অভিমত
ঢাকার যানজট নিরসনের এখনই সুযোগ, যা করণীয়
গণপরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে না সাজালে কোনো প্রকল্প বা উন্নয়নই রাজধানীর যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দিল্লির গণপরিবহনব্যবস্থার আলোকে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধানে করণীয় নিয়ে লিখেছেন কল্লোল মোস্তফা
রাজধানী ঢাকার যানজট সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুজন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে ট্রাফিক পুলিশকে কিছু পরীক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে বলা হয়, যার মাধ্যমে যানজট কমানোর জন্য প্রথমে দু-তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বাস থামানোর স্থানে বাস থামানোর সময় দুই মিনিটের কম রাখার ব্যবস্থা করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে তা অন্যান্য সড়কে প্রয়োগ করা হবে। সেই সঙ্গে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অন্তত একটি ‘ট্রাফিক করিডরে’ নিজস্ব সমাধান খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ট্রাফিকের সিগন্যাল–ব্যবস্থা সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়। (সমকাল, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪)
বড় বড় অবকাঠামোর প্রকল্পকেই গুরুত্ব
ঢাকার রাস্তায় বাস থামানোর স্থান ও সময় নির্দিষ্ট করা, ট্রাফিক সিগনাল–ব্যবস্থা সংস্কার করা ইত্যাদি পদক্ষেপ যানজট নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো বাসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। ৪০–৫০ জন মানুষ পরিবহন করে একটি বাস রাস্তার যতটুকু জায়গা দখল করে ততটুকু জায়গা দখল করে দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে হয়তো ৪–৫ জন মানুষ যাতায়াত করে। এ কারণেই জনবহুল ঢাকায় যানজট কমাতে হলে পরিবহনব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন যাত্রীরা ব্যক্তিগত ও ছোট যানবাহনের চেয়ে বাসে যাতায়াত করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
বিগত সরকার ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে উড়ালসেতু, উড়ালসড়ক, মেট্রোরেল (এমআরটি), বাস র্যাপিড ট্রানজিটসহ (বিআরটি) নানা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু তাতে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান হয়নি, উল্টো যানবাহনের গড় গতিবেগ ২০০৭ সালের ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে (৫ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো)। এর কারণ হলো বাসের মতো গণপরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব না দিয়ে এমন সব অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়া হয়েছে, যেগুলো ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে।
এমআরটি–বিআরটিতে মাত্র ২০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন
অথচ ঢাকার যানজটের সমস্যা নিরসনে তৈরি সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) বলা হয়েছে, বাস বর্তমানে যেমন যাত্রী চলাচলের প্রধানতম বাহন, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। এমনকি সাতটি এমআরটি-বিআরটি তৈরির পরেও এগুলো সব মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। এ কারণে আরএসটিপিতে বাসব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে বাসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়েছে এবং এ জন্য তিন থেকে পাঁচটি কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া আরএসটিপিতে এমআরটি ও বিআরটির সফলতার পূর্বশর্ত হিসেবে বাসের মাধ্যমে যথাযথ ফিডার সার্ভিসের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, যদি এমআরটি ও বিআরটি স্টেশনে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য যথাযথ বাসের আয়োজন না থাকে, তাহলে এমআরটি ও বিআরটি ব্যবস্থা সফল হবে না। (দ্য প্রজেক্ট অন দ্য রিভিশন অ্যান্ড আপডেটিং অব দ্য স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ফর ঢাকা, নভেম্বর ২০১৬)
যে কারণে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যর্থ
ইতিমধ্যে একটি মেট্রোরেল নির্মাণ করে চালু করা হয়েছে এবং একটি বিআরটি নির্মাণের কাজ চলছে কিন্তু বাকিগুলো কবে শুরু হয়ে কবে শেষ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এদিকে ঢাকার বাসভিত্তিক পরিবহনব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অনেক আলোচনা–সমালোচনার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি রুটে এবং ২০২২ সালের অক্টোবরে আরও দুটি রুটে ৫০টি করে বাস নিয়ে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে পরীক্ষামূলক বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করা হয়। কিন্তু একই রুটে ব্যক্তিমালিকানাধীন অন্য কোম্পানির বাস চলাচল অব্যাহত থাকায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়নি, এক পরিবহন কোম্পানির বাসের সঙ্গে আরেক পরিবহন কোম্পানির বাসের পাল্লা দেওয়া, বাসে যত্রতত্র যাত্রী তোলা বন্ধ হয়নি, ফলে যে উদ্দেশ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজির পরীক্ষামূলক যাত্রা, সেটা ব্যর্থ হয়েছে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হলো ঢাকার রাস্তায় যেভাবে বাস চলাচল করে, সেটাকে গণপরিবহনব্যবস্থা বলা মুশকিল। ঢাকার বাস চলাচলের অনুমোদন থেকে শুরু করে এর পরিচালনপদ্ধতি পুরোটাই সমস্যাসংকুল। এখানে কোনো রুটে বাস চালানোর প্রধান যোগ্যতা হলো রাজনৈতিক ক্ষমতা। ক্ষমতার জোরে প্রভাবশালীরা বাস রুটের অনুমোদন নিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন বাসমালিককে সেই রুটে বাস চালানোর অনুমোদন প্রদান করেন। বাসমালিকেরা আবার চুক্তিভিত্তিক পরিবহনশ্রমিকদের হাতে বাস তুলে দেন।
দিন শেষে মালিককে দেওয়ার জন্য জমার টাকা, জ্বালানি খরচ, টোল, চাঁদা ও ঘুষের ব্যবস্থা করার পর যা থাকে, তা ভাগাভাগি করে নেন চালক ও তাঁর সহকারী। এই টাকা তোলার জন্য চালকেরা কোনো নিয়ম মানেন না। আসনসংখ্যার বেশি যাত্রী পরিবহন, জায়গায় জায়গায় থেমে যাত্রী ওঠানো–নামানো, বাড়তি ভাড়া আদায় থেকে রেষারেষি করে বেপরোয়া গতিতে বাস চালানো—সবই চলে। ফলে একদিকে যানজট বেড়েছে ও যাত্রীসেবার মান কমছে; অন্যদিকে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও জখম বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে, বাড়বে না কেন
ঢাকায় চলা বেশির ভাগ বাস-মিনিবাস রংচটা ও লক্কড়ঝক্কড়; পেছনের লাইট-ইন্ডিকেটর আর সামনের লুকিং গ্লাস থাকে না। আসনবিন্যাস এমন যে দুই পা মেলে ঠিকঠাক বসারই উপায় থাকে না। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যেতে হয়। গরমের দিনে ঘামে এবং বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।
এত কষ্ট সহ্য করতে রাজি থাকার পরও প্রয়োজনের সময় বাস পাওয়া এবং সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাসে ওঠানামা এবং ভেতরে গাদাগাদি করে যাতায়াত করা এক বীভৎস অভিজ্ঞতা।
এ রকম পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তির যদি ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্য তৈরি হয়, তাহলে তিনি তাঁর এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য তা কিনবেন না কেন? বাস্তবে ঘটছেও তাই।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে ৪০টি করে ব্যক্তিগত গাড়ি নামছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার, যা ২০২৩ সালে হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার। এভাবেই হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত ফ্লাইওভার আর এক্সপ্রেসওয়েগুলো ব্যক্তিগত গাড়িতে ভরে গিয়ে ঢাকার গতি আরও কমেছে। যেমন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় শতভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে এবং এসব গাড়ি দ্রুতগতিতে ঢাকার উত্তরাংশ থেকে ফার্মগেটে এসে নামার কারণে ফার্মগেট হয়ে গেছে ঢাকার যানজটের নতুন কেন্দ্র।
অথচ জাইকার এক সমীক্ষা অনুসারে ঢাকায় দরকারি যাতায়াত বা কাজে যাওয়ার জন্য ৬০ শতাংশ মানুষ গণপরিবহন ব্যবহার করেন, যার ৬৭ শতাংশই ব্যবহার করেন বাস-মিনিবাস। (ঢাকা যেন নিশ্চল মহানগর, ৫ এপ্রিল ২০২২, প্রথম আলো) ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থা ঠিক করতে হলে তাই সর্বপ্রথম বাস-মিনিবাস চলাচলব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। যেমন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ১২টি মেট্রোলাইন, ২৮৮টি স্টেশন এবং ৩৯৩ কিলোমিটার বৃহৎ মেট্রোরেল–ব্যবস্থা থাকার পরও পাবলিক বাসগুলো মেট্রোর চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে। (মেট্রো সিটি’স লাইফ লাইন বাট বাসেস স্টিল ক্যারি বাল্ক অব দিল্লাইটস, ১৬ জানুয়ারি ২০২১, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)
দিল্লিতে একই সমস্যা ছিল, সমাধান কীভাবে করল
দিল্লিতেও একসময় চুক্তি ভিত্তিতে চলাচলকারী বেসরকারি বাসের তীব্র প্রতিযোগিতা যানজট ও দুর্ঘটনার কারণ হতো। এরপর ২০১১ সাল নাগাদ এই বেসরকারি বাসগুলো তুলে দিয়ে ক্লাস্টার বাস সার্ভিস চালু করা হয়। ক্লাস্টার সার্ভিস স্কিম অনুযায়ী দিল্লির ৬৫৭টি বাস রুটকে ১৭টি ক্লাস্টারে বিভক্ত করা হয়, যেখানে সরকারি ডিটিসি বাস এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের পিপিপি বাস ৫০:৫০ অনুপাতে চলাচল করে। কোন ক্লাস্টারে কোন কোম্পানি বাস পরিচালনা করবে, তা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।
এই কোম্পানিগুলোর যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করার সুযোগ নেই, কারণ ভাড়া আদায় করার দায়িত্ব দিল্লি ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রানজিট সিস্টেম বা ডিআইএমটিসি নামের আরেকটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির, যে কোম্পানিটি গ্রস-কস্ট মডেলের চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি বাস কোম্পানিকে নির্দিষ্ট দূরত্ব ও ঘণ্টার ভিত্তিতে অর্থ প্রদান করে, অবশ্য বিলম্বের জন্য জরিমানা কেটে রাখার পর। (পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইন দিল্লি: আ বাস সিস্টেম ট্রাইস টু ট্রানজিট ফ্রম ওল্ড টু নিউ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)
এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দিল্লির পরিবহন দুর্ঘটনা যেমন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে, তেমনি গণপরিবহনব্যবস্থাও যাত্রীবান্ধব হয়েছে।
বর্তমানে দিল্লির বাস চলাচলব্যবস্থা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দিল্লি ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (ডিটিসি) কর্তৃত্বাধীন। সেখানে দুই ধরনের মালিকানাব্যবস্থায় বাস চলে—পুরোপুরি ডিটিসি মালিকানাধীন লাল ও সবুজ রঙের বাস এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মেকানিজমে কমলা রঙের ক্লাস্টার বাস। (ডিটিসি বাসেস: রেড, গ্রিন অ্যান্ড অরেঞ্জ হোয়াট ডু দে স্ট্যান্ড ফর?, ইন্ডিয়া টুডে, ৬ মে ২০১৯)
দিল্লিতে ডিটিসি বাসগুলো বাংলাদেশের বিআরটিসি বাসের মতো নামকাওয়াস্তে চালানো হয় না, বরং দিল্লিতে ডিটিসি বাসই বেশিসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করে থাকে।
একটি কোম্পানির অধীনে থাকবে গণপরিবহন
কাজেই ঢাকার যানজট সমাধান করতে হলে বাসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে এবং এ জন্য একটি কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা করতে হবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বুয়েটের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও মো. হাদিউজ্জামানও এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এ জন্য সরকারকে একটি কোম্পানি গঠন করতে হবে। ঢাকা শহরে এই কোম্পানির বাইরে কোনো বাস চলতে পারবে না। এখন বেসরকারি যেসব বাস রয়েছে, তারা হয় এই কোম্পানির কাছে বাস দিয়ে অংশীজন হবে, নয়তো কোম্পানির কাছে বাস বিক্রি করে দেবে। এভাবে একটি কোম্পানির মাধ্যমে ঢাকা শহরকে ৪০-৫০টি রুটে ভাগ করে বাস চলাচল করানো হলে তিনটি মেট্রোরেল যে পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করবে, তার চেয়ে সাত গুণ বেশি যাত্রী বহন করবে এসব রুটের বাস। (প্রথম আলো, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪)
এভাবে সরকার কর্তৃক একটি কোম্পানি গঠন করে তার মাধ্যমে ঢাকা শহরের সমস্ত বাস চালানোর এই পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া দরকার। এই কোম্পানিতে বেসরকারি বাস মালিকদের রংচটা ও লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলো বাদ দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভালো মানের বাস নামাতে উৎসাহিত করতে হবে। সেই সঙ্গে কোম্পানিটিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির যথাযথ অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনো বেসরকারি কোম্পানি একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারে।
এভাবে আরামদায়ক ভালো বাস নামানো হলে মানুষ ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে, তখন ব্যক্তিগত গাড়ি ও ছোট যানবাহন দিয়ে ঢাকার রাস্তা ভরে ফেলাও বন্ধ হবে। একটি কোম্পানির মাধ্যমে বাস চালানো হলে এবং চালকদের হাতে চুক্তির ভিত্তিতে বাস তুলে দেওয়া বন্ধ হলে বাসগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, যত্রতত্র রাস্তায় আড়াআড়িভাবে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা ইত্যাদি বন্ধ হবে, ফলে যানজট কমে আসবে। পুরো ঢাকা শহরে ব্যবস্থাটি বাস্তবায়ন করা না গেলেও অন্তত কয়েকটি রুটে ব্যবস্থাটি যথাযথভাবে চালু করা যেতে পারে, যা পরবর্তী সরকারের জন্য যানজট সমস্যা সমাধানের মডেল হিসেবে কাজ করবে।
তবে রাজধানী ঢাকাকে ‘যানজটের নগরীর’ তকমা থেকে মুক্ত করার এখনই সুযোগ। অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে কঠোর ও মনোযোগী হলে দিল্লির মতো ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানো সম্ভব। যেকোনো দলীয় সরকারের অধীনে পরিবহনমালিকেরা যেভাবে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশসহ তাদের যে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে, সেটি ভেঙে দেওয়া কোনোভাবেই সহজ হবে না।
কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গকেষক