হজের জন্য চাই প্রস্তুতি

হজ আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম হলো হজ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সমর্থ নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেই সব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘হজ মানুষকে নিষ্পাপ করে, যেভাবে লোহার ওপর হতে মরিচা দূর করা হয়।’ (তিরমিজি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘প্রকৃত হজের পুরস্কার বেহেশত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যারা হজ পালন করবে, আল্লাহ তাআলা তাদের হজ কবুল করবে এবং তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত রহমত ও বরকত।’ (বুখারি)।

প্রতিটি কাজ সুচারুরূপে সম্পাদনের প্রয়োজন পূর্বপ্রস্তুতি। হজ পালনের জন্যও চাই যথাযথ প্রস্তুতি। 

শারীরিক প্রস্তুতি
শারীরিক সক্ষমতা হজের জন্য শর্তরূপে নির্ধারিত। হজের সফরে বেশ অনেক দূর হাঁটতে হয়। বিশেষত কাবা শরিফ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ, জামারাতে পাথর মারা এবং মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় প্রচুর হাঁটা লাগে। মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে মসজিদে যাতায়াতেও কিছু হাঁটাহাঁটি করতে হয়। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে হৃদ্‌যন্ত্র, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। যাঁরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাঁরা চিকিত্সাপত্রসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখবেন।  সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ফোন নম্বরও সঙ্গে রাখবেন। 

আর্থিক প্রস্তুতি
হজের অর্থ অবশ্যই হালাল বা বৈধ হতে হবে। একজনের হজের ব্যয় অন্যজন বহন করতে পারেন। এতে হজ পালনকারীর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল যেকোনো প্রকারের হজ আদায় হবে। অর্থদাতা ও হজ সম্পাদনকারী উভয়েই পূর্ণ হজের পুণ্য লাভ করবেন। হক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক, অর্থাৎ দেনা-পাওনা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। হক্কুল ইবাদ তিনটি। যথা: মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান। কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করে থাকলে, কষ্ট দিয়ে থাকলে বা ক্ষতি করে থাকলে তার ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। কারও সম্পদহানি করলে, সম্পদ আত্মসাৎ করলে বা অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করলে প্রথমত তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং 

তাঁকে সন্তুষ্ট করে তাঁর কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের বা কোনো অংশীদারের হক বা পাওনা–দেনা থাকলে তা তাঁকে পরিশোধ করে বা বুঝিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হয়ে যেতে হবে। কোনো মানুষের ইজ্জত-সম্মান বিনষ্ট করে থাকলে তাঁর কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে দায়মুক্ত
হতে হবে।

অবৈধ সম্পদের ব্যয় ও ব্যবহার
ইসলামি বিধানে নিষিদ্ধ উপায়ে অর্জিত বা প্রাপ্ত সম্পদকে অবৈধ সম্পদ বলা হয়। যেমন: চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, লুট, চাঁদাবাজি, দখল, সুদ, ঘুষ, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের মালিকানা স্বীকৃত হয় না। এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে হবে। প্রকৃত মালিকের অবর্তমানে তাঁর ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের প্রদান করতে হবে। তা সম্ভব না হলে প্রকৃত মালিকের পক্ষ থেকে (তাঁর সওয়াবের নিয়তে) দান করে দিতে হবে। নিষিদ্ধ বা অবৈধ কাজের বিনিময়ে অর্জিত অর্থসম্পদ দান করে দিতে হবে। (অর্থনীতিবিষয়ক ওআইসি ফিকহ একাডেমি সম্মেলন-বাহরাইন, ১৭ শাওয়াল ১৪১৪, ২৯ মার্চ ১৯৯৪; জাকাত নির্দেশিকা, পৃষ্ঠা: ১২২-১২৩।) 

সুদের টাকার বিষয়ে করণীয়
যেহেতু ব্যক্তি এ অর্থসম্পদের প্রকৃত মালিক নন, তাই এ অর্থসম্পদ ব্যয়ে তিনি প্রথমত, সওয়াবের আশা যেমন করবেন না, দ্বিতীয়ত, দুনিয়াতেও যেন এর বিনিময়ে কোনো প্রাপ্তি না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। অর্থাৎ সে অবৈধ অর্থসম্পদ দান করার ক্ষেত্রে এই দ্বিতীয় প্রকার সুবিধা না পাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেখবেন কোন খাতটি অভাবী অসহায় মানুষের জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। সে খাতেই ব্যয় করবেন। 

ইবাদতের প্রস্তুতি
ইমানের পরেই প্রথম ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হকের মধ্যে প্রথমে নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। মক্কা শরিফে নামাজ আদায় করলে প্রতি রাকাতে এক লাখ রাকাতের সওয়াব এবং মদিনা শরিফে নামাজ আদায় করলে প্রতি রাকাতে ৫০ হাজার রাকাতের সওয়াব। সুতরাং নামাজের নিয়মকানুন, সুরা-কিরাত, দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি শুদ্ধভাবে শিখে নিতে হবে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com