২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

টিআইবির প্রতিবেদন

যেকোনো রাষ্ট্রে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাদার দক্ষ শ্রমিকের সরব উপস্থিতি প্রত্যাশিত। বিশ্বায়নের যুগে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার অভিপ্রায়ের সঙ্গে বিদেশি কর্মীদের অংশগ্রহণ পরিপূরক। প্রতিটি দেশ তার শ্রমবাজার খুলেই রাখে প্রধানত তার নিজের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের স্বার্থে। অবশ্য বিষয়টিকে পরস্পরের জন্য ‘উইন উইন’ বিবেচনা করতে পারলেই তা টেকসই ও সুখকর বলে গণ্য হতে পারে।

বাংলাদেশে অবশ্যই প্রতিবেশী ভারত, চীনসহ বিদেশি কর্মী স্বাগত। কিন্তু তা অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইনকানুনের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। সেদিক থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বৈধ ও অবৈধ বিদেশি শ্রমিক দ্বারা প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য আমাদের বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে এবং বিষয়টি নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগজনক। কারণ, প্রতিবেশী দুই দেশের সরকারি মহলের জানাবোঝার বাইরে এ রকম একটি বাস্তবতা তৈরি হতে পারে না। আবার রূঢ় বাস্তবতা এটাও যে বাংলাদেশ সরকারের একটি অংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রশ্রয় ছাড়া এ রকম একটি উপাখ্যান সৃষ্টি হওয়ার নয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে তথ্য দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশে বৈধভাবে কর্মরত আছেন ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি। এখন এটা অনুমেয় যে সংখ্যাটি দ্বিগুণের বেশি। এটা লক্ষণীয় যে সংসদে দেওয়া তথ্য গোয়েন্দাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছ থেকেই এসেছিল। তাঁদের জানা যে ৪৪টি দেশ থেকে আসা কর্মীরা অন্তত ৩৩ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ১৬ ক্যাটাগরিতে কাজ করেন। কিন্তু তখন সরকার এটুকু পর্যন্ত ইঙ্গিত দিতেও দুঃখজনকভাবে অপারগ ছিল, এ বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্বেগের বিষয় আছে। তারা কিছু একটা তদন্ত করে দেখছে। অথচ উদ্বেগ যে কতটা গভীর ও বিধ্বংসী, সেটা দৃশ্যত দেখিয়ে দিল টিআইবি।

এটা ইতিবাচক যে টিআইবির রিপোর্টগুলো সরকারি মহল যে নেতিবাচকতায় নাকচ করে, এবার অন্তত সেটা ঘটেনি। বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নির্দিষ্ট তথ্য পেলে তাঁরা যাচাই করে দেখবেন। বিশ্বজুড়ে অভিবাসন নীতি ও অভিবাসী শ্রমিকসংক্রান্ত বিষয়কে আর কেবলই অর্থনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখা হয় না। সাধারণভাবে একে জাতীয় নিরাপত্তাগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। টিআইবির হিসাবে, বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি কর্মীর প্রাক্কলিত ন্যূনতম সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। এর সঙ্গে সংসদে সরকারের দেওয়া তথ্যের গরমিল বিরাট। যে তথ্য একটি বেসরকারি সংস্থা তার সীমিত সামর্থ্য ও প্রবেশাধিকার নিয়ে উন্মোচন করতে পারল, সেটা যাচাই করে দেখতে আমরা আশা করব অহেতুক দীর্ঘ সময় নেওয়া হবে না।

দেশ থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স অবৈধভাবে পাচার হয়। সে কারণে কর ফাঁকির যে ঘটনা ঘটে, তাতে বছরে ন্যূনতম প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিবার বাজেট এলে করের সীমা ও নতুন করক্ষেত্র বের করতে গলদঘর্ম থাকে। কিন্তু তারা কখনো এ বিষয়ে সামান্য ইঙ্গিত করেছে বলেও আমরা স্মরণ করতে পারি না।

আমরা আশা করব, বাংলাদেশে বিদেশি কর্মী নিয়োগে অবিলম্বে একটি সমন্বিত ও কার্যকর কৌশলগত নীতিমালা এবং বিদেশি কর্মী নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব দিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এসব ব্যবস্থা শিথিল থাকার কারণেই বিদেশি কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা ও অবৈধভাবে পাচারকৃত রেমিট্যান্সের পরিমাণ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায় না।

আইন যে সবার জন্য সমান, তার প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে দিতে হবে।