‘মিউচুয়ালি অ্যাশিওর্ড ডেস্ট্রাকশন’ আধুনিক কালে যুদ্ধকৌশলে খুবই আলোচিত কথা। দুই বা ততোধিক পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সর্বাত্মক একটি যুদ্ধ বেধে যাওয়ার মানে হচ্ছে একে অপরের দিকে ফিশন, ফিউশন উভয় ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রবাহী আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) এবং সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসএলবিএম) ছুড়ে দেবে।
এর মানে, তারা নিশ্চিতভাবেই পরস্পরকে ধ্বংস করবে। এটাই হচ্ছে ‘মিউচুয়ালি অ্যাশিওর্ড ডেস্ট্রাকশন’। বলা হয়, এমন বাস্তবতাই দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে নিবৃত্তকারী (ডেটারেন্ট) হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, আরেকটা সর্বাত্মক বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, বিষয়টি এতটা সরল নয়।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাপ কমেছে, কিন্তু আছে এখনো, ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া-ন্যাটো সংকট আবার ভীষণ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, এগুলো প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি। কিন্তু অনেক বিশ্লেষকের মতো আমিও মনে করি, মূল ঝুঁকি অন্যখানে। চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা যে পর্যায়ে গেছে, অদূর ভবিষ্যতে সেখানে একটি যুদ্ধ শুরু হতে পারে। শুধু তাইওয়ানের সঙ্গে নয়, দক্ষিণ চীন সাগরের সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমা হিসাব করলে চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে অন্তত ১৭টি দেশের।
চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রধান শর্ত হচ্ছে ‘এক চীন নীতি’কে স্বীকৃতি দিয়ে মেনে নিতেই হবে—তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে কারণেই তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মিত্রদেশগুলো, এমনকি যারা তাইওয়ান আক্রান্ত হলে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে, তারাও তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ওদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নতুন করে তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণা করার দরকার নেই, কারণ, তাইওয়ান এখনই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র।
এখানে সক্রিয় আছে বৃহৎ পরাশক্তিগুলো। আছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের জোট কোয়াড। আছে চীনকে ঠেকানোর জন্য তৈরি হওয়া নতুন সামরিক জোট অকাস (আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া)। তাই এই অঞ্চলে একটি যুদ্ধ শুরু হলে, সেটা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে পরিণত হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
তাইওয়ান নিয়ে খুব মৌলিক কিছু কথা
তাইওয়ান ভূখণ্ডের অফিশিয়াল নাম রিপাবলিক অব চায়না, যেটা একসময় পুরো চীনের (মেইনল্যান্ড চায়নাসহ) নাম ছিল। এমনকি ১৯৪৯ সালে মাও জে দং–এর বিপ্লবের পর ২০ বছরেরও বেশি সময় মেইনল্যান্ড চায়না নয়, তাইওয়ানে থাকা সরকারই ছিল পুরো চীনের প্রতিনিধিত্বকারী। বর্তমানে তাইওয়ান স্বশাসিত হলেও পৃথিবীতে স্বাধীন দেশ হিসেবে খুব কমই স্বীকৃত। পৃথিবীতে ক্ষুদ্র এবং খুব কম গুরুত্বপূর্ণ মাত্র ১৫টি দেশ (২০১৬ সালে ছিল ২৩টি) তাইওয়ানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রধান শর্ত হচ্ছে ‘এক চীন নীতি’কে স্বীকৃতি দিয়ে মেনে নিতেই হবে—তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে কারণেই তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মিত্রদেশগুলো, এমনকি যারা তাইওয়ান আক্রান্ত হলে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে, তারাও তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ওদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নতুন করে তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণা করার দরকার নেই, কারণ, তাইওয়ান এখনই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র। যুক্তি হিসেবে তিনি যুক্ত করেন, তাঁদের সার্বভৌম ভূখণ্ড আছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার আছে এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী আছে।
