‘বিষের বাঁশী’ ও ‘ভাঙার গান’
নিষিদ্ধের শতবর্ষ
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের দুই কাব্যগ্রন্থ বিষের বাঁশী ও ভাঙার গান নিষিদ্ধ হয়েছিল ১৯২৪ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। সে হিসাবে এখন বই দুটি নিষিদ্ধের শতবর্ষ
‘কোনো বইয়ের প্রচার নিষিদ্ধ না করে তাকে বরং জনমতের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকার সুযোগ দেওয়া উচিত,’ বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারক কুটিক রক। ১৯৪৮ সালে অশ্লীলতার প্রশ্নে একটি মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ালে রায় দিতে গিয়ে কথাটি উল্লেখ করেন তিনি। কথা সত্যও বটে! বই আসলে জনমতের সঙ্গে সংগ্রাম করেই টিকে থাকে। যেমন আজ থেকে শতবর্ষ আগে কাজী নজরুল ইসলামের বিষের বাঁশী ও ভাঙার গান বই দুটি নিষিদ্ধ করেছিল ব্রিটিশ সরকার। বই ও লেখালেখি নিয়ে ব্রিটিশদের মনোভাব ছিল কঠোর। ব্রিটিশ শাসনামলে বাজেয়াপ্ত বই নিয়ে গবেষণা করেছেন বিষ্ণু বসু, অশোক কুমার মিত্র প্রমুখ। শিশির কর এ ক্ষেত্রে এক কিংবদন্তি। নিষিদ্ধ নজরুল আর ব্রিটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বই নামের দুই গ্রন্থ লিখে সাহিত্যের ইতিহাসে প্রণম্য হয়ে আছেন তিনি। ব্রিটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বইয়ে তিনি জানাচ্ছেন, ‘ইংরেজ আমলে ভারতের প্রায় সব প্রাদেশিক ভাষার গ্রন্থই রাজরোষে পড়েছে।’ এ কথা থেকে প্রমাণিত হয় যে ব্রিটিশ সরকার বই ও তার প্রভাব নিয়ে কতটা চিন্তিত ছিল। বই আর লেখালেখি নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা প্রণয়ন করেছিল কয়েকটি আইন। ইন্ডিয়ান প্রেস অ্যাক্ট ১৯১০, নিউজপেপার অ্যাক্ট ১৯০৮, সেডিশিয়াস পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট ১৮৮২, ইন্ডিয়ান প্রেস ইমার্জেন্সি পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৩০ প্রভৃতি।
এই বাস্তবতায় ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের দুটি বই বিষের বাঁশী ও ভাঙার গান। বই দুটি নিষিদ্ধও হয়েছিল একই বছর ফৌজদারি বিধির ৯৯-এ ধারা অনুসারে। বিষের বাঁশী নিষিদ্ধ হয় ২২ অক্টোবর আর ভাঙার গান এর তিন সপ্তাহের মধ্যেই—১১ নভেম্বর ১৯২৪। সেই হিসাবে নজরুলের বই দুটি নিষিদ্ধের এখন শতবর্ষ। তবে শতাব্দী পেরিয়ে জনতার মধ্যে আদৃত হতে হতে কালজয়ী হয়ে গেছে এসব বই। বই দুটি শুধু প্রভাব বিস্তারকারীই নয়, প্রবল আলোচিতও। আর এই ১০০ বছরেও বই দুটির প্রাসঙ্গিকতা একবিন্দু কমেনি। কিন্তু গোরা আমলে বই দুটিকে কেন নিষিদ্ধ করেছিল শাসক? কী ছিল তার পরিপ্রক্ষিত?
‘বিষের বাঁশী’র বিষ
কাজী নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত পাঁচটি বইয়ের মধ্যে অন্যতম বিষের বাঁশী। বইটি ১৯২৪ সালের আগস্টে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ছিলেন স্বয়ং কবি। প্রচ্ছদ করেছিলেন কল্লোল–এর সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশ। নজরুল তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমার ঝড়ের রাতের বন্ধু।’ এ বইয়ের ‘কৈফিয়ত’ শিরোনামে ভূমিকায় কবি জানান, ‘“অগ্নিবীণা দ্বিতীয় খণ্ড” নাম দিয়ে তাতে যেসব কবিতা ও গান দেব বলে এতকাল ধরে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলাম, সেই সব কবিতা ও গান দিয়ে এই বিষের বাঁশী প্রকাশ করলাম। নানা কারণে “অগ্নিবীণা দ্বিতীয় খণ্ড” নাম বদলে বিষের বাঁশী নামকরণ করলাম। এ বিষের বাঁশীর বিষ জুগিয়েছেন আমার নিপীড়িতা দেশমাতা আর আমার ওপর বিধাতার সকল রকম আঘাতের অত্যাচার।’
ভূমিকার এ অংশ থেকে জানা যাচ্ছে, অগ্নিবীণার পরিবর্ধিত রূপ বিষের বাঁশী। আর কবির স্বীকারোক্তির মধ্যেই রয়েছে এই কাব্যের বিশেষ উদ্দেশ্যপূর্ণ শিল্পিত মনোভাব। বইটি প্রকাশের পর প্রভাবশালী সাময়িকী প্রবাসীতে বলা হয়েছিল, ‘কবিতাগুলি যেন আগ্নেয়গিরি, প্লাবন ও ঝড়ে রূদ্ররূপ ধরিয়া বিদ্রোহী কবির মর্মজ্বালা প্রকটিত করিয়াছে। জাতির এই দুর্দিনে মুমূর্ষু নিপীড়িত দেশবাসীকে মৃত্যুঞ্জয়ী নবীন চেতনায় উদ্বুদ্ধ করিবে।’
এই যে ‘নবীন চেতনায় উদ্বুদ্ধ’ করা, এটি আমাদের দেশমাতার জন্য শুভকর হলেও ব্রিটিশ শাসকের জন্য মোটেও শুভকর ছিল না। দেশবাসী লুফে নিলেও কেউ কেউ বৈরী হয়ে উঠলেন। এমন একজন অক্ষয় কুমার দত্ত গুপ্ত। পেশায় তিনি ছিলেন বেঙ্গল লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান। ১৯২৪ সালের ২১ আগস্ট বইটি নিয়ে সরকারের পাবলিক ইনস্ট্রাকশন বিভাগকে চিঠি লেখেন তিনি। সে চিঠির কিছু অংশ এ রকম, ‘অস্বচ্ছ ধারণার ওপর ভয়াবহ উদ্দেশ্য সাধন করতে বারংবার যেসব উত্তেজক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রক্ত, স্বৈরাচার, মৃত্যু, আগুন, নরক, দানব ও ব্রজের মতো শব্দ।’ অক্ষয়বাবুর আবেদন বিফলে যায়নি। কয়েক দফা চিঠি–চালাচালির পর একই বছরের ২২ অক্টোবর চিফ সেক্রেটারি এ এস মোবারলের স্বাক্ষরে বিষের বাঁশী বাজেয়াপ্ত করার আদেশ জারি হয় এবং তা প্রজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়।
এ আদেশের পর বই আটকাতে নেমে পড়ে পুলিশ। কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নজরুল ইসলামকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।
তবে কী আছে বইটিতে, যে জন্য প্রবাসী থেকে লাইব্রেরিয়ান হয়ে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা মারফত শেষ পর্যন্ত এটি বাজেয়াপ্ত হলো? বিষের বাঁশীর প্রথম কবিতা ‘অভিশাপ’-এর প্রথম লাইন ‘আমি বিধির বিধান ভাঙিয়াছি, আমি এমনি শক্তিমান!’ বলা ভালো, নজরুলের ‘বিধি’ কোনো একক অর্থের প্রতিনিধি নয়। শব্দটি নানান অর্থ তুলে ধরে। ব্রিটিশরাজের কাছে এই ‘বিধি’ নিশ্চয়ই তাদের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। বিধির বিধান ভাঙতে যে নিজের শক্তিমত্তার প্রকাশ করবে, সে তো আসলেই ভয়ানক! একই কাব্যগ্রন্থের ‘চরকার গান’-এ কবি লিখেছেন, ‘ঘোর রে ঘোর রে আমার সাধের চরকা ঘোর/ ওই স্বরাজ রথের আগমনী শুনি চাকার শব্দে তোর।’ নজরুল চরকার শব্দে স্বরাজ রথের আগমনী শুনতে পান বলেই এ কবিতায় বলেন— ‘ঘুচুক ঘুমের ঘোর’। আবার ‘ঝড়’ নামের দীর্ঘ কবিতার এক জায়গায় আছে— ‘ঝড় কোথা? কই?—/ বিপ্লবের লাল-ঘোড়া ওই ডাকে ওই—’।
বিপ্লবের লাল-ঘোড়া ডাকার কথা যিনি বলেন, তিনি আর যা–ই হোন, নিরাপদ হবেন না।
‘ভাঙার গান’–এর ভয়াল সুর
ভাঙার গান প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে (১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে)। প্রকাশক ছিলেন কলকাতার ডি এম লাইব্রেরি এবং যুগবাণী পত্রিকার আর্য পাবলিশিং হাউস। একই বছর ১১ নভেম্বর তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ থাকলেও বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে।
ভাঙার গান–এর সবচেয়ে বিখ্যাত গান—‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’। এই গান রচনার প্রেক্ষাপটও ঐতিহাসিক। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সম্পাদনায় বের হয় বাঙ্গালার কথা পত্রিকা। এ সময় মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে একের পর এক কