অর্থনীতির শ্বেতপত্রের ইতিবাচক ও দুর্বল দিক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর একটি শ্বেতপত্র তৈরির জন্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। শ্বেতপত্রের উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের পাশাপাশি গত ১৫ বছর অর্থনীতিতে কী ঘটছে এবং কেন ঘটছে, তার বিশদ বিবরণ দেওয়া। শ্বেতপত্র প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন গোলাম রসুল

শ্বেতপত্র

বাংলাদেশের গত ১৫ বছরের অর্থনীতির চালচিত্র নিয়ে শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনটি এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনের জাতীয় অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। এ জন্যই এই প্রতিবেদনের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং এর ভালো ও মন্দ দিকগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনটির ইতিবাচক দিক

এই প্রতিবেদনের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর পরিসর অনেক ব্যাপক, যা মোট ২৩টি অধ্যায়ে বিস্তৃত। এতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যা, অর্থনীতির কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ, সামাজিক সমস্যা, প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় এবং সরকারি নীতি ও সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দাতা সংস্থা, পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন এবং তিনটি গণশুনানি করেছেন। তা ছাড়া এই কমিটি নির্ধারিত ৯০ দিন সময়সীমার মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, যা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।

এই প্রতিবেদনে গত সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও লুটপাটের ব্যাপক চিত্রসহ, অর্থনীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যা সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের নীতি নির্ধারণের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রতিবেদনে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে ব্যাংকিং, জ্বালানি, অবকাঠামো ও পণ্যদ্রব্যের বাজারে বিশৃঙ্খলা, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অকার্যকর প্রকল্প গ্রহণ, অপ্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার প্রক্রিয়া, খেলাপি ঋণের পাহাড়, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বোঝা, বিদেশে সম্পদ পাচারসহ অর্থনীতির ঝুঁকি ও ভঙ্গুরতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে এই প্রতিবেদন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের মধ্যে আঁতাত এবং এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও স্বার্থবাদী (ক্রোনি) পুঁজিবাদের বিকাশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের দুর্বল দিক

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ব্যাপক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলেও এর নানাবিধ ত্রুটি বা দুর্বলতা রয়েছে। প্রধান দুর্বলতাগুলো আলোচনা হলো:

১. তথ্য-উপাত্ত নির্বাচনে সঠিক পদ্ধতির অভাব

এই প্রতিবেদনে নানাবিধ উৎস থেকে ব্যাপক পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু এই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কী পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, কোন তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছে, কোন তথ্য বাদ দিয়েছে, কিসের ভিত্তিতে বাদ দিয়েছে এবং তথ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী কী মানদণ্ড ব্যবহার করেছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেমন বিশ্বব্যাংকের কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পৃথিবীর গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে অনেক বেশি এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে অসামান্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এসব তথ্য-উপাত্ত এই প্রতিবেদনে স্থান পায়নি।

এ কারণে তথ্য-উপাত্ত নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এমন ধারণা হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে এই প্রতিবেদনে কেবল সেসব তথ্য-উপাত্ত নির্বাচন করা হয়েছে, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে এবং যেসব তথ্য-উপাত্ত তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

২. সামাজিক অগ্রগতিকে উপেক্ষা করা

বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে সামাজিক উন্নয়নে মোটামুটি ভালো অগ্রগতি সাধন করেছে। যেমন খাদ্য উৎপাদন, গ্রামোন্নয়ন, ক্যালরি গ্রহণ, মৃত্যুহার হ্রাস, গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি। এসব বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রকাশনা থাকলেও এই প্রতিবেদনে এগুলোকে আমলে নেওয়া হয়নি বা উপেক্ষা করা হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষিশ্রমিকের প্রকৃত মজুরি গত এক যুগে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০০৬ সালে একজন কৃষিশ্রমিক তাঁর মজুরি দিয়ে যেখানে ৪ দশমিক ৮ কেজি চাল কিনতে পারতেন, ২০২৩ সালে তা দিয়ে ১১ দশমিক ৪ কেজি চাল কিনতে পারতেন।

অর্থনীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা প্রয়োজন, যেখানে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকের নির্মোহ বিচার-বিশ্লেষণ থাকবে।

৩. তথ্য-উপাত্তের বৈধতা যাচাই

এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এর বেশির ভাগই ‘গ্রে লিটারেচার’ অর্থাৎ পত্র-পত্রিকার খবর, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, বিভিন্ন সংস্থার টেকনিক্যাল রিপোর্ট ইত্যাদি। এ তথ্যগুলো সঠিক পদ্ধতিতে নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই বা বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের নির্ভরযোগ্যতা বা সঠিকতা কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

৪. বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব বিবেচনা না করা

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় কোভিড-১৯–এর সময়। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। যদিও গত সরকারের দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক মন্দার জন্য আংশিকভাবে দায়ী। এর পাশাপাশি উচ্চ জ্বালানি মূল্য, খাদ্য ও সারের উচ্চমূল্য, মার্কিন ডলারের উচ্চ সুদের হারের মতো বৈশ্বিক কারণগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।

