বিশ্লেষণ
নির্মাণশ্রমিকদের কেন এত মৃত্যু হচ্ছে
অনানুষ্ঠানিক খাতের অনানুষ্ঠানিক মানুষগুলোর অনেকে প্রায় প্রতিদিনই আনুষ্ঠানিকভাবেই মারা যাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো অবহেলিতই থাকছে।
গত মার্চে ‘সেপটিক ট্যাংকে কেন এত মৃত্যু হচ্ছে’ শিরোনামে লেখাটি লেখার সময় বুঝেছিলাম এ দেশের নির্মাণশ্রমিকদের জীবন ঝুলছে যেন এক পচা সুতায়। লেখাটি প্রকাশিত হলে এক পাঠক লিখেছিলেন, ‘সম্ভবত এই দেশে একেবারেই মূল্যহীন হলো সাধারণ প্রান্তিক মানুষের জীবন।
এরা মরল কি বাঁচল, খেল কি খেল না, চিকিৎসা পেল কি পেল না কার কী যায় আসে? এই সব নিয়ে লিখলে বা বললে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো আছেই।’ শেষের বাক্যটা আমলে নেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু ওই পাঠকের বাকি কথাগুলো কি কেবলই আক্ষেপ না হক কথা? আনুষ্ঠানিক ইমারত, আনুষ্ঠানিক দরপত্র, আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন—সবই পুরোদস্তুর আনুষ্ঠানিক। শুধু এসবের কারিগর নির্মাতারা অনানুষ্ঠানিক খাত।
অনানুষ্ঠানিক খাতের অনানুষ্ঠানিক মানুষগুলোর অনেকে প্রায় প্রতিদিনই আনুষ্ঠানিকভাবেই মারা যাচ্ছেন। ঝুপঝাপ করে উঁচু সব ইমারত থেকে অনেকে পড়ে পড়ে মারা যাচ্ছেন, অনেকেই মর্গে পড়ে থাকছেন স্রেফ নম্বর বা সংখ্যা হয়ে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে কিন্তু নাম উদ্ধার করতে জান ছুটে যায়। ভবনের মালিক চেনেন না নিহত শ্রমিককে।
তাঁর নাম, সাকিন কিছুই বলতে পারেন না তিনি। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে (ডেভেলপার) দেওয়া হয়েছে ইমারত তৈরির কাজ। ডেভেলপার বলেন সাব–কন্ট্রাক্টরের (উপঠিকাদারের) কথা। তিনি (উপঠিকাদার) আবার আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন লেবার কন্ট্রাক্টরকে। ততক্ষণে তিনি লাপাত্তা।
নির্মাণশ্রমিকদের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই আসে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি খিলগাঁও নন্দীপাড়া গোলাবাড়ি সেতুসংলগ্ন নির্মাণাধীন একটি ভবনে ঢালাইয়ের কাজ করার সময় ওপর থেকে নিচে পড়ে যান একজন নির্মাণশ্রমিক। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।
লাশের হাল সাকিন তখনো পুলিশের অজানা। সেদিন হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানিয়েছিলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতের বিস্তারিত পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।’
গত বছরের ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহরে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের সময় মাথার ওপর ক্রেন ছিঁড়ে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ সময় নিচে ১০ থেকে ১২ জন লোক ছিলেন। ক্রেনটি লোকমানের মাথার ওপর পড়ে। তিনি গুরুতর আহত হলে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। লোকমানের মাথা মাথায় কোনো হেলমেট ছিল না।
২৪ জুন দুপুরে ডেমরা নয়াপাড়া এলাকার নূর মসজিদের পাশে নির্মাণাধীন ভবনে মালামাল ওঠানোর যন্ত্রের দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে যায়। নিচে কর্মরত শ্রমিকদের মাথায় এসে পড়ায় সঙ্গে সঙ্গে তিনজন এবং পরে একজনসহ মোট চারজন নিহত হন। তাঁদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।
দুর্ঘটনা সম্পর্কে ডেমরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সুব্রত পোদ্দার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ঘটনার সময় ওই শ্রমিকেরা ভবনের নিচে কাজ করছিলেন। সে সময় নির্মাণাধীন ভবনে মালামাল ওঠানোর যন্ত্র (রুপশ) নিচে তাঁদের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
ঘটনা আরও আছে। গত বছর ২৪ আগস্ট কেরানীগঞ্জে নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবন থেকে পড়ে একজন নির্মাণশ্রমিক নিহত হন। তাঁর সঙ্গে কাজ করা শ্রমিকদের ভাষ্য, কেরানীগঞ্জের হাবিবনগর এলাকায় নির্মাণাধীন ওই ভবনে কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজামান গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়োগকারীর। শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া নিয়োগকারী কাউকে কাজে নিয়োগ করতে পারবেন না। আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হেলমেট, গামবুট, নিরাপত্তা বেল্টসহ নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকেরা।
কেন এই নিরাপত্তাহীনতা
নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই উদাসীনতা যে কেবল ব্যক্তিমালিকানাধীন ইমারতের ক্ষেত্রে ঘটছে, তা নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন সংস্কারকাজের সময় ছাদ থেকে পড়ে এক নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয় গত বছর জানুয়ারি মাসে। শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে ঠিকাদার আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে উভয়েই শ্রমিকদের দোষারোপ করে বিবৃতি দেন। জানান, নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও সেগুলো না পরেই কাজ করছিলেন ওই শ্রমিক। ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক মুহম্মদ শামসউল হক (পরে পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী, আরও পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)। তাঁর মেয়াদকালে (১৯৬৫-১৯৬৯) ব্যাপক নির্মাণকাজ হয়। তাঁর একটা বড় দৃষ্টি ছিল নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তায়। তাঁদের অস্থায়ী বাসস্থানের জায়গায় নিরাপদ পানি আর পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। ঠিকাদারদের তিনি বাধ্য করেছিলেন শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে ভাবতে। অনেকেই বলবেন এটা উপাচার্যের কাজ নয়। তাঁকেও সে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাঁর উত্তর ছিল, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রধান। এখানে সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া তাঁর কর্তব্য। তিনি শিক্ষকই হন অথবা অস্থায়ী শ্রমিক। বলে রাখা ভালো, তখন রাজশাহীর নির্মাণশ্রমিকদের একটা বড় অংশ ছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতাল নারী। তাঁদের অনেকেই তাঁকে বাবার মতো দেখতেন।
গত ২৯ মে নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন বিপণিবিতান থেকে পড়ে মাত্র ১৮ বছরের এক টগবগে নির্মাণশ্রমিক আসাদুল নিহত হন। তিনি শহরের টানবাজার এলাকায় নির্মাণাধীন পদ্ম সিটি প্লাজা-২ এ কাজ করছিলেন। সিটি করপোরেশন কি শ্রমিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কি একটু বাধ্যবাধকতার মধ্যে রাখতে পারে না? দরপত্র প্রক্রিয়াগুলোতে কি বিষয়টিকে আরেকটু সুনির্দিষ্ট ও জবাবদিহিমূলক করা যায় না?
শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়োগকারীর। শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া নিয়োগকারী কাউকে কাজে নিয়োগ করতে পারবেন না।
আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হেলমেট, গামবুট, নিরাপত্তা বেল্টসহ নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকেরা। জানতে চাইলে একাধিক শ্রমিক বলেন, পেটের দায়ে তাঁরা কাজ করেন। দিন শেষে মজুরি পাওয়াই তাঁদের কাছে মুখ্য।
চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময় সব জায়গায় উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। গত দুই দশকে এই খাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৯১০ জন শ্রমিক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইমারত নির্মাণশ্রমিকদের সংগঠন ‘ইনসাবের’ ভাষ্য হচ্ছে, শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে শ্রম আইনে মালিক, শ্রমিক ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘শিল্প স্বাস্থ্য সেফটি কমিটি’ গঠন করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটি কমিটি থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে এই কমিটি নেই। ফলে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা মালিকপক্ষকে চাপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইনসাবের তথ্য অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন প্রায় ৩৭ লাখ শ্রমিক।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে জানালেন, হতাহতের এসব ঘটনার বেশির ভাগই ঘটে ওপর থেকে পড়ে গিয়ে অথবা মাথায় ইট পড়ে। শ্রমিকেরা নিরাপত্তা বেল্ট ও মাথায় হেলমেট ব্যবহার করলে হতাহতের ঘটনা অনেক কম হতো। তিনি মনে করেন, আইন প্রয়োগের অভাব ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অসচেতনতাই এর জন্য দায়ী।
জাতীয় বিল্ডিং কোডে কর্মকালীন একজন শ্রমিকের কী কী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, তার বিস্তারিত উল্লেখ থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। ২০১৪ সালের জাতীয় ভবন নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী কাজের সময় শ্রমিকের মাথায় হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।
যাঁরা কংক্রিটের কাজে যুক্ত, তাঁদের হাতে গ্লাভস ও চোখের জন্য ক্ষতিকর কাজে চশমা পরিধান করতে হবে। ওয়েল্ডার ও গ্যাস কাটার ব্যবহারের সময় রক্ষামূলক সরঞ্জাম যেমন গ্লাভস, নিরাপত্তা বুট, অ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে। ভবনের ওপরে কাজ করার সময় শ্রমিকদের নিরাপত্তায় বেল্ট ব্যবহারও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে এর কোনোটিই বাস্তবে দেখা যায় না।
বিলসের গবেষণায় দেখা গেছে, নির্মাণকাজে ভালো সিঁড়ির অভাব ও সিঁড়িতে পর্যাপ্ত আলোর অভাব, এলোমেলোভাবে রড, বালু ও ইট রাখা, কর্মক্ষেত্রে জাল না থাকা অথবা নাজুক জালের ব্যবহার, কপিকলের ব্যবস্থা না থাকা, হেলমেট, গ্লাভসের ব্যবস্থা না করা, খালি পায়ে কাজ করা, অসাবধানতা ও অসচেতনভাবে আবদ্ধ স্থানে প্রবেশ, প্রচণ্ড রোদে কাজ করা, ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, বিশ্রাম কম; দুর্বল মাচা, দেয়াল বা মাটিচাপা পড়া, ঝুলন্ত অবস্থায় কাজের সময় বেল্ট ব্যবহার না করা, ভালো জুতা বা বুট ব্যবহার না করা, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ও ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
ক্ষতিপূরণের সোনার হরিণ
না মরলে ক্ষতিপূরণ আদায় করা কঠিন, আহত শ্রমিকের কেউ তেমন পাত্তা দেয় না। বাংলাদেশের শ্রম আইনে ‘সামান্য দুর্ঘটনা’ বা ‘বিপজ্জনক দুর্ঘটনা’য় মহাপরিদর্শক, জেলা প্রশাসক, কলকারখানা পরিদর্শক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, হাসপাতাল, থানা বা শিল্প পুলিশকে জরুরি ভিত্তিতে মালিকপক্ষের জানানোর কথা। আহত শ্রমিকের চিকিৎসার পুরো খরচ, সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ও অসুস্থ অবস্থায় মজুরি দেওয়ার বিধান আছে। আইনে সব ব্যবস্থা থাকলেও বলা যায়, ‘ক্ষতিপূরণ কেতাবে আছে গোয়ালে নাই’।
আইন অনুযায়ী, কোনো শ্রমিক যদি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে না পারেন, তাহলে সরকারি কর্তৃপক্ষকে জানানোর বাধ্যবাধকতা আছে। সামান্য দুর্ঘটনার খবর কেউ জানায় না। বিপজ্জনক দুর্ঘটনার কারণে প্রাণহানি হলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নামকরা প্রতিষ্ঠান সরকারকে জানায়। বেশির ভাগই চেপে যায় বা গা ঢাকা দেয়। বড় দুর্ঘটনায় অনেকের প্রাণহানি হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি গিয়ে হাজির হন। তখন আহত-নিহতের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এর কোনোটিই শ্রমিকবান্ধব পরিস্থিতি নয়।
নির্মাণ খাতে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আহত হন। আঘাতের মাত্রা যা-ই হোক না কেন, শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ পান না। জানা গেছে, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রম ঠিকাদারের বা সরদারের মাধ্যমে কাগজপত্র ছাড়াই দিনভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আর দায় নেয় না। সরদারকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্যক্তিমালিকানায় নির্মিত ভবনে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়।
বছর কয়েক আগে এসব অব্যবস্থা নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে কথা উঠলে তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী টেলিফোনে তখনই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অধীনস্তদের বকাবকি শুরু করেন। ব্যস, ওই পর্যন্তই। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সেদিনই সবাইকে ঠান্ডা করার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা হয়তো একদিন কার্যকর হবে।
নির্মাণশ্রমিকদের প্রাণের কথা, ‘আমরা চাই কর্মস্থল নিরাপদ হোক। একটিও প্রাণ আর অকালে না ঝরুক। আমাদের জীবনের দাম কি শুধুই কিছু টাকা! মৃত্যুর পর কিছু টাকা দিলেই কি পরিবারের দুঃখ শেষ? দুঃখে যাতে পড়তে না হয়, সেই কাজ করেন।’
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক–গবেষক। ই–ইমেইল: nayeem 5508 @gmail.com