চীন-তাইওয়ান সংকটের উৎস
চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর তখনকার পুরো চীনের ক্ষমতাসীন দল কুওমিনটাঙ প্রধান চিয়াং কাই শেক অনুসারীদের নিয়ে তাইওয়ান দ্বীপে পালিয়ে যান। ইচ্ছে থাকলেও কোরীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বাধা এবং আরও কিছু কারণে মাও–এর পক্ষে তখন তাইওয়ানে গিয়ে তার প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে তাইওয়ানকে মেইনল্যান্ড চায়নার সঙ্গে একত্রীকরণ সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরপর একের পর এক দেশ মেইনল্যান্ড চায়নাকে মূল চীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রেক্ষাপটে তাইওয়ান পুরো চীনের দাবি থেকে সরে এসে তাইওয়ানকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে পেলেই সন্তুষ্ট থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষ করে তাইওয়ানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) স্বাধীন তাইওয়ান নিয়ে তাদের অবস্থানকে তাইওয়ানের জনগণের কাছে জনপ্রিয় করতে পেরেছে।
বলা বাহুল্য, চীন তাইওয়ানের স্বাধীনতা মেনে নেয়নি; নেবেও না। কয়েক বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা দিয়েছেন, তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই তিনি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে একীভূত করবেন।
সানফ্লাওয়ার মুভমেন্ট এবং সাম্প্রতিক কালে চীনের হতাশা
বর্তমানে তাইওয়ানের অন্যতম রাজনৈতিক দল কুওমিনটাঙ (কেএমটি) ছিল পুরো চীনের ক্ষমতায়। গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে তাকে পরাস্ত করে ক্ষমতা দখল করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)। দীর্ঘ সময় এই দুটি দলের মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার, স্বাধীনতাকামী নতুন দল ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) জন্মের পর কেএমটি–এর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করে। এখন চীনের সরকার কেএমটিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। কারণ, তারা স্বাধীনতার কথা বলে না।
তাইওয়ানের তরুণদের প্রতি চীনের ভীতি আরও বাড়ে সেখান থেকেই। সাম্প্রতিক প্রতিটি জরিপ দেখাচ্ছে, তরুণদের খুব বড় একটি অংশ চীনের সঙ্গে একত্রীকরণ দূরে থাকুক, বর্তমান স্থিতাবস্থাও চায় না। তারা চায় তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করুক স্পষ্টভাবে। ওদিকে সাম্প্রতিক সময় হংকংয়ে চীনের ভয়ংকর ক্র্যাকডাউনের কারণে তথাকথিত ‘এক চীন দুই নীতি’ এখন একেবারেই অর্থহীন হয়ে গেছে। এই ক্র্যাকডাউন পুনরেকত্রীকরণের পক্ষে থাকা বহু তাইওয়ানিকেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে এনেছে।
সাম্প্রতিক অতীতে পরপর দুবার (২০০৮ এবং ২০১২) কেএমটি সরকারের সময়ে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক অত্যন্ত অন্তরঙ্গ হয়। সেই পরিস্থিতিতে চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে ২০১৩ সালে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ক্রস স্ট্রেইট সার্ভিস ট্রেইড অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে তরুণ শিক্ষার্থীরা একটি অরাজনৈতিক, স্বতঃস্ফূর্ত (অরগানিক) আন্দোলনে রাস্তায় নেমে পড়ে। একপর্যায়ে তারা দেশের প্রশাসনিক ভবন এবং নজিরবিহীনভাবে পার্লামেন্ট দখলে নেয়; তিন সপ্তাহের মতো সংসদ অবরোধ করে রাখে। এই চুক্তি আর কখনো সংসদে পাস হয়নি। এটাই ‘সানফ্লাওয়ার মুভমেন্ট’ নামে বিখ্যাত।
তাইওয়ানের তরুণদের প্রতি চীনের ভীতি আরও বাড়ে সেখান থেকেই। সাম্প্রতিক প্রতিটি জরিপ দেখাচ্ছে, তরুণদের খুব বড় একটি অংশ চীনের সঙ্গে একত্রীকরণ দূরে থাকুক, বর্তমান স্থিতাবস্থাও চায় না। তারা চায় তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করুক স্পষ্টভাবে। ওদিকে সাম্প্রতিক সময় হংকংয়ে চীনের ভয়ংকর ক্র্যাকডাউনের কারণে তথাকথিত ‘এক চীন দুই নীতি’ এখন একেবারেই অর্থহীন হয়ে গেছে। এই ক্র্যাকডাউন পুনরেকত্রীকরণের পক্ষে থাকা বহু তাইওয়ানিকেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে এনেছে।
ভবিষ্যতে তরুণদের স্বাধীনতা পাওয়ার মনোভাবের কারণে কেএমটি সহসা আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসবে কি না, খুবই বড় প্রশ্নের ব্যাপার। সবশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেএমটি প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন–এর চাইতে ২০ শতাংশ ভোট কম পেয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ একেবারেই অসম্ভব মনে হচ্ছে এখন।
জাপান-চীন সংকট
তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের উত্তেজনায় খুব জরুরি ভূমিকা থাকা জাপানের সঙ্গে চীনের সংকট নিয়ে কিছু কথা জানা জরুরি। ঐতিহ্যগতভাবেই চীন জাপানকে শত্রু দেশ মনে করে তার এক তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতা ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অব হিউমিলিয়েশন’–এর সময় ব্রিটেনের সঙ্গে জাপানের ভূমিকার জন্য (তাইওয়ান, মাঞ্চুরিইয়া দখল; নানকিং হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদি)। আছে সাম্প্রতিক সমুদ্রসীমা বিরোধও। জাপানের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থান মনুষ্য-বসতিহীন সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের। জাপানের নিয়ন্ত্রণাধীন এসব দ্বীপের মালিকানায় অবশ্য চীনেরও জোর দাবি আছে (চীনের ভাষায় ডাউইউ দ্বীপপুঞ্জ)। জেনে রাখা ভালো, জাপানের সর্ব দক্ষিণ প্রান্ত ইশিগাকি দ্বীপ থেকে এর দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার, আর মেইনল্যান্ড চীন থেকে এর দূরত্ব ৩৩০ কিলোমিটার।
মনুষ্যবসতি না থাকলেও এই দ্বীপপুঞ্জ যে দেশের অধিকারে যাবে, সে দেশ যে সমুদ্রসীমার অধিকারী হবে, সেটা মৎস্য এবং খনিজ সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। এটাই এই দ্বীপ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবির নেপথ্যে। এ ছাড়া একেবারে তুচ্ছ, অব্যবহারযোগ্য, অপ্রয়োজনীয় ভূমিও ছেড়ে দেয় না কোনো পরাশক্তি; এতে তাদের ইগো আহত হয়।
জাপান-তাইওয়ান সম্পর্ক
জাপান ও তাইওয়ান উভয়ের কমন শত্রু চীন, তাই তাদের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক থাকারই কথা। কিন্তু জাপান–তাইওয়ানের সম্পর্ক এর চেয়ে বেশি কিছু। ১৮৯৫ সালে তাইওয়ান চীনের চিং ডাইনেস্টির হাত থেকে জাপানের উপনিবেশে পরিণত হয়, যা টিকে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় পর্যন্ত। উপনিবেশবাদের ইতিহাসে তাইওয়ান একদিক থেকে ব্যতিক্রম—জনগণ উপনিবেশকারী শক্তির প্রতি খুব বেশি বৈরী ছিল না। এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকে জাপানি সাম্রাজ্যের অংশ হতে প্রলুব্ধ করার জন্য জাপান তাইওয়ানে প্রচুর বিনিয়োগ করে।
রেললাইন স্থাপন, বিদ্যুতায়ন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে তাইওয়ান হয়ে ওঠে এই অঞ্চলের প্রায় সব দেশের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। তাইওয়ানের স্বাস্থ্য, শিক্ষাব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়। যুদ্ধের পর চীনের হাতে তাইওয়ানের শাসনব্যবস্থা ছেড়ে দেওয়ার পরও তাইওয়ানের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক চলেছে এবং সেটা অটুট থেকেছে। পরবর্তী সময়ও তাইওয়ানের শিল্প, বিশেষ করে প্রযুক্তিপণ্যভিত্তিক শিল্প বিকশিত হয়েছে জাপানের হাত ধরেই।
তাইওয়ান আক্রান্ত হলে কী হতে পারে জাপানের ভূমিকা
কিছুদিন আগেই, এই বছরের জুলাই মাসে জাপান তার একটি সামরিক কৌশলপত্রে তাইওয়ানকে প্রথমবারের মতো ‘তাইওয়ান’ উল্লেখ করেছে। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, এই ভূখণ্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান বা রিপাবলিক অব চায়না বলা চীন কোনোভাবেই মেনে নেয় না, তারা চায় একে বলা হোক ‘চাইনিজ তাইপেই’। আলোচিত কৌশলপত্রে খুব স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, একটি মুক্ত এবং নিরাপদ এশিয়া প্যাসিফিকের জন্য তাইওয়ানের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি। চীন যদি তাইওয়ানকে আক্রমণ করে, তবে জাপানের অবশ্যই তাইওয়ানের পক্ষে সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে।
ভূরাজনৈতিকভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকা দক্ষিণ চীন সাগরেই আমেরিকার মৈত্রী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এর আগে। এই সাগরের ‘স্কারবারো শোল’ জায়গাটি ফিলিপাইন থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। ফিলিপাইনের চেয়ে তিন গুণের বেশি দূরত্বে থেকেও চীন এর মালিকানা দাবি করে। ২০১২ সালে ‘স্কারবারো শোলে’ চীনা মাছ ধরার জাহাজকে ফিলিপাইন নৌবাহিনী বাধা দেওয়ার জেরে দুই দেশ যুদ্ধাবস্থায় চলে যায়।
প্রস্তুতিও চলছে। জাপান খুব দ্রুত তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এমনকি তাইওয়ানের খুব কাছে ইশিগাকি দ্বীপে জাপান তার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করছে, যা আগামী বছর শেষ হবে। এটাই হচ্ছে মেইনল্যান্ড চায়নার সবচেয়ে কাছাকাছি জাপানি সামরিক উপস্থিতি। অতি সম্প্রতি তাইওয়ানি থিঙ্ক ট্যাংক ‘ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল পলিসি রিসার্চ’-এর আয়োজিত ফোরামে বুধবার অনলাইনে যোগ দিয়ে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে বড় উপদলের প্রধান, শিনজো আবে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তাইওয়ানকে আক্রমণ করলে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না, বেইজিংকে এটি বুঝতে হবে।
তাইওয়ান আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চলে এসেছে, তাতে এই প্রশ্ন খুব যৌক্তিকভাবেই উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র কি তার মিত্রদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে তার স্বার্থরক্ষায় চলে যাবে?
ভূরাজনৈতিকভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকা দক্ষিণ চীন সাগরেই আমেরিকার মৈত্রী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এর আগে। এই সাগরের ‘স্কারবারো শোল’ জায়গাটি ফিলিপাইন থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। ফিলিপাইনের চেয়ে তিন গুণের বেশি দূরত্বে থেকেও চীন এর মালিকানা দাবি করে। ২০১২ সালে ‘স্কারবারো শোলে’ চীনা মাছ ধরার জাহাজকে ফিলিপাইন নৌবাহিনী বাধা দেওয়ার জেরে দুই দেশ যুদ্ধাবস্থায় চলে যায়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি, যদিও ফিলিপাইন আক্রান্ত হলে তার পক্ষে সামরিকভাবে থাকার চুক্তি আছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। সম্প্রতি আবার ‘সেকেন্ড থমাস শোল’–এ চীনা নৌবাহিনীর সঙ্গে ফিলিপাইন সংঘাতের মুখোমুখি, যা সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিলে তাতে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেয়, সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাইওয়ান আক্রান্ত হওয়াকে এই দু–দুটি ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা ঠিক হবে না।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধকালে পুরো চীনের বৈধ সরকারের স্বীকৃতি তাইওয়ান থেকে সরিয়ে মেইনল্যান্ড চায়নাকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের শত্রুতা আমেরিকাকে এটা করতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে কখনো ছেড়ে যায়নি। তাইওয়ানকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করেছে, সমরাস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে এটাও জানা গেছে, চীনের আগ্রাসনের ঝুঁকিকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা তাইওয়ানের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমছে নিশ্চিত, কিন্তু এটা আদৌ আর থাকবে কি না, সেটা নির্ধারিত হবে তাইওয়ান আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সামরিক পদক্ষেপ নেয় কি না সেটার ওপর। শুধু সেটাই না, তাইওয়ান আক্রান্ত হলে জাপান সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রকে সেই যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়তে সম্ভবত হবেই। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ‘ইউএস-জাপান সিকিউরিটি ট্রিটি’ অনুযায়ী দুই দেশের কোনোটি বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে অপর দেশকে তার সাহায্যে সামরিক শক্তি নিয়ে হাজির হতে হবে।
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। মেইনল্যান্ড চায়নাকে মূল চায়না স্বীকৃতি দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেছিল তাইওয়ান চীনের অংশ, এবং যুক্ত করেছিল, তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নেবে না। কিন্তু জরুরি কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল তাইওয়ানের ‘শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণের’ পক্ষে থাকবে তারা।
তাহলে পুনরেকত্রীকরণ যদি শান্তিপূর্ণ না হয়ে যুদ্ধে গড়ায়?
মাস দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাইওয়ানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ থেকে সরে এসে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তাইওয়ান চীন কর্তৃক আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে। আর সম্প্রতি শীর্ষ বৈঠকে বাইডেনকে সি চিন পিং ‘পুরোনো বন্ধু’ বলে খাতির দেখালেও তাইওয়ানের স্বাধীনতা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ভূমিকাকে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ বলে কঠোর সতর্কবাণী দিয়েছেন।
চীন-তাইওয়ান শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণও পশ্চিমা স্বার্থের পরিপন্থী
একটা কথা জেনে রাখা ভালো, এমনকি শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণও মার্কিন এবং পশ্চিমা স্বার্থের পরিপন্থী।
চীনা সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে আলিবাবা, টেনসেন্ট–এর মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ‘ডানা ছাঁটা’ হয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের একটি সেবা খাত প্রাইভেট টিউশন পুরো বন্ধ করা হয়েছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বহু এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকছে। সবকিছু মিলে চীনের অর্থনীতি সমস্যাসংকুল।
প্রথম আলোতেই প্রকাশিত ‘কোয়াড নিয়ে চাপা উত্তেজনা আর বৈশ্বিক চিপ-সংকট’ শিরোনামে একটি কলামে আমি বিস্তারিতভাবে দেখিয়েছিলাম, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পণ্য সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে একচ্ছত্র সক্ষমতা তাইওয়ানের। একটি শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণের মাধ্যমে আমেরিকার ‘শত্রু’ চীনের হাতে এই পণ্যের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে দেওয়া হবে কি না, সেই ভাবনা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দুনিয়ার থাকবেই।
চীনের অনিবার্য অর্থনৈতিক সংকট এবং যুদ্ধের ঝুঁকি
চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাউজিং কোম্পানি এভারগ্র্যান্ড–এর পতন হয়েছে। এর জেরে ২০১৫ সালের পর চীনে নতুন বাড়ির মূল্য কমছে, কিন্তু তবু অবিক্রীত থাকছে লাখ লাখ ফ্ল্যাট। ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেনার দায়ে জর্জরিত কোম্পানিটিকে তুলনা করা হচ্ছে ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টিকারী মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক লেহম্যান ব্রাদার্স–এর সঙ্গে। এ ছাড়া চীনা সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে আলিবাবা, টেনসেন্ট–এর মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ‘ডানা ছাঁটা’ হয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের একটি সেবা খাত প্রাইভেট টিউশন পুরো বন্ধ করা হয়েছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বহু এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকছে। সবকিছু মিলে চীনের অর্থনীতি সমস্যাসংকুল।
এই সমস্যাসংকুলতার প্রভাব আমরা দেখি চীনের আগ্রাসী আচরণে। গত ১ থেকে ৩ অক্টোবর এ যাবৎকালের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক যুদ্ধবিমান (১৫০–এর বেশি) তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা দেখেছি, যখনই কোনো স্বৈরশাসক সংকটে পড়েন, তখন তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেই সক্ষমতা প্রমাণ করতে চান। চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিগুলো বলে চীনের অর্থনীতি সে জায়গায় পৌঁছাবে না। সামনের বছরগুলোতে চীন দুর্বলতর হতে থাকবে, এমন পূর্বাভাস একেবারেই অযৌক্তিক নয়। এমন পরিস্থিতি ‘অমরত্ব-প্রত্যাশী’ বর্তমান চীনা প্রেসিডেন্টকে তাইওয়ান আক্রমণে প্রলুব্ধ করতেই পারে।
পুতিনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ যা শেখায় স্বৈরশাসক সম্পর্কে
২০১৪ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের অঞ্চল ক্রিমিয়া দখল করে নেন। সেটা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো তখন নিন্দা জানানো এবং অবরোধের বেশি কিছু করেনি। এরপর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী জাতিগত রুশদের সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে সেই অঞ্চলে একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন পুতিন। সেই যুদ্ধের চাপে ইউক্রেনের সরকারকে বাধ্য করেন তার সঙ্গে এমন একটি চুক্তিতে, যা ছিল ইউক্রেনের দিক থেকে ভীষণ অসম। এরপর জার্মানিসহ আরও কিছু ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ার সঙ্গে নানা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাশিয়ার ওপর জ্বালানিনির্ভরতা তৈরি করে। এটা নিঃসন্দেহে সাহসী করে তুলেছে পুতিনকে; তিনি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন।
দুই দেশের মধ্যে আপাত স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করে এই বছরের শুরুতেই তিনি আবার ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করেছিলেন। সেই সময় সেনা ফিরিয়ে নিলেও কিছুদিন আগে আবার করেছেন। সেটা ঘিরে ইউরোপ একটা যুদ্ধের মুখোমুখি। শুধু সেটাই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোকে তাঁর অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করার বিনিময়ে তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই পাপেটে পরিণত করে তাঁকে দিয়েও নানা ঝামেলা তৈরি করে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার পরিকল্পনায় বেলারুশের সরাসরি মদদে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র পোল্যান্ডে শরণার্থী ঢুকিয়ে সেখানেও এক যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
বিনা বাধায় ক্রিমিয়া দখল করে ফেলতে পারা পুতিনকে আরও আগ্রাসী করে তুলেছে। এটাই হওয়ার কথা। মজার ব্যাপার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও ঠিক একই রকম পরিস্থিতি ছিল।
‘বিশ্বযুদ্ধ’ ঘোষণা দিয়ে কোনো যুদ্ধ শুরু হয় না
জার্মানি পোল্যান্ড দখল করা এবং এরপর ব্রিটেন এবং ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় হিসেবে মোটামুটি স্বীকৃত, কিন্তু এটা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেক ঐতিহাসিক আরও বেশ আগের কিছু যুদ্ধকে এই যুদ্ধের অংশ বলে দাবি করেন। অর্থাৎ কোনো বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে অনেক দেশের মধ্যে লেগে যায় না। এটা আসলে প্রথম তুলনামূলক একটা ছোট যুদ্ধ দিয়ে শুরু হয় এবং একটা পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে।
প্রচলিত অস্ত্রের একটা মাঝারি মাত্রার যুদ্ধের মাধ্যমে তাইওয়ান দখল করে ফেলতে পারবে চীন, এমনটা ভাবতেই পারে কয়েক বছর পরে; তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য মতে চীনের পূর্ণ সক্ষমতা আসবে ২০২৫ সাল নাগাদ। এমন একটি সংঘাত ক্রমান্বয়ে রূপ নিতে পারে একটা সর্বাত্মক বিশ্বযুদ্ধে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে অ্যাডলফ হিটলার চেকোস্লোভাকিয়ার একটি বড় অংশ দখল করে নেয় এবং সেই দখল ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো শক্তি রীতিমতো চুক্তি (মিউনিখ অ্যাগ্রিমেন্ট) করে মেনে নেয়। তখন বলা হয় এই মেনে নেওয়া ইউরোপে একটি বড় যুদ্ধ ঠেকাতে কার্যকর হবে। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই হিটলার দখল করেন পুরো চেকোস্লোভাকিয়া, আর তারপর পোল্যান্ড। ইতিহাসবিদদের মধ্যে আজও এই আলোচনা হয়, চেকোস্লোভাকিয়ার ওই অংশ দখল করার পরই জার্মানিকে বল প্রয়োগ করে নিবৃত্ত করা জরুরি ছিল।
তাইওয়ানকে যুদ্ধ করে জিতে নেওয়া খুব সহজ নয়। সামরিক যুদ্ধকৌশলের দিক থেকে একটা দ্বীপে আগ্রাসন চালানো খুবই জটিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হলেও নির্বিকার থেকে পরাশক্তিগুলো কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগের মতো ভুল করবে? ইতিহাস বলে, অনেক জার্মান ভাষাভাষী আছে, এই যুক্তিতে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়ার একটা অংশ দখল করে, সেটার সমর্থন পেয়ে কিংবা হালে ভ্লাদিমির পুতিন বিনা বাধায় ক্রিমিয়া দখল করে কিন্তু থেমে থাকেননি।
ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক