বিশ্লেষণ
কার দোষে ডলার এখন ১১৭ টাকা
যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কৌশল বা চালাকির পরে অবশেষে আইএমএফের শর্ত মেনে বিনিময় হারে নতুন পদ্ধতিতে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ডলারের একটা মধ্যদর থাকবে। কিন্তু এতেই কি সমস্যার সমাধান হবে? ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ এবং এর জন্য দায়ী কারা, সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়েছে এখানে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ শুরু থেকেই বিনিময় হার নির্ধারণে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড-স্টার্লিংকে মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। তখন ১ পাউন্ডের দর ছিল ১৮ দশমিক ৯৬৭৭ টাকা। এই বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ভারতের মুদ্রামানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তখন ডলারের দর ছিল ৭ দশমিক ২৭০২৭ টাকা।
বিনিময়হারে প্রথম বড় পরিবর্তন আনা হয় ১৯৭৫ সালের ১৭ মে। একদিনেই টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় ৫৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ফলে পাউন্ডের দর দাঁড়ায় ৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮ দশমিক ৯৬৭৭ টাকা। যদিও খোলাবাজারে পাউন্ডের দর ছিল প্রায় দ্বিগুণ। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শেই।
পাউন্ড-স্টার্লিং থেকে বাংলাদেশ সরে আসে ১৯৮৩ সালের ১১ জানুয়ারি। ওই দিন থেকে বাংলাদেশের টাকাকে মার্কিন ডলারের সঙ্গে সম্পর্কিত বা পেগ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর ঠিক করে দেয় বিক্রিতে ২৪ দশমিক ৪৮ টাকা এবং ক্রয়ে ২৪ দশমিক ৫২ টাকা।
পরের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি আসে ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ। সেদিন থেকে চলতি হিসাবে লেনদেনে ক্ষেত্রে টাকাকে রূপান্তরযোগ্য করা হয়। তবে মূলধন হিসাবকে রূপান্তরযোগ্য করা হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, টাকা ডলারে রূপান্তর করে পুঁজি হিসেবে তা অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তবে দৈনন্দিন ব্যয়, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতে ডলারে রূপান্তর করার সুযোগ দেওয়া হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
বিনিময়হারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হয় ২০০৩ সালের ৩১ মে। ওই দিন থেকে টাকাকে ভাসমান মুদ্রা করা হয়। ডলারের মূল্যমান নির্ধারণের দায়িত্ব বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। এর আগপর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ-সম্পর্কিত প্রথা বা অ্যাডজাস্টেবল পেগ চালু ছিল। এই প্রথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অনুমোদিত ডিলাররা বিনিময় হার উদ্ধৃত করতে পারত। এর আগপর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন বা অতি মূল্যায়ন করত। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৬ বার অবমূল্যায়ন এবং ৬ বার অতি মূল্যায়ন করেছে।
বলা হলেও আসলে তখনো বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক ছিল না। বরং ছিল নিয়ন্ত্রিত বা ম্যানেজড ফ্লোটিং। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন বাজারে অর্থের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখত। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের বড় অংশীদার ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে তার পক্ষে মার্কিন ডলারের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করাটাও ছিল সহজ।
কেন বড় সমস্যা হলো না
২০০৩ সালে প্রস্তুতি নিয়েই বিনিময়হারকে কিছুটা বাজারভিত্তিক করা হয়েছিল। তখন ডলার তেমন শক্তিশালী ছিল না। দেশের রপ্তানি পরিস্থিতিও ভালো ছিল। সরকারি ব্যাংকগুলোর হাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডলার ছিল। ফলে বিনিময় হার বড় কোনো লাফ দেয়নি। এই ঘোষণার আগে প্রতি মার্কিন ডলারের ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যদর ছিল ৫৭ দশমিক ৯০ টাকা। আর নতুন ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছিল ৫৭ দশমিক ৪০ থেকে ৫৮ দশমিক ৪০ টাকার মধ্যে যেকোনো দরে ডিলারদের কাছ থেকে ডলার কেনাবেচা করা যাবে।
ভাসমান করার ঘোষণার পর বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় প্রথম কয়েক দিন আন্তব্যাংক লেনদেনের কলমানি হার বেড়ে ৩৫ পর্যন্ত উঠেছিল। পরে আবার স্বাভাবিক হয়। বিনিময় হার ভাসমান করার দিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ১৮৯ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এই রিজার্ভ এক সপ্তাহের মধ্যে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুই গবেষক মনজুর হোসেন ও মনসুর আহমেদ ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ভাসমান বিনিময় হার নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘এক্সচেঞ্জ রেট পলিসি আন্ডার ফ্লোটিং রেজিম: ইন বাংলাদেশ: অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক পলিসি অপশন’ নামের গবেষণায় তাঁরা দেখিয়েছিলেন, ২০০৩ সালে ভাসমান বিনিময় হার পদ্ধতি চালুর পর প্রথম দশ মাস ছিল আসলে ‘হানিমুন পিরিয়ড’-এর মতোই। সে সময় টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। তবে এরপরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছিল। যেমন ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সে সময় টাকার অবমূল্যায়ন হয় ২০ শতাংশ। এতে ডলারের দর উঠে যায় ৭০ টাকায়। এই দুই গবেষক আরও দেখিয়েছেন, ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সব সময়ই টাকাকে অতি মূল্যায়িত করে রেখেছিল।
বড় লাফ ২০১১ সালে
দেশের অর্থনীতিতে বিপদ দেখা দেয় ২০১১ সালে। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের মন্দা সে সময় রপ্তানি কমিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে কমে যায় প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধি। পদ্মা সেতু নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে হ্রাস পায় বৈদেশিক সাহায্য। ফলে ডলার-সংকট শুরু হলে এক বছরেই টাকার অবমূল্যায়ন হয় প্রায় ১৬ শতাংশ। ফলে ৭০ টাকার ডলার এক বছরে উঠে যায় ৮১ টাকায়। অবমূল্যায়নের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির একটা সম্পর্ক আছে। ২০১১ সালে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১১ শতাংশ।
টাকাকে ধরে রাখার প্রতিযোগিতা
২০১২ সালের পর থেকে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে খুবই সামান্য। যেমন ২০১২ সালের জুন শেষে ডলারের মূল্যমান ছিল ৮১ টাকা। কোভিড শুরু হওয়ার আগে সেই দর বেড়ে হয় প্রায় ৮৫ টাকা। আর ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে, তখন তা ছিল ৮৬ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১২ সালের জুন শেষে ভারতীয় রুপিতে এক ডলার কিনতে ব্যয় করতে হতো ৫৬ টাকা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ দশমিক ৪৯ রুপি। অর্থাৎ এই ১০ বছরে রুপির অবমূল্যায়নের হার ৩৪ দশমিক ৮০।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করলে রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে চীন ইউয়ানের বড় অবমূল্যায়ন করেছিল ২০১৯ সালে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ তাদের রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে সে সময় তাদের মুদ্রারও বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করে। এ থেকে দূরে ছিল বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ। এতে রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ।
অথচ আইএমএফের হিসাবেই ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মুদ্রা সাড়ে ৯ শতাংশ অতি মূল্যায়িত ছিল। অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকেরা বারবার টাকার অবমূল্যায়ন করার সুপারিশ করলেও সরকার কর্ণপাত করেনি। অথচ সেটাই ছিল টাকার মান ধরে না রাখার উপযুক্ত সময়। তখন গড় মূল্যস্ফীতিও ছিল ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও ছিল ৩ হাজার ৬০০ কোটি বা ৩৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
ভুলের মাশুল ও অতিরিক্ত চালাকি
বাংলাদেশ সত্যিকারের বিপদে পড়ে ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে। বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পায়। মূল্যস্ফীতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা ফেড নীতি সুদের হার বাড়ালে বিশ্বব্যাপী ডলারে বিনিয়োগের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। ডলারে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। সব মিলিয়ে দেশে ডলারের আয় যত, ব্যয় ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি।
