দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে অচলাবস্থা চলছে, তা দেশের জন্য এক গভীর সংকটের সংকেত বহন করে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এই দুই খাত জাতির ভিত্তি রচনায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
এই খাতগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনিবার্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং, এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
শিক্ষায় অচলাবস্থার মূল কারণ পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগ। তা ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি তো আছেই। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে।
আর স্বাস্থ্যে অচলাবস্থা মূলত স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরে সদ্য পদায়িত মহাপরিচালককে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সংকট। মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অধিদপ্তরে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
তা ছাড়া রয়েছে এই অধিদপ্তরে দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালককে অন্যত্র বদলি এবং ডাইরেক্টর এবং লাইন ডাইরেক্টরদের অন্যত্র বদলিভীতিসহ নানা টেনশন।
এই টেনশন শুধু স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও বিদ্যমান। আরও চলছে দীর্ঘকাল প্রমোশন এবং পদবঞ্চিতদের আন্দোলন-সংগ্রাম।
সমস্যার পরিধি এবং মাত্রা ভিন্ন হলেও উভয় ক্ষেত্রে সমাধানের পথ একটাই। এই দুই খাতে অচলাবস্থা নিরসনের জন্য একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে সার্চ কমিটি গঠন করা।
স্বাস্থ্য খাতে সার্চ কমিটি একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস অনুসরণ করে সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন তালিকা প্রণয়ন করবে। এই তালিকা থেকে সরকার সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেবে, যা স্বাস্থ্য খাতের অচলাবস্থা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই সার্চ কমিটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং যথাযথ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শিক্ষার ক্ষেত্রে এই সার্চ কমিটি একাডেমিক উৎকর্ষ, নিরপেক্ষতা এবং ছাত্র-শিক্ষকের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ–উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করবে।
এই তালিকা প্রস্তুতির সময় কমিটি নিশ্চিত করবে যে মনোনীত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বশীল। এই প্রক্রিয়ায় মনোনীত ব্যক্তিরা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হবেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করতে পারবেন।
স্বাস্থ্য খাতে সার্চ কমিটি একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস অনুসরণ করে সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন তালিকা প্রণয়ন করবে। এই তালিকা থেকে সরকার সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেবে, যা স্বাস্থ্য খাতের অচলাবস্থা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিগগিরই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের চলমান অচলাবস্থা দূরীকরণে সার্চ কমিটি গঠনে উদ্যোগী হবে।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক।