনেক প্রশ্নেরই জবাব এড়িয়ে গেছেন। যেখানে উত্তর দিয়েছেন, সেখানেও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, অর্থাৎ সব কথা খুলে বলেননি। এমন অবস্থায় বিশেষত সাক্ষাৎকারভিত্তিক রচনায় স্বভাবতই লেখকের জন্য একটা সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। ক্রসচেক করে সত্য নির্ণয়ের সম্ভাবনাও সে ক্ষেত্রে ঠিক কাজ দেয় না।
উপরন্তু আমাদের রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় সবাই যেখানে ব্যক্তির মূল্যায়নে ও ঘটনার উল্লেখে সময়ভেদে তাঁদের অবস্থান ও বক্তব্য বদলান, সেখানে ইতিহাসের প্রতি দায় পালনের দোহাইও কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে, সন্দেহ আছে। কারণ দেখেছি, আজ থেকে মাত্র এক দশক আগেও গণ–অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আলোচনা করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ যেভাবে তাঁর ‘সিরাজ ভাই’য়ের উল্লেখ করতেন, তাঁর প্রতি যতটা শ্রদ্ধা-ভক্তির প্রকাশ ঘটাতেন, আজ একই উপলক্ষে লিখতে বা বলতে গিয়ে তেমনটা আর করেন না বা করতে পারেন না।
তিনি সে সময় খোলাখুলিই বলতেন, তিনি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন না (সংগ্রাম পরিষদে আসলেই তো তেমন কোনো পদ ছিল না), ডাকসুর সহসভাপতি হিসেবে পদাধিকারবলে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাগুলোতে তিনি সভাপতিত্ব করতেন। আর ‘সিরাজ ভাই’য়ের পরামর্শ নিয়েই তাঁরা সভায় বক্তব্য দিতেন। এভাবেই সিরাজুল আলম খানের পরামর্শে সদ্য কারামুক্ত শেখ মুজিবের সংবর্ধনা সভায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মঞ্চ থেকে তাঁকে জাতির পক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ।
স্মৃতি প্রতারণা করে না থাকলে টিভিতে তোফায়েল আহমেদের নিজের মুখেই শোনা এসব কথা (টিভির আর্কাইভে নিশ্চয় পুরোনো সেসব অনুষ্ঠানের
রেকর্ড পাওয়া যাবে)। কিন্তু আজ প্রতিনায়ক বইয়ে কিংবা অন্য কোথাও কি তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খানের নিজের কিংবা অন্য কারও জবানিতে ঊনসত্তরের গণ–আন্দোলন প্রসঙ্গে সিরাজুল আলম খানের এই নেপথ্য ভূমিকার উল্লেখ পাওয়া যায়?
৪.
১৯৮০ সালের শেষ দিকে আমি দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় যোগ দিই। এ সময় সিরাজুল আলম খানই পত্রিকাটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছিলেন, যদিও সম্পাদক হিসেবে তখনো বাহাউদ্দিন চৌধুরীর নামই ছাপা হতো। এভাবে কর্মসূত্রেই আমার সিরাজ ভাইয়ের (আমি তাঁকে এই নামেই সম্বোধন করতাম) সান্নিধ্যে আসার, কথিত এই রহস্যে-ঘেরা মানুষটাকে কিছুটা কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়।
এ সময় সার্বক্ষণিক অফিসে থেকে তিনি পত্রিকার দেখভাল করতেন। দলের লোকজনও সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, আলাপ-আলোচনা করতে আসতেন। তাঁর মধ্যে যে গুণগুলো আমি এ সময় বিশেষভাবে লক্ষ করি তা হলো, তাঁর একটানা পরিশ্রম করার, অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার, আঙুল দিয়ে মোচের কোনা মোচড়াতে মোচড়াতে দীর্ঘক্ষণ নীরবে অন্যদের কথা শুনে যাওয়ার এবং উত্তেজিত না হয়ে অর্থাৎ ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা। সহকর্মীদের কারও কারও কাছ থেকে শুনেছিলাম, শুধু মুড়ি-চা খেয়েই নাকি তিনি কখনো কখনো সারা দিন কাটিয়ে দেন। একবার রোজার মাসে কে যেন বলেছিল, তিনি রোজা রাখেন। শুনে সে সময় আমি বেশ কৌতুক বোধ করেছিলাম।
প্রতি সপ্তাহে আমাকে দুই থেকে তিনটি উপসম্পাদকীয় লিখতে হতো। এ ছাড়া বাকি দিনগুলোতে লিখতাম সম্পাদকীয়। সাধারণত জাতীয় রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গেই বেশি লিখতাম। কিন্তু সিরাজ ভাই কখনো লেখার ব্যাপারে ব্রিফ করেছেন বলে মনে পড়ে না।
দেখা হলে কখনো হয়তো বড়জোর আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, সেদিন কী নিয়ে লিখছি। হতে পারে জাসদের রাজনৈতিক ধারার কোনো বিশেষ লেখার জন্য তিনি হয়তো অন্য কাউকে আলাদাভাবে ব্রিফ করতেন। ফলে কাছে পৌঁছেও তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা তাত্ত্বিক জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা লাভের সুযোগ আমার শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে তাঁর শ্রমশীলতা ও বিনয়ী আচরণ আমাকে তখন যেমন, আজও তেমনি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল রেখেছে। একটি উদাহরণ দিই। যদিও ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার কারণে যথেষ্ট সংকোচের সঙ্গেই বিষয়টির উল্লেখ করছি।
আমি বরাবরই যাকে বলে ‘স্লো রাইটার’, যেকোনো লেখাই অনেক সময় নিয়ে লিখি। পত্রিকায় কাজ করার সময়ও এর ব্যতিক্রম হতো না। তবে সর্বত্রই দেখতাম, সহকর্মীরা খুব দ্রুত লিখতে পারেন। তখনো কম্পিউটার আসেনি, পত্রিকায় সবকিছুই নিউজপ্রিন্টের প্যাডে বলপয়েন্ট কলম দিয়ে লেখা হতো। আমার যেদিন উপসম্পাদকীয় লেখার পালা থাকত, সেদিন সকালে অফিসে পৌঁছে প্রথমে পত্রিকার ফাইল ঘাঁটা, তারপর বিষয় নির্বাচন করে লেখা শুরু করতে দুপুর, আর সে লেখা শেষ করতে কখনো হয়তো বিকেল গড়িয়ে যেত। সম্পাদকীয় কক্ষে তখন হয়তো আমি একাই।
আমরা বসতাম দোতলায়, নিচেই ছিল পত্রিকার প্রেস। তখনকার হ্যান্ড কম্পোজ প্রেস। ম্যাটারের অভাবে তাঁরা তখন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। প্রেসের দায়িত্বে থাকা বয়স্ক ভদ্রলোক মাঝে মাঝে ওপরে উঠে এসে আমাকে তাগিদ দিতেন কিংবা আমার কাছ থেকে এক স্লিপ, দুই স্লিপ করে লেখা নিয়ে যেতেন। কখনো কখনো দেখা যেত, সিরাজ ভাই নিজেই সেই দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রেসে গিয়ে হয়তো দেখেছেন তাঁরা ম্যাটার পাননি, তখন নিজেই উঠে এসেছেন। দাঁড়িয়ে আছেন আমার টেবিলের সামনে। আমার তো তখন পরীক্ষার হলে ছাত্রের শেষ ঘণ্টার অবস্থা! হয়তো ঘামতে শুরু করেছি। কিন্তু সিরাজ ভাই আমাকে বিব্রত বা অপ্রস্তুত হতে দিতেন না। যে কয় স্লিপ লেখা হয়েছে, নিজেই তা নিয়ে নিচে চলে যেতেন। এমন হয়েছে বেশ কয়েকবার। এটাকে পরে আমি তাঁর সাংগঠনিক প্রতিভার অংশ বলে বিবেচনা করেছি। তিনি জানতেন, নির্দেশ দিয়ে নয়, কীভাবে নিজে কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্যের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে হয়।
গণকণ্ঠ–এর সেই দিনগুলোর পর মাত্র একবার কি দুবার তাঁর সঙ্গে অন্য কোথাও খুব স্বল্প সময়ের জন্য আমার দেখা হয়েছে। সাক্ষাতে সাধারণ কুশল বিনিময়ের অতিরিক্ত তিনি আমার চাকরি, লেখালেখি ইত্যাদির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। কখনোই তাঁর রাজনৈতিক মত ও পথের অনুসারী বা সমর্থক না হয়েও, বরং বরাবর বিরোধী মত পোষণ করেও, একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রতি যে মুগ্ধতা, তা থেকে আমি আজও হয়তো বেরিয়ে আসতে পারিনি। তাঁর এককালীন রাজনৈতিক সহকর্মী, অনুসারী-ভক্ত এমনকি বিরুদ্ধবাদী যাঁরা কখনো না কখনো তাঁর সাহচর্য লাভ করেছেন, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই মনে হয় এই প্রভাবটা কমবেশি কাজ করে। কাজ করেছে প্রতিনায়ক বইয়ের লেখক মহিউদ্দিন আহমদের বেলায়ও।
কারণ, এখনো তিনি নিজেকে সিরাজুল আলম খানের শিষ্য হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। এ রকম একটা অবস্থান থেকে অর্থাৎ শিষ্য হয়ে গুরুর ভূমিকার নিরাসক্ত পর্যালোচনা বা মূল্যায়ন, উপরন্তু ‘গুরু’টি যেখানে সমকালীন রাজনীতির একজন বিতর্কিত চরিত্র, খুবই চ্যালেঞ্জিং, বলা যায় প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।
প্রশ্ন হলো, মহিউদ্দিন আহমদ সেটা করতে পেরেছেন কি না কিংবা কতটা পেরেছেন। আমি এখানে কেবল আমার ধারণাটিই বলতে পারি। মহিউদ্দিন আহমদ আমাদের অগ্রজপ্রতিম বন্ধু। অন্য অনেকের মতো আমিও তাঁর রাজনৈতিক সাহিত্যের একজন অনুরাগী পাঠক।
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়ই তাঁর মতো লিপিকুশলতা ইদানীং কমজনের মধ্যেই দেখতে পাই। কিন্তু জাসদ নিয়ে লেখা তাঁর আগের রচনাগুলোর মতো এ বইটিতেও জাসদ রাজনীতির ভুল, ব্যর্থতা বা বিপর্যয়ের প্রশ্নে গুরুকে একরকম দায়মুক্তি দেওয়ার একটা সূক্ষ্ম ও সচেতন প্রয়াস উপস্থিত কি না, সে প্রশ্ন আমার মধ্যে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অন্যদের মতামত জানতেও আগ্রহী। (শেষ)