ঈশ্বপের গল্প
গল্পের রাজা ঈশপ।
তিনি বনে বনে ঘুরে বেড়ান। বনের জীবজন্তু ও পশুপাখিদের নিয়ে গল্প লেখেন। মজার মজার গল্প। পশুপাখির চরিত্র। কিন্তু অনেক নীতি কথাও থাকে সেসব গল্পে। ঈশপ বুড়ো এক গুহার সামনে বসে বসে গল্প লিখছেন। এমন সময় তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল এক বাঘ। বাঘ এসে হালুম করে শব্দ করল। বুড়ো ঈশপের ধ্যান ভাঙে না। তিনি বাঘ আর বিড়াল নিয়ে একটা গল্প লিখছেন।
বাঘ জানতে চাইল, ‘এই যে বুড়ো, তুমি কি আমার গর্জন শুনতে পাচ্ছ না?’
বুড়ো ঈশপ নিরুত্তর।
হালুম...হালুম...হালুম...
ঈশপ চুপ। তিনি লিখছেন।
এবার বাঘ এসে তার লেজ দিয়ে বুড়ো ঈশপের কান চুলকে দিল। ঝট করে লাফ দিয়ে উঠলেন ঈশপ।
‘কে? কে? কে?’
‘আমি একটা বাঘ।’
‘তোমার কি চোখ নেই? আমাকে দেখতে পাও না? কী করছিলে তুমি?’
‘আমি তো গল্প লিখছি।’
‘কী গল্প লেখো তুমি?’
‘আমি অনেক গল্প লিখি।’
‘কাদের নিয়ে গল্প লেখো তুমি?’
‘তোমাদের নিয়ে।’
এই শুনে হুমহাম করে হেসে উঠল বাঘ।
‘আমাদের নিয়ে কী গল্প লিখছ?’
বুড়ো ঈশপ এবার গালে কলম ঠেকিয়ে খুব চিন্তা করে বললেন, ‘একটা বিড়ালের ইচ্ছা হয়েছে সে বাঘের মতো কাজকর্ম করবে। কারণ, সে বাঘপরিবারের সদস্য, বাঘের মাসি।’
‘তারপর?’ জানতে চায় বাঘমশাই।
‘তারপর আর কী? বাঘ হতে গিয়ে নানা বিপত্তি হলো বিড়ালের। হরিণ শিকার করতে গেলে হরিণেরা তাকে লাথি মারে। সে বাঘের মতো হালুম করে। কিন্তু লোকেরা সেই ডাক শুনে হাসে। কারণ, বিড়ালের ডাক তো মিঁয়াও মিঁয়াও। তার মুখে হালুম শুনলে হাসি ছাড়া আর কী হতে পারে?’
‘এরপর?’
‘বিড়াল ক্লান্ত হয়ে ফিরে গেল বাবা-মায়ের কাছে। কারণ, সে জেনে গেছে, বাঘপরিবারে জন্ম নিলেই বাঘ হওয়া যায় না।’
এবার বাঘটা হো হো করে হেসে উঠল।
‘ঠিক বলেছ। ঠিক বলেছ বুড়ো।’
তারপর সে আবার লেজের ডগা দিয়ে আদর করে দিল বুড়োকে।
‘সত্য কথাই তো লিখেছ বুড়ো।’
বাঘ আরও জানতে চাইল, ‘বুড়ো ঈশপ, তোমার এসব গল্পের কি বই নেই?’
‘আছে। অনেক বই আছে।’
‘আমাকে একটা বই দেবে?’
‘নিশ্চয়ই দেব। কিন্তু পড়তে কি পারো তুমি?’
বাঘ এবার চুপ।
‘পড়তে পারো?’
বাঘ চুপ।
‘পড়তে না পারলে হবে কীভাবে? বই পড়া শিখতে হবে। তুমি এখন থেকে স্কুলে যাবে। বই পড়বে।’
বাঘ গম্ভীর হয়ে বলল, ‘আমি তো বুড়ো বাঘ। মনে থাকবে আমার?’
‘সব মনে থাকবে। ইচ্ছেটাই বড় কথা।’
বাঘ লম্বা করে শ্বাস নিল। সে ঈশপের গল্প পড়া শিখবে। তারপর বনের পশুপাখিদের সেই গল্প পড়ে শোনাবে।