করোনা মোকাবিলায় সমন্বয়হীনতা আছে
>অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন, বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা কোভিড-১৯ মোকাবিলার বিভিন্ন দিক ও উপায় নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো: কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য সরকারের প্রস্তুতি, এ বিষয়ে স্বচ্ছতার গুরুত্ব—এসব বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
রুবীনা ইয়াসমীন: আজকের দিন পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নেওয়া পদক্ষেপসমূহ আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। চীন থেকে যা সামগ্রী এসেছে, তাতে আমাদের প্রস্তুতি আরও দৃঢ় হয়েছে। তবে স্বচ্ছতার বিষয়ে বলব, যদি পরীক্ষা করার সক্ষমতা আরও বেশি থাকত, তাহলে হয়তো রোগীর প্রকৃত সংখ্যার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারতাম। অনেক কারণেই রোগীর জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে—এসব সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা করা খুব জরুরি। কোনো রোগী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা ছাড়া বলা যায় না। বিদেশফেরত নন, এমন রোগীও তো মিলেছে। সারা দেশে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি কিটের অভাবে। যখন পারব, তখন হয়তো মনে হবে যে স্বচ্ছতার বিষয়টি হয়তো শুরুতে অস্পষ্ট ছিল।
প্রথম আলো: লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের প্রফেসর নিল ফার্গুসনের সমীক্ষায় দ্রুত ‘অত্যন্ত ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা’র ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য যে সামর্থ্য দরকার, তা আমাদের এখন কতটা আছে?
রুবীনা ইয়াসমীন: চীনা সামগ্রী দিয়ে আমরা একটু এগোতে পারব। সরকার নিশ্চয় আরও চেষ্টা করছে। ঢাকায় আরও তিনটি স্থানে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে এ জন্য বায়োসেফটি ল্যাব (বিএসএল-টু) লাগে। এর ব্যবহারেও উচ্চ কারিগরি মান বজায় রাখতে হবে, লিকেজ হলে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেশে বিএসএল ল্যাবের সংখ্যা খুব কম। আমার হাসপাতালেও নেই। আইইডিসিআর বলেছে, আমরা নমুনা নিয়ে গেলে তারা পরীক্ষা করে দেবে। কিন্তু তাদের ওখানে লম্বা লাইন, তিন দিনের আগে নমুনা নিতে পারবে না। আমাদের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট বলল, তাদের এমন দক্ষ কর্মী নেই, যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করতে পারবেন। এখানে কেন দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠেনি, তা আমার জানা নেই। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপের সময়ও টেকনোলজিস্ট খুবই কম ছিল। তখন শুনেছিলাম, সরকার কী এক আইনি জটিলতার কারণে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করতে পারছে না। দেশের সব সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাব। সব ল্যাবের কাজ মন্থর। ডেঙ্গুর সময় আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, যত দ্রুত যত বেশি রোগী পরীক্ষা করা যায়, ততই মঙ্গল। কিন্তু ঘাটতিটা রয়েই গেছে।
প্রথম আলো: গত এক দশকে বেসরকারি খাতে অনেক অগ্রগতি ঘটেছে। এখন তারাও যেন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। সাবেক আইইডিসিআরের পরিচালক মাহমুদুর রহমান আমাদের বলেছেন, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেডিকেল টেকনোলজিস্ট তৈরি করছে।
রুবীনা ইয়াসমীন: বাংলাদেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কম নন। কিন্তু সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করতে পারেনি।
প্রথম আলো: উপযুক্ত জনশক্তি থাকলে রাতারাতি আইন সংশোধন করে তাঁদের এখন নিয়োগ দেওয়া সম্ভব?
রুবীনা ইয়াসমীন: বিষয়টি এত সহজ হলে ডেঙ্গুর পর এমন পদক্ষেপ আমরা দেখতাম। অনেক সরকারি মেডিকেল কলেজের ল্যাব টেকনোলজিস্টদের অভাবেই দুবেলা চলে না। আমাদের হাসপাতাল ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট। এটা তিন বেলা চালু থাকলে রোগীরা আরও বেশি সেবা পেত। ৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ২০১৩ সালে এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে ল্যাবের একই অবস্থা দেখে আসছি।
প্রথম আলো: আপনারা কি কখনো সরকারের কাছে লিখিতভাবে বিএসএল-টু প্রযুক্তি চেয়েছেন?
রুবীনা ইয়াসমীন: যেখানে সাধারণ টেস্ট দুই বেলা করা যায় না, সেখানে বিএসএল-টুর চিন্তা করার প্রশ্নই ওঠে না। দু-তিন দিন ধরে টিভিতে শুনতে পাচ্ছি, সব বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেস্ট করা হবে। সরকার যেকোনোভাবে হোক, এটা চালু করতে চাইছে। কিন্তু বিএসএল-টু চালু করতে হলে সময় লাগবে। ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন পর্যন্ত চালু করতে পারেনি।
প্রথম আলো: কয়েক বছর ধরেই নতুন নতুন ভাইরাস আসছে। ডেঙ্গুর বিরাট প্রাদুর্ভাব ঘটল। বিএসএল-টু কেন কার্যকর নেই?
রুবীনা ইয়াসমীন: ডেঙ্গু শনাক্তে পিসিআর লাগে না। সাধারণ টেস্টেই ধরা পড়ে। বিএসএল-টু প্রযুক্তি যাদের আছে, তার মানে তারা তা সচল রাখবে। উপযুক্ত লোকবল থাকবে। নিপা ভাইরাস শনাক্তে করোনার মতো পিসিআর পদ্ধতি লাগে।
প্রথম আলো: বিশেষজ্ঞরা একমত যে ১ হাজার ২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি সংক্রমিত রোগের হাসপাতাল দরকার। কেন কখনো ভাবা হয়নি?
রুবীনা ইয়াসমীন: আমাদের একটা ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে রয়েছে। এটা যেকোনোভাবেই হোক চট্টগ্রামে হয়ে গেছে। কিন্তু রাজধানীতে এ রকম ডেডিকেটেড কোনো ইনস্টিটিউট কাম হাসপাতাল নেই। মহাখালীতে আমাদের একটি ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতাল রয়েছে। অথচ সেখানে টিটেনাস ও র্যাবিজের চিকিৎসা চলে। কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের সময় এই হাসপাতালের সক্ষমতা যতটা ব্যবহারের সুযোগ ছিল, ততটা আমরা করতে পারিনি।
প্রথম আলো: কেন? কত দিন ধরে এটি বেহাল?
রুবীনা ইয়াসমীন: আমি তো এমবিবিএস পাস করার পর থেকেই দেখে আসছি। এর অবস্থা আগে আরও খারাপ ছিল। এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো। এটা হয়তো সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব। আসলে র্যাবিজ ভ্যাকসিন দেওয়া এই হাসপাতালের প্রধান কাজ বলেই আমার ধারণা।
প্রথম আলো: র্যাবিজ তো সেই অর্থে সংক্রামক ব্যাধি নয়।
রুবীনা ইয়াসমীন: হ্যাঁ। কারণ, র্যাবিজে আক্রান্ত রোগী অন্য কাউকে কামড়ে দেয়, তাহলে এটা সংক্রমিত হবে। মূলত এটা ছড়ায় পাগলা কুকুরের মাধ্যমে। বাংলাদেশের এখন একটা বৃহৎ ইনফেকসাস ডিজিজ হাসপাতাল দরকার হবে। কারণ, আমরা এখন ধরেই নিচ্ছি যে ডেঙ্গু প্রতিবছরই হবে। সে ক্ষেত্রে সমন্বিত চিকিৎসাটা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে ইনফেকসাস ডিজিজ স্পেশালিস্ট খুবই কম। এর ওপর পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রির সুযোগও বাংলাদেশে কম।
প্রথম আলো: গত ৪৯ বছরে দেশে এ পর্যন্ত এ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন ছয়জনের মতো। এ নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা সংশ্লিষ্টদের নেই। আছে বলে শুনেছেন?
রুবীনা ইয়াসমীন: আমিও এ রকম কিছু শুনিনি। স্পেশালিস্ট তৈরি করতে পাঁচ বছর লাগবে। কিন্তু এই অন্তর্বর্তীকালীন শূন্যতা ইন্টার্নিস্ট/মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা পূরণ করতে পারবেন। তাই প্রধানত দরকার একটি ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এখন আপনি যদি প্রশ্ন করেন দেশে নিউরোলজি চিকিৎসা সবচেয়ে কোথায় ভালো হবে? সেটা কিন্তু সবাই নির্দিষ্ট করে নিনস (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স। এর নাম বলবে, কারণ, এটা ওই-জাতীয় অসুখের জন্য একটি ডেডিকেটেড প্রতিষ্ঠান। সোসাইটি অব মেডিসিনের পক্ষ থেকে আমরা বহুদিন যাবৎ সরকারের কাছে একটি ইনস্টিটিউট অব ইন্টার্নাল মেডিসিন স্থাপনের দাবি করে আসছি। যেটা ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতালের বিকল্প হতে পারে। বর্তমানে ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতাল চালানোর মতো ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে নেই। এই ইনস্টিটিউট হলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগের চিকিৎসা এক জায়গায় সমন্বিতভাবে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রথম আলো: আইইডিসিইআর এবং তার মুখপাত্র মীরজাদী সেব্রিনা যেভাবে করোনার মুখপাত্র হিসেবে সামনে এসেছেন, তাতে জনমনে একটা ধারণা হতে পারে কি না যে আমাদের তো একটা বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আছে। সেটাকে শক্তিশালী করলেই তো হলো।
রুবীনা ইয়াসমীন: না। আইইডিসিআর নতুন বহুতল ভবনে যাবে। কিন্তু তাতে আমরা যেটা চাইছি, সেই শূন্যতা পূরণ হবে না। কারণ, সেখানে রোগী ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই। তারা আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশনগুলো করে। যদি খবর আসে অজ্ঞাত রোগে মৃত্যু ঘটছে, তখন তারা ছুটে যাবে এবং তারা খুঁজে বের করবে যে ওখানে ঠিক কী কারণ বা কী ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। আমরা বর্তমান স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থাটা কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নেব। কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখব, বিপদ কেটে গেলেই আমরা যেন ভুলে না যাই। নিকট অতীতেও আমরা ভাইরাস-সংক্রান্ত কারণে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে।
প্রথম আলো: এ ধরনের অবস্থায় মূল অভাবটা কী দেখেন?
রুবীনা ইয়াসমীন: সমন্বিত কর্মসূচি নেই, আলাদা আলাদা সিদ্ধান্ত আছে। সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটা স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেখানে ডাক্তার ও অন্যান্য দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, করোনাই শেষ নয়। প্রতিবারই দেখবেন পৃথিবীতে নতুন নতুন ইনফেকশনস ডিজিজ হাজির হচ্ছে।
প্রথম আলো: এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কমিটি হয়েছে, এবারেও হয়েছে। এ বিষয়ে কী ধারণা?
রুবীনা ইয়াসমীন: এই কমিটিগুলোর ফলে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ইনভেস্টিগেশনের ব্যাপকতা বেড়েছে। কিট, পিপিই ইত্যাদির সাপ্লাই চেইন বেড়েছে। লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটু দেরিতে হলেও আমি মনে করি এখন ভালোভাবেই কাজ এগোচ্ছে। তবে অনেক বেশি সন্তোষ ব্যক্ত করতে দ্বিধান্বিত। কারণ, কর্তৃপক্ষের মধ্যে কখনো কখনো সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
প্রথম আলো: ঠিক কী বিষয়ে আপনার উদ্বেগ?
রুবীনা ইয়াসমীন: সরকারি নির্দেশনা জারিতে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে, নির্দেশনা জারির পর তা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। সময়মতো যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে কাজের সমন্বয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি।
প্রথম আলো: স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একটা মন্তব্য হলো, তিন মাস আগেই প্রস্তুতি ছিল। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আপনি কী বুঝছেন?
রুবীনা ইয়াসমীন: প্রথম যখন চীনে ছড়িয়ে পড়ল, তখন মিনিস্ট্রি থেকে একটা চিঠি হাসপাতালে আসে। ওই চিঠিতে চার বেডের একটা আইসোলেশন ইউনিট করার নির্দেশনা ছিল। হাসপাতালের নিচের তলায় আইসোলেশন ইউনিট করার সুযোগ না থাকায় তা হাসপাতালের ১২ তলায় করা হয়। এ ছাড়া জানুয়ারিতেই আমরা সোসাইটি অব মেডিসিনের পক্ষ থেকে একটি গাইডলাইন তৈরি করি। তখন ঢাকা মেডিকেলের একটা সেমিনার হয়েছিল। সেখানে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গাইডলাইন উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্যসচিব মহোদয়, ডিজি এসেছিলেন। আমিও তাতে অংশ নিই। এর বাইরে কোনো পদক্ষেপের কথা আমার জানা নেই।
প্রথম আলো: বিশ্বব্যাংক-সমর্থিত আইইডিসিআরের বর্তমান রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট মুশতাক প্রথম আলোকে বলেছেন, আমরা শেষ ধাপে পৌঁছাতে পারি, ধরে নিয়ে প্রস্তুতি ও সামর্থ্য বাড়াতে হবে।
রুবীনা ইয়াসমীন: আরও অবনতিশীল হওয়ার ইঙ্গিতের বিষয়ে আমি দ্বিমত পোষণ করি। কারণ, পৃথিবীর যেসব দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি, সেসব দেশ থেকে অনেকেই অনেক আগেই দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পর তাঁদের ইতিমধ্যেই ১৪ দিন পার হয়েছে। ইতালিফেরতদের শুরুতেই কোয়ারেন্টিনে দিতে পারলে হয়তো রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকত। কিন্তু তাও যাঁরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের দ্বারা এত দিনে আরও বেশি রোগ বিস্তার ঘটার আশঙ্কা ছিল, কিন্তু সেটা ঘটেনি।
প্রথম আলো: তাহলে আপনি কি আশাবাদী যে বড় ধরনের সংকট আমরা এড়াতেই পারি।
রুবীনা ইয়াসমীন: সতর্কতার সঙ্গে হলেও আমি অবশ্যই আশাবাদী। বিদেশে যে সময়ের ব্যবধানে যতটা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে, আমাদের ততটা ছড়ায়নি। তাই আমার ব্যক্তিগত আশাবাদ হচ্ছে যে বড় রকমের প্রাদুর্ভাব ঘটবে না। যদি বলেন যে কেউ গোপন করছে, তাহলেও তো আমি একটা বড় হাসপাতালে কাজ করি, সেখানে তো আমি অনেক বেশি সন্দেহজনক কোভিড-১৯ রোগীর আগমন দেখি না।
প্রথম আলো: এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কোন বিষয়ের ওপর জোর দেবেন?
রুবীনা ইয়াসমীন: ডেঙ্গুতে আমাদের প্রাণহানি কিন্তু যথেষ্ট ঘটেছিল। সেটা প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় একটা ঘাটতি ছিল। একটু দেরিতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। আগেই যেমনটা বলেছি, বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেটা সবচেয়ে বড় ঘাটতি, যেটা আমি অনুভব করি, সেটা হচ্ছে সমন্বয়হীনতা। এটা ঘোচাতে পারলে আমাদের সীমিত সম্পদের আরও বেশি ভালো ব্যবহার করা সম্ভব হতো। সবাই যেন বিক্ষিপ্তভাবে করছেন। কেউ সমন্বিত নন। এর কারণ আমি নিজে বলতে পারব না। কারণ, আমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কখনো কাজ করিনি। তবে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে অনুভব করি যে একটা ইন্টিগ্রেটেড ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। তবে সেটা ওই যে বৃহৎ হাসপাতালের কথা বললাম, সেটা থাকলে এটা কমবে।
প্রথম আলো: ২৭ মার্চ মীরজাদী সেব্রিনা বললেন, গ্রামের মানুষ হটলাইন সুবিধা নেবে। কিন্তু কিছুটা ছুটির মেজাজে বাড়ি ফেরার পর লকডাউন হলো। অথচ সবারই জানা যে ইউনিয়নে কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই। উপজেলাতে দুর্বল।
রুবীনা ইয়াসমীন: আপনার সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া ও নেওয়া আরও কঠিন। ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়লে কী করতে হবে, তখন সরকার স্কুল, কলেজ বা বাড়ি খালি করে নেবে। তবে তেমন অবস্থায় চিকিৎসা দিতে উপযুক্ত লোকবলের সংকট সেখানে থাকবে।
প্রথম আলো: তার মানে আপনি বলছেন যে বিকল্প বাড়ি বা তেমন ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা সমীচীন।
রুবীনা ইয়াসমীন: উচিত। হয়তো করা আছে। আমার মনে হয় আগে গণপরিবহন বন্ধ করে পরে লকডাউন করার কৌশল নেওয়া উচিত ছিল। মানুষ বাড়ি চলে যাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, ঢাকার উন্নত চিকিৎসাসুবিধা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম চিকিৎসাসুবিধার এলাকায় চলে যাওয়া হলো।
প্রথম আলো: চিকিৎসকেরা তাঁদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
রুবীনা ইয়াসমীন: কোভিড-১৯ মোকাবিলার পরিস্থিতিতে লকডাউন পরিবেশে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যাতায়াত, অবস্থান, আহার ও নিরাপত্তা, বিশেষত মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সংকটে আমরা জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম।
প্রথম আলো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রুবীনা ইয়াসমীন: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।