জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির চোখে বাংলাদেশ - ৪

>

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে (ক্যাট) বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় গত ৩০ ও ৩১ জুলাই। সেখানে গুম, আটক, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ তোলে কমিটি এবং এর জবাব দেয় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এরপর ৯ আগস্ট নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং সঙ্গে বিভিন্ন সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিটি। সেই প্রতিবেদনের ১ম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। এখানে থাকছে ৪র্থ পর্ব। ২য়৩য় পর্ব লিংকে।

শরণার্থী ও নন-রিফাউলমেন্ট
বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়ে নন-রিফাউলমেন্ট (নির্যাতনের ঝুঁকি থাকলে স্বদেশে ফেরতের জন্য চাপ না দেওয়া) নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোয় কমিটি দেশটিকে প্রশংসা করে। বাংলাদেশ স্বীকার করেছে যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠালে তাদের নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কমিটি একই সঙ্গে এ বিষয়ে হতাশ যে রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকটি বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করেনি। এর মধ্যে রয়েছে আইনি বিধিবিধানের মধ্যে অথবা কোন কোন দেশে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে চাওয়া তথ্যের মধ্যে নন-রিফাউলমেন্ট নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বিভিন্ন প্রচেষ্টা এবং নির্যাতন ও মন্দ আচরণের মুখে পড়তে পারে এমন কোনো অবস্থার মধ্যে কোনো ব্যক্তিকে ফেরত না পাঠানোর নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ (আর্টিকেল ২, ৪, ১০, ১১, ১৪ ও ১৬)।

রাষ্ট্রপক্ষকে যা যা করতে হবে
ক. বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে নন-রিফাউলমেন্ট নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো অব্যাহত রাখা;

খ. আশ্রয়প্রার্থী বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও নিয়মকানুনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে নিবিড় আইন প্রণয়ন করা। [নির্যাতনবিরোধী] সনদের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে সেই আইন করতে হবে;

গ. একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা, যার মাধ্যমে কেউ যদি এমন উদ্বেগ তুলে ধরে যে তাকে রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশে ফেরত পাঠালে প্রকৃতপক্ষেই নির্যাতন ও মন্দ আচরণের মুখোমুখি হতে হবে, তাহলে তিনি বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারবেন। এর ভিত্তিতে তিনি সেটা করতে পারবেন যে অন্য দেশে ফেরত পাঠালে তা হবে সনদের অধীনে বাংলাদেশের নন-রিফাউলমেন্ট নীতির বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন;

ঘ. নন-রিফাউলমেন্ট নীতির ওপরে রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রশিক্ষণ প্রদান;

ঙ. নির্যাতন ও মন্দ আচরণের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সবাইকে (যারা নাগরিক নয়, তাদেরও) শনাক্ত করা এবং প্রতিকার দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক সেবায় যথোপযুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা;

চ. শরণার্থীদের মর্যাদাসংক্রান্ত ১৯৫১ সালের সনদ ও তার ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা;

ছ. নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের যেসব ক্ষেত্রে এখতিয়ার আছে, সেসব ক্ষেত্রে চলমান তদন্তে কৌঁসুলিদের সহযোগিতা করা।

প্রতিকার ও পুনর্বাসন
কমিটি খুবই উদ্বিগ্ন যে নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার ব্যক্তিদের প্রতিকার দেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে এবং বাস্তবে রাষ্ট্রপক্ষ খুব সামান্যই প্রতিকার দিয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর এসেছে। কমিটি এ বিষয়েও উদ্বিগ্ন যে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (রোধ) আইন ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা খুব সামান্যই। এটি কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে না এবং বাস্তবে এই আইনের আওতায় কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। কারণ, আজ পর্যন্ত ওই আইনের আওতায় কোনো রায় হয়নি। প্রতিনিধি দলটি বলেছে যে ওই আইনে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের যে পরিমাণের কথা বলা আছে, তা বৃদ্ধি করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। কমিটি এই বিবৃতির প্রশংসা করে। তবে কমিটি এ বিষয়েও উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ এখনো সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুমোদন করেনি। (আর্টিকেল ১৪)।

রাষ্ট্রপক্ষকে যা যা করতে হবে
ক. নির্যাতনের শিকার সবাইকে প্রতিকার পাওয়া এবং ন্যায্য ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে প্রয়োগযোগ্য অধিকার নিশ্চিত করা। এর মধ্যে থাকবে যতটা সম্ভব পুনর্বাসিত করার সব উপায় নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে কমিটি সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সাধারণ মন্তব্য নম্বর ৩ (২০১২)-এর প্রতি রাষ্ট্রপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে;

খ. দেশের ভূখণ্ডে থাকা শরণার্থী বাসিন্দাসহ রাষ্ট্রপক্ষের অধীনে থাকা নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার সবাই যেন দ্রুততার সঙ্গে উপযুক্ত মানসিক সেবা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবায় প্রবেশাধিকার পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। এটিও নিশ্চিত করা যে এসব সেবায় প্রবেশাধিকার যেন নির্যাতনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের বা দোষী ব্যক্তিদের সাজা হওয়ার ওপর শর্তসাপেক্ষ না হয়।

গ. অপরাধের গুরুতর অবস্থার বিষয় স্বীকার করা এবং নির্যাতন ও মন্দ আচরণের শিকার ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (রোধ) আইনে সংশোধনী আনা;

ঘ. সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি তুলে নেওয়া।

আইনে শারীরিক শাস্তি
কমিটি লক্ষ করেছে যে সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক, অথবা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণের মুখোমুখি করা যাবে না।’ এরপরও কমিটি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে দেশের বিভিন্ন আইনে বেত্রাঘাতকে শাস্তি হিসেবে ব্যবহারের, পায়ে বেড়ি পরানোর অনুমতি রয়েছে। সংবিধানের ৩৫(৬) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে এখানে বর্ণিত বিধিনিষেধ আইনগতভাবে প্রণীত কোনো শাস্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। (আর্টিকেল ১, ২, ৪, ১১ ও ১৬)।

সর্বস্তরের সব ধরনের দৈহিক শাস্তি নিশ্চিহ্ন করতে এবং সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করতে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এগুলো নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক, অথবা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণের সমতুল্য, যা সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপক্ষকে ১৮৯৪ সালের কারা আইনে সংশোধনী আনতে হবে।

শিশুদের শারীরিক শাস্তি
কমিটি খেয়াল করেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের সব ধরনের দৈহিক শাস্তি প্রদান বন্ধ করতে ২০১০ সালে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আর ২০১১ সালে হাইকোর্ট ঘোষণা করেছেন, বিদ্যালয়গুলোতে বেত্রাঘাত, মারধর, শিকল দিয়ে বাঁধা ও আটকে রাখাসহ সব ধরনের দৈহিক শাস্তি ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ এবং তা একধরনের মন্দ আচরণ। কমিটি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বস্তরে দৈহিক শাস্তিকে নিষিদ্ধ করেনি। এ ধরনের ঘটনা বৃহত্তর পরিসরে ঘটতেই আছে, যার মধ্যে বিদ্যালয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত। (আর্টিকেল ১ ও ১৬)।

রাষ্ট্রপক্ষকে যা যা করতে হবে
ক. শিশু আইন, দণ্ডবিধি ও অন্যান্য জাতীয় আইনে অতিরিক্ত সংশোধনী আনা, যাতে সর্বস্তরে দৈহিক শাস্তি বৃহত্তরভাবে ও সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা যায়;

খ. বিদ্যালয়সহ সবখানে দৈহিক শাস্তি প্রতিরোধ করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব শিক্ষক এখনো দৈহিক শাস্তি প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া;

গ. দৈহিক শাস্তির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন ধরনের জন-অবহিতকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করা; এবং দৈহিক শাস্তির বিপরীতে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেসব অহিংস পন্থা রয়েছে, সেগুলো গ্রহণের জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।

মৃত্যুদণ্ড
কমিটি অগণিত রায়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন, যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিনিধিদলটি বর্ণনা করেছে যে তারা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ যেসব শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, সেদিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছে। অবশ্য, প্রতিনিধিদলটি উল্লেখ করেছে যে ২০১৩-২০১৭ মেয়াদে যদিও ১ হাজার ১১৯টি মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে, পরে হাইকোর্টে ‘মাত্র’ ১৩০টি ঘটনায় ওই রায় বহাল রাখা হয়েছে। আর ২৩৯টি ঘটনায় সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে সব মিলিয়ে ১৭টি মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে। কমিটি এসব কারণে উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের রায় যে বিপুলসংখ্যক বন্দী পেয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়; এ ধরনের বন্দীদের কারাগারে খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রাখা হয়। এ ছাড়া কমিটির কাছে খবর রয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, এমন অপরাধের তালিকা আরও সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে। যেমন ২০১৮ সালের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে বিষয়টি যুক্ত করার খবর রয়েছে (আর্টিকেল ২, ১১ ও ১৬)।

