চট্টগ্রাম মহানগর: জলাবদ্ধতার সমাধান কীভাবে হতে পারে

জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে লিখেছেন দেলোয়ার মজুমদার

জলাবদ্ধতার কারণগুলো

১. অপরিকল্পিত নগরায়ণ: দ্রুত বর্ধিষ্ণু চট্টগ্রাম নগর বেড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। এতে পানিনিষ্কাশনের বা পানি ধারণের এলাকা ক্রমেই সংকুচিত হয়েছে এবং বেড়ে গেছে আচ্ছাদিত এলাকা, এমনকি পানি শুষে নেওয়ার মতো উন্মুক্ত এলাকাও হ্রাস পায় বিপুলভাবে। এই অপরিকল্পিত নগরায়ণ শুধু ব্যক্তিপর্যায়ে নয়, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষও করেছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনন্যা আবাসিক এলাকা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

২. আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি: চট্টগ্রাম নগরে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। এমনকি বর্জ্য নিষ্কাশন সম্পর্কে জনগণের সচেতনতার মাত্রাও খুবই নিম্ন। জনগণ সাধারণত ড্রেন, নালা-খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে। গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে এমন কোনো বর্জ্য নেই, যা এই নালা-খালে ফেলা হয় না। এই বর্জ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পানিনিষ্কাশনে বাধা দেয়।

৩. পাহাড় ক্ষয়: আমাদের পাহাড়গুলো বালুর পাহাড়, তাই ক্ষয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া খুব একটা ভাবনার বিষয় নয়। পাহাড়ের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তা উদ্বেগজনক। যেখানে-সেখানে বেপরোয়া পাহাড় ধ্বংসের কারণে পাহাড় ক্ষয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। বৃষ্টির পানি বা অন্য কোনো পানির সঙ্গে ক্ষয়ের বালু ড্রেন-খালে এসে ভরাট করে ফেলে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।

৪. জোয়ারের প্রভাব: চট্টগ্রাম মহানগর সাগরসংলগ্ন হওয়ায় এখানে জলাবদ্ধতার প্রভাব প্রকট। চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকাগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই থেকে তিন মিটার উঁচু। আর সর্বোচ্চ জোয়ারের উচ্চতা পাঁচ মিটারের বেশি রেকর্ড হচ্ছে। এতে নিচু এলাকায় পানি জমে যাচ্ছে। অতীতে অনেক নিচু খালি এলাকা এবং ডোবা-পুকুর থাকায় পানি গড়িয়ে গড়িয়ে এসব ভরাট হতে হতে ভাটা শুরু হয়ে যেত, তাই তেমন জলমগ্নতা দৃশ্যমান হতো না। বর্তমানে প্রায় সবকিছুই ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি বারবার জলমগ্নতা সৃষ্টি করছে। যখন উচ্চ জোয়ার (ভরা কাটাল/মরা কাটাল) ও কম সময়ে ভারী বৃষ্টি একসঙ্গে দেখা দেয়, তখনকার জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অবর্ণনীয়।

৫. দখল: নজরদারির সীমাহীন অযোগ্যতা ও অবহেলায় ডোবা, নালা, জলাশয় দখলদারেরা দখল করে ভরাট করে ফেলেছেন। কোথাও কোথাও বহুতল ভবন পর্যন্ত উঠে গেছে। এতে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা সংকুচিত ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে প্রণীত সিডিএর (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে এই অপদখলের সিংহভাগই চিহ্নিত করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে এই অপদখল আরও বেড়েছে। এখন অনেক খাল খুঁজেও পাওয়া যায় না। এর ফলে ১০৪টি খাল থেকে ৭১ খাল, ৭১টি খাল থেকে ৫৭ খাল চিহ্নিত হয়েছে। এখন চলমান জলাবদ্ধতা প্রকল্পে কাজ হচ্ছে মাত্র ৩৬টি খাল নিয়ে।

৬. ইউটিলিটি ও ব্রিজ-কালভার্ট: বিভিন্ন প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি খাল-ড্রেনে ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস, বিটিসিএল ও পিডিবির লাইনগুলো নালা-খাল দিয়ে এমনভাবে টানা হয়েছে, যা পানিপ্রবাহে বাধা দেয়। কখনো কখনো এসব পাইপে আবর্জনা আটকে পুরো নালা-খালই বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও কোথাও ব্রিজ-কালভার্টের কম উচ্চতা বা খালের প্রশস্ততার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের কারণেও প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৭. নালা-খালের প্রকৌশলগত ত্রুটি: কোথাও কোথাও দেখা যায়, একটি খাল বা ড্রেন অন্য একটি খাল বা ড্রেনের সঙ্গে প্রবাহের বিপরীতে সংযুক্ত হয়েছে। এতে প্রবাহের গতি কমে পলি ও আবর্জনা জমে প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোথাও কোথাও দেখা যায়, খাল বা ড্রেনের ‘ডাউন স্ট্রিম’-এর চেয়ে ‘আপ স্ট্রিম’-এর তলা নিচু। কোথাও কোথাও অপ্রয়োজনীয় বাঁকের কারণে প্রবাহের গতি কমে যাচ্ছে এবং প্রবাহের সময় বাড়ছে।

৮. সাইক্লোনজনিত জলোচ্ছ্বাস: চট্টগ্রাম একটি সাইক্লোনপ্রবণ এলাকা। বর্ষায় সাইক্লোনের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টি দুটিই বেড়ে গেলে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বিপর্যয়কর।

৯. সড়ক উঁচুকরণ: চসিক এক দশকের চেয়ে বেশি সময় ধরে স্থানভিত্তিক জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় সড়ক উঁচু করছে। এটা সমস্যা আরও জটিল করছে। এতে একবার পানি ঢুকে গেলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বের হতে পারে না।

১০. প্লট-ড্রেন না থাকা: সিডিএ ভবন নির্মাণের সময় প্লট-ড্রেন নির্মাণ নিশ্চিত না করায় কোনো কোনো ছোট এলাকায় স্থানীয়ভাবে অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

সিডিএর ১৯৯৫ সালের ‘স্টর্মওয়াটার ড্রেইনেজ অ্যান্ড ফ্লাড কন্ট্রোল মাস্টারপ্ল্যানে’উপরোক্ত ত্রুটিগুলো ধরে ধরে চিহ্নিত করে তার সমাধানও উল্লেখ করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

জলাবদ্ধতা দূরীকরণে গৃহীত প্রকল্পগুলো

১. চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন (সিডিএ)। ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৫২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

২. কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (সিডিএ)। ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভৌত
অগ্রগতি ৮২ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

৩. বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন (চসিক)। ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ।

৪. চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যানিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/ জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন। ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি ৪৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

৫. চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড (চউক)। কাজ সমাপ্ত।

চলমান প্রকল্পগুলোর সীমাবদ্ধতা

প্রকল্পগুলোর অবয়ব দেখে মনে হয়, জলাবদ্ধতার আপাততীব্রতা বিবেচনায় নিয়ে এবং সমাধানে সম্ভাব্য অতি জটিল অংশগুলো এড়িয়ে গিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে সামগ্রিক সমাধান নয়, বরং আপাতত স্বস্তি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের সঙ্গে বর্তমান প্রকল্পগুলোকে সম্পৃক্ত করার কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। মোটাদাগে প্রকল্পের সীমাবদ্ধতাগুলো হলো:

১. জ্ঞাত সব খালকে বর্তমান প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কথিত ১০৪টি খাল কিংবা ৭১টি খাল তো খুঁজেও দেখা হয়নি; বরং জানা ৫৭টি খালের মধ্যে মাত্র ৩৬টি খাল এসব প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২. ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে বেশ কিছু ‘রিটেনশন পন্ড’রাখার পরামর্শ ছিল, যা চলমান প্রকল্পগুলোয় শতভাগ উপেক্ষা করা হয়েছে।

৩. সিল্ট ট্রেপের সংখ্যা, প্রবেশগম্যতা নিয়ে আরও যত্নশীল হওয়ার দরকার ছিল। সিল্ট ট্রেপ নির্মাণের পরপর তা চালু করার কোনো পরিচালনপদ্ধতি নির্ধারিত না হওয়ায় এটি নতুন ধরনের সমস্যা তৈরি করবে।

৪. কিছু কিছু রেগুলেটরের প্রশস্ততা খালের প্রশস্ততা থেকে কম হওয়া এবং কম সক্ষমতার পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।

৫. প্রকল্পগুলোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো আলোকপাত করা হয়নি। পরবর্তী সময় এই প্রকল্পের সুফল পেতে জনগণকে সচেতন, অনুপ্রাণিত ও উদ্যোগী করার কোনো পরিকল্পনা এখনো দৃশ্যমান নয়।

৬. অস্থায়ী জলাধার হিসেবে নগরের পুকুর-জলাশয়গুলো উদ্ধার, সংস্কার ও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ এই প্রকল্পে নেই।

 ৭. প্রকল্প শেষে অতিমাত্রায় যান্ত্রিক পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ধরনের ম্যানুয়েল তৈরি করা হয়নি এবং সেই মোতাবেক যন্ত্রপাতি, জনবল ও আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানকে সক্ষম করে গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

৮. ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে ২০১৫ সালের পর যেসব এলাকায় মহানগরের ব্যাপ্তি বেড়ে সমস্যা তৈরি হবে, সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছিল। অথচ চলমান প্রকল্পগুলোতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পারের দ্রুত বর্ধিষ্ণু অঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকা উপেক্ষিত হয়েছে।

আসন্ন বর্ষার আগে করণীয়

১. খননকৃত খালগুলোয় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে, যা দ্রুত অপসারণ দরকার। মামলার কারণে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে, তা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে।

২. আর্থিক অগ্রগতি ও ভৌত অগ্রগতি সমান্তরালে আনতে হবে।

৩. পাহাড় কাটা ঠেকাতে এবং কেটে ফেলা অংশ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

৪. চট্টগ্রাম মহানগরে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আবর্জনা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে চসিক অপসারণ করে গড়ে দৈনিক ১ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। অবশিষ্ট অংশ বিভিন্নভাবে নালা-খালে নিক্ষিপ্ত হয়। চসিকের আবর্জনা অপসারণের ক্ষমতা এখনই দ্বিগুণ করতে হবে। নালা-খালে অবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

দীর্ঘ মেয়াদে করণীয়

চট্টগ্রাম মহানগর একটি দ্রুত বর্ধিষ্ণু নগর। এর জনসংখ্যা ও অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রবণতা খুবই গতিশীল। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এই নগরে; আর বন্দরের সুবিধা পেতে এই নগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দ্রুত শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে এবং উঠছে। আবার সাগর-পাহাড়-সমতল আর বনের সমাহার এই নগর ভ্রমণপিপাসুদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই দ্রুত বর্ধিষ্ণু নগর ক্রমাগত বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এই দ্রুত বর্ধিষ্ণু নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা এখন সর্বজনবিদিত। জলাবদ্ধতার সমস্যা স্থায়ী নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি কার্যকর মনোনিবেশ প্রয়োজন।

১. ড্রেনেজ-ব্যবস্থা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ একটি একক সংস্থাকে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনই হতে পারে যথাযথ সংস্থা। এই সংস্থাটি আগে থেকেই এ কাজ করে আসছে। তা ছাড়া সংস্থাটি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় জনগণের প্রতি এর দায়বোধও বেশি। দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে চসিকের জনবল, যন্ত্রবল ও আর্থিক সক্ষমতা কার্যোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

২. প্রকল্প থেকে বাদ পড়া অবশিষ্ট খালগুলোসহ নদীর দক্ষিণ পাড় ও দ্রুত বর্ধিষ্ণু পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে আরও একটি প্রকল্প যথাযথভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।

৩. মহানগরে জনবসতি ও শিল্পকারখানা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ওই এলাকায় নাগরিক সুবিধাদি বৃদ্ধি করে তা করা সম্ভব।

৪. জলাধার ও ড্রেনেজ এলাকা সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে একটি ড্রেনেজ সেল গঠন করতে হবে। অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এটি গঠিত হতে পারে। এই সেলের কাজ হবে ড্রেনেজ-ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে পরামর্শ দেওয়া। ওয়ার্ডভিত্তিক প্রতিটি নালা-খালের পরিস্থিতির লগবুক সংরক্ষণ হলে তা এই সেলের কাজের সহায়ক হবে।

৬. আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। নালা-খালে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে জনসচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৭. বন্দরের রুটিন ড্রেজিং বর্তমানে শুধু মূল চ্যানেল ও জেটি এলাকায় সীমাবদ্ধ। এই ড্রেজিং এলাকা কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত এবং খালগুলোর মুখ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটা সমঝোতা করে নিতে পারে।

৮. জলাধার ও নালা-খাল দখল ও ভরাট বন্ধ করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

১০. সর্বোপরি জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সক্রিয় করে বর্জ্য অব্যবস্থাপনা ও খাল-জলাভূমি দখলের বিরুদ্ধে একটি স্থায়ী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর কাজটি করতে জনপ্রতিনিধিদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

  • দেলোয়ার মজুমদার সাবেক চেয়ারম্যান, আইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্র