বিশ্লেষণ
উন্মুক্ত কয়লাখনি যেভাবে বিপর্যয় ডেকে আনবে
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ফুলবাড়ী ও বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উন্মুক্ত কয়লাখনি করার পরিকল্পনা করছে। উন্মুক্ত কয়লাখনি কীভাবে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা নিয়ে লিখেছেন কল্লোল মোস্তফা।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানাচ্ছে, এপ্রিল মাসের মধ্যে দেশের কয়লাখনিগুলোতে পরিচালিত বিভিন্ন সমীক্ষা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি একটি প্রস্তাব সরকারের উচ্চপর্যায়ে উপস্থাপন করে অনুমোদন চাওয়া হবে। কয়লাখনি করা হলে কৃষিজমি ও পানিসম্পদ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকার পরও কয়লা তোলার এই উদ্যোগের পেছনে যুক্তি হিসেবে ভবিষ্যতে জ্বালানিসংকট মোকাবিলা এবং আমদানিনির্ভরতা কমানোর কথা বলা হয়েছে। (বাংলাদেশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার নতুন উদ্যোগ, বিবিসি বাংলা, ১৫ মার্চ ২০২৪)
কয়লা খননের যুক্তি হিসেবে আমদানিনির্ভরতা কমানোর কথা বলা হলেও, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তৈরি করার সময় কিন্তু বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছিল। স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতি উপেক্ষা করে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক দেখিয়ে একের পর এক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়। কিন্তু কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ অনেক বেশি পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা বলা যায়।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থনৈতিক সমীক্ষার সময় কয়লার দাম ১০৫ থেকে ১৬৫ ডলার করে ধরা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কয়লার আমদানি বাবদ খরচ (কয়লার দাম+পরিবহন খরচ) যদি প্রতি টন ১০৫ ডলার হয়, তাহলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়বে ৬ টাকা ৫৫ পয়সা আর যদি কয়লার খরচ প্রতি টন ১৬৫ ডলার হয়, তাহলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়বে ৮ টাকা ৭৯ পয়সা। (রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থনৈতিক সমীক্ষা, এনটিপিসি, ২০১২)
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৪ টাকা ১২ পয়সা। একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ১৬ টাকা ২ পয়সা এবং বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে খরচ ১৯ টাকা ১ পয়সা করে পড়েছে। (বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০২২-২৩, পিডিবি, পৃষ্ঠা-১১৭)
দেশে যখন একের পর এক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছিল, স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে তখনই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। তাঁদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শুরুতে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের মুলা ঝোলানো হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার পর বলা হবে, বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে অনেক ডলার প্রয়োজন, দেশের অর্থনীতির পক্ষে এর চাপ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই পরিবেশের ক্ষতি করে হলেও দেশের কয়লা উত্তোলন করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই শঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে কয়লাখনি প্রকল্পের উদ্যোগ করা হচ্ছে।
জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বলা হলেও এই উদ্যোগের পেছনে যে দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর স্বার্থ রয়েছে, তা স্পষ্ট। এটা বোঝা যায়, ফুলবাড়ী থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের মূল পরিকল্পনাকারী কোম্পানি জিসিএমের (আগের এশিয়া এনার্জি) একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে।
বিজ্ঞপ্তিটিতে গত ১১ মার্চ জিসিএম জানিয়েছে, কোম্পানিটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে কয়লা উৎপাদনকারী এস এস পাওয়ারের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বাঁশখালী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির ৩৫০ মেগাওয়াটের বরিশাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে ফুলবাড়ীর কয়লা ক্রয়ের আগ্রহপত্র পেয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ফুলবাড়ী থেকে কয়লা কিনতে চাওয়া এ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেই চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেডের (পাওয়ার চায়না) অংশীদারত্ব রয়েছে। জিসিএম এই পাওয়ার চায়নার সঙ্গেই ফুলবাড়ী কয়লা উত্তোলনে ‘সহযোগিতা’ করার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
২০০৬ সালের আগস্টে ফুলবাড়ীর জনগণ রক্তাক্ত গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উন্মুক্ত কয়লাখনিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তৎকালীন চার-দলীয় জোট সরকারও এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার এবং উন্মুক্ত কয়লা খনন বাতিল করে ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনাও এই চুক্তি সমর্থন করেছিলেন। ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ীতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘জোট সরকার ফুলবাড়ী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে করা চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে এর পরিণাম ভয়াবহ হবে।’ (সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে পরিণাম হবে ভয়াবহ, প্রথম আলো, ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬)
স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা উন্মুক্ত কয়লা খননের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশদভাবে লিখেছেন। এমনকি সরকার গঠিত বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টেও উন্মুক্ত কয়লা খননের বিপদের কথা উঠে এসেছে।
প্রথমত, ফুলবাড়ী-বড়পুকুরিয়া অঞ্চলের কয়লার স্তরের ওপর রয়েছে ৮০ থেকে ১২০ মিটার পুরু ডুপিটিলা পানির স্তর। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে হলে কয়লার ওপরের স্তরকে পানিশূন্য করতে হবে। এ জন্য পাম্পের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ডুপিটিলা স্তরকে পানিশূন্য করা হলে খনি এলাকা ছাড়াও চারপাশের একটা বিশাল এলাকাজুড়ে কৃষিকাজ, খাওয়ার পানি ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের পানি পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে প্রথিতযশা জ্বালানি-বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চার-দলীয় জোট সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে খনির কেন্দ্র থেকে এলাকার চারদিকে ৩১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন গভীরতায় পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। (ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট অ্যান্ড স্কিম অব ডেভেলপমেন্টের মূল্যায়নের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬, পৃষ্ঠা ১২২)
২০১২ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত মোশাররফ কমিটির রিপোর্টে মাটির নিচ থেকে পানি তুলে ফেলার বিপদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কয়লাখনির কেন্দ্র থেকে ২৭ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ পর্যন্ত এলাকায়র টিউবওয়েল, শ্যালো মেশিন ও ডিপটিউবওয়েলে কৃষিকাজ ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পাওয়া যাবে না।’ (মোশাররফ কমিটির রিপোর্ট, পৃষ্ঠা-৫১)
অন্যান্য জায়গায় সাধারণত পানির স্তর থাকে কয়লা স্তরের নিচে, বাংলাদেশের মতো কয়লা স্তরের ওপরে নয়। ফলে কয়লা তুলতে গিয়ে গোটা এলাকা মরুকরণের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। মোশাররফ কমিটির রিপোর্টে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এটা সত্যি যে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্ত খনন করতে গিয়ে পানি ব্যবস্থাপনা করতে হয়। কিন্তু এসব জায়গার ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থা বাংলাদেশের তুলনায় ভিন্ন রকম।’ (মোশাররফ কমিটির রিপোর্ট, পৃষ্ঠা ৪০)
দ্বিতীয়ত, এশিয়া এনার্জির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লাখনি করতে হলে অন্তত ৬ হাজার ৬৮৮ হেক্টর বা ৬৬ দশমিক ৮৮ বর্গকিলোমিটার (১০০ হেক্টর সমান ১ বর্গকিলোমিটার) জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে ৫৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার জমিতে কয়লাখনি করা হবে। (এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের পরিবেশ সমীক্ষা, অধ্যায় ৭, ভলিউম ১, পৃষ্ঠা ৪৯)
এর ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে উচ্ছেদ করে পুনর্বাসন করতে হবে। এশিয়া এনার্জি ২০০৫ সালে দাবি করেছিল যে এ জন্য ১২ হাজার ৩১২টি পরিবারের ৫৪ হাজার ৭৪ জনকে উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন করতে হবে। (এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের পরিবেশ সমীক্ষা, অধ্যায় ৭, ভলিউম ১, পৃষ্ঠা ৫৭) বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। ২০১২ সালের মোশাররফ কমিটির রিপোর্টে ১০ লাখ মানুষকে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছিল। (মোশাররফ কমিটির রিপোর্ট ২০১২, পৃষ্ঠা ৩০) বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে এই বিপুল পরিমাণ উচ্ছেদ করা মানুষকে যথাযথ পুনর্বাসন করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।
তৃতীয়ত, ফুলবাড়ী প্রকল্পের পরিবেশ সমীক্ষা অনুসারে, উন্মুক্ত খননের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তার মধ্যে ৪২ দশমিক ৩৪ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি। (এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের পরিবেশ সমীক্ষা, অধ্যায় ৭, ভলিউম ১, পৃষ্ঠা ৫১) কয়লা উত্তোলনের জন্য এই বিপুল পরিমাণ তিন ফসলি জমির ওপরের স্তরের মাটি একবার সরানো হলে হাজার বছর ধরে তৈরি উর্বরতা আর সহজে ফিরিয়ে আনা যাবে না। এর মধ্যে কয়লার ওপরের স্তর থেকে উত্তোলন করা মাটি বা ওভার বার্ডেন রাখার জন্য ১৯ দশমিক ৪৬ বর্গকিলোমিটার এবং জলাধারের জন্য ৬ দশমিক ৯৬ বর্গকিলোমিটার; অর্থাৎ মোট ২৬ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
বিষয়টি উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম কমিটির রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছিল, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা দিনাজপুর শহরের আয়তনের সমান। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ভূমির এ ধরনের অপব্যবহার কাম্য নয়।’ (নুরুল ইসলাম কমিটির রিপোর্ট, সেপ্টেম্বর ২০০৬, পৃষ্ঠা ১২৭-১২৮)
এ বিষয়ে মোশাররফ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ‘ফুলবাড়ী উন্মুক্ত খনন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কম করে হলেও ৩ হাজার হেক্টর তিন ফসলি জমি, আবাসন, মাছ, সবজি, ফল, গাছপালা ধ্বংসের ফলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে।’ (মোশাররফ কমিটির রিপোর্ট ২০১২, পৃষ্ঠা ৫০)
চতুর্থত, প্রায় ৬৭ বর্গকিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করে বিপুলসংখ্যক মানুষের আবাসন, কৃষিকাজ ও ব্যবসা ধ্বংসের বিনিময়ে ফুলবাড়ী কয়লাখনি তৈরির সময় ২ হাজার ১০০ এবং দীর্ঘ মেয়াদে মাত্র ১ হাজার ২০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। (এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের পরিবেশ সমীক্ষা, অধ্যায় ৯, ভলিউম ১, পৃষ্ঠা ৬) কয়লাখনির কাজে বিশেষ কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন হওয়ায়, এর মধ্যে প্রকল্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কর্মসংস্থান হবে খুবই সামান্য।
পঞ্চমত, প্রস্তাবিত খনি এলাকায় মাটির নিচে সালফারের পরিমাণ ২ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হওয়ায় উত্তোলিত মাটিতে থাকা সালফার যৌগ বাতাস ও পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যাসিড তৈরি হবে, যাকে অ্যাসিড মাইন ড্রেনেজ বলা হয়। এই অ্যাসিডমিশ্রিত পানিতে তামা, সিসা, পারদ ইত্যাদি বিষাক্ত ভারী ধাতু মিশে গোটা এলাকার মাটির নিচের ও মাটির ওপরের পানি দূষিত করে ফেলার শঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে ফেডারেল এবং স্টেট পর্যায়ে এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি এবং তাদের কঠোর আইন ও তদারকির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ওপেন কাট মাইনিংয়ের ফলে সৃষ্ট অ্যাসিড মাইন ড্রেনেজ ম্যাটেরিয়াল ও অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা রোধ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের হাজার হাজার মাইল নদীপথ অ্যাসিড মাইন ড্রেনেজের কারণে দূষিত হয়েছে।’ (নুরুল ইসলাম কমিটির রিপোর্ট, সেপ্টেম্বর ২০০৬, পৃষ্ঠা ১২৩)
এটা স্পষ্ট যে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানির জোগান দেওয়ার জন্য ফুলবাড়ী ও বড়পুকুরিয়া অঞ্চলে উন্মুক্ত কয়লাখনি করা হলে ভয়াবহ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। দেশে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প আগেও ছিল, এখনো আছে। দেশের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার সময় থেকেই বলা হচ্ছে, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক—উভয় দিক থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য যথাযথ নয়, টেকসই নয়। বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত হলো স্থলভাগ ও সাগরের গ্যাস উত্তোলন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জোর দেওয়া। এই বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল, কয়লা আর এলএনজির পেছনে যত বেশি অর্থ ও সময় ব্যয় করা হবে, বিপদ তত বাড়বে।
কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গবেষক