সিত্তের পতনকালে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে নতুন উপাদান

মিয়ানমারের যুদ্ধসংস্কৃতির নতুন আইনগত সংস্কার বাংলাদেশের      জন্যও ভাবনার বিষয় হতে পারে। সীমান্তের ওপারে অতীতে বাংলাদেশ কেবল সশস্ত্র বামার ও রাখাইনদের কথাই জেনেছে। এখন প্রাইভেট ফোর্সগুলো সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি হয়ে পড়তে পারে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের নতুন উপাদান নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ

মিয়ানমারের অনেক এলাকা এখন বিদ্রোহীদের দখলে।

নাফের দুই পারের মাটি ও মানুষের কাছে আরাকানের রাজধানী মানে ‘আকিয়াব’। কিন্তু অফিশিয়ালি বহির্বিশ্বে এটা এখন সিত্তে। সিত্তে শব্দের অর্থ, ‘যেখানে দুই পক্ষের যুদ্ধ বেধেছিল’। ১৭৮৪–এর যে যুদ্ধে বামারদের কাছে আরাকানিজরা স্বাধীনতা হারিয়েছিল, তার স্মরণে এ নামকরণ।

কিন্তু এবার ইতিহাসের বদলে ঘটছে দুইভাবে। আকিয়াব বা সিত্তেতে এবার বামার ও আরাকানিজদের একালের যুদ্ধের প্রথম অধ্যায় শেষ হতে চলেছে; এবং দ্বিতীয়ত, এবার হারছে বামাররা। যদিও সিত্তে ছাড়াও দুটি জায়গা (চিয়াকপু ও মানাং) এখনো বামারদের নিয়ন্ত্রণে আছে কিন্তু সবারই ধারণা, রাজধানী পতনের পর সেগুলোর পতন হবে সময়ের ব্যাপারমাত্র।

তবে সিত্তে দখল-বেদখলের তাৎপর্য কেবল বামার ও রাখাইনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না নিশ্চয়ই। চট্টগ্রাম থেকে আইজল তো বটেই, পুরো বঙ্গোপসাগরে এটা হবে মোড়বদলকারী ঘটনা। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ও ভারত কতটা প্রস্তুত নাটকীয় এই পরিবর্তনের জন্য?

সর্বশেষ সিত্তে

ভূখণ্ডগত বৈশিষ্ট্যে সিত্তে হলো উপকূলীয় বন্দর শহরের মতো। বেশ অনেক দিন ধরে পুরো অঞ্চল ঘেরাও করে রেখেছে আরাকান আর্মি। সেটা অবশ্য ইতিমধ্যে পুরোনো খবর। এখন তারা এর দখল নেওয়ার পথে।

দ্বীপের ভেতর বামাররা ইতিমধ্যে আর্থিক ও বাণিজ্যিক কাজকারবার গুটিয়ে ফেলেছে প্রায় পুরোটা। বার্মিজ ব্যাংকগুলো কার্যক্রম বন্ধ করে বিমানে করে অর্থকড়ি নিয়ে গেছে ইয়াঙ্গুনে। এর মধ্যে আছে সরকারি ‘ইকোনমিক ব্যাংক’ও।

আরাকানের রাজধানীতে এখনো ‘তাতমাদা’ নামে পরিচিত বার্মিজ মিলিটারির অনেকগুলো ব্যাটালিয়ন নিয়ে একটা রিজিওনাল কমান্ড আছে। রাজধানীর চারদিকে ‘আউটপোস্ট’ও আছে অনেক। এ রকম সব কটির ওপর আরাকান আর্মি সমানে বোমা ছুড়ছে রাতদিন।

এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন দিকে আরাকান আর্মির স্নাইপাররা বাছাই করা জায়গায় চোরাগোপ্তা গুলি ছুড়ছে। সব মিলিয়ে তাতমাদার অবস্থান এখানে আত্মরক্ষামূলক।

স্থানীয় বাসিন্দারা ফলাফল আগাম আঁচ করে সমানে পালাচ্ছিলেন শুরুতে। এখন অবশ্য জান্তা রক্ষীরা বের হওয়ার পথগুলোতে পাহারা বসিয়েছে। সিত্তের ভেতরকার নদীগুলোতে সাম্পান ও নৌকার চলাচলও নজরদারি ও তদারকিতে হচ্ছে।

এরই মধ্যে সরকার হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে ইয়াঙ্গুন থেকে নিয়ে এসেছে সিত্তেতে। এর মধ্যে ৬৭টি শিশুও আছে। অনেকে বলছেন, তাদের কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই রোহিঙ্গাদের যুদ্ধে মানবঢাল বানিয়ে বিশ্বকে দেখানো হবে, সিত্তে দখল করতে গিয়ে রাখাইনরা রোহিঙ্গাদের মারছে।

এতে আরাকান আর্মিকে কূটনৈতিকভাবে খানিক একঘরে করা যাবে হয়তো। ইয়াঙ্গুনের সূত্রগুলো বলেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি বন্ধের মধ্যে রহস্যময় প্রক্রিয়ায় তাদের বের করে আনা হয়।

সিত্তের পতনের পর কী হবে

আরাকান আর্মির সূত্রগুলো এ মুহূর্তে যা বলছে, সেটা খুব অভিনব এক ব্যাপার। রাজ্যজুড়ে তারা একধরনের গণপ্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে চাইছে। রাজ্যজুড়ে রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে, দলে দলে তরুণেরা ট্রাকে চড়ে সামরিক প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে। এ ছাড়া প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল চিয়াকপুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ কোনো পথ খুঁজছে গেরিলারা। চীন এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে পারে।

রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের প্রায় ১৪টি গেরিলাদের নিয়ন্ত্রণে এখন। এ রকম অবস্থায় যুদ্ধ–পরবর্তী পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পড়েছে গেরিলাদের মূল রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের (ইউএলএ) ওপর।

■ আরাকান আর্মির সূত্রগুলো এ মুহূর্তে যা বলছে, সেটা খুব অভিনব এক ব্যাপার। রাজ্যজুড়ে তারা একধরনের গণপ্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে চাইছে। ■ মিয়ানমারের জিডিপিতে যে আরাকানের গুরুত্ব সামান্যই, সেটা মূলত বিনিয়োগের অভাবে। তবে রাজনৈতিক শান্তি এখানকার অর্থনৈতিক দিগন্ত আমূল পাল্টে দিতে পারে। ■ মিয়ানমার প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সি আইন যেভাবে করেছে, তাতে সম্ভাব্য ‘সামরিক ঠিকাদারি দল’কে ধরপাকড়ের অনেক ক্ষমতাই দেওয়া হয়েছে, সেটা উদ্বেগের দিক। ■ ভারতের পত্রপত্রিকায় মিয়ানমারের এই নতুন আইনগত সংস্কারকে তাদের রাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য এক হুমকি হিসেবে বর্ণনা করতে শুরু করেছে।

দখল করা টাউনশিপগুলোতে ইতিমধ্যে নিজেদের ‘বিপ্লবী প্রশাসন’ গড়তে কাজে নেমে পড়েছে তারা। ইউএলএ বলছে, তাদের সরকার হবে জাতিগতভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। রোহিঙ্গারা অবশ্য রাখাইনদের এমন কথায় বিশ্বাস করতে পারছে না।

রাজ্যের বিপ্লবী পুনর্গঠনের মধ্যেই ইউএলএ আরাকানের সীমানা বাড়িয়ে নিতেও তৎপর। তারা চীনের পালেতোয়াসহ আইওয়ার্দি, বাগো ও মেগওয়ের কিছু এলাকা দখলে নিয়ে নতুন আরাকানে যুক্ত করে নিতে চায়। ফলে আরাকানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর পাশের চারটি রাজ্যের কিছু কিছু এলাকায়ও রাখাইন গেরিলারা তাদের উপস্থিতি গড়ে তুলেছে।

ইউএলএ বলছে, এসব এলাকা অতীতে আরাকানের সঙ্গেই ছিল। এ কৌশলের অংশ হিসেবে আরাকান-মেগওয়ের সীমান্তের আন-পাদান মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করছে রাখাইনরা। এখানকার নেঙগেইপ টাউনশিপের কিছু এলাকাও দখল করে নিয়েছে তারা। আরাকান-বাগো সীমান্তেও রাখাইন গেরিলারা একই কাণ্ড করছে।

এসব সামরিক পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট, আরাকানে ব্যাপকভিত্তিক স্বশাসনের পাশাপাশি রাজ্যটির আয়তনও বাড়িয়ে নিতে তৎপর রাখাইন জাতীয়তাবাদীরা। ভবিষ্যতে মিয়ানমার কোনো কারণে ভূখণ্ডগত ভাঙচুরের শিকার হলে আরাকান যাতে আকারগতভাবে একটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে, সে কারণে আরাকান আর্মি এ রকম কৌশল নিয়ে থাকতে পারে।

সিত্তে ও বন্দর শহর চিয়াকপুর পতনের অর্থনৈতিক তাৎপর্য বিপুল। এ দুটি জায়গায় আরকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা মানে কেন্দ্রীয় সরকারের আরাকানকেন্দ্রিক রাজস্ব প্রায় পুরো বন্ধ হয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় সংকটে পড়বে জান্তা আরাকানের খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও বিক্রির অধিকার হারিয়ে।

একই সঙ্গে এসব দিকে চীন, ভারত ও রাশিয়ার যেসব বিনিয়োগ আছে, সেগুলো থেকে পাওয়া রাজস্ব যাবে তখন গেরিলা দলগুলোর দিকে। স্বভাবত সিত্তের পতন ঘটলে এই তিন বিদেশি শক্তিকে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় গেরিলাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে হবে। একই সঙ্গে যা হবে রাজনৈতিক স্বীকৃতির মতোই।

দক্ষিণ মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগ কতটা ঝুঁকিতে

মিয়ানমারের জিডিপিতে যে আরাকানের গুরুত্ব সামান্যই, সেটা মূলত বিনিয়োগের অভাবে। তবে রাজনৈতিক শান্তি এখানকার অর্থনৈতিক দিগন্ত আমূল পাল্টে দিতে পারে।

সেই অনুমান থেকে আরাকানের এই দিকটা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রলুব্ধকর জায়গা। সংগত কারণে বামারদের কাছ থেকে সিত্তে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে সবার চোখ পড়ছে দক্ষিণ মিয়ানমারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর দিকে।

আরাকানের এ মুহূর্তে বড় বিদেশি প্রকল্প হিসেবে চীনের স্পেশাল ইকোনমিক জোন আছে চিয়াকপুতে এবং কাছাকাছি অঞ্চল দিয়ে ভারতের আছে ‘কালাদান’ আন্তদেশীয় যোগাযোগ প্রকল্প।

এর মধ্যে রাশিয়া হঠাৎ এ মাসেই দেশটির সর্বদক্ষিণের তানিনথারির দাউইয়ের স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ চুক্তি করেছে সামরিক জান্তার সঙ্গে। এখানে তারা একটা পোর্ট (বন্দর) বানাতে চায় এবং তেল শোধনাগার গড়তে চায়।

উপকূলীয় জায়গা হিসেবে সিত্তে ও দক্ষিণ মিয়ানমারের পুরো উপকূলের একটা বড় গুরুত্ব হলো জ্বালানি আমদানি-রপ্তানিতে।

এর মধ্যে আরাকান আর্মির হাতে সিত্তের পতন হলে সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থা হবে ভারতের। কেবল ‘কালাদান’ প্রকল্পের জন্যই নয়, গত বছরের এপ্রিলে তাদের ‘ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লি.’ (আইপিজিএল) খোদ সিত্তে বন্দর পুরোপুরি চালু করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

এ বন্দরের আধুনিকায়নে তারা ২০২৩ থেকে যুক্ত। সিত্তে-চট্টগ্রাম-সাবরুম-আগরতলাজুড়ে জল-স্থল মিলে একটা রুট করার চিন্তা নয়াদিল্লির।

মণিপুরের দাঙ্গার পর চিন প্রদেশ দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগে ব্যাপক সমস্যা চলার মুখে সিত্তের পতন কলকাতা বন্দর হয়ে আরাকানে চলমান ভারতীয় যোগাযোগও বিঘ্নিত করতে পারে, যদি না আরাকান আর্মির সঙ্গে দ্রুত নয়াদিল্লির একটা বোঝাপড়া হয়।

আশপাশের অঞ্চলজুড়ে বিবিধ সহিংসতার কারণে মিয়ানমারে ভারতের রপ্তানি কয়েক বছর ধরে কেবল কমছে। বর্তমানে সেটা ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। ছয়-সাত বছর আগে এটা এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ ছিল।

অন্যদিকে চীন গভীর সমুদ্রবন্দরের বাইরে চিয়াকপুর সেওয়া পাইপলাইনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাখাইন কিংবা বামার যোদ্ধাদের
যেকোনো তরফ থেকে এই পাইপলাইনে স্যাবোটাজ হতে পারে।

