ইতিকাফ কীভাবে করব 

ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা, আবদ্ধ করা, আবদ্ধ থাকা বা আবদ্ধ রাখা। পরিভাষায় ইতিকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা। যিনি ইতিকাফ করেন, তাঁকে মুতাকিফ বলে। দুনিয়ার সব আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে, সব মোহ-মায়া ত্যাগ করে সব বাধা-বন্ধন উপেক্ষা করে একান্তভাবে আল্লাহ তাআলার সন্নিধানে যাওয়ার নাম ইতিকাফ।

ইবাদতের প্রাণকেন্দ্র মসজিদ। মসজিদের বিশেষ আমল হলো ইতিকাফ। আল্লাহ তাঅালা বলেন, ‘আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৫)

২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে থেকে ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবেন। আর কেউই আদায় না করলে সবাই সুন্নত তরকের জন্য দায়ী থাকবেন। তবে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন। 

রমজান মাসের শেষ দশকে রয়েছে মহিমান্বিত রজনী পবিত্র শবে কদর। ইতিকাফকারীর ২৪ ঘণ্টা ইবাদত হিসেবে গণ্য, তাই তাঁর শবে কদর নিশ্চিত। লাইলাতুল কদর হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (সুরা কদর, আয়াত: ১-৫)

পুরুষদের মসজিদে ইতিকাফ করতে হয় আর নারীরা নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষে ইতিকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফের ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। অজু, ইস্তিঞ্জা বা পাক-পবিত্রতার জন্য বাইরে বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না বা সালাম বিনিময় করবেন না। কেউ সালাম দিলে তার জবাবও দেবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তাঁর সঙ্গে সালাম বিনিময় ও কথাবার্তা বলতে পারবেন। ইতিকাফ কক্ষে এমন কেউ অবস্থান করতে পারবেন, যাঁরা ইতিকাফ করছেন না। ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যে কেউ অবস্থান করেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন; তবে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ; এর দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইতিকাফের সময় ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে (বা নির্দিষ্ট স্থানে)।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

ইতিকাফ জামে মসজিদে যেমন করা যায়, তেমনি পাঞ্জেগানা মসজিদেও করা যায়। এ অবস্থায় জুমার নামাজ আদায়ের জন্য শুক্রবারে জামে মসজিদে যেতে হবে, এতে ইতিকাফের কোনো ক্ষতি হবে না। জুমার আজানের পরে যাবেন এবং নামাজের পর চলে আসবেন। আসা-যাওয়ার পথে বা জুমা মসজিদে কারও সঙ্গে কথা বলবেন না, প্রয়োজনে ইশারায় বা সংকেতে নির্দেশ ও উত্তর প্রদান করবেন। 

পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফকালীন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করবেন। কখনো কোনো কারণে জামাত না হলে, নিজেই আজান-ইকামাত দিয়ে নামাজ আদায় করবেন। ওয়াক্তিয়া নামাজের জামাতের জন্য ইতিকাফ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া যাবে না। এ জন্যই সম্ভব হলে জামে মসজিদে ইতিকাফ করাই উত্তম। 

সুন্নত ইতিকাফ কমপক্ষে এক দিন বা ২৪ ঘণ্টা রোজাসহ পালন করতে হয়। নির্দিষ্ট দিন সূর্যাস্তের আগে ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করবেন এবং পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। রমজান ছাড়াও ইতিকাফ করা যায়, তবে তা হতে হবে রোজাসহ। ইতিকাফ আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি জোগায় এবং গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করে। 

ইতিকাফকারী ইতিকাফ ছেড়ে বাইরে কোনো ইবাদতে শরিক হতে পারবেন না। যেমন মসজিদের বাইরে অনুষ্ঠিত জানাজা নামাজ ইত্যাদি। ইতিকাফকারী বাইরের ইবাদতে শরিক না হয়েও সেসব ইবাদতের সওয়াব পাবেন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com