চাহিদা যেখানে বেশি, সরবরাহ কম, সেখানে ডলারের দর বাড়বেই। এই বৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ক্রমাগত ডলার বিক্রি করতে হয়েছে। এতে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ কমে হয়ে গেছে ১৮ বিলিয়ন ডলার। ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এর চেয়েও কম। আমদানির ওপরও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তাতেও ডলারের দর ঠেকিয়ে রাখা যায়নি।
এর মধ্যেও আবার নানা কৌশল করা হয়। সংকট শুরু হতেই বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুদিন ডলারের দর ঠিক করে দেয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিদ্ধান্ত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ডলারের দর ঠিক করে দেবে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। বরং সমস্যা আরও প্রকট হয়। ডলারের চারটি দর তৈরি হয় বাজারে। আমদানি, রপ্তানি, প্রবাসী আয়, এক্সচেঞ্জ হাউস—সব ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন দর। সে সময় খোলাবাজারে ডলারের দর ছিল আরও বেশি। যেমন সরকারি দর যখন ১১০ টাকা, খোলাবাজারে তা ছিল ১২৭ টাকা। গত বছরের নভেম্বরে মানি চেঞ্জারদের জন্যও ঠিক করা দর ছিল ১১৭ টাকা। এই দরে প্রবাসীরা অর্থ পাঠাতে আগ্রহী না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকই কিছু ব্যাংককে বেশি দরে প্রবাসী আয় আনতে বলে দেয়। সব মিলিয়ে বিনিময় হার ব্যবস্থায় দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা।
বিনিময়ের পদ্ধতির পরিবর্তন নিয়ে ২০০৩ সালে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাজারভিত্তিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হলো অতিরিক্ত চালাকি করতে গেলে ক্ষতি হবে।’ ঠিক এই চালাকিই করার চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব পদক্ষেপের কারণে সবারই ধারণা ছিল সামনে ডলারের দর আরও বাড়বে। ফলে আয় করা ডলার অনেকেরই দেশে আনতে অনীহা ছিল। ডলারের দর আরও বাড়বে এই প্রত্যাশায় অনেকেই ডলার ধরে রেখে পরে বেশি দামে বিক্রি করেছেন। এভাবেই ডলারের কালোবাজার তৈরি হয়।
গত বছরের ৩১ জুলাই দায়িত্ব ছাড়া লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রিয়াদ সালামেহকে এ সময়ের নিকৃষ্ট গভর্নর বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হচ্ছে, ডলার-সংকটের সময় একাধিক বিনিময় হার তৈরি করে তিনি বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। একই অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষেত্রেও করা যায়।
অবশেষে ক্রলিং পেগ
যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কৌশল বা চালাকির পরে অবশেষে আইএমএফের শর্ত মেনে বিনিময়হারে নতুন পদ্ধতিতে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রলিং পেগ পুরোপুরি বাজারভিত্তিক নয়। এখন ডলারের একটা মধ্যদর থাকবে। এখন যেমন ১১৭ টাকা। বিনিময় হার হবে এর আশপাশে। এতেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে, তা নয়। তবে এর ফলে ডলারের বিনিময় হার নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, দর আরও বাড়বে বলে যে প্রত্যাশা ছিল, সেখানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসবে।
বিনিময়হারের দিক থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুল করেছে কোভিডের আগের তিন বছরে। সে সময় বেশির ভাগ দেশ তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করলেও বাংলাদেশ ডলারের দর বাড়তে দেয়নি। দ্বিতীয় ভুল করেছে কোভিড শুরু হওয়ার পর। তখন সারা বিশ্বেই ডলারের তেমন চাহিদা ছিল না।
রপ্তানি ভালো অবস্থানে থাকায় এবং আমদানির চাহিদা কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কেবলই বাড়ছিল। তখনো টাকাকে ধরে রাখা হয়েছিল। তৃতীয় ভুলের শুরু ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে। মূলত আগের দুই ভুলের মাশুলই এ সময় বেশি গুনতে হয়েছে। তারপরও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না করে নানা কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। এতে রিজার্ভ কমেছে লাফিয়ে লাফিয়ে, লাফ দিয়েছে ডলারের দরও।
এত কিছু করেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি সরকার। ফলে বিনিময়হারে নতুন পদ্ধতিতে গেলেও অনেক দেরি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এতে অর্থনীতির সংকটও রয়ে গেছে। সংকটের জন্য মূলত দায়ী অর্থনীতির নীতিনির্ধারকেরাই। এই সংকট শিগগিরই কাটবে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।
শওকত হোসেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন