আনুপাতিক সংসদীয় আসনব্যবস্থার কিছু গলদ

‘পিআর’ (আনুপাতিক সংসদীয় আসনব্যবস্থা) একটি জটিল পদ্ধতি। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও ভোট গণনা সময়সাপেক্ষ। শুধু তা–ই নয়, এটি যথেষ্ট ব্যয়বহুলও। রাষ্ট্রকেও বছরের পর বছর ভুলত্রুটি সংশোধনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আনুপাতিক সংসদীয় আসনব্যবস্থা নিয়ে দুই পর্বের লেখার আজ শেষ পর্ব প্রকাশিত হলো। লিখেছেন হেলাল মহিউদ্দীন

অভিবাসীদের দেশ কানাডা। পৃথিবীর নানা মতের, ধর্মের ও বর্ণের মানুষ জড়ো হওয়ায় কানাডার জনমিতি ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। ফলে গত তিন দশকে কানাডায়ও ‘ফেয়ার ভোট’ আন্দোলন খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একদল নাগরিক চান, ভোটানুপাতিক আসন (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর) বণ্টনের নির্বাচনী ব্যবস্থা। কেন পদ্ধতিটি ভালো, তা নিয়ে তাঁরা অসংখ্য যুক্তি হাজির করছেন। ভোটানুপাতিক নির্বাচন হলে সরকারে বিভিন্ন ধর্মের (মুসলিম, শিখ) প্রতিনিধিত্ব বাড়বে; অভিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব জোরদার হবে ইত্যাদি।

কানাডায় নতুন ধারণাকে উড়িয়ে দেওয়া হয় না; বরং সাদরে গ্রহণ করে বিশেষজ্ঞ-গবেষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্মোহভাবে গবেষণা করার জন্য; নতুন পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনা-অসম্ভাবনার দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য। তাই কানাডায় ভোটানুপাতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা অনেকগুলো গবেষণা হয়েছে।

■ বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকের মধ্যে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ভেদে কোনো বৈষম্য বা পার্থক্য রাখেনি।

■ ‘পিআর’ বিষয়ে একটি বহুল প্রচারিত মত, এটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সরকারে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু সিংহভাগ গবেষণাই দেখিয়েছে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিরা খুব সামান্যই নিজ নিজ গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত হন।

■ নির্বাচনপদ্ধতির বেলায় হুট করেই যেকোনো একটি সংস্কারে যাওয়ার উপায় নেই। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের আগে-পরে অনেক পর্যালোচনা ও সুবিধা-অসুবিধার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ দরকার।

বিশ্বমানের ডাকসাইটে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফ্রেজার ইনস্টিটিউটের মতো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবারই সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে বিষয়টিকে যতটা ন্যায্য ও সাম্যতাবাদী মনে হয়, ততটা মোটেই নয়; বরং পৃথিবীর যে দেশেই পদ্ধতিটির প্রয়োগ রয়েছে, সে দেশেই শাসনতান্ত্রিক জটিলতা না কমে বরং বেড়েছে। হানাহানি, বিভাজন, সংকীর্ণতা, অনৈক্য ও ক্ষুদ্র স্বার্থের লড়াই বেড়েছে।

বছর পাঁচেক আগে পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি ও অটোয়া ইউনিভার্সিটির যৌথ সহায়তায় পোস্টডক্টরাল গবেষক বেঞ্জামিন ফারল্যান্ড ‘স্পেশাল কমিটি অন ইলেকটোরাল রিফর্ম’-এর জন্য একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন। এর শিরোনাম করেন ‘ইস্যুজ অব রিপ্রেজেন্টেশন ইন কোয়ালিশন গভর্নমেন্ট’(জোট সরকারের প্রতিনিধিত্বের সমস্যা)।

ফারল্যান্ড দেখিয়েছেন বহু সংস্কৃতিবিন্যস্ত সমাজে (মাল্টিকালচারাল সোসাইটি) পিআর পদ্ধতি মানেই কোয়ালিশন সরকার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য জোটবদ্ধ থাকতে পারার দায় ও দয়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেশে দেশে অনেক সরকারই জনকল্যাণের মূল দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বা পিছিয়ে পড়েছে। ফারল্যান্ড উপসংহার টানেন, পিআরকে কাম্য নির্বাচন সংস্কার মনে না করার পক্ষে।

আরও পড়ুন

কানাডার নির্বাচন আইনের মূলনীতিটিই বৈষম্যবিরোধী। তাতেই সব পথ-মত ও ধর্মের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়েই আছে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের অসংখ্য সংসদ সদস্য অভিবাসী। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত। যে কেউই ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠিতে জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য লড়তে পারেন। তাই নাগরিকদের একাংশের গত দুই দশকের আন্দোলনের পরও পিআর পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়নি। কারণ, দরকারই–বা কি একটি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার?

কানাডার মতো দেশে সংবিধান সব নাগরিককে সমান অধিকার দিয়েই রেখেছে। তাই সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা ধর্ম বা অন্য কোনো বিশেষায়িত পরিচয়ে আলাদা প্রতিনিধিত্ব দরকার বলাই বরং বিভেদ-বিভাজনমুখী। ‘আমরা ভিন্ন’—এ ধরনের আলাদাকরণ বরং বিপজ্জনক। ভাবনাটি অন্তর্ভুক্তিকরণ (ইনক্লুশন) ধারণাকে অস্বীকারের নামান্তর।

বাংলাদেশের সংবিধানও নাগরিকের মধ্যে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ভেদে কোনো বৈষম্য বা পার্থক্য রাখেনি। বাংলাদেশে কৃষিজীবী-শ্রমজীবী-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বঞ্চিত বা পদানত সরকারে প্রতিনিধিত্বহীনতার সমস্যার কারণে মোটেই নন; বরং রাষ্ট্রীয় নীতিমালার দুর্বলতা এবং প্রয়োগের সমস্যার কারণে। এসব প্রতিনিধি প্রতিনিধি না থেকে ক্ষমতাবান দানবে পরিণত হবেন না, এ রকম নিশ্চয়তা কম।

পিআর বিষয়ে একটি বহুল প্রচারিত মত—এটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সরকারে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু সিংহভাগ গবেষণাই দেখিয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিরা খুব সামান্যই নিজ নিজ গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত হন। তাঁরা মূলত হয়ে ওঠেন ক্ষমতার অংশীজন; ক্ষেত্রবিশেষে ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’। এ রকম দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, আদিবাসীদের প্রতিনিধি নিজেই আদিবাসীদের জমি-জিরেত বাস্তুবসতি থেকে উচ্ছেদ করে, দখল করে নিজস্ব অর্থকরী প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের গত কয়েক দশকের সংখ্যালঘু-বঞ্চনার দিকে গভীরভাবে নজর দিলে এ রকম প্রমাণ মিলবে।

দক্ষিণ আফ্রিকায়ও পিআর বিভাজন-বিশৃংখলা সৃষ্টি করায় দেশটি আবারও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের কথা ভাবছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রজার সাউথহল প্রশ্ন তুলেছেন, এটি ‘গণতান্ত্রিক অভিনিবেশ নাকি গণতান্ত্রিক ক্ষয়’(ডেমোক্রেটিক ডিপেনিং অর ডেমোক্রেটিক ডিকেই) ? 

ড্যানিয়েল সাইল্যান্ডেরসহ চারজন দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ ২০২২ সালে সাউথ আফ্রিকা’স ডেমোক্রেসি অ্যাট দ্য ক্রসরোডস শিরোনামে একটি গবেষণাগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। গ্রন্থটির অধ্যায়ে অধ্যায়ে আলোকপাত করেছেন, কীভাবে একটি মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন ধূলিোৎ হতে চলেছে রক্ষণশীল, মানববিদ্বেষী, অভিবাসীবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিপজ্জনক রকমের শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়ে ওঠার মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। কোনো একটি এলাকার একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের একজন অত্যন্ত জনসম্পৃক্ত ও গ্রহণযোগ্য নেতা আছেন। তিনি ভালো মানুষ। সৎ ও সজ্জন। স্বাভাবিকভাবেই সহায়-সম্পদ ও বিত্তহীন। 

তাঁর মূল প্রতিপক্ষ অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটির নীতিনির্ধারকেরা জানেন, নির্বাচনে তিনি জিতবেন। তাই দলটি নিজেদের এমন একজন প্রার্থিকে মনোনয়ন দেয়, যিনি হয়তো জিতবেন না। অনেকটা খেলায় ‘ওয়াকওভার’ দেওয়ার মতো। তারাও মনে মনে চায়, প্রতিপক্ষের সুযোগ্য নেতাই বরং জিতে আসুন। তাঁকে সরকারে দরকার।

নরওয়ে বা সুইডেনে এ রকমই হয়। এটিই পলিটিক্যাল লিটারেসি। এটিই ভোটিং লিটারেসি। বাংলাদেশে এমন উদাহরণ আগেও ছিল।

বাস্তবতার নিরিখে এবার উদাহরণচিত্রটি খানিকটা পাল্টাই। হঠাৎ সেই জনপ্রিয় নেতার আসনে প্রতিপক্ষ দলটি নিয়োগ দিয়ে বসল এক ডাকসাইটে ব্যবসায়ী ও কালোটাকার মালিককে। উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষের সৎ ও যোগ্য নেতাটিকে যেভাবেই হোক পরাজিত করতেই হবে। এদিকে সৎ নেতাটির টাকাপয়সা বিত্তবৈভবও নেই। হাজারটি মোটরসাইকেল দাবড়ানো পকেট উপচানো টাকায় কিনে ফেলা কর্মী বাহিনীও নেই।

ফলাফল একজন অশিক্ষিত, অরাজনৈতিক, ভুঁইফোড় কালোটাকার মালিক সংসদ সদস্য বনে গেলেন। চলতি বছরের প্রথম দিকেই প্রথম আলোয় সংবাদ হয়েছিল, চলতি সংসদের ৬৭ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী, ৯০ ভাগই কোটিপতি। ফলাফলও আমাদের জানা। 

ব্যবসায়ী সংসদ সদস্যরা দেশকে ও সংসদকে ব্যবহার করেছেন ব্যবসার পুঁজি হিসেবে। কারও ব্যবসা ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে হাজার গুণ। গত দেড় দশকে বাংলাদেশে দুর্নীতির অবিশ্বাস্য উল্লম্ফনের পেছনে মূল কারণটি ছিল অভিজাত বেনিয়ানির্ভর স্বৈরতন্ত্রের (অলিগার্কি) প্রকোপ।

উদাহরণটি টানার উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কারের প্রধানতম লক্ষ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা। প্রধানতম লক্ষ্য হওয়া উচিত নির্বাচনকে মাফিয়া ও ব্যবসায়ীমুক্ত রাখা, টাকার প্রভাবমুক্ত করে তোলা। নির্বাচনে মাঠের প্রকৃত রাজনীতিক, যাঁরা আসলেই যুগের পর যুগ গণমানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন, মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। 

তাঁদের দ্বারা আইন সংস্কার হোক সমতা, সাম্য, ন্যায্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক ঐক্যের পক্ষে; অধিকারগুলো আগে প্রতিষ্ঠিত হোক। তারপর নাহয় ভাবা যাবে ভোটানুপাতিক আসনবিন্যাসের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে। এখনই ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে ফেলা কতটা যৌক্তিক, সেই পর্যালোচনা আরও হোক।

দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের পিআর নির্বাচন পদ্ধতির গবেষণাগুলোকে আমলে নিলে দেখা মেলে অনেকগুলো সমস্যার। 

এক. দুর্বল জবাবদিহি। দলীয় সরকার নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি পালন না করলে তাকে জবাবদিহির জন্য জনগণের মুখোমুখি করা সহজ। জোট সরকারে জোটভুক্তদের ভিন্ন ভিন্ন আদর্শিক অবস্থানের ওপর দায় চাপিয়ে বড় দলগুলো জবাবদিহি এড়িয়ে যেতে পারে।

দুই. বিবিধ মত-পথ ও দলের পার্থক্য এবং স্বার্থের ভিন্নতাকে এক ঘাটে বসানো কঠিন হওয়ার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা গৃহিত নীতিমালা বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য ও দীর্ঘসূত্র হয়ে ওঠে। 

তিন. ভোটদাতাদের বড় অংশই ভোটের পদ্ধতি বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়, প্রতারিত ও প্রভাবিত হয় এবং চাতুর্যপূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা পেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। ডোনাল্ড হরোভিচ ‘বিভাজিত সমাজের গণতন্ত্র’(ডেমোক্রেসি ইন আ ডিভাইডেড সোস্যাইট) এবং ‘নির্বাচনিক কারসাজি’ (ইলেকটোরাল ইঞ্জিনিয়ারিং) আলোচনায় শ্রীলঙ্কার ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তির উদাহরণ টেনেছেন বারবার। 

চার. পিআর দুর্নীতির রাশ টেনে ধরাকে আরও দুঃসাধ্য করে দেয়। যেসব দেশ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, সেসব দেশে দুর্নীতির মাধ্যমেই ভোটের অনুপাত বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। এর উদাহরণ হলো কেনিয়া। 

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ ডেমক্রেসি ইন আফ্রিকা: সাক্সেস, ফেইলরস অ্যান্ড দ্য স্ট্রাগল ফর পলিটিক্যাল রিফর্ম বইয়ের রচয়িতা নিক চিজম্যান কেনিয়া প্রসঙ্গে দেখিয়েছেন, টাকার জোরে ভোটের ব্যবস্থাপনাই পাল্টে ফেলা সম্ভব। বাংলাদেশের ও কেনিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনেক মিল আছে।

ভোটের সংখ্যানুপাতিকতাই যখন মূল বিবেচ্য, কেনিয়ার বড় বড় ধনকুবের দল ভোটসংখ্যা বাড়াতে যত লগ্নি করা দরকার, করেছে। এই ব্যবস্থায় তৃণমূলের প্রকৃত জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দলগুলো জনপ্রিয় হলেও অসচ্ছলতার কারণে ক্ষমতার পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসতে পারে না।

পাঁচ. ‘পিআর’ ব্যবস্থা জটিল। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও ভোট গণনা সময়সাপেক্ষ। শুধু তা–ই নয়, এটি যথেষ্ট ব্যয়বহুলও। রাষ্ট্রকেও বছরের পর বছর ভুলত্রুটি সংশোধনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ব্যবস্থাটি রাখা সব দেশকেই নিজস্ব পরিপ্রেক্ষিত ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবস্থাটিকে ভেঙেচুরে নিজেদের মতো করে নিতে হয়েছে। ফলে বিশ্বময় নির্বাচনব্যবস্থা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জটিল পাঠে রূপ নিচ্ছে।

শেষ কথা, নির্বাচন পদ্ধতির বেলায় হুট করেই যেকোনো একটি সংস্কারে যাওয়ার উপায় নেই। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের আগে-পরে অনেক পর্যালোচনা ও সুবিধা-অসুবিধার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ দরকার। বর্তমান বিশ্লেষণটিতে সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। অন্য বিভিন্ন দেশের সাফল্য ও প্রায়োগিক সুবিধার দিকগুলো নিয়ে আলাপ তুলতে হবে। বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতার নিরিখে ‘পিআর’ কীভাবে ফলদায়ক হবে, কীভাবে চলতি নির্বাচনব্যবস্থাটির দুর্বলতাগুলো উতরে সবল গণতন্ত্রের দিশা হতে পারে, রূপরেখা হাজির করতে হবে।

চমকজাগানিয়া ভাবনার পিচ্ছিল পথে গণতন্ত্র ও মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন যেন নতুন দুঃস্বপ্নযাত্রা না হয়ে ওঠে, সেদিকে নজর রাখাও রাজনীতিসচেতন নাগরিকদের লক্ষ্য হয়ে ওঠা দরকার। আমাদের রাষ্ট্রীয় আর্থিক সক্ষমতার দিকেও নজর দেওয়া দরকার। একটি খরচবহুল ও মাথাভারী ব্যবস্থার পেছনে অর্থপাতের ফল কি আসলেই নাগরিকবান্ধব হবে? লাভ-ক্ষতি নিরুপণ ছাড়া ‘পিআর’ পদ্ধতির পথে এগোনো বিপজ্জনক হয়ে ওঠতে পারে।

হেলাল মহিউদ্দীন  লেখক ও শিক্ষক