বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বৈরশাসকেরা এবার অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে খেয়াল রাখছিলেন বলে আমার ধারণা। এই অনুমান যদি সঠিক হয়, তাহলে তার ভিত্তিতে এটাও বলা যায়, নির্বাচনের ফলাফলে তাঁদের অনেকেই হতাশ হয়েছেন। কেন এমনটা বলছি সে ব্যাখ্যায় আসব কলামের পরের দিকে।
সাম্প্রতিককালে আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচন এবারকার মতো এতটা গুরুত্ব সম্ভবত পায়নি। যেহেতু এই নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) সব সদস্য এবং উচ্চকক্ষ সিনেটের কমবেশি এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত হন, তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মধ্যবর্তী নির্বাচনকে দেখে থাকেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট কত সহজে আইন পাস করতে পারবেন, কিংবা আইন পাসে কতটা বাধার মুখোমুখি হবেন, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে। যেহেতু ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকালীন মোটামুটি অর্ধেক মেয়াদে এসে এই নির্বাচন হয়, সেহেতু এটাকে প্রেসিডেন্টের একধরনের গণভোট হিসেবেও দেখা হয়। কিন্তু এবার নির্বাচনের গুরুত্ব শুধু এই জায়গায় থেমে থাকেনি।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছিল, নানা জনমত জরিপ এবং অনেক বিশ্লেষকের বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছিল এই নির্বাচনে একটা বড় লাল ঢেউ (রেড ওয়েভ) দেখা যাবে। রিপাবলিকানদের পরিচয়বাহী লাল রঙের ঢেউ মানে বিরাট ব্যবধানে রিপাবলিকানদের জয়। কিন্তু না, লাল ঢেউয়ের দেখা মেলেনি নির্বাচনী ফলাফলে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকানরা নিশ্চিতভাবেই কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেছে। সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের মধ্যে রিপাবলিকানরা প্রয়োজনীয় ২১৮টি আসনে এবং ডেমোক্র্যাটরা ২০৯টি আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসনগুলোর ফল ঘোষিত হয়নি।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের অনেক সিট হারানো একেবারে প্রতিষ্ঠিত রীতি। ২৫ থেকে ৩০টি সিটে পরাজিত হয় ক্ষমতাসীনেরা। আছে বড় পরাজয়ের নজিরও। ২০১০ সালে বারাক ওবামা তাঁর প্রথম মেয়াদে যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মুখোমুখি হন, তাতে প্রতিনিধি পরিষদে আগেরবারের তুলনায় ৬৩টি সিট হারিয়েছিলেন। এই বিবেচনায় প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের পরাজয়কে তুলনামূলকভাবে অনেক ছোটই বলতে হবে।
ওদিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উচ্চকক্ষ সিনেটে এর মধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে ডেমোক্র্যাটরা। একটি আসনের ফলাফল বাকি থাকতেই তারা ৫০টি আসন পেয়ে গেছে। নিষ্পত্তি না হওয়া আসনটি তারা যদি হারায়ও, তবু আগের সিনেটের মতোই সমানসংখ্যক আসন হবে দুই দলের। সে ক্ষেত্রে সিনেটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্ধারণী ভোট দিতে পারবেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
ডেমোক্র্যাটরা এবারকার নির্বাচন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, সেটা আসলেই তাদের খুব প্রতিকূলে ছিল। করোনার মধ্যে মানুষ চরম সংকটে দিন কাটিয়েছে। এরপর রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনে স্মরণকালের সবচেয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে মার্কিন ভোটারদের জীবনে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। মরিয়া বাইডেন সৌদি আরব সফর করেছিলেন তেলের দাম কমানোর ব্যাপারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) রাজি করানোর আশায়। কিন্তু অনেক কৌশলগত কারণ থাকলেও এর মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল, মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাইডেনকে ঝামেলায় ফেলে ট্রাম্পের জন্য সুবিধা তৈরি করা। সৌদি আরবের এই সমালোচিত ‘ক্রাউন ফ্রেন্ড’ ট্রাম্পের শাসনামলে একেবারে নির্বিঘ্নে যাচ্ছেতাই করতে পেরেছিলেন।
সার্বিক প্রতিকূলতা বিচার করলে এবারকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা খারাপ করেনি। কিন্তু পার্টি পর্যায়ে যা–ই ঘটুক না কেন, একজন ব্যক্তি আসলে প্রার্থী না হয়েও তুমুল আলোচিত ছিলেন এই নির্বাচনে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নির্বাচন তাঁর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক পূর্বাভাস দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রত্যাশার কাছাকাছি ফল পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যথারীতি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর একই কাজ করেছিলেন তিনি। এমনকি ১৫ নভেম্বর যখন তিনি আগামী নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন, সেখানেও রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়াসহ সবাই তাঁর বিপক্ষে আছে—এমন বক্তব্য দিয়ে শুরু করেছেন তাঁর বক্তৃতা। এই ভদ্রলোককে আমেরিকার মতো বিকশিত গণতন্ত্রের নয় বরং তৃতীয় বিশ্বের আধা কর্তৃত্বপরায়ণ দেশের রাজনীতিবিদ হিসেবেই বেশি মানায়।
এবারের মার্কিন কংগ্রেস নির্বাচনে একটা লাল ঢেউ হলে সেটা জনাব ট্রাম্পকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলত, আরও বেশি কর্তৃত্ববাদী বানাত। সেটা তো হয়নি বরং তিনি আদৌ রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন কি না সেই সংশয় তৈরি হতেও শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে আমি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ক্যাপিটলে হামলাকে কেন্দ্র করে তদন্তকে নির্দেশ করছি না। নিশ্চিতভাবেই এই তদন্ত এবং বিচারকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। কিন্তু এই নির্বাচন তাঁর সামনে একটা নতুন ঝুঁকিও তৈরি করেছে।
এবারের নির্বাচনে ফ্লোরিডার গভর্নর নির্বাচনে পরপর দ্বিতীয়বারের মতো রন ডিস্যান্টিস জয়ী হওয়ায় আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির হয়েছেন। এতে ট্রাম্প এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে তিনি প্রকাশ্যে এমন সব কথাবার্তা বলছেন, তাতে আমেরিকার আর কোনো শীর্ষ রাজনীতিবিদ হলে আমরা অবাক হতাম, ট্রাম্প বলেই হয়তো আমরা অবাক হচ্ছি না। মোদ্দাকথা হচ্ছে, কোনো আইনি সমস্যায় না পড়লেও নিজের দলের মধ্যেই এমন সমস্যায় ট্রাম্প পড়েছেন যে আখেরে দলের হয়ে নির্বাচন করার যোগ্যতা তিনি অর্জন করবেন কি না, সেটাই প্রশ্নের মুখোমুখি।
এই সার্বিক পরিস্থিতিতে ট্রাম্প যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিলেন, এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী বক্তৃতায় অনেক কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি সেই আগের ট্রাম্প নন। তাঁর কথা বলার ধরনে এবং মুখ ও শরীরী ভাষায় আগের মতো আত্মবিশ্বাস এবং আক্রমণাত্মক ঢং কোনোটিই ছিল না। ট্রাম্প যে ধারার রাজনীতি করেন, তার সঙ্গে এই জিনিসগুলোর অনুপস্থিতি খুবই বেমানান ঠেকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারা কিংবা পারলেও ডেমোক্র্যাটদের কাছে পরাজিত হওয়া শুধু আমেরিকা নয়, বৈশ্বিক রাজনীতির জন্যই একই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। ‘ট্রাম্পিজম’ একটা পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ। রাজনীতিতে এসে ট্রাম্প যা যা করেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পথে যা যা করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যা যা করেছেন—সবকিছু মিলিয়েই ট্রাম্পিজম। এই প্যাকেজের মধ্যে নীতিগত বিষয় যেমন আছে, তেমনি আছে তাঁর চিন্তা এবং আচরণগত ব্যাপারও। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প যা যা করেছেন, সেটা আমেরিকার ইতিহাসেই অনেক ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব ব্যাপার।
‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় খুবই সফলভাবে এই স্লোগান ব্যবহার করেছিলেন। আলোচিত স্লোগানটিতে ‘অ্যাগেইন’ শব্দটি থাকার মানে হচ্ছে যাঁরা এই স্লোগান ব্যবহার করছেন, তাঁদের বিবেচনায় অন্তত সেই সময়ের আমেরিকা ‘গ্রেট’ ছিল না। ক্ষমতাসীন নন, এমন কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য এটি একটি মোক্ষম স্লোগান তো বটেই। আগেও এই স্লোগান ‘লেটস’ যোগ করে বা না করে ব্যবহৃত হলেও সর্ব সাম্প্রতিক ব্যবহারটা ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছেন। আমেরিকাকে গ্রেট বানানোর জন্য ট্রাম্প যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা জানা যাবে তাঁর আরেকটি স্লোগানে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। এই স্লোগান দিয়ে আমেরিকা তার দেশের বাইরের অন্য সবকিছু প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দিয়ে নিজের দিকে বেশি দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলে।
মজার ব্যাপার, আগে দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময় এই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছিল, তখন চরম বৈশ্বিক সংকটের মুখে থাকা একটি দেশ নিজের দিকেই সবার আগে দৃষ্টি দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাম্প এমন সময়ে এই স্লোগান ব্যবহার করেছেন, যখন বিশ্বজুড়ে কোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বিরাজ করছে না। কিন্তু তবু ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতায় থাকার চার বছরে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা প্রভাবিত বিশ্বব্যবস্থা থেকে নিজেকে অনেক বেশি সরিয়ে এনেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন আসে, অন্যদিকে মনোযোগ কমিয়ে দিয়ে আমেরিকাকে কি ‘গ্রেট’ বানানো সম্ভব ছিল?
আমরা পছন্দ করি বা না করি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত ১০০ বছর পৃথিবী সব সময় এক বা একাধিক দেশের নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্বব্যবস্থায় চলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল মূলত আমেরিকার হাতে বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্ব চলে আসার সময়। বেশ কয়েক বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন সে ক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বব্যবস্থায় আমেরিকার প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য নিশ্চিত হয়েছিল।
ট্রাম্পের সময় আমেরিকা পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অন্য অনেক ক্ষেত্র থেকে নিজকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরিয়ে নিয়েছিল। ট্রাম্প আমেরিকাকে সরিয়ে নিয়েছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেসকো, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি, এশিয়ার বেশ কিছু দেশের সঙ্গে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি থেকে। এমনকি আমেরিকাকে তিনি ন্যাটো থেকে বের করে আনার কথাও বেশ কয়েকবার বলেছিলেন। ইউরোপে সৈন্যসংখ্যা কমিয়েছেন তিনি, এমনকি আমেরিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ দুই মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে সৈন্য রাখার জন্য দ্বিগুণ বা চতুর্গুণ খরচ দাবি করেছিলেন।
শুধু নিজের দেশের ক্ষেত্রেই নয়, তিনি যেকোনো বহুপাক্ষিক বিষয়ের বিরোধী ছিলেন। এই কারণেই তিনি প্রকাশ্যে ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্প আমেরিকার ‘গ্রেটনেস’ বরং অনেক কমিয়েছেন। আর নিজে যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে চরম স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার মানুষ, তাই তিনি বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা—এসব নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। তাঁর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পেছনে ভ্লাদিমির পুতিনের নানা রকম প্রভাব রাখার কথা জানা গিয়েছিল। এমনকি সেটার আনুষ্ঠানিক তদন্তও হচ্ছে।
বলা বাহুল্য, অ্যারিস্টটলের বিখ্যাত উক্তি ‘প্রকৃতি শূন্যতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে’ শুধু পদার্থবিদ্যায় নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বরং আরও বেশি প্রযোজ্য। সেই আমেরিকার ছেড়ে দেওয়ার ফলে তৈরি হওয়া শূন্যস্থানগুলো দখল করে নিয়েছে মূলত চীন এবং কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়া। চীনের সঙ্গে কিছু বাণিজ্য–সংঘাতে ট্রাম্প নিজেকে জড়ালেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে আমেরিকার সরে যাওয়া চীনকেই সবচেয়ে বড় সুফল দিয়েছে।
কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই বিশ্বের কোনো একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের প্রধান ব্যক্তির জন্য জো বাইডেনের ক্ষমতায় থাকা ভালো বিষয় নয়। তাঁদের জন্য ট্রাম্পই সবচেয়ে উপযোগী প্রেসিডেন্ট, যিনি কোথায় কারচুপির নির্বাচন হয়, কোথায় মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়, সেটা নিয়ে মাথা ঘামান খুব কমই। তাই বিশ্বের কোনো কোনো স্বৈরশাসক ট্রাম্পের ফিরে আসার আশায় দিন গুনতেই পারেন। ভাবতে পারেন যে কোনো রকমে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টিকে গেলে এরপর ট্রাম্প আমেরিকার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে পরের চার বছর অনেকটা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ‘কিছুটা’ জয় পেলেও অনেকটা পরাজয় ঘটেছে ট্রাম্প এবং ট্রাম্পিজমের। রিপাবলিকান পার্টির হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারলেও এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বলা যায়, ট্রাম্পের আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। সেটা হলে বিশ্বের নানা প্রান্তের কর্তৃত্ববাদী শাসকদের জন্য এক দুঃসংবাদ তো বটেই।
ট্রাম্পিজম নামের ডানপন্থী, পরিচয়বাদী (ট্রাম্পের ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী), চরম জনতুষ্টিবাদী রাজনৈতিক প্যাকেজটি পৃথিবীর রাজনীতিতে নতুন নয়। এটা অতীতে ছিল খোদ ইউরোপের মাটিতেই, যা ভারতে শেকড় গেঁড়ে বসেছে তো বটেই, আবার ফিরে আসছে ইউরোপেই। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আমেরিকায় ট্রাম্পের দুর্বল হওয়া বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য আশার আলো তো বটেই।
জাহেদ উর রহমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক