ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও আর্থিক সংকট সমাধানের সর্বশেষ প্রচেষ্টাকে বলা যেতে পারে ‘ভবিষ্যতের দিকে ফিরে যাওয়া’।
এমানুয়েল মাখোঁ যখন স্কুলে পড়তেন, ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু তখন ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ৭৩ বছর বয়সী এই মধ্যপন্থীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কয়েক দিনের দর–কষাকষির পর। ২০১৭ সালে মাখোঁ যখন ৩৯ বছর বয়সে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হন, তখন বায়রু ছিলেন মাখোঁর গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও পরামর্শদাতা।
মাখোঁ বিশ্বাস করতেন, তিনি পুরোনো রাজনৈতিক শ্রেণি ও বাম-ডান বিভাজনকে চিরতরে বিলোপ করেছেন। কিন্তু এখন ডান আর বাম—দুপক্ষই এই দুর্বল প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নেমেছে। বায়রু কার্যত মাখোঁকে বাধ্য করেছেন তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে। নইলে তিনি তাঁর দলসহ মাখোঁর জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
মাখোঁর নিজের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। মেয়াদ টিকিয়ে রেখে কট্টর ডানপন্থী অভিবাসনবিরোধী নেত্রী মারি লো পেনকে ক্ষমতায় যাওয়া থেকে আটকানোর সম্ভাবনা এই কৌশলের সফলতার ওপর নির্ভর করছে।
ফ্রান্সে আর্থিক চাপ এবং জন–অসন্তোষ বাড়ছে। এর আগে স্বল্পমেয়াদি সরকার ব্যর্থ হয়ে সরে গেছে। বায়রু কি ভালো করতে পারবেন? এর উত্তর নির্ভর করছে তাঁর ক্ষমতার ওপর। তিনি কি মধ্য-বাম সমাজতান্ত্রিক পার্টি (পিএস) ও রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের (এলআর) রাজি করাতে পারবেন তাঁর সরকারকে সহায়তা করার জন্য?
অনেক বিশ্লেষক বায়রুর নিয়োগকে তাচ্ছিল্য করেছেন। তাঁদের মধ্যে বামপন্থীরা উল্লেখযোগ্য। তাঁরা বলছেন, এটি মাখোঁর মুক্তবাজারভিত্তিক নীতি টিকিয়ে রাখার পুরোনো কৌশল। এ–ও ঠিক যে বায়রু পেনশন সংস্কার (বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করা) বা ধনীদের করছাড় বাতিল করবেন না।
বায়রু একজন কৃষকের সন্তান। তিনি মাখোঁ বা বার্নিয়ারের চেয়ে বেশি সমাজসচেতন। এ বিষয় কাজে লাগিয়ে তিনি মধ্য-বাম থেকে মধ্য-ডান অভিজ্ঞদের নিয়ে সরকার গঠন করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে এর জন্য তাঁকে কিছু ব্যয় সংকোচন নীতি বাদ দিতে হবে। তবে জল্পনা চলছে, বায়রু গত সরকারের দ্বিতীয় সারির রাজনীতিবিদদের বদলে অতীতের প্রশাসনের হেভিওয়েট ব্যক্তিদের নিজ সরকারে রাখবেন।
কিন্তু রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেছে ডিসেম্বরের শুরুতে। সেই সময় লো পেনের ন্যাশনাল র্যালি এবং বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট বার্নিয়ারের সরকারকে ফেলে দিয়েছিল। তাদের হাতিয়ার ছিল পেনশনভোগীদের মূল্যস্ফীতি সমন্বয় বিলম্বিত করার সরকারি পরিকল্পনা।
সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ে ফোর দলের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখে মাখোঁর সঙ্গে আলোচনায় রাজি হন। তিনি পারস্পরিক ছাড় দেওয়ার ভিত্তিতে সমঝোতার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। পরিবেশবাদী গ্রিনরাও জানিয়ে দিয়েছে যে নতুন প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে ভোট ছাড়া সাংবিধানিক উপায়ে আইন চাপিয়ে না দিলে তারা অসহযোগিতা না করতে রাজি আছে।
বায়রু একজন কৃষকের সন্তান। তিনি মাখোঁ বা বার্নিয়ারের চেয়ে বেশি সমাজসচেতন। এ বিষয় কাজে লাগিয়ে তিনি মধ্য-বাম থেকে মধ্য-ডান অভিজ্ঞদের নিয়ে সরকার গঠন করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে এর জন্য তাঁকে কিছু ব্যয় সংকোচন নীতি বাদ দিতে হবে। তবে জল্পনা চলছে, বায়রু গত সরকারের দ্বিতীয় সারির রাজনীতিবিদদের বদলে অতীতের প্রশাসনের হেভিওয়েট ব্যক্তিদের নিজ সরকারে রাখবেন।
সমাজতান্ত্রিক, গ্রিনসহ লো পেনের দলকে খুশি করতে বায়রু আগামী জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের আগেই আইনসভা নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালুর প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। এতে ফ্রান্স অন্যান্য ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
ইউরোপের অনেক দেশের নাগরিকদের গড় বয়স বাড়ছে। উৎপাদনশীলতা কমছে। বাড়ছে ব্যয় সংকোচন। সব মিলিয়ে জন্ম নিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। নেতারা তাঁদের সমর্থকদের রাগিয়ে দিয়ে ব্যয় সংকোচনে একমত হতে পারছেন না। ফরাসিদের দেশও এ ধারার বাইরে নয়। মাখোঁ জুনে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে থেকেই ফ্রান্সের কর ও সরকারি ব্যয় ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বায়রুকে কয়েকটা কাজে সফল হতেই হবে। সেগুলো হলো মধ্য-ডান থেকে মধ্য-বাম দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য তৈরি করা, বাজেটঘাটতি কমানো এবং জনপ্রিয় কিছু সংস্কার আনা। এগুলো না হলে ফ্রান্সে ডানপন্থী লো পেনের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাই বাড়বে।
গত শুক্রবার বায়রু নিজেই বলেছেন যে তিনি ‘হিমালয়সম’ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কথাটা তিনি বাড়িয়ে বলেননি।
● পল টেইলর ইউরোপীয় নীতিকেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ ভিজিটিং ফেলো
গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত