প্রিয় নবীজি (সা.)–এর অতি প্রিয় আমল তাহাজ্জুদ
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রধান সহায়ক নফল বা বাড়তি ইবাদত। খাস ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত উত্তম। প্রতি রাতেই তাহাজ্জুদের সময়ে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের আরজি ও আবেদন–নিবেদন শোনেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবীজি (সা.)–এর উদ্দেশে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করো, এটি তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭৯)
‘হে কম্বলাবৃত! রাতে দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি এবং কোরআন তিলাওয়াত করো সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাত্রিতে ওঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি নিজ পালনকর্তার নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাতে নিমগ্ন হও।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ১-৮)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ।’ (মুসলিম শরিফ) রাসুল (সা.) প্রতি রাতেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই এটি সুন্নত, অতিরিক্ত হিসেবে নফল। নবীজি (সা.)–এর জন্য এটি অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন, তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন।’ (দিওয়ানে আলী, নাহজুল বালাগা)
হজরত আয়েশা (রা.) ও উম্মে ছালামাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি—তাহাজ্জুদ নামাজ, প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিজ’–এর রোজা পালন ও রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ। (জামিউস সগীর ও সহিহ বুখারি)।
তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ কষ্ট-ক্লেশ, শ্রম-পরিশ্রম। সন্ধ্যারাতে ঘুমিয়ে মধ্যরাতের পর শয্যাত্যাগ করাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় রাতের দুই–তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তথা রাত দুইটার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। সাহ্রির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়। তাই তাহাজ্জুদের আগে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।
রমজানে সাহ্রির সময়ই হলো তাহাজ্জুদের সময়; সুতরাং রমজানে তাহাজ্জুদ আদায় করা খুবই সহজ। তাহাজ্জুদ দুই রাকাত করে ৮ রাকাত, ১২ রাকাত বা আরও কম বা বেশিও পড়া যায়। রমজানের নফলের সওয়াব ফরজের সমান, ফরজের সওয়াব ৭০ গুণ। তাই রমজানে তাহাজ্জুদের সহজ ও সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সেই স্বামীর প্রতি রহম করেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। আল্লাহ তাআলা সেই স্ত্রীর প্রতি রহম করেছেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়।’ (আবুদাউদ ও নাসায়ি)
হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আমার অলিদের সঙ্গে শত্রুতা করে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরজ ইবাদতের মাধ্যমেই আমার অধিক নৈকট্য অর্জন করে। আর আমার বান্দা যখন বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার আরও বেশি নিকটে আসে, তখন আমি তাকে ভালোবাসি। যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার কর্ণ হই, যা দ্বারা সে শ্রবণ করে, আমি তার দৃষ্টি হই, যা দ্বারা সে দর্শন করে, আমি তার হাত হই যা দ্বারা সে স্পর্শ করে, আমি তার চরণ হই যা দ্বারা সে বিচরণ করে। আর সে যদি আমার নিকট প্রার্থনা করে আমি তা মঞ্জুর করি এবং আমার কাছে আশ্রয় চাইলে আমি তাকে রক্ষা করি।’ (বুখারি শরিফ)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com