অপরিকল্পিত নগরায়ণের অভিযোগ অতি পুরোনো। পরিকল্পনার অভাব এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। নতুন নতুন অবকাঠোমোগত সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্য যখন সমগ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য যোগ করা, তখন সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনার কোনো বিকল্প থাকে না। কিন্তু আমরা দেখি, সব সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় অর্থ থাকা সত্ত্বেও সুপরিকল্পনার অভাবে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রত্যাশিত সুফল জনগণ ভোগ করতে পারে না। কখনো কখনো নতুন অবকাঠামো নতুন অসুবিধা, এমনকি ঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে। গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়।
রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সড়কের ওপর ১৮টি বৈদ্যুতিক খুঁটি যানবাহন চলাচলে কেমন বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এগুলোর কারণে মহাসড়কের ওই এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগে থাকে। তা ছাড়া অতি উচ্চ ভোল্টেজের তার টানা বড় বড় এই খুঁটি স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ভীতিকর। ওই এলাকার বাসিন্দারা খুঁটিগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য দাবি জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি, এমনকি মানববন্ধনও করেছেন। সরকারের সড়ক বিভাগ এই বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারা সেগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি লিখেছে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ নানা অজুহাত দেখিয়ে সেগুলো সরানো থেকে বিরত রয়েছে বলে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন।
তবে পল্লী বিদ্যুতের সোনারগাঁ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক প্রথম আলোকে বলেছেন, মহাসড়কের ওপর যেসব বৈদ্যুতিক খুঁটি আছে, সেগুলো সরানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা আশা করি, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আর গড়িমসি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁটিগুলো সরিয়ে নেবে। এ প্রসঙ্গে আরও বলা প্রয়োজন, এই ১৮টি বৈদ্যুতিক খুঁটি সব সময়ই মহাসড়কের মাঝখানে ছিল না, ছিল পাশ ঘেঁষে। মহাসড়ক প্রশস্ত করার পর সেগুলো মাঝখানে পড়ে গেছে। কথা হলো যানজট নিরসনের উদ্দেশ্যে যখন মহাসড়ক প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখনই বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করা উচিত ছিল।
যানবাহন ও লোকজনের চলাচলের জন্য যেমন সড়ক–মহাসড়ক প্রয়োজন, তেমনি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন ও তার খুঁটি স্থাপনেরও কোনো বিকল্প নেই। তাই মহাসড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু করার আগেই পরিকল্পনা করা উচিত ছিল, সেগুলো সরিয়ে কোথায় স্থাপন করা হবে। এখানে স্পষ্টতই সড়ক বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল। অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির কাজে বিভিন্ন সেবা সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও কাজের সমন্বয়ের অভাবে যে বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, এটা তারই একটা দৃষ্টান্ত। সমন্বয়হীনতার এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।