২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

যশোরে মধু ও সরিষা উৎপাদন

যশোর অঞ্চলের ছয় জেলায় ব্যাপকভাবে মধু ও সরিষা উৎপাদনের খবরটি নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া ও উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী। শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে এ বছর ৫১ হাজার ৫৭১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এসব জমির পাশে গত বুধবার পর্যন্ত ৭৪০টি মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। বাক্সে থাকা মৌমাছি সরিষা ফুলে উড়ে উড়ে মধু সংগ্রহ করছে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন কৃষক। সমন্বিত এই চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। গত বছরও এ ছয় জেলায় ৪৪ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। এসব জমির পাশে ২ হাজার ৮৭৬টি মৌ চাষের বাক্স বসানো হয়। এসব বাক্স থেকে ২২ হাজার ৭৮৭ কেজি মধু উৎপাদিত হয়।

এভাবে যদি সারা দেশে মধু ও সরিষার উৎপাদন হয়, তাহলে এ দুটি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে, এ কথা জোর দিয়ে বলাই যায়। এ জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ থাকাটা খুবই জরুরি। কিন্তু দেখা গেছে, এ ব্যাপারে সরকারের খুব একটা নজর নেই। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এ বছরই প্রথম সরকারিভাবে যশোরে মাত্র ৮০ জন কৃষককে ৮০টি মৌ বাক্স ও মধু সংগ্রহের সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। এ সংখ্যা খুবই কম। সম্ভাবনাময় এই খাতের দিকে সরকারের নজর আরও বাড়াতে হবে।

কৃষি ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের এক গবেষণা অনুযায়ী, উদ্ভিদের পরাগায়নে মৌমাছির গুরুত্ব অপরিসীম। মৌমাছির মাধ্যমে বাক্স পদ্ধতিতে মধু আহরণ করে কৃষি খাতে উৎপাদন ১০ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের কৃষকের ধারণা স্পষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে কৃষকের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে এবং এ ব্যাপারে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশে এখন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। তার মাত্র ১০ শতাংশ থেকে এখন মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২০ হাজার হেক্টর জমিতে কালিজিরা, ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধনে, ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তিল চাষ হচ্ছে। পুরো সেক্টরটিকে মধু আহরণের আওতায় আনতে পারলে এসব ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি হবে।

সরকারকে মৌ চাষের উপকারিতা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে অনেক বেশি মানুষ মৌ চাষে উৎসাহিত হয়। এর ফলে দেশে মধু উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। এতে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আরও জোরদার হবে এবং কৃষি অর্থনীতিতে নতুন লাভজনক খাত তৈরি হবে।