মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব বেলাগাঁও গ্রামে ফসলের জমিতে ছিটানো কীটনাশক খেয়ে দেশি প্রজাতির ১৫০টি হাঁস মারা গেছে—এটি একটি উদ্বেগজনক খবর। কারণ, হাঁসের মৃত্যু দেখা যাচ্ছে; ওই সব জমির পানি ও মাটিতে আরও কত অজস্র অণুজীব কীটনাশকের অতিরিক্ত বিষাক্ততায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
এ দেশে ফসলের জমিতে বরাবরই কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, কিন্তু তার ফলে একসঙ্গে এতসংখ্যক হাঁস বা অন্য কোনো প্রাণীর মৃত্যুর খবর একটা পাওয়া যায়নি। জুড়ীর এক গ্রামে এক বর্গাচাষি বোরো ধানের জমিতে কীটনাশক ছিটিয়েছিলেন সকালে; বিকেলে সেই জমিতে নেমেছিল অন্য এক ব্যক্তির ১৫০টি হাঁস এবং সেগুলোর প্রতিটিই মারা গেছে। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে, ওই জমিতে কী উচ্চ মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ
করা হয়েছে।
পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল বাঁচানোর চেষ্টায় আমাদের কৃষক কীটনাশক–বালাইনাশক ব্যবহার করেন। কিন্তু অধিকাংশ কৃষকেরই এই বিষের পরিমিত ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা নেই। ফলে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে, মাটি ও পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে প্রাণবৈচিত্র্য উদ্বেগজনকভাবে কমে যাচ্ছে। আর মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; কারণ মাটি ও পানি থেকে কীটনাশক আমাদের খাদ্যচক্রে ঢুকে যাচ্ছে।
তাই কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার ন্যূনতম মাত্রায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এখন অনেক রকমের জৈব কীটনাশক উদ্ভাবিত হয়েছে; কৃষককে সেগুলো ব্যবহার উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার যে প্রথমত কৃষক ও তাঁর পরিবারের জন্যই বিপজ্জনক, সেই সচেতনতাও বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে ফিঙে ও শালিকের মতো অনেক পাখি আছে, যারা ধানখেতের পোকা ধরে ধরে খায়। খেতে গাছের ডালপালা পুঁতে রেখে এসব পাখির বসার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় কৃষিজমিতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে ইঁদুর মারার ওষুধ ব্যবহার না করে বিড়াল, বেজি, গুইসাপ, প্যাঁচা বা চিল সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্রয়োজন সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি। কীটনাশক আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন।
একই সঙ্গে এর প্রয়োগ যাতে সঠিক মাত্রায় হয়, সে জন্য কৃষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কৃষি বিভাগকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।