উদাহরণস্বরূপ ইউরিয়া সারের দাম প্রতি মেট্রিক টন ২০২১ সালের ইউএস ডলারে ২৩৮ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৫৯৯ ডলার হয়ে দাঁড়ায়। জ্বালানি তেল ও খাদ্যদ্রব্যের দামও অনুরূপভাবে বেড়ে যায়। এভাবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যের শর্ত বাংলাদেশের প্রতিকূলে চলে যায় অর্থাৎ রপ্তানি পণ্যের তুলনায় আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়, যা বাণিজ্য–ঘাটতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৫. সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির উপকারভোগী নির্ধারণে ত্রুটি

এই শ্বেতপত্রের প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ৭৩ শতাংশ বরাদ্দ চলে যায় অদরিদ্রদের কাছে। কিন্তু এই তথ্যের উৎস বা ভিত্তি কী, তা পরিষ্কার নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা। এ–সম্পর্কিত অধ্যায়ে (১৩) এ ব্যাপারে কেন প্রাথমিক তথ্য নেই এবং এই প্রতিবেদনের অন্য কোথাও এর সমর্থনে যথাযথ তথ্য দেওয়া হয়নি।

 ৬. অর্থের অবৈধ পাচারের পরিমাপ

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে, যা প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্টের ভিত্তিতে এই প্রাক্কলন করা হয়। এই প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়, অবৈধ অর্থ পাচারের ৭৭ শতাংশ হয়েছে বাণিজ্যের মাধ্যমে (ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে)।

জিএফআইয়ের একই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে পাচার করা অর্থ মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের এমনকি বিশ্বের অনেক দেশ থেকে অপেক্ষাকৃত কম। যেমন চীন থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে পাচারের পরিমাণ মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ২১ দশমিক ৫ শতাংশ, ভারতে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। শ্বেতপত্রে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করলেও সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচারের যে তথ্য প্রাক্কলন করা হয়েছে, তার সঠিকতার ব্যাপারে তারা কতটা আস্থাশীল, সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

অবৈধ অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় সমস্যা। এই ব্যাপারে আরও গভীর আলোচনা যথা এর সঙ্গে কারা জড়িত, কীভাবে জড়িত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা, আইনকানুনের বা এর প্রয়োগের কোনো ঘাটতি আছে কি না ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরলে শ্বেতপত্রের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ত।

৭. উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির আর্থিক পরিমাপ

এই শ্বেতপত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতির একটি আর্থিক পরিমাপ করা হয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী গত ১৫ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ১ দশমিক ৬১ থেকে ২ দশমিক ৮০ লাখ কোটি টাকা, যা উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দের প্রায় ৪০ শতাংশ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাস্তবায়িত প্রকল্পের ওপর একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতির এই আর্থিক পরিমাপ করা হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে টিআইবির এই প্রতিবেদনে এক হাজার কোটি টাকার নিচের প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বড় ও মেগা প্রকল্পগুলো এই সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

টিআইবির প্রতিবেদনটি শুধু অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর। অন্যান্য খাতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং ব্যবহারের ধরন অবকাঠামো প্রকল্পের চেয়ে ভিন্ন হওয়ার কারণে দুর্নীতির প্রকৃতি ও ব্যাপকতা কম বা বেশি হতে পারে। কাজেই দুর্নীতির আর্থিক পরিমাপের সঠিকতার ক্ষেত্রে এই কমিটি কতটা আস্থাশীল, সে ব্যাপারে উল্লেখ থাকলে শ্বেতপত্রের নির্ভরযোগ্যতা আরও বাড়ত।

 ৮. প্রতিবেদনের উপস্থাপনা

শ্বেতপত্রটি ৪০০ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন। সাধারণ পাঠক এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এর একটি সারসংক্ষেপ থাকা প্রয়োজন ছিল। প্রতিবেদনটির ভূমিকায় সারসংক্ষেপ দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তা প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারেনি।

এই প্রতিবেদনের কিছু কিছু অধ্যায়ে রূপক শব্দ ও কঠিন পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণ পাঠকের বোধগম্যতার জন্য এগুলো সহজভাবে উপস্থাপন করা যেত। তা ছাড়া প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিভাগ ও অধ্যায়গুলোকে আরও যুক্তিসংগতভাবে সাজালে ভালো হবে। যেমন প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত বিভাগটি সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের পরে দেওয়া যেত। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো বিভিন্ন অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এই অধ্যায়গুলো আগে দিলে পরবর্তী অধ্যায়গুলো অনুধাবনে সহজ হবে। যেমন ‘অধ্যায় ২১’ প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ অর্থনীতির নানাবিধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এর প্রভাব অর্থনীতির সব খাতে পড়েছে এবং অন্যান্য অধ্যায়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

পরিশেষে বলা যায়, এই প্রতিবেদনে ব্যাপক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হলেও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় এই প্রতিবেদনের নির্ভরতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠতে পারে। অর্থনীতির গত ১৫ বছরের সামগ্রিক পর্যালোচনায় ভালো–মন্দ উভয় দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় প্রতিবেদনটি অনেকটা একপেশে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে বিভিন্ন দুর্বলতা সত্ত্বেও এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। পরবর্তী সময়ে গবেষণা ও নীতি নির্ধারণে এটি অনেকের জন্য সহায়ক হতে পারে।

  • গোলাম রসুল অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা।

    ই-মেইল: golam.grasul@gmail.com