স্বভাবত, সিত্তে ও চিয়াকপু নিয়ন্ত্রণে নেওয়ামাত্র সমুদ্রবন্দর ও সেওয়া পাইপলাইনের রাজস্ব আরাকান আর্মির দিকেই যাবে। এই রাজস্ব উদীয়মান বিপ্লবী সরকারের জন্য খুবই জরুরি এখন। এ রকম জটিল সামরিক বাস্তবতার একটা সমীকরণ হিসেবে চীন তাদের বিনিয়োগের সুরক্ষার জন্য প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সি নিয়ে আসতে পারে।

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার এ রকম সিকিউরিটি ফার্মগুলোকে যুদ্ধময়দানে সুযোগ দিতে আইনও করেছে ‘প্রাইভেট সিকিউরিটি সার্ভিস ল’ নামে। মূলত চীনের সুপারিশেই এটা হলো। ‘বিদেশি এজেন্সি লাইসেন্সের’ আড়ালে এটা মিয়ানমারে চীনের সৈনিকদেরই আগমন কি না, সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তবে কানাঘুঁষা সে রকমই।

আবার চীন এ রকম সুবিধা পেলে ভারত সরকারও সামরিক জান্তার কাছে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য অনুরূপ এজেন্সি আনতে চাইবে। এ রকম ঘটলে নাফের অপর দিকে চীন ও ভারতীয় সামরিক কোম্পানিকেও বাংলাদেশের দেখতে হতে পারে শিগগিরই।

মিয়ানমার প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সি আইন যেভাবে করেছে, তাতে সম্ভাব্য ‘সামরিক ঠিকাদারি দল’কে ধরপাকড়ের অনেক ক্ষমতাই দেওয়া হয়েছে, সেটা আরেক উদ্বেগের দিক।

আরাকান আর্মি তাদের এলাকায় এভাবে বিদেশি প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সিকে কাজ করতে দেবে কি না, সেটাও এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মিয়ানমানের চলমান গৃহযুদ্ধে এবং আরাকানেও নিঃসন্দেহে এটা নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে পারে বলে অনেক সামরিক ভাষ্যকার বলছেন।

ভারতের পত্রপত্রিকায় মিয়ানমারের এই নতুন আইনগত সংস্কারকে তাদের রাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য এক হুমকি হিসেবে বর্ণনা করতে শুরু করেছে। তাদের যুক্তিও ফেলনা নয়।

মিয়ানমারজুড়ে বহু জায়গায় চীনের বিনিয়োগ আছে। তার অনেক স্থাপনা ভারতীয় সীমান্তেরও কাছে। এখন থেকে সেসব জায়গায় চীন তার নিরাপত্তা কোম্পানিকে নিয়ে এলে ভারতের জন্য এটা নিশ্চিতভাবে দুর্ভাবনার ব্যাপার।

এর ফলে অরুণাচল, নাগাল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় চীন চাইলে মিয়ানমারের দিক থেকেও নজরদারি বাড়াতে পারবে। এমনকি তানিনথারিতে যদি রাশিয়াও তার বিনিয়োগের সুরক্ষায় সামরিক পাহারা বসাতে চায়, সেটা ভারত মহাসাগরের সামরিকায়ন বিপুলভাবে উসকে দেবে। কারণ, মিয়ানমারের এই জায়গাটা সমুদ্রের একেবারে পেটের ভেতর।

মিয়ানমারের যুদ্ধসংস্কৃতির এই নতুন আইনগত সংস্কার বাংলাদেশের জন্যও ভাবনার বিষয় হতে পারে। সীমান্তের ওপারে অতীতে বাংলাদেশ কেবল সশস্ত্র বামার ও রাখাইনদের কথাই জেনেছে। এখন প্রাইভেট ফোর্সগুলো সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি হয়ে পড়তে পারে।

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের নতুন এই সামরিক উপাদান বাংলাদেশের মতো ভারতের জন্যও বিশেষভাবে উদ্বেগের। কারণ, আয়রোজগারের প্রলোভনে নানান ধরনের গেরিলা উপদল এসব ‘বৈধ’ বেসরকারি সামরিক তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়তে পারে। এটা এই অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘাতের সমীকরণ অচিন্তনীয়ভাবে জটিল করতে চলেছে।

  • আলতাফ পারভেজ গবেষক ও লেখক