শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার—যে উপাচার্যের নির্দেশনায় পুলিশ সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলে পড়ে, যে উপাচার্যের উপস্থিতিতে ছাত্রদের শরীর রক্তাক্ত হয়, সেই উপাচার্যকে তাঁরা চান না। এ পরিস্থিতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’।
গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির ভার্চ্যুয়াল এক সভায় ফরিদ উদ্দিন আহমেদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, শাবিপ্রবিতে যে ঘটনাপ্রবাহ, তাতে যদি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে তাঁরাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। প্রায় ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এমন অভূতপূর্ব মনোভঙ্গির কথা বোধ করি বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো শোনা যায়নি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবি উঠেছে, এ জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা একত্র হয়েছেন এবং পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছেন!
বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনসংখ্যা বহুল একটি দেশ। কোটি কোটি মানুষের এই দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই, যেটি কিনা পৃথিবীর ইউনিভার্সিটিগুলোর র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পাঁচ শর মধ্যে আছে। মাত্র দুই লাখ মানুষের দেশ আইসল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ তালিকায় আছে। মাত্র ১১ লাখ জনসংখ্যার দেশ এস্তোনিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় আছে। আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এই তালিকায় পাওয়া যায়। অথচ কোটি কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে এসব তালিকায় পাওয়া যায় না। এ জন্য কি আপনারা একত্র হয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন কখনো?
বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনসংখ্যা বহুল একটি দেশ। কোটি কোটি মানুষের এই দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই, যেটি কিনা পৃথিবীর ইউনিভার্সিটিগুলোর র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পাঁচ শর মধ্যে আছে। মাত্র দুই লাখ মানুষের দেশ আইসল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ তালিকায় আছে। মাত্র ১১ লাখ জনসংখ্যার দেশ এস্তোনিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় আছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হলের অনেক সমস্যা। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের গণরুমে থাকতে হয়। এ জন্য কি আপনারা কখনো পদত্যাগ করতে চেয়েছেন?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যাওয়া-আসার পরিবহনের সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এ জন্য কি আপনারা কখনো একত্র হয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন? শিক্ষক কিংবা ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত লাইব্রেরি-সুবিধা নেই। এ নিয়ে কি আপনারা কখনো একত্র হয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন? গবেষণার জন্য নেই যথেষ্ট গবেষণাগার, যন্ত্রপাতি কিংবা তহবিল। এ জন্য কি আপনারা কখনো পদত্যাগ করতে চেয়েছেন? হলগুলোয় খাবারের মান খারাপ, এ নিয়ে কি কখনো আপনারা একত্র হয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন?
এসব কোনো কিছুর জন্য আপনারা একত্র হতে পারেনি। এর প্রয়োজনীয়তাও আপনারা উপলব্ধি করেননি। আপনাদের কেবল প্রয়োজন পদ ও পদবি। পদ-পদবির এ খেলায় আপনারা হয়তো জিতে যাচ্ছেন, কিন্তু আমাদের প্রিয় দেশ এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আপনারা ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আপনারা মহামান্য। আপনাদের কোনো ভুল নেই। আপনাদের কোনো অন্যায়ও হয় না। আপনারা জয়ী হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
আপনারা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে একত্র হয়েছেন। কিন্তু একটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়ার মান, গবেষণা, আবাসন-সুবিধা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে আপনাদের কোনো সহমর্মিতা নেই। আপনাদের কখনো একত্র হতে দেখা যায়নি। তবু আপনারা মহান। কারণ, আপনারা ভিসি!
ড. আমিনুল ইসলাম, সিনিয়র লেকচারার ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড ইনোভেশন বিভাগ এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
ই-মেইল: [email protected]