প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলায় চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম বিদেশে না গিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করে মাছ চাষে আগ্রহ দেখানোর কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। সারা দেশে মাছ চাষে এই জেলা তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসার পেছনে তাঁদের সক্রিয় ভূমিকা অবদান রেখেছে।
সরকারি নথিপত্র বলছে, কুমিল্লায় ৮৪ হাজার ৪১৮টি পুকুর, ১৩টি নদী, ২৪৫টি বিল, ৬৯টি প্লাবন ভূমি, ৪৬টি সরকারি-বেসরকারি হ্যাচারি,
৫০২টি মাছের খামার রয়েছে। নদী, পুকুর, খাল, বিল ও জলাশয়ের বাইরে আবাদি ধানি জমিতেও মাছের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় মাছের
চাহিদা ১ লাখ ৫ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আর উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ২০ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। অর্থাৎ বাড়তি উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৫ মেট্রিক টন।
অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, সব বয়সের মানুষ এই খাতে বিনিয়োগ করলেও ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদনের পেছনে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের
আগ্রহ বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। দেখা যায়, কয়েকজন তরুণ মিলে পুকুর ইজারা নেন। সেখানে তাঁরা সম্মিলিতভাবে মাছ চাষ করেন। এ ছাড়া মেঘনা নদীতে খাঁচা পদ্ধতিতেও তাঁরা মাছ চাষ করছেন। কুমিল্লার এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা বিদেশ থেকে ফিরে এসে মাছ চাষে নেমেছেন এবং বিদেশের চেয়ে অনেক বেশি রোজগার করছেন। এই সাফল্যের গল্পে বেকার তরুণেরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
কুমিল্লার মতো দেশের অন্য অঞ্চলেও শিক্ষিত তরুণেরা যাতে মাছের কিংবা শাকসবজির খামার গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন, সে জন্য সরকারের দিক থেকে উদ্দীপনামূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এমনিতে সরকারিভাবে সারা বছরই মাছ চাষ বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও সেবা দেওয়া হয়। তবে এই প্রশিক্ষণ আরও আধুনিক ও উন্নত করা দরকার। বিশেষত নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষে তরুণদের আরও আকৃষ্ট করা দরকার।
সরকারি উদ্যোগে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সারা দেশের জলাশয়-দিঘি থেকে শুরু করে ছোটখাটো পুকুর চিহ্নিত করে তার সবগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। ছোট ছোট পুকুরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চাষাবাদ করা যেতে পারে। আর বড় বড় সরকারি জলাশয়গুলোতে মাছ চাষের জন্য সমবায় বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।