মৃত্যুদণ্ড মুলতবি রাখার জন্য একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। রাষ্ট্রপক্ষকে মৃত্যুদণ্ডের সব রায়ের বিপরীতে অন্য ধরনের শাস্তি দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে; মৃত্যুদণ্ডের রায় পাওয়া বন্দীদের কারাগারে থাকার জায়গার অবস্থার উন্নতি করতে হবে; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সংশ্লিষ্ট অন্য যেসব আইনে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হতে পারে, সেগুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাধ্যবাধকতার আলোকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে হবে। আর মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করার লক্ষ্যে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের দ্বিতীয় ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুসমর্থন করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

ফলোআপ প্রক্রিয়া
কমিটি হাইকোর্টের বিভিন্ন নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিষয়ে কমিটির বিভিন্ন সুপারিশের ফলোআপ তথ্য ২০২০ সালের ৯ আগস্টের মধ্যে প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি অনুরোধ করছে। রাষ্ট্রপক্ষকে একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যেসব স্থানে নাগরিক স্বাধীনতাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সেসব স্থানে নজরদারি করাতে হবে; বিধিবহির্ভূতভাবে আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে; এবং রাষ্ট্রপক্ষের প্রাথমিক প্রতিবেদন বিবেচনায় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের যেসব সদস্য কমিটিকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের যেকোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক আচরণ ও হয়রানি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, যার প্রতিশ্রুতি কমিটিকে দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় (ধারা ২২(খ), ১৬(ঙ), ৩৫(ক) ও ৩১(ঘ) দেখুন)। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপক্ষকে আসন্ন রিপোর্টিং সময়কালের মধ্যেই চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের ওপর কিছু অথবা অবশিষ্ট সব সুপারিশের বিষয়ে তাদের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কমিটিকে অবগত করানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

অন্যান্য বিষয়
সনদের ২১ ও ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় নির্ধারিত বিষয়গুলোর ঘোষণা দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছে কমিটি। সনদের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের থাকা আপত্তি প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কমিটি সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুসমর্থন করতে এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট অন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব চুক্তিতে এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সেগুলো অনুসমর্থন করতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে গুম থেকে সবাইকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থন করতে হবে।

কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ করছে যে রাষ্ট্রপক্ষ বিশেষ প্রক্রিয়ার ম্যান্ডেটধারী যে নয়জন পরিদর্শনের অনুমতির জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন, তাঁদের প্রবেশাধিকারের অনুমতি দেবে। এবং বিলম্ব ছাড়াই জাতিসংঘের নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তিবিষয়ক বিশেষ দূতকে; বিচারবহির্ভূত বা বিধিবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডবিষয়ক বিশেষ দূতকে; বিধিবহির্ভূত আটকবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপকে; গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপকে; এবং মানবাধিকারের রক্ষকদের পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ দূতকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

 রাষ্ট্রপক্ষ কমিটিকে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি বৃহত্তরভাবে প্রচারের জন্য এবং চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ উপস্থাপনের অনুরোধ করা হচ্ছে। উপযুক্ত বিভিন্ন ভাষায়, দাপ্তরিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট, গণমাধ্যম ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে হবে এবং রাষ্ট্রপক্ষকে এই প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কমিটিকে অবগত করতে হবে।

আগামী ২০২৩ সালের ৯ আগস্টের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে তার পরবর্তী পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদন (যেটি হবে তাদের দ্বিতীয় প্রতিবেদন) জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে, আগামী ২০২০ সালের ৯ আগস্টের মধ্যে সেই প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে সহজতর রিপোর্টিং প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার জন্য সম্মত হতে আহ্বান জানাচ্ছে কমিটি। সেই প্রক্রিয়ার অধীনে কমিটি রিপোর্টিংয়ের আগেই বিভিন্ন ইস্যুর একটি তালিকা রাষ্ট্রপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে। ইস্যুর সেই তালিকার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের জবাবের বিষয়টি সনদের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হবে।

[অনুবাদ করেছেন আবু হুরাইরাহ্‌, হারুন–অর–রশীদ, রাজিউল হাসানঅর্ণব সান্যাল]