উচ্চ মূল্যস্ফীতি+নিম্ন প্রবৃদ্ধি+উচ্চ বেকারত্ব: কোন পথে অর্থনীতি?

দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা চলছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা এখন প্রকাশ্যেই তাঁদের হতাশার কথা বলছেন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন শওকত হোসেন

অর্থনীতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ বলতে একটি কথা আছে। মূল্যস্ফীতি (ইনফ্লেশন) ও স্থবিরতা (স্ট্যাগন্যান্ট)—এই দুটি শব্দকে এক করে বলা হয় স্ট্যাগফ্লেশন কথাটি। এর জনক ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। যুক্তরাজ্যের টোরি দলের (বর্তমান কনজারভেটিভ পার্টি) সদস্য ইয়াইন ম্যাকলাওড ১৯৬৫ সালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বর্ণনা করে স্ট্যাগফ্লেশন কথাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। 

হাউস অব কমন্সে ইয়াইন ম্যাকলাওড বলেছিলেন, ‘আমরা এখন দুটি বিষয়েই সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি—এমন নয় যে একদিকে কেবল মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে অথবা অর্থনীতি স্থবির হয়ে আছে। আসলে দুটিই একসঙ্গে ঘটছে। ফলে বলা যায়, আমরা স্ট্যাগফ্লেশনের মধ্যে আছি।’ 

ইয়াইন ম্যাকলাওড পরে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৭০ দশকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে তাঁর এই কথাটাই অর্থনীতির পরিভাষায় পুরোপুরি ঢুকে যায়। 

সহজ ভাষায় বলা যায়, স্ট্যাগফ্লেশন হচ্ছে এমন এক অর্থনীতি, যেখানে নিম্ন প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ বেকারত্ব একই সঙ্গে বিরাজ করে। বহু বছর পরে, ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পরে বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট দেখা দিলে আবারও আলোচনায় আসে স্ট্যাগফ্লেশন কথাটি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি বের হতে পারলেও বাংলাদেশ কি স্ট্যাগফ্লেশনের ঝুঁকির মধ্যে আছে? তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই সে রকমই। 

  • বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২২ সাল থেকে। 

  • একদিকে বিনিয়োগ বাড়ছে না বলে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না, অন্যদিকে অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হওয়ায় কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছেন অসংখ্য শ্রমিক।

  • শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি লিখিতভাবে অর্থনীতি স্থিতিশীল করার পরিকল্পনাসহ সাত দফা সুপারিশ করেছিল। কমিটির কোনো সুপারিশই আমলে নেওয়া হয়নি। 

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি ‘উত্তরাধিকার’ সূত্রেই পেয়েছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২২ সাল থেকে। সে সময় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিলেও বাংলাদেশ করেছিল উল্টোটা। সুদের হার নিয়ে নয়–ছয় অব্যাহত ছিল, জ্বালানি তেলের দর একবারেই বাড়ানো হয়েছিল ৫১ শতাংশ, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া অব্যাহত রাখে, বাজারেও ছিল না কার্যকর কোনো নজরদারি, বিপর্যস্ত হয় সরবরাহব্যবস্থা, ছিল প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। বলা যায়, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের একের পর এক ভুল নীতির ফলই হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট যখন দায়িত্ব নেয়, তখন দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এরপর পাঁচ মাসের বেশি সময় চলে গেছে। সেই মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে হয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সময়টা শীতকালীন শাকসবজির, এর প্রভাব আছে। তবে আমনের এই ভরা মৌসুমেও কমেনি চালের দাম। 

এর মধ্যে আবার সরকার শতাধিক পণ্যের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এতেও জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়বে বলেই আশঙ্কা। চালের দাম ও ভ্যাটের এই যৌথ প্রভাবের কারণে সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে, ‘ভ্যাটে-ভাতে বাঙালি’। সুতরাং আপাতত উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে রেহাই নেই বলে মনে হচ্ছে। 

আরও পড়ুন

বিনিয়োগ মন্দা ও উচ্চ বেকারত্ব

কোভিডের আগের এক যুগে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। সে সময়েও বেসরকারি বিনিয়োগের হার প্রায় এক জায়গাতেই আটকে ছিল। যেমন ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বেসরকারি বিনিয়োগের অংশ ছিল ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা মাত্র ১ শতাংশ বেড়ে হয় ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। এই পুরো সময়টা ছিল কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির বড় উদাহরণ। বড় প্রকল্প আর সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে উন্নয়নের একটি বয়ান সরকার তৈরি করলেও এ সময়ে আয়বৈষম্য বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সবচেয়ে দুরবস্থা সেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির এই হার গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। 

ব্যাংকগুলো একদিকে যেমন অর্থসংকটে ঋণ দিতে পারছে না, অন্যদিকে আস্থার অভাবে বেসরকারি খাতও অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে আছে। ফলে বিনিয়োগও বাড়ছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যে নিট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭১ শতাংশ কম। দেখা যাচ্ছে, এক প্রান্তিকে আসা এই এফডিআই গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

বিনিয়োগ মন্দার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আমদানিতে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিনিয়োগের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ পুঁজি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ। আরও খারাপ চিত্র নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মধ্যবর্তী ও মূলধনি পণ্যে নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমার অর্থই হচ্ছে দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে কম। তবে তুলাসহ বস্ত্র খাত–সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বেড়েছে। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে পোশাক রপ্তানিতে। কেবল বেসরকারি বিনিয়োগই নয়, কমে গেছে সরকারি বিনিয়োগও। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের হার গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

একদিকে বিনিয়োগ বাড়ছে না বলে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না, অন্যদিকে অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হওয়ায় কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছেন অসংখ্য শ্রমিক। অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হওয়ায় ঠিক কত শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে মনে করা হচ্ছে, এই সংখ্যা হবে ৫০ হাজারের বেশি। এতেও শিল্প খাতে অস্থিরতা বাড়ছে। এর মধ্যে আবার শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এটি কার্যকর হলে বিনিয়োগ আরও কমবে, বাড়বে উৎপাদন ব্যয়। 

এমনিতেই দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। এখন আবার কাজ হারাচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকেরাও। দেশে প্রতিবছর কত মানুষ কাজ পান, তার কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানও নেই। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছে, কাজ না পাওয়া ও হারানো মানুষের সংখ্যাই বেশি। অর্থাৎ স্ট্যাগফ্লেশনের দ্বিতীয় শর্তও পূরণ হয়ে যাচ্ছে। 

আরও পড়ুন

নিম্ন প্রবৃদ্ধির আশঙ্কায়

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসেই মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল কম। অর্থাৎ টানা তিন বছর দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না। এতে বাড়ছে না প্রকৃত আয়। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে। 

বিবিএস এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সময়ের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছে মাত্র ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ। মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতির কারণে প্রবৃদ্ধি কমেছে। বিশ্বব্যাংক গত ১৭ জুন ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ (বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা) প্রকাশ করে বলেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগের পূর্বাভাস ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বাজেটের প্রাক্কলন ছিল প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। 

দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা চলছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা এখন প্রকাশ্যেই তাঁদের হতাশার কথা বলছেন। সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের মধ্যে আস্থাপূর্ণ তেমন কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও নষ্ট করে দিচ্ছে। 

অবশ্য অর্থনীতিতে কোনো ভালো খবর নেই তা নয়। সুখবর আছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের ক্ষেত্রে। রিজার্ভের অব্যাহত ধস ঠেকানো গেছে। প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৬ শতাংশ এবং রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের বেশি। বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, শেখ পরিবারসহ ১১টি বড় প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ এবং তা সহজ হবে না বলেই সরকারি সূত্রগুলো বলছে। 

বাজেটের পর্যালোচনা নেই

চলতি অর্থবছরের বাজেট দিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। বাজেট পাসের এক মাস আট দিন পরে ক্ষমতায় আসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এই বাজেটের অনেক কিছুই আর অনুসরণ করা হচ্ছে না। বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি শ্লথ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রকল্প নতুন করে যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে রাজস্ব ব্যয়। তবে সরকার সবচেয়ে বিপাকে আছে অনুন্নয়ন ব্যয় ও রাজস্ব আদায় নিয়ে। ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। 

আয় বাড়াতে সরকারের বড় অগ্রাধিকার ছিল দাতাদের কাছ থেকে বাজেট–সহায়তার ঋণ পাওয়া। এই সহায়তা দ্রুত পেতেই সরকার হঠাৎ শতাধিক পণ্যর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর কোনো চেষ্টা না করে সাধারণ ভোক্তার ওপর পরোক্ষ কর চাপিয়ে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত বলা হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। 

সরকার যে অর্থনীতির যথাযথ মূল্যায়ন–পরামর্শ ছাড়াই ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা স্পষ্ট। কেননা, ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকার কয়েকটি পণ্যে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার বা কমিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে বাজার তদারকির অভাব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের উদাহরণ তো আছেই। 

অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের ব্যয় আরও বাড়বে। কাদের খুশি রাখবে, আর কাদের অখুশি রাখলেও সমস্যা নেই—এ নিয়েই যেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে সরকার। 

সব মিলিয়ে বাজেটের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে গেছে। এ অবস্থায় সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি লিখিতভাবে অর্থনীতি স্থিতিশীল করার পরিকল্পনাসহ সাত দফা সুপারিশ করেছিল। কমিটির কোনো সুপারিশই আমলে নেওয়া হয়নি। 

১৯৯১ সালে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার অর্থনীতি প্রতিটি খাত নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়েছিল। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেই রিপোর্ট আমলেই নেয়নি। আর এবার আমলে নিচ্ছে না সেই সরকার, যারা নিজেই শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। 

কোন পথে যাচ্ছে অর্থনীতি

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের শেষ তিন বছর অর্থনীতির মূল নীতিনির্ধারক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার মূল পৃষ্ঠপোষক। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর জন্য তাঁর দরজা ছিল সর্বদা খোলা। সে সময়ে অর্থমন্ত্রীর তেমন কোনো ভূমিকাই ছিল না। সে সময় খেয়ালখুশি মতো অর্থনীতি পরিচালনার ফল এখনো ভোগ করছে দেশের মানুষ। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে গঠিত সরকারের ওপর সবারই প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক। আশা ছিল নীতিগুলো নেওয়া হবে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে থাকবে স্বচ্ছতা, নজরদারি করা হবে বাজারের ওপর, কমবে মূল্যস্ফীতি, কমে যাবে দুর্নীতির প্রকোপ, উন্নতি হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির, কমবে দখল ও চাঁদাবাজি। 

কিন্তু এর কোনোটাই তেমন হয়নি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ যেমন স্বস্তিতে নেই, তেমনি আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরাও। এ কারণে অর্থনীতির সংকটও তেমন কাটেনি। এ অবস্থায় স্ট্যাগফ্লেশনের মধ্যে একবার ঢুকে পড়লে সেখান থেকে রেহাই পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। এখন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই এই অর্থনীতি এবং এখান থেকে বের হওয়া।

শওকত হোসেন হেড অব অনলাইন, প্রথম আলো