মিয়ানমারের সামরিক এস্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। সেই থেকে তারা শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সক্ষম হয়েছে। তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করায় এসএসি নজিরবিহীন প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সামরিক গোষ্ঠীর আধিপত্য ও শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী, রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করা মানুষ, নির্বাসনে থাকা নতুন জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) এবং দেশজুড়ে একাধিক স্থানে বিক্ষোভ করা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফএস) সদস্যরা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
জান্তা সরকার যদিও বেশ আন্দোলনের মুখে খানিকটা ‘জখম’ হয়েছে, তথাপি তারা এখনো প্রবল প্রতাপে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে তিনটি প্রধান পদ্ধতির মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সেগুলো হলো: এক. সেনাবাহিনীর হাতে একটি দেশীয় অস্ত্রশিল্প রয়েছে, যা তাদের ক্ষুদ্র অস্ত্র এবং হালকা অস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়েছে। দুই. বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া বিমান শক্তি এবং ভারী কামানের তীব্র ব্যবহার, যা সরকারবিরোধীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিন. নির্বিচার সহিংসতার ব্যাপক ব্যবহার, যার মাধ্যমে গোটা সামরিক বাহিনী একটি খুনে বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই দুই বছর আগে মিয়ানমারের সামরিক শাসকগোষ্ঠীর কাছে রাশিয়ান, চীনা এবং ভারতীয় অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছিল। এরপর গত ডিসেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব তোলা হয়। কিন্তু পরিষদের অন্য ১২ সদস্য প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিলেও মস্কো, বেইজিং ও নয়াদিল্লি অপ্রত্যাশিতভাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্ত্রশিল্পকে চাপে রাখতে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ খুব কমই দেখা যাচ্ছে। ‘ভয়ানক ব্যবসা: মিয়ানমারের সামরিক অস্ত্র উৎপাদনের জোগান’ শিরোনামে ১৬ জানুয়ারি (গতকাল সোমবার) জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিদেশি সরঞ্জাম সরবরাহের সহায়তা নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ছোট অস্ত্র ও হালকা অস্ত্র তৈরি অব্যাহত রেখেছে এবং এসব অস্ত্র অভ্যুত্থানের পর থেকে ভিন্নমত ও প্রতিরোধ দমন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু সেলথ ২৫ বছর আগে থেকে মিয়ানমারের অস্ত্র উৎপাদনের খোঁজখবর রাখছেন। তিনি দেখিয়েছেন, চীন, রাশিয়া ও ভারত থেকেই ক্ষুদ্র অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়ে থাকে। তিনি বলেছেন, ১৯৮৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর কাপাসার প্রধান অস্ত্র পরামর্শক হিসেবে জার্মান অস্ত্র কোম্পানি ফ্রিৎস ভার্নার আবির্ভূত হয়।
সেনাবাহিনীর হাতে অভ্যুত্থানের পর প্রায় ৩ হাজার বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন; ১০ লাখের বেশি নাগরিক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৩০ হাজার বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব সহিংসতা মিয়ানমারকে কার্যত ‘মৃত্যুর কারখানায়’ পরিণত করেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্যবহার্য ক্ষুদ্র অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাপাসাকে যেসব দেশ কাঁচামাল ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অস্ত্র কোম্পানি নরিনকো এবং রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল, ইউক্রেনের বিভিন্ন অস্ত্র কোম্পানি রয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু সেলথ ২৫ বছর আগে থেকে মিয়ানমারের অস্ত্র উৎপাদনের খোঁজখবর রাখছেন। তিনি দেখিয়েছেন, চীন, রাশিয়া ও ভারত থেকেই ক্ষুদ্র অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়ে থাকে। তিনি বলেছেন, ১৯৮৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর কাপাসার প্রধান অস্ত্র পরামর্শক হিসেবে জার্মান অস্ত্র কোম্পানি ফ্রিৎস ভার্নার আবির্ভূত হয়। বিশেষ করে ইসরায়েল ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা এমএ সিরিজের অ্যাসল্ট রাইফেল রক্ষণাবেক্ষণে ফ্রিৎস ভার্নার মিয়ানমারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া শুরু করে।
যেহেতু মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্ব সোচ্চার রয়েছে, সেহেতু দেশটির সামরিক বাহিনীকে অস্ত্রসহায়তা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ডেভিড স্কট ম্যাথিসন মিয়ানমারে সংঘাত ও মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করা বিশ্লেষক