মতামত
ঢাকা ওয়াসার লোকসান, খেসারত কেন নগরবাসীর
নগরবাসীর জন্য টেকসই উপায়ে সারা বছর বিশুদ্ধ খাবার পানির জোগানের নিশ্চয়তা দিতে হবে ঢাকা ওয়াসাকে। এর পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপচয় ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে, পানি জীবনের অপরিহার্য উপাদান। ফলে পানিকে আর দশটা বাণিজ্যিক পণ্যের মতো বিবেচনা করা যাবে না।
ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব হলো ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশনের সেবা প্রদান করা। গত ৫০ বছরের উল্লেখযোগ্য সাফল্য বা অর্জন নিয়ে এক প্রকাশনায় ঢাকা ওয়াসা দাবি করেছে, ঢাকায় দৈনিক ২৬০-২৬৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনক্ষমতা ২৭০-২৭৫ কোটি লিটার। অর্থাৎ উৎপাদনক্ষমতা চাহিদার চেয়ে বেশি। অবশ্য ঢাকা ওয়াসার সাফল্যবিষয়ক এই প্রকাশনাতেই স্বীকার করা হয়েছে বর্তমানে ঢাকার মাত্র ২০ শতাংশ এলাকা পয়োনিষ্কাশন সেবার আওতায় রয়েছে, যা ভীষণ হতাশাজনক।
সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকা ওয়াসা অতিরিক্ত বা উদ্বৃত্ত পানি উৎপাদনের দাবি করলেও প্রতিষ্ঠানটি আসলে নগরবাসীর পানির প্রয়োজন মেটাতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরবরাহ করা পানির মান নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ওয়াসার পানি না ফুটিয়ে পান করা যায় না। এ ছাড়া প্রতিবছরই গ্রীষ্ম মৌসুমে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সংকট দেখা দেয় (রাজধানীতে গরমের সঙ্গে পানির কষ্ট, ২০ এপ্রিল ২০২৩, প্রথম আলো)
এসব এলাকায় পাইপলাইনে সব সময় পানি থাকে না, পানি থাকলেও তা ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত। এসব এলাকার বাসিন্দারা ওয়াসার পানিবাহী গাড়ি থেকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করে পানি কিনতে বাধ্য হন। সেটাও আবার সময়মতো পাওয়া যায় না। ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় এই সংকট মৌসুমি বা সাময়িক আর কোনো কোনো এলাকায় সারা বছরই দেখা যায়।
পরিবেশবান্ধবহীন পানি উৎপাদন
ঢাকা ওয়াসা যে উপায়ে পানি উৎপাদন করে, সেটাও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব নয়। ২০১৪ সালে তৈরি ঢাকা ওয়াসার মহাপরিকল্পনা অনুসারে, সে সময় ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৭৮ শতাংশ ছিল মাটির নিচ থেকে উত্তোলন করা। এভাবে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন টেকসই নয় বলে মহাপরিকল্পনায় ভূ-উপরিভাগের পানির ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ওয়াসা ২০২৫ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ পানি ভূ-উপরিভাগ থেকে সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও এখনো এই হার মাত্র ৩০ শতাংশ। (ঢাকা ওয়াসায় তাকসিম এ খানের যত ‘সফলতা’, ২৭ জুলাই ২০২৩, প্রথম আলো)
এভাবে ঢাকা ওয়াসা নগরবাসীর পানির চাহিদার ৭০ শতাংশ ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করার কারণে মাটির নিচের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যেই ঢাকা মিঠাপানির শূন্যতায় পড়তে পারে। বর্তমানে ১ হাজার পাম্প বসিয়ে ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন প্রায় ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে। (নিঃশেষের পথে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানি, ডেইলি স্টার বাংলা, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩)
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, উত্তোলন করা এই পানির ২৫ শতাংশই অপচয় হচ্ছে ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুসারে, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ২ মিটার বা প্রায় ৭ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল মাটির ২৫ মিটার গভীরে, যা ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার, ২০১০ সালে ৬০ মিটার এবং ২০২৩ সালে এসে ৭৫ মিটারে নেমেছে।
নিম্নবিত্তদের পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা কতটুকু
ওয়াসার সরবরাহ করা পানির উৎস, পরিমাণ ও গুণগত মান নিয়ে এত সব অভিযোগের মধ্যেই ওয়াসা বছর বছর পানির দাম বাড়িয়ে চলেছে। ঢাকা ওয়াসা গত ১৪ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে। আবারও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তুলেছে সংস্থাটি। গত মাসে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওয়াসার প্রস্তাবে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা, মধ্যবিত্তদের জন্য ২৫ টাকা, উচ্চমধ্যবিত্তদের জন্য ৩১ টাকা ২৫ পয়সা এবং উচ্চবিত্তদের জন্য ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০০০ অনুসারে ফ্ল্যাটের আয়তনভেদে গ্রাহকদের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণিতে বিভক্ত করা হবে।
আপাতদৃষ্টে আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় পানির দাম নির্ধারণের বিষয়টি ভালো মনে হলেও এর বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে বেশ কিছু আশঙ্কা রয়ে যায়। প্রথমত, এই প্রস্তাব অনুসারে যে শুধু উচ্চবিত্তদের পানির দাম বাড়বে তা নয়, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নমধ্যবিত্ত সবারই পানির দাম বাড়বে। এ প্রস্তাব অনুমোদিত হলে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির জন্য উচ্চবিত্তদের বর্তমান দামের চেয়ে ২২ টাকা ৩২ পয়সা, উচ্চমধ্যবিত্তদের ১৬ টাকা ৭ পয়সা, মধ্যবিত্তদের ৯ টাকা ৮২ পয়সা ও নিম্নমধ্যবিত্তদের ৩ টাকা ৫৭ পয়সা বেশি দামে পানি কিনতে হবে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাড়ে ৮৩ শতাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত হওয়ার কারণে নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে এই দুই শ্রেণির মানুষকেই বেশি দাম দিতে হবে। (পানির পাঁচ রকম দাম নির্ধারণ করতে চায় ঢাকা ওয়াসা, প্রথম আলো, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪)
দ্বিতীয়ত, ফ্ল্যাটের আকার-আকৃতিভেদে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের কীভাবে শনাক্ত করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। ঢাকা শহরের সব ফ্ল্যাটের আকার-আকৃতির নির্ভুল ডেটাবেজ কি কারও কাছে আছে? একশ্রেণির গ্রাহকদের যে অন্য শ্রেণির গ্রাহক হিসেবে ধরে নিয়ে বেশি বিলের বোঝা চাপানো হবে না তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
তৃতীয়ত, বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দাম নির্ধারণ করা হলে শ্রেণিভেদে পানির প্রাপ্যতা ও মানে তারতম্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানেও দেখা যায়, নগর ও শহরের যেসব এলাকায় ধনী মানুষদের বসবাস সেখানে সরবরাহ করা পানির মান তুলনামূলক ভালো এবং পানির প্রাপ্যতাও বেশি। নিম্নবিত্ত-অধ্যুষিত এলাকায় শুকনো মৌসুমে প্রায়ই পানি পাওয়া যায় না, যাও পাওয়া যায়, তা থাকে ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত ও জীবাণু-আক্রান্ত।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘ওয়াটার গভর্ন্যান্স ইন ঢাকা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকায় দৈনিক মাথাপিছু পানির ব্যবহার গড়ে ৩৬০ লিটার। এর মধ্যে গুলশান ও বনানী এলাকায় মাথাপিছু পানির ব্যবহার ৫০৯ লিটার, বাড্ডা, কুড়িল ও জোয়ার সাহারা এলাকায় ২১৫ লিটার, আর বস্তি এলাকায় মাত্র ৮৫ লিটার। এখন ধনীদের কাছে পানি বিক্রি করে বেশি অর্থ পাওয়া গেলে, শুকনো মৌসুমে পানির সংকটের সময় দরিদ্রদের বঞ্চিত করে ধনীদের যে বেশি পানি সরবরাহ করা হবে না, তার কি নিশ্চয়তা আছে?
ভর্তুকি নিয়ে দাবি কতটা বিশ্বাসযোগ্য
ধনী-গরিব কারও ওপরেই অযৌক্তিক খরচের ভার চাপানো উচিত নয়। ওয়াসার দাবি হলো, প্রতি ১ হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ গড়ে ২৫ টাকা হলেও বিক্রয়মূল্য ১৫ টাকা। ফলে ভর্তুকি দিতে হয় ১০ টাকা। কিন্তু ওয়াসার এই দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, ঢাকা ওয়াসা বেশির ভাগ (৭০ শতাংশ) পানি উত্তোলন করে ভূগর্ভ থেকে আর ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের খরচ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পরিশোধন করা পানির খরচের তুলনায় কম।
অন্যদিকে প্রতি এক হাজার লিটার পানি উত্তোলন, পরিশোধন ও সরবরাহে রাজশাহী ওয়াসার খরচ হয় ৮ টাকা ৯০ পয়সা। (৩ জানুয়ারি, ২০২২, দৈনিক ইত্তেফাক)। রাজশাহী ওয়াসার সরবরাহ করা পানির প্রায় পুরোটাই (৯২ শতাংশ) ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয় বলে এটাকেই ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের খরচ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।
সংবাদমাধ্যম ও খুলনা ওয়াসার ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, খুলনা ওয়াসার ৬৫ শতাংশ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পরিশোধন করা হয়। তারপরও খুলনা ওয়াসার প্রতি ইউনিট পানির উৎপাদন খরচ ১৬ টাকা ৫০ পয়সা। খুলনা ওয়াসা আবাসিক খাতে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা এবং বাণিজ্য খাতে ১৪ টাকা দরে পানি বিক্রি করে। তাহলে ঢাকা ওয়াসা কোন যুক্তিতে মাত্র ৩০ শতাংশ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পরিশোধন করে ২৫ টাকা উৎপাদন খরচের দাবি করে?
অভিযোগ হলো, উচ্চ সুদে নেওয়া বৈদেশিক ঋণের কিস্তির টাকা পানির উৎপাদন খরচের সঙ্গে যুক্ত করার কারণেই ঢাকা ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। বৈদেশিক ঋণনির্ভর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীরগতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে অথচ ঋণের টাকায় করা প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ঋণের কিস্তি ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে, যার খেসারত দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের বছর বছর পানির বাড়তি মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে।
উদাহরণস্বরূপ পদ্মা-যশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের কথা বলা যায়। প্রথম আলোর তথ্য অনুসারে, পদ্মা নদীর পানি রাজধানীতে সরবরাহ করতে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশি ঋণ নিয়ে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু শোধনাগার থেকে পানি রাজধানীতে সরবরাহ করার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়নি। এ কারণে শোধনাগারের সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক অব্যবহৃত থাকছে। পানি পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটারের পরিবর্তে ২০ কোটি লিটার। অথচ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে বছরে ৫৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪–এ সমকাল-এর একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বাস্তবায়িত সাভারের ভাকুর্তা ওয়েলফিল্ড প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ২৫ কোটি লিটার পানি পাওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেকেরও কম। পয়োবর্জ্য যাওয়ার কোনো নেটওয়ার্ক তৈরি না করায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দাশেরকান্দিতে বাস্তবায়ন করা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা বাবদ বছরে ২০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে ৪৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
ওয়াসার লোকসান, খেসারত নগরবাসীর
ঋণনির্ভর ব্যয়বহুল অকার্যকর প্রকল্পের খেসারত জনগণকে কীভাবে দিতে হচ্ছে তা পরিষ্কার হয় ঢাকা ওয়াসার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখলে। ঢাকা ওয়াসার অডিট রিপোর্ট ২০২২-২৩ অনুসারে, ওয়াসা পানি বিক্রি করে আয় করেছে ১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা আর পয়োনিষ্কাশন সেবা বাবদ ৪৭৯ কোটি টাকা। অন্যান্য আয়সহ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসার মোট অপারেটিং ইনকাম বা পরিচালন আয় হয়েছে ২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এ সময় পরিচালন ব্যয় ছিল ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওয়াসার পরিচালন মুনাফা ৬৪৭ কোটি টাকা।
কিন্তু পরিচালন পর্যায়ে মুনাফা করলেও বিপুল পরিমাণ অপরিচালন ব্যয় ও ঋণের সুদ পরিশোধের কারণে বছর শেষে ওয়াসার লোকসান দেখিয়েছে ৫২৫ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় ছিল ১৪০ কোটি টাকা এবং অপরিচালন ব্যয় ১ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। অপরিচালন ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়জনিত ক্ষতি ৯৬২ কোটি এবং পুনর্মূল্যায়নজনিত ক্ষতি ৩৮৬ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে এটা ছিল যথাক্রমে ৬৮২ কোটি টাকা ও শূন্য টাকা। তার মানে পানি বিক্রয় বাবদ ওয়াসা মুনাফা করলেও বিপুল বৈদেশিক ঋণের অপচয়মূলক ব্যবহারের কারণে লোকসানি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। (ঢাকা ওয়াসা অডিট রিপোর্ট, ২০২২-২৩, পৃষ্ঠা: ২, ২১)
ঢাকা ওয়াসাকে গুরুত্ব দিতে হবে নগরবাসীর জন্য টেকসই উপায়ে সারা বছর বিশুদ্ধ খাবার পানির জোগান নিশ্চিত করা এবং পুরো ঢাকাকে পয়োনিষ্কাশন সেবার আওতায় আনার দিকে। সেই সঙ্গে জরুরি হলো বৈদেশিক ঋণনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপচয় ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা। মনে রাখতে হবে, পানি জীবনের অপরিহার্য উপাদান, ফলে পানিকে আর দশটা বাণিজ্যিক পণ্যের মতো বিবেচনা করা যাবে না। কাজেই পানির মূল্যবৃদ্ধি কোন সমাধান নয়। ‘টাকা যার, পানি তার’—এ রকম কোনো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সে জন্য সরকারকেও যথাযথ তদারকি করতে হবে।
কল্লোল মোস্তফ বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক