মাইকেলের ২০০ বছর মধুসূদনের পুনর্জন্ম
এ বছর মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মের ২০০ বছর পূর্ণ হলো। গতকাল ২৫ জানুয়ারি ছিল তাঁর দ্বিশততম জন্ম বার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের প্রবর্তক তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে দেশে–বিদেশে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় তাঁকে নিয়ে, নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হতে থাকেন পূর্ব বঙ্গে জন্ম নেওয়া এ কবি
একদল ঐতিহাসিক বলেন যে একবার শাসকের আসনে বসে ইংরেজরা কেবলই শোষণ ও নির্যাতন করেছে। এই নতুন ভাবনার ঐতিহাসিকদের একচোখা বলা যেতে পারে কি না, তা গুরুতর বিবেচনা দাবি করে। কারণ, তাঁরা ইংরেজ আমলের ইতিবাচক দিকগুলো দেখতে পান না। এ ছাড়া ইংরেজ-পূর্ববর্তী ৫০০ বছরের ইতিহাসের দিকে তাঁরা ভালো করে তাকিয়ে দেখেন কি না, সে সম্পর্কেও সন্দেহ আছে। নয়তো মুসলিম শাসনকালে শোষণ কিছু কম হয়নি। বিশেষ করে মোগল আমলে শাসনের পাশাপাশি যে শোষণ হয়েছিল, তা নগণ্য ছিল না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তখন ইতিবাচক কী ছিল? নেতিবাচক দিকগুলো বলা সহজ। জ্ঞান–বিজ্ঞানের চর্চা হয়নি; উন্নত মানের শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। রাস্তাঘাট, স্থাপত্য, কেল্লা ইত্যাদি ছাড়া নির্মাণকার্যও সামান্যই হয়েছিল। তবে, হ্যাঁ, মসজিদ, মন্দির নির্মিত হয়েছিল, বোধ হয়, প্রয়োজনের থেকে বেশি।
অপর দিকে ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ ও ত্রাসনের পাশাপাশি উনিশ শতকে এসে সাধারণ শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান–বিজ্ঞান, দর্শন ও চিন্তাজগতের যে চর্চা হয়েছিল, তার একাংশও হয়নি পূর্ববর্তী পৌনে ৪০০ বছরে। ইংরেজ আমলে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দেশীয়রাও এ সময়ে বহু উদ্যোগ নিয়েছিল। যেমন কলকাতায় হিন্দু কলেজ স্থাপন। প্রথম দিকে দেশীয়দের মধ্য থেকে যাঁরা প্রশাসনিক, শিক্ষা অথবা বিচার বিভাগীয় কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা বেশির ভাগই ছিলেন এই কলেজের ছাত্র। অতঃপর উনিশ শতক ধরে শোষণের পাশাপাশি চলেছিল অর্জনের পালা। জ্ঞান–বিজ্ঞানের, উন্নয়নের। স্বীকার করতে হবে, সে উন্নয়ন সর্বত্র অথবা সুষম মাত্রায় হয়নি। আগে থেকে যারা মাটির কাছে ছিল, তারা বেশির ভাগ সেখানেই থেকে গেল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বপুরুষেরা সভ্যতার ‘প্রথম আলো’ দেখলেন ইংরেজ আমলেই।
উনিশ শতকের আগে বাংলা সাহিত্যের আয়তন এমন ছিল, যাকে কোম্পানির কর্মচারী হ্যালহেড আখ্যায়িত করেছিলেন এক তাকও নয়, ‘ঊনতাক-পাণ্ডুলিপি’ বলে। সে ভাষা ছিল জন্মরুগ্ণ, পৃষ্ঠপোষকতাবঞ্চিত, গদ্য–পদ্য—দুইয়েই। কবিরাজি অথবা হেকিমি চিকিৎসায় তার উন্নতি হয়নি। অপুষ্টির শিকার, দুর্বল, অস্থিসর্বস্ব বঙ্গশিশু বেঁচে উঠেছিল প্রায় এক শতাব্দীর পশ্চিমা চিকিৎসায় উনিশ শতকে। বিশেষ করে কবিতারানি নতুন নতুন পোশাক পরেছিল। এ সময়ে বিবিধ আঙ্গিকে দেখা যায় তাকে। বিশাল এপিক থেকে অতি বেঁটে সনেট পর্যন্ত। এমনকি তার একজন প্রজা, যাঁর নাম ছিল মাইকেল মধুসূদন, কবিতারানি জন্মেও যা ভাবেনি, সেই ছন্দের গয়না নির্মাণ করে তাকে দিয়েছিলেন। এভাবে নানা অলংকারে ভূষিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ নামের এক ভৃত্যকে নিয়ে কবিতারানি সিংহাসনে আরোহণ করেছিল।
কবিতারানির প্রথম দিকের ভৃত্যদের মধ্যে যাঁরা ইংরেজি শিখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি নন, সত্যিকারভাবে বাংলা কাব্যরানির মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর পড়শি—মধুসূদন। অতঃপর কাব্যরানি কেবল বঙ্গদেশের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থাকল না। সে দরজা খুলে বিশ্বমুখী হলো। শুধু স্বদেশি নথ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকল না, টায়রা দাবি করল। মধুসূদন তার সে দাবি পূরণও করেছিলেন।
মাইকেল যখন মারা যান, তখন সমকালের সাহিত্যরসিকেরা তাঁর যে মূল্যায়ন করেছিলেন, তাকে খুব একটা শ্লাঘাজনক মনে করা যায় না। সাধারণ মানুষ বরং তাঁর নেতিবাচক দিকগুলোই ফলাও করে দেখেছিলেন। যেমন তিনি মদ্যপ ছিলেন। তিনি বাঙালিবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ব্যারিস্টার হয়ে দেনায় ডুবে মারা গেলেন। অপব্যয়ী বলে তাঁকে তাঁরা নিন্দার চোখে দেখলেন। তাঁর মৃত্যুর পর দেশীয় পত্রপত্রিকাগুলো তাঁর সম্পর্কে তেমন প্রশংসার কথা খুব একটা বলেনি। সোমপ্রকাশ পত্রিকা লিখেছিল, তিনি বিরাট প্রতিভাবান কবি ছিলেন। কিন্তু তাঁর কাব্যের গুণাগুণও ঠিক বুঝতে পারেনি এই পত্রিকা।
তখনকার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র মাইকেল-সাহিত্যের মূল্যায়ন করেছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকায় লিখেছিলেন, মাইকেল বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। কিন্তু মৃত্যুর পর তিনি তাঁর বঙ্গদর্শন-এ আরও একবার মাইকেলের মূল্যায়ন করেন। এতে মাইকেলকে বাংলা কাব্যে স্থান দেন জয়দেবের পর। প্রশ্ন হচ্ছে, জয়দেব আদৌ বাংলা ভাষার কবি ছিলেন কি না। যদি বাঙালি কবি হনও, তা হলেও তাঁর গীতগোবিন্দর জন্য তিনি কি মাইকেলের সমান অথবা উঁচুতে স্থান পেতে পারেন?
রাজনারায়ণ বসু সাহিত্যের উৎকৃষ্ট সমঝদার ছিলেন। মাইকেল যখন মেঘনাদবধ কাব্য রচনা করেন, রাজনারায়ণ তখন থেকেই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। কিন্তু ১৮৬০-এর দশকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ দানা বাঁধতে শুরু করলে রাজনারায়ণের দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত বদলে যেতে আরম্ভ করে। একদা তিনি মদ আর বিস্কুট খেয়ে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি নিজেকে হিন্দুদের তুলনায় শুদ্ধতর হিন্দু বলে বিশ্বাস করতেন। বিশেষ করে হিন্দু মেলার (১৮৬৭) সময় থেকে তিনি মাইকেলের প্রতি প্রশংসার মনোভাব হারিয়ে ফেলেন।
রামগতি ন্যায়রত্ন বাঙ্গালাভাষা ও বাঙ্গালাসাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এতে তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য-এর নিন্দা করলেও মেঘনাদবধ কাব্য-এর প্রশংসা করেন। কিন্তু মাইকেলের আধুনিকতার দুই প্রধান উপকরণ—ছন্দ ও শব্দ-ব্যবহার—উভয়েরই নিন্দা করেন। সাহিত্যিক মহলে এ–ই ছিল মাইকেল সম্পর্কে ধারণা। আসলে যুগের তুলনায় তিনি অনেক অগ্রসর ছিলেন। তাঁর প্রাপ্য সম্মান তাঁকে দেওয়ার মতো সময় তখনো আসেনি।
বাঙালিদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ সামান্যই ছিল। মনোমোহন ঘোষের মতো ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁকে ভালোবাসলেও তাঁরা কবির রচনার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারেননি। কারণ, তাঁরা সাহিত্যরসিক ছিলেন না। মাইকেলের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর তাঁর কবরটা বাঁধাই করে একটা ক্ষীণকায় সৌধস্তম্ভ তুলে দিয়ে তাঁরা তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানোর দায় সেরেছিলেন। এককালের বন্ধু এবং চরম বিপদ থেকে রক্ষাকর্তা ‘করুণাসাগর’ বিদ্যাসাগর এই সৌধ নির্মাণের জন্য চাঁদা পর্যন্ত দেননি।
মোটকথা, কবির মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর স্মৃতি মাটির তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল। তখনকার স্কুলপাঠ্য বাংলা বই আমি দেখিনি। নয়তো বলতে পারতাম, সেখানে তাঁর পদচিহ্ন টিকে ছিল কি না।
মাইকেল নিজের পারিবারিক বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করতেন বলে মনে হয় না। এমনকি গৌরদাস বসাকের সঙ্গেও নয়। নয়তো বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলে পরিণত বয়সেও তাঁর পারিবারিক জীবন সম্পর্কে আমরা আরও খবর জানতে পারতাম। তিনি দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে রেখে গিয়েছিলেন। তখন বড় ছেলের বয়স ছিল ১১ আর ছোট ছেলে অ্যালবার্ট নেপোলিয়নের বয়স ছিল ৬ বছর। তারা এত ছোট ছিল যে মা–বাবা সম্পর্কে তেমন কিছু জানত কি না, সন্দেহ আছে। এমনকি তাদের মায়ের পারিবারিক নামটা কী ছিল, তা–ও জানত না। যদিও মায়ের মুখে সব সময়ে ফরাসি ভাষা শুনে আর ভার্সাইতে কয়েক বছর বাস করার ফলে তাদের ধারণা হয়েছিল যে তাদের মা ফরাসি। ওদিকে মাদ্রাজ স্কুলে এখন চেন্নাই ‘ডিক’ পদবিধারী এক শিক্ষক ছিলেন। তাঁর পদবিটাকে ঠিক ইংরেজি মনে না হওয়ায় সেটাকেই তাদের মায়ের বংশনাম বলে মনে হয়েছিল। সেই ভুল নাম শিরোধার্য করে হেনরিয়েটা শুয়ে আছেন পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে।
অথচ আমরা জানি, হেনরিয়েটার পিতা মাইকেলের সহকর্মী জর্জ জাইলস হোয়াইট মাদ্রাজ স্কুলের ফ্যার্স্ট টিউটর ছিলেন; মাইকেল ছিলেন সেকেন্ড টিউটর। যোগাযোগ ও প্রণয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেই সূত্রে। মাইকেলের ছোট ছেলে অ্যালবার্ট নেপোলিয়নের এক সন্তান চার্লস নেভিল ডাটন হাইকোর্টের বিচারপতি হয়েছিলেন। তিনিই মাইকেল ও হেনরিয়েটার সমাধিকে নতুন করে নির্মাণ করেছিলেন ১৯৫০-এর দশকে। তখনো পিতামহীর নাম লেখান—ডিক। আমিই প্রথমে তাঁর হোয়াইট পদবি আবিষ্কার করি ভার্সাই ও লন্ডনের দলিল থেকে।
বাঙালিরা মধুস্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর এক ভক্ত একটি মাইকেল–জীবনী লেখার উদ্যোগ নেন। প্রথমেই তিনি লক্ষ করেন, মাইকেলের আাত্মীয়স্বজন বলতে গেলে কেউই নেই, যিনি তাঁর পরিবারের বিশেষ কিছু জানেন। একমাত্র যাঁকে পাওয়া গিয়েছিল, তিনি মানকুমারী বসু। তবে তিনি যা জানতেন, তা হলো শোনা কথার শোনা কথা। বরং দু-চারজন বন্ধু তখনো বেঁচেছিলেন, যাঁরা প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন মাইকেল–জীবনের। গৌরদাস বসাক, ভূদেব মুখোপাধ্যায় অথবা রাজনারায়ণ বসু কিংবা কেশব গাঙ্গুলীর মতো যে বন্ধুরা ছিলেন, তাঁদের হাতে মাইকেলের লেখা চিঠিপত্রও ছিল। গৌরদাস বসাককে তিনি বলেছিলেন, তিনি বড় কবি হলে গৌরদাস যেন তাঁর জীবনী লেখেন। কিন্তু গৌরদাস লিখতে পারেননি। তবে চিঠিগুলোর বেশির ভাগই রক্ষা করেছিলেন। (শেষরক্ষা হয়নি। কারণ, অধিকাংশ চিঠি পোকায় কেটে ফেলেছে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ–এ জোড়াতালি দেওয়া যে ১৫ খানা চিঠি পড়ার মতো আছে, তা আমি দেখতে চাইলে সেগুলো পড়তে দেওয়া হয়নি।)
এ ছাড়া মাইকেল সবচেয়ে বেশি চিঠি লিখেছিলেন বিদ্যাসাগরকে ভার্সাই আর লন্ডন থেকে। বিদ্যাসাগর চিঠিগুলো যত্ন করে রেখেছিলেন। এই চিঠিগুলো না পেলে মাইকেলের লন্ডন-জীবন থেকে আরম্ভ করে মৃত্যুর কয়েক মাস আগপর্যন্ত জীবনের অনেক কথাই জীবনী-লেখকেরা লিখতে পারতেন না। ১৮৯৩ সালের ভাদ্র মাসে, অর্থাৎ ২০তম মৃত্যুতারিখের মাস দুয়েকের মধ্যে এই গ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল।
মাইকেলের দ্বিতীয় জীবনী যিনি লিখেছিলেন, সেই নগেন্দ্রনাথ সোমও তাঁর বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, যোগীন্দ্রনাথ বসুর জীবনী সামনে না থাকলে তাঁর পক্ষে মাইকেল-জীবনী লেখা প্রায় অসম্ভব হতো। প্রাথমিক তথ্য ছাড়া যতই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, তা দিয়ে সঠিক জীবনী লেখা সম্ভব নয়। যোগীন্দ্রনাথের জীবনী দারুণ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৯৩ সালে; দ্বিতীয় সংস্করণ ১৮৯৫ সালে; তৃতীয় সংস্করণ ১৯০৬ সালে; চতুর্থ সংস্করণ ১৯০৭ সালে এবং পঞ্চম সংস্করণ ১৯২৩ সালে। এখনো এই বই বাজারে পাওয়া যায়। এই জনপ্রিয়তার কারণ যোগীন্দ্রনাথ নন, স্বয়ং মাইকেল। তিনি এক রহস্য। তিনি বাঙালি হয়েও অবাঙালি, হিন্দু হয়েও যাঁর পরিচয় খ্রিষ্টান, বাঙালি হলেও যাঁর স্ত্রী তথা বান্ধবী মেম সাহেব, বাঙালি হলেও যিনি রাম-লক্ষ্মণকে সম্মান দেখান না, সম্মান দেখান রাক্ষসরাজকে, বাংলাভাষী হয়েও বাংলায় কথা বলাকে যিনি লজ্জার বিষয় বলে মনে করেন। তাঁর মেঘনাদবধ কাব্য-এর কাহিনি নাহয় না–ই জানলাম, অন্তত তাঁকে সমগ্র মন দিয়ে দেখে নিতে কে না চায়!
খ্রিষ্টানদের জন্ম, খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা (ব্যাপটিজম), মৃত্যু ও বিবাহের দলিলপত্র চার্চের রেজিস্টারে লিখিত থাকে। কলকাতা ও মাদ্রাজের পুরোনো সেই রেজিস্টারগুলো দেশভাগের পর চলে আসে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে (এখন ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে)। আবার আগেকার জীবনী-লেখকেরা সেই অপরিহার্য কাগজপত্রও ব্যবহার করার সুযোগ পাননি। সে জন্যই মাইকেলের জীবনীগ্রন্থগুলো অত শোনা কথানির্ভর।
যোগীন্দ্রনাথ বসুর লেখা মাইকেল-জীবনী খুব জনপ্রিয় হলেও বিতর্কের বিষয় ছিল, মাইকেল খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা নিয়ে খ্রিষ্টানই হয়ে গেলেন, নাকি নামমাত্র খ্রিষ্টান হয়ে আসলে হিন্দুই থেকে গেলেন। জীবনী নয়, মোহিতলাল মজুমদার মাইকেলের সাহিত্য বিষয়ে একখানা বই লিখেছিলেন (১৯৪৭)। তিনি সেই বইয়ে মাইকেলের সাহিত্যবিচার করে তাঁকে হিন্দু বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর সর্বশেষ এবং শক্তিশেলের মতো অব্যর্থ যুক্তি হলো, কবি তাঁর সমাধিলিপিতে নিজের যে নাম নিজেই লিখে গেছেন, সেটাই তাঁর স্বরূপ সম্পর্কে জানার চূড়ান্ত সাক্ষী। তিনি নিজের নাম লিখেছিলেন ‘শ্রীমধুসূদন’। তার পেছনে আছে কাব্যিক সৌন্দর্যবোধ। কারণ, ‘মধুসূদন’ শব্দটা পাঁচ মাত্রার। একে টেনেহিঁচড়ে ছয় মাত্রায় আনা খুবই কঠিন, এক রকম অসম্ভব। কিন্তু নামের আগে একটা ‘শ্রী’ বসালে ছন্দ রক্ষা পায়, পিতামাতার হিন্দু নামের সঙ্গে শ্রীমধুসূদন নামটাও মিশে যায়।
যোগীন্দ্রনাথের অপূর্ণতা দূর করতে নগেন্দ্রনাথ সোম এগিয়ে আসেন প্রায় দুই দশক পর। তাঁর লিখিত জীবনীগ্রন্থটি মধুস্মৃতি নামে ১৩২১ থেকে ১৩২৪ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত মাসিক ভারতবর্ষ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে তারপর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯২১ সালে।
নগেন্দ্রনাথ হিন্দু অথবা খ্রিষ্টানের মধ্যে ভেদাভেদ না করায় তাঁর লেখায় মাইকেল ধরা দিয়েছেন খ্রিষ্টান হিসেবে নয়, বরং মানুষ হিসেবে। ফলে মাইকেলের মূল্যায়ন প্রায় নিরপেক্ষ হয়েছে। ফলে কোনো রকমের পক্ষপাত না দেখিয়ে পাঠকেরা নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে মধুস্মৃতি পড়তে পেরেছেন। কিন্তু দেখতে পেয়েছেন কেবল মাইকেলের বাইরের দিকটা।
মাইকেলের রচনাবলির প্রথম মূল্যায়ন করেন শশাঙ্কমোহন সেন (১৯২১)। তাঁর গ্রন্থের নাম মধুসূদন: অন্তর্জীবন ও প্রতিভা। যাঁরা মাইকেল-চর্চা করেছেন, তাঁরা কমবেশি সবাই এ গ্রন্থের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু মাইকেলের অন্তর্জীবন দূরের কথা, সম্পূর্ণ বাহির-জীবনটাও শশাঙ্কমোহন দেখতে পাননি। ফলে মাইকেলের সাহিত্য যে অনেকাংশে তাঁরই ব্যক্তিজীবনের প্রতিফলন, সে খবর শশাঙ্কমোহন জানতেন না।
প্রমথনাথ বিশীও মাইকেল-জীবনী রচনা করেছিলেন (১৯৪১)। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ইত্যাদির তারিখসংবলিত যে ঘটনাপঞ্জিকে সচরাচর ‘জীবনী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়, প্রমথনাথ বিশীর জীবনী ঠিক সে রকম নয়। সে জন্য তিনি তাঁর জীবনীগ্রন্থের নামও দিয়েছেন মাইকেল মধুসূদন (জীবনভাষ্য)। যথার্থই এই জীবনীগ্রন্থ তারিখ-কণ্টকিত ‘জীবনী’ নয়। প্রমথনাথ ধরতে চেষ্টা করেছেন মাইকেলের ব্যক্তিত্ব আর চরিত্রকে।
বিশেষ করে ‘দ্য অ্যাংলো-স্যাক্সন অ্যান্ড দ্য হিন্দু’ প্রবন্ধে মাইকেল যা লিখেছিলেন, অথবা পুরুলিয়ায় বসে ‘খ্রিষ্ট দাস’ নামের যে সনেটটি রচনা করেছিলেন, তারপর তাঁর আত্মপরিচয় নিয়ে আর কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।
মাইকেলের জীবনীগ্রন্থগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সুরেশচন্দ্র মৈত্রের মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন ও সাহিত্য দ্বিতীয় সংস্করণ (১৯৮৫)। মধুসূদন খ্রিষ্টান কি হিন্দু—এ নিয়ে তিনি অযথা মাথা ঘামাননি। কিন্তু মাইকেল-জীবনের অনেক প্রাথমিক তথ্যই তিনি অক্সফোর্ড, লন্ডন ও ভার্সাই থেকে সংগ্রহ করতে পারেননি। সে জন্য মাইকেলের জীবনীও অসম্পূর্ণ থেকে গেল।
সুরেশচন্দ্র মৈত্র যখন তাঁর বইয়ের প্রতি অনুকূল সাড়া পেয়ে দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপিয়ে ফেলেছেন, তখন অক্সফোর্ডে মাইকেলকে নিয়ে গবেষণা করছিলেন উইলিয়াম রাদিচে। তিনি কাজ করেন তপন রায়চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। ইতিবাচক দিক হলো, উইলিয়াম বাংলা জানেন এবং অক্সফোর্ডে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি। তপন রায়চৌধুরী সাহিত্যরসিক, সেই সঙ্গে বিখ্যাত ঐতিহাসিক। তাঁরা বাজারে পাওয়া যায়, এমন সব জীবনীগ্রন্থই ব্যবহার করেছেন। সেই সীমাবদ্ধতার কথা মনে রেখে তাঁরা মাইকেল-জীবনী পুনর্নির্মাণ করার পরিবর্তে মাইকেলের সাহিত্য ও ব্যক্তিত্বের পুনর্মূল্যায়ন করেন। মাইকেলের সাহিত্যকে রাদিচে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন। মাইকেলের সাহিত্যের সঙ্গে পশ্চিমের যে নিবিড় যোগাযোগের কথা আগের সমালোচকেরা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু যোগাযোগের ব্যাপ্তি ও স্বরূপ কী, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, তা-ই রাদিচে সাবলীলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বিস্তারিত ও গভীর বিশ্লেষণ করে তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে উপনীত হন। অপূর্ণ যা থাকল, তা হলো মাইকেলের ব্যক্তিজীবন, বিবাহিত জীবন ও গার্হস্থ্যজীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু তাঁর রচনায় নতুন মাইকেলকে দেখা যায়।
উইলিয়াম যখন তাঁর অভিসন্দর্ভ শেষ করেন, এ কথা জানতে পাই শিবনারায়ণ রায়ের কাছে। তাঁর মতে, রাদিচে মাইকেলের জীবনী নিয়ে কাজ করলে ভালো হতো। কারণ, ইংল্যান্ডে তাঁর জীবনীসংক্রান্ত তথ্যাদি থাকলেও থাকতে পারে। শিবনারায়ণ রায় বিদায় নেওয়ার পরই ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে গেলাম এবং অচিরেই বুঝতে পারলাম যে সেটা একটা অনাবিষ্কৃত সোনার খনি। সেই খনি থেকে মাইকেলের জীবনের বিপুল সম্ভার উদ্ধার করি বছরের পর বছর। এ ছাড়া অক্সফোর্ডের রোডস লাইব্রেরি, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, এডিনবরা আর লন্ডনের পাবলিক রেকর্ডস অফিস, ভার্সাই মিউনিসিপ্যাল আর্কাইভস—যেখানেই গেছি, সেখানেই অজানা ও অমূল্য তথ্য পেয়েছি। ফলে দেখা দিলেন নতুন এক মাইকেল।
কিন্তু অধরা থাকলেন ইউরোপের ধ্রুপদি সাহিত্যের সঙ্গে মাইকেলের কতটুকু ও কী ধরনের যোগাযোগ ঘটেছিল, তার বিস্তারিত খবর। তার জন্য প্রয়োজন এমন একজন গবেষকের, যিনি একাধারে ইউরোপীয় ধ্রুপদি সাহিত্যে সুপণ্ডিত এবং বাংলা সাহিত্যে আগ্রহান্বিত। এমন লোক পাওয়া কঠিন। কিন্তু কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। অক্সফোর্ড থেকে ধ্রুপদি সাহিত্যে ডিফিল করছিলেন অ্যালেক্স রিডিফোর্ড। সেই সঙ্গে গ্রেজ-ইন থেকে মাইকেল ব্যারিস্টার হয়েছিলেন, সেই একই গ্রেজ–ইন থেকে ব্যারিস্টার হন রিডিফোর্ড। তিনি মাইকেলকে নিয়ে কাজ আরম্ভ করেন এবং যথাসময়ে ডিফিল ও ব্যারিস্টার হয়ে ব্যারিস্টারি করতে শুরু করেন। ব্যারিস্টার হাজির হলেন ব্যারিস্টারের বিচারে। তাঁর বইয়ের নাম ম্যাডলি আফটার দ্য মিউসেস: বেঙ্গলি পোয়েট মাইকেল মধুসূদন দত্ত অ্যান্ড হিজ রিসেপশন অব দ্য গ্রেকো-রোমান ক্লাসিকস।
রিডিফোর্ডের গ্রন্থে ৯টি পরিশিষ্ট ও উপসংহার ছাড়া ৬টি অধ্যায় আছে। ইউরোপের কাছে মাইকেলের ঋণ যে কত বেশি, তার খবর জানতে গেলে গ্রন্থটি অপরিহার্য।
কেবল তা–ই নয়, মাইকেলের শ্রেষ্ঠ কাব্য মেঘনাদবধ কাব্য সম্পর্কেও পশ্চিমে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। ফলে একটা নয়, এ কাব্যের দুটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে—একটি নিউইয়র্ক থেকে ২০০৪ সালে; আরেকটি একযোগে কয়েকটি দেশ থেকে ২০১০ সালে, প্রকাশক পেঙ্গুইন বুকস। প্রথমটির অনুবাদক ক্লিন্টন বি সিলি। বইয়ের নাম দ্য স্লেয়িং অব মেঘনাদ: আ রামায়ণ ফ্রম কলোনিয়াল বেঙ্গল। আর দ্বিতীয়টির নাম দ্য পোয়েম অব দ্য কিলিং অব মেঘনাদ মেঘনাদবধ কাব্য। ২০০৪ সালে আরও দুটি বই প্রকাশিত হয় অক্সফোর্ড ইউনিভাসিটি প্রেস থেকে লিউরড বাই হোপ: আ বায়োগ্রাফি (গোপা মজুমদারকৃত আশার ছলনে ভুলির সংক্ষিপ্ত অনুবাদ, আর আমার লাইফ অ্যান্ড লেটার্স অব মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সংক্ষেপে এই ছিল পাশ্চাত্যে মাইকেলের পুনর্জাগরণ।
ক্লিন্টন বি সিলিও তাঁর অনুবাদ করতে চেয়েছেন ছন্দ রক্ষা করে, অর্থাৎ কাব্যে। তবে রাদিচে একজন প্রতিষ্ঠিত কবি। তিনি মূল কাব্যের ছন্দ বজায় রাখতে চেষ্টা করেছেন। আর তাঁর অনুবাদ পড়লে মূলের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। রাদিচের অনুবাদ খুবই মূলানুসারী।
মাইকেলকে তাঁর দ্বিশততম জন্মদিনে আন্তরিক অভিনন্দন।
কবির চিত্ত ফুলবন–মধু লয়ে, রচ মধুচক্র...
মাইকেল মধুসূধনের জীবন ছিল চরম নাটকীয়তায় ভরা। নিজস্ব নিয়মে জীবনযাপনের জন্য তাঁর সমকালে বারবারই আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন এই কবি। তাঁর উত্থান–পতনময় জীবনের দিকে ফিরে দেখা।
যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ সালে জন্ম; বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার দেওয়ানি আদালতের আইনজীবী।
শৈশবে মা জাহ্নবী দেবীর কাছে শিক্ষার শুরু; রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন মায়ের মাধ্যমেই।
মধুসূদনের যখন সাত বছর বয়স, তখন ১৮৩১ সালে তাঁর পিতা রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতায় বাড়ি কিনে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন।
হিন্দু কলেজের (এখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) জুনিয়র বিভাগে ভর্তি হন উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে; এখানে পড়ার সময় তিনি ডি এল রিচার্ডসনসহ এমন িকছু মানুষের সংস্পর্শে আসেন,
যাঁরা চিন্তায় স্থায়ী প্রভাব ফেলেন।
রাজনারায়ণ বসু, বঙ্কুবিহারী দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, গৌরদাস বসাকদের মতো বিখ্যাতজনেরা ছিলেন তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু
১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ; নিজের নামকরণ করেন ‘মাইকেল’। তখন থেকে মধুসূদন দত্ত পরিচিত হন ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ হিসেবে; ঘটনাটি সে সময় সমাজে ব্যাপক আলোড়ন তোলে; এ ঘটনায় বাবা রাজনারায়ণ দত্ত তাঁকে ত্যাগ করেন; তবে এরপরও বছর চারেক তিনি মধুসূদনের পড়াশোনার খরচ দিয়েছিলেন।
কলকাতায় চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ১৮৪৭ সালের িডসেম্বরে মাদ্রাজে যান; তখন তাঁর একেবারেই চালচুলোহীন অবস্থা।
১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৫২ সাল পর্যন্ত ‘মাদ্রাজ মেল অরফ্যান অ্যাসাইলাম’ বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা; ১৮৫২ থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদ্যালয় বিভাগে; এর আগে তিনি অর্থ সংস্থানের জন্য ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন; ছদ্মনামে মধুসূদনের কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকায়; এ সময় হিন্দু ক্রনিকল নামে একটি পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করেন।
মাদ্রাজে আসার কিছুদিন পর রেবেকা ম্যাকটিভিস নামের এক ইংরেজ যুবতীর সঙ্গে বিয়ে; রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম; মাদ্রাজ–জীবনের শেষ পর্বে এসে এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ।
মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন ১৮৫৬ সালে; কেরানির পদে চাকরি পুলিশ কোর্টে।
শর্মিষ্ঠা নাটকের প্রকাশ ১৮৫৮ সালে; প্রকৃত অর্থে এটিকেই বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন সমালোচকেরা।
১৮৬১ সালে প্রকাশিত হয় মধুসূদনের প্রধানতম সাহিত্যকীর্তি মেঘনাদবধ কাব্য। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত এই কাব্যের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের সূচনা ঘটে।
ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ‘ক্যান্ডিয়া’ জাহাজে করে ইউরোপে যান ১৮৬২ সালে।
ইংল্যান্ডে পৌঁছে ‘গ্রেজ-ইন’-এ যোগ দেন।
১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে যান; এ সময় দারুণ অর্থকষ্টে পড়লে সহায় হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আর্থিক সহায়তায় ১৮৬৫ সালের ১৭ নভেম্বর ব্যারিস্টারি শেষ করেন।
কলকাতায় ফিরে আসেন ১৮৬৭ সালে; তবে আইন ব্যবসায় পসার জমাতে পারেননি।
১৮৬৯ সালে মধুসূদনের স্ত্রী হেনরিয়েটা
ছেলে–মেয়েকে নিয়ে ফ্রান্স থেকে কলকাতায় আসেন; কবির আর্থিক সংকট দিন দিন বাড়তে থাকে।
১৮৭০ সালে হাইকোর্টে চাকরি নেন; কিছুদিন পর তা ছেড়ে আবার শুরু করেন আইন ব্যবসা।
কবির স্বাস্থ্য দ্রুতই ভেঙে পড়তে থাকে; আর্থিক দীনতা চরমে পৌঁছায়; ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন রোববার মারা যান কপোতক্ষতীরে জন্ম নেওয়া কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
মাইকেলের মধুসূদনের প্রধান সাহিত্যকীর্তি
শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯), নাটক
একেই কি বলে সভ্যতা? (১৮৬০), প্রহসন
বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০), প্রহসন
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০), আখ্যান কাব্য
পদ্মাবতী (১৮৬০), নাটক
কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১), নাটক
মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১), মহাকাব্য
ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), গীতিকাব্য
বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২), পত্রকাব্য
চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬), সনেট
ক্ষেত্র গুপ্ত সম্পাদিত মধুসূদন রচনাবলীর ‘মধুসূদন দত্ত: জীবনকথা’ অংশ ও গোলাম মুরশিদের আশার ছলনে ভুিল অবলম্বনে মাইকেল–জীবনপঞ্জি তৈরি করেছেন সোহানুজ্জামান