চীনের প্রকল্প নিয়ে নতুন বছরে ভারত কেন উদ্বিগ্ন 

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের সম্পর্ক বেশ ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’। এরই মধ্যে চীনের একটি প্রকল্প নিয়ে ভারত কেন উদ্বিগ্ন, তা নিয়ে লিখেছেন শুভজিৎ বাগচী

অরুণাচল প্রদেশের নতুন জেলা কেয়ি পানিয়রের একটি পুরোনো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রঙ্গা নদী ও তার বাঁধ। অরুণাচলের বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে নদী রয়েছে, সেখানকার চেহারাটা কিছুটা এই রকম।

দুই বাংলাতেই যাকে অনেক সময়ই ‘মহাচীন’ বলে সম্বোধন করা হয়, তাকে নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। সম্পর্ক এই ভালো হয় তো পরক্ষণেই নতুন উদ্বেগের জন্ম হয়; নতুন বছরে যেমন হচ্ছে। অরুণাচলের মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক বিবৃতি ও ভারত সরকারের বক্তব্যে এই উদ্বেগ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে।

অরুণাচল প্রদেশের উত্তরে রয়েছে আপার সিয়াং জেলা। এই জেলার ঠিক ওপরে স্বশাসিত তিব্বতের দক্ষিণে রয়েছে মেডগ কাউন্টি। এই কাউন্টিতে খরস্রোতা ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপরে চীন বানাতে চলেছে ১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎচালিত বাঁধ। মনে করা হচ্ছে, এটি শুধু বিশ্বের বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই নয়, সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে প্রকল্প নির্মাণের ঘোষণা করে চীন জানিয়েছে, ভাটির (লোয়ার রাইপেরিয়ান) দেশের সঙ্গে পানিপ্রবাহ নিয়ে বেইজিং কথা বলবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিংয়ের কথায়, ‘যোগাযোগের যে বিদ্যমান ব্যবস্থা আছে, তার মাধ্যমে চীন ভাটির দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে এবং নদীর তীরে জনগণের সুবিধার জন্য দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রাণসহায়তা বাড়াবে।’ এই ভাটির দেশ বলতে প্রধানত ভারত ও বাংলাদেশকে বোঝায়। নাম না করে এদের আশ্বস্ত করে নিং বলেছেন, প্রকল্প ভাটির দেশকে প্রভাবিত করবে না।

আরও পড়ুন
  • ২০২০ সালে ভারত ও চীনের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কিছু সেনার মৃত্যুর পরেও দিল্লি–বেইজিং কথাবার্তা চালিয়ে গেছে।

  • উজানে পানির ওপর চীনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলেও চীনের সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের কোনো আনুষ্ঠানিক পানিবণ্টন চুক্তি নেই। 

  • এলাকাবাসীকে অন্ধকারে রেখে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করতে চাইছে সরকার।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

২০২০ সালে ভারত ও চীনের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কিছু সেনার মৃত্যুর পরেও দিল্লি–বেইজিং কথাবার্তা চালিয়ে গেছে। এর ফলে ২০২৪ সালে ভারত ও চীনের সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। গত বছরে ভারত দ্বিপক্ষীয়ভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে চীনের সঙ্গে; ১১৮ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র চলে গেছে দ্বিতীয় স্থানে। গত বছরের শেষের দিকে দুই দেশই জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত নিয়ে তাদের মধ্যে চলা দীর্ঘদিনের বিবাদ মেটাতে তারা একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছে। এ ধরনের বিবৃতি তারা অতীতে দেয়নি।

এই অবস্থায় সীমান্তের খুব কাছে এ ধরনের বিশাল অবকাঠামো ভারতকে নতুন করে উদ্বেগে ফেলেছে। ৩ জানুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে ভারত অবগত। এরপরে তিনি বলেন, ‘ভাটির দেশ হিসেবে নদীর জলের ওপরে আমাদের অধিকার রয়েছে। বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত সত্য। তাদের ভূখণ্ডের নদীগুলোতে বৃহৎ প্রকল্পের বিষয়ে চীনের কাছে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের পাশাপাশি কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে আমরা মতামত ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। উজানে ব্রহ্মপুত্রের ভাটির রাজ্যগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।’

কেন পরিস্থিতি ভারতের অনুকূলে নয়

চীন ও ভারতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ব্যাপারে মোটামুটি একটা ঐকমত্য রয়েছে, যে কারণে সীমান্তে দুই পক্ষের সেনাসদস্য মারা গেলেও কেউই পরস্পরের বিরুদ্ধে একটি গুলিও ছোড়ে না। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীন সরাসরি ভারতের সঙ্গে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে বলে মনে করেন ভারত সরকারের অধীন কিন্তু স্বশাসিত মনোহর পারিক্কার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো ও পানি-কূটনীতিবিশেষজ্ঞ উত্তম সিনহা।

চীনের প্রকল্প নিয়ে উত্তম সিনহা প্রথম আলোকে বলেন, ভারত মধ্যবর্তী নদীর (মিডল রাইপেরিয়ান) দেশ। তার ওপরের দেশ চীন এবং তার ভাটিতে (লোয়ার রাইপেরিয়ান) রয়েছে বাংলাদেশ। চীনের বিষয়ে যেমন ভারতের উদ্বেগ রয়েছে, তেমনি ভারতের দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ভাগ করার প্রশ্নে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সমস্যা হলো, উজানে তার পানির ওপরে চীনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলেও, চীনের সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের কোনো আনুষ্ঠানিক পানিবণ্টন চুক্তি নেই। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের কয়েকটি পানি চুক্তি রয়েছে। এর ফলে ভারতের সমস্যাটা কমছে না, বাড়ছে।

উত্তম সিনহা আরও বলেন, চীনের জন্য তিব্বতের মালভূমি থেকে উৎপন্ন অনেক নদীর মতোই ইয়ারলুং একটি নদী। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে পানি ধরে রাখা বা খাদ্য উৎপাদন থেকে প্রভূত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রশ্নে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ইয়ারলুংয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। চীনের সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) স্পষ্টভাবে (নদী থেকে উদ্ভূত) অর্থনৈতিক ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের ওপরে জোর দেয়।

ভারত কী করতে পারে

প্রথমত, ভারতের ‘চায়না-ফোবিয়া’ থেকে বেরোনো প্রয়োজন বলে মনে করেন উত্তম সিনহা। তাঁর মতে, ভারতের মনে রাখা দরকার, পানির নিম্নধারার দেশ হিসেবে তার একটা নির্দিষ্ট ও সংজ্ঞায়িত ভূমিকা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সবচেয়ে আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতকে তার সামর্থ্য ও ক্ষমতা বাড়াতে হবে। চীনের নদীগুলোর প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও যাচাইকরণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা নিশ্চিতভাবে জরুরি। দ্বিতীয়ত, জল ধরে রাখার পর্যাপ্ত অবকাঠামো, বাঁধ দেওয়া থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রশমন এবং অভ্যন্তরীণভাবে জলের খাত পরিচালনার জন্য একটি সার্বিক নকশা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা করতে হবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। 

উত্তম সিনহা বলেন, কূটনৈতিক ফ্রন্টে চীনের সঙ্গে পানির বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। চীন কী করতে পারে বা না পারে, সে সম্পর্কে অনুমানের ভিত্তিতে নীরবতা বজায় রেখে গেলে শুধু ভুল তথ্য পরিবেশিত হবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের স্তরেও পানি নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। চীন যে বাঁধ নির্মাণ করছে, তাতে ভারতীয় প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের বাঁধের স্থল পরিদর্শনের বিষয়টি সমঝোতায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সিন্ধু চুক্তির অংশ হিসেবে, ভারত পাকিস্তানকে তার বাঁধের জায়গাগুলো পরিদর্শন করতে দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেও একটি যৌথ নদী কমিশন রয়েছে।

বন্যার সময় ব্রহ্মপুত্রে জলবিদ্যুৎ–সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের (২০০২) সমঝোতা পর্যালোচনা করার পাশাপাশি চীনের ‘সুপার ড্যাম’ নিয়ে যে উদ্বেগ ভারতের রয়েছে, সে সম্পর্কেও তাদের অবগত করা দরকার বলে মনে করেন সিনহা। অবিভক্ত নদী নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

পানিসম্পদবিশেষজ্ঞ উত্তম সিনহার বক্তব্য হলো, যেহেতু প্রতিযোগী শক্তিগুলো সহজাতভাবে একটা ‘কাউন্টার ওয়েট’ বা নিজেদের দিক থেকে পাল্টা ভারসাম্যের কথা চিন্তা করে, তাই ভারত চীনের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় কথাবার্তার সূচনা করতে পারে। ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে বহু অববাহিকাকেন্দ্রিক (মাল্টি বেসিন) চুক্তির কথাও ভবিষ্যতে বিবেচনা করতে পারে।

অরুণাচল প্রদেশের চিত্র

ইয়ারলুং ভারতে ঢুকেছে উত্তর অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং নদী দিয়ে। অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু, উপমুখ্যমন্ত্রী চাওনা মেয়েনসহ সব মন্ত্রীর বক্তব্য, আপার সিয়াং ও সিয়াং জেলার মধ্যে ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বানাতে হবে, চীনের ৬০ হাজার মেগাওয়াটের প্রকল্প ঠেকাতে। এই নিয়েই বিরোধ শুরু হয়েছে অরুণাচলের প্রত্যন্ত গ্রাম-গ্রামান্তরে।

অরুণাচল প্রদেশের প্রধান সংবাদপত্র অরুণাচল টাইমস সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। দেখা যাচ্ছে, আপার সিয়াংয়ের গ্রামে সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকায় আঘাত করছেন। ভিডিও চিত্রে এক সাংবাদিককে বলতেও শোনা যায়, ‘রাজ্য সরকার সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করে প্রকল্পের কাজ এগোতে চেষ্টা করবে বলে মানুষ মনে করছেন। তাঁরা নানা প্রতিবাদের পরিকল্পনা করছেন এবং সম্প্রদায়গত লৌকিক উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিবাদ সংঘটিত করার কথা ভাবছেন।’ 

অরুণাচলের প্রধান জাতিগোষ্ঠী তানি। তার অধীনে পাঁচটি সম্প্রদায় রয়েছে—নিশি, আদি, গালো, তাগিন ও আপাতানি। এর মধ্যে আপার সিয়াংয়ে প্রধানত আদিবাসীরা বসবাস করলেও, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। অরুণাচলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশবিদ, বাঁধবিরোধী অ্যাকটিভিস্ট, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী ইবো মিলি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধ বানানোর বিষয়টা অরুণাচলে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। গোটা মন্ত্রিসভা এই বাঁধ নির্মাণকে সমর্থন করছে; কারণ, তারা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকারী সংস্থার কার্যত মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। এখন চীনের এই ঘোষণা এসেছে। তারা বলছে, সিয়াং নদী বাঁচাতে আরও বড় বাঁধ প্রয়োজন।’

মিলির মতে, চীনের বাঁধের ফলে অরুণাচল বিরাট বিপদে পড়বে, এই ধারণা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, সিয়াংয়ের জলের সবটা ইয়ারলুং থেকে আসছে না। মোটামুটিভাবে ৩০ শতাংশ জল ইয়ারলুং থেকে আসছে, আর বাকিটা (৭০ শতাংশ) আসছে ভারতের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে। ইবো মিলির দ্বিতীয় যুক্তি, চীনে যেখানে বাঁধ হচ্ছে, তার ভাটিতে চীনের ভেতরেই রয়েছে অসংখ্য গ্রাম। জল অরুণাচলে প্রবেশের আগে চীনের ভেতরের গ্রাম ভাসিয়ে দেবে।

এই বাঁধ নিশ্চিতভাবে অনেক মানুষকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করবে, চাষের ক্ষতি করবে এবং অরণ্য অঞ্চলকে প্লাবিত করবে বলে মনে করছেন ইবো মিলির মতো অন্য আরও অনেক পরিবেশবিদ। মিলির বক্তব্য, ‘অতীতে এক হাজারের বেশি বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছিল অরুণাচল সরকার। পরবর্তী সময়ে সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। ২০২৩ সালে ১৩টি বড় বাঁধ নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন এলাকাবাসীকে অন্ধকারে রেখে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করতে চাইছে সরকার।’

অরুণাচল সরকারের বক্তব্য

পেমা খান্ডু, চাওনা মেয়েনসহ প্রায় গোটা মন্ত্রিসভা বাঁধ নির্মাণের পক্ষে একাধিক যুক্তি দিয়েছেন। ১০ জানুয়ারি অরুণাচলের পর্যটনমন্ত্রী ওজিং তাসিং বলেছেন, বাঁধ নির্মাণ না হলে চীন অরুণাচলকে বিরাট বিপদে ফেলবে। চীনের প্রকল্পের প্রভাব শুধু অরুণাচলে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা পশ্চিমবঙ্গকেও বিপদে ফেলবে বলে মন্তব্য করেন তাসিং। চাওনা মেয়েন বলেছিলেন, পাঁচ বছর ধরে মানুষকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে ভারতের নিরাপত্তার জন্য সিয়াংয়ের ওপরে এই বাঁধ কতটা জরুরি। তবে তিনি এ–ও বলেন যে বাঁধ নিয়ে সমীক্ষা জরুরি। 

শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী খান্ডু একই সঙ্গে দুটি কথাই বলেন। একদিকে তিনি বলেন, মানুষ না চাইলে সিয়াং প্রকল্প হবে না, আবার এ–ও বলেন যে সমাজকর্মীরা (অ্যাকটিভিস্ট) প্রকল্প সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এরই মধ্যে আরও একটি বিষয় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ইউনাইটেড তানি আর্মি (ইউটিএ) নামে একটি সংগঠন প্রকাশ্যে এসেছে বলে দাবি করছে অরুণাচল পুলিশ। চীনের সঙ্গে অরুণাচলের প্রায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার সীমান্ত থাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। ভারতের প্রচারমাধ্যম অবশ্য ইতিমধ্যে বিষয়টিকে একটা বড় ধরনের ‘জঙ্গি তৎপরতা’ বলে চিহ্নিত করেছে। 

ধারণা করা হচ্ছে, বিষয়টি তেমন বড় কিছু নয় এবং বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে ইউটিএর কোনো সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও অরুণাচলের মতো রাজ্যে, যেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো সশস্ত্র আন্দোলনের কোনো উল্লেখযোগ্য ইতিহাস নেই, সেখানে এই ধরনের সংগঠনের বিবৃতি কিছুটা হলেও চিন্তায় রাখছে প্রশাসনকে। সব মিলিয়ে সার্বিকভাবে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, নতুন বছরের গোড়ায় নতুন এই ইস্যু নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন ভারত।

শুভজিৎ বাগচী প্রথম আলোর কলকাতা সংবাদদাতা