বানের ঢলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে আছে। গ্রাম থেকে শহর, কোনো জায়গাই বাদ যাচ্ছে না। বিপন্ন মানুষ উঠে আসছে ঘরের চালে, ভাসছে ভেলা বা নৌকায়, উঠে যাচ্ছে বাঁধে ও উঁচু জমিতে। মানুষের তবু যাওয়ার জায়গা আছে, কিন্তু অবলা প্রাণীদের সেটাও নেই।
বন্যা ভূচর সব প্রাণীর জন্যই দুর্যোগের। এ অবস্থায় গৃহপালিত প্রাণী থেকে শুরু করে বেওয়ারিশ ও বুনো প্রাণীদের কথাও ভাবা দরকার। মানবিকতা কেবল মানুষের জন্যই প্রযোজ্য, তা নয়। মানবিকতা তাকেই বলে, যখন সব প্রাণের প্রতি মানুষ সদয় হয়। প্রাণবিকতার এ দাবি দুর্যোগের সময়ে আরও বেশি সত্য।
মানবিকতা এ দুর্যোগে বিরল নয়। নাটোরের গুরুদাসপুরে অতিবৃষ্টির পানিতে ডুবে মরতে বসা একটি কুকুরকে বাঁচাতে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। টানা বর্ষণে কুকুরটির থাকার জায়গা ডুবে গিয়েছিল। সে তখন উঠে গিয়েছিল পরিত্যক্ত এক
ঘরের ওপর। কিন্তু সেই ভাঙা ঘরের চাল গলে সে পড়ে যায় ভেতরে, যেখানে বৃষ্টির পানি। টানা কয়েক দিন এ অবস্থায় থেকে ক্ষুধার্ত হয়ে
প্রাণীটি মরতেই বসে। তখন স্থানীয় এক ব্যক্তি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা ছুটে আসে। কিন্তু অভুক্ত ও ভীত প্রাণীটি হিংস্র হয়ে ওঠায় কেউ তার পায়ে দড়ি বেঁধে টেনে তুলতে সাহস পাচ্ছিল না। তখন এগিয়ে আসে এক ছাত্রী। কুকুরটি তার পোষা বিধায় সে সাহস করে তাকে উদ্ধারের জন্য পায়ে দড়ি বাঁধতে ঘরটির ভেতর নেমে পড়ে। এভাবে কুকুরটি উদ্ধার হয়।
এটি একটি ঘটনা মাত্র। রাজধানী ঢাকাসহ বন্যা, অতি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় বিপন্ন সব জনপদেই কুকুর-বিড়ালই শুধু নয়, সাপ-বেজি-শিয়াল ও মেছো বাঘের মতো বন্য প্রাণী আবাসস্থল হারিয়েছে, পাচ্ছে না খাবার। দুঃখজনক হলেও সত্যি, একটু উঁচু ডাঙার খোঁজে অনেক জায়গাতেই এসব অসহায় প্রাণী মানুষের কাছাকাছি চলে আসছে। এ অবস্থায় দেশের কয়েকটি জায়গায় গণহারে কুকুর, শিয়াল ও মেছো বাঘ এবং সাপ হত্যা চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ বাঁচাতে নয়, বরং বন্য প্রাণীর প্রতি আদিম হিংসাবশত এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ নিষ্ঠুরতা কেবল অমানবিকই নয়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়ও ক্ষতিকর।
সরকার ও গণমাধ্যম বন্যার সময় সতর্কতার পরামর্শের পাশাপাশি যদি এ নির্দয় আচরণ বন্ধে আহ্বান জানায়, সহৃদয় মানুষ যদি একটু সচেতন হয়, তাহলে এমন অমানবিকতা দেখতে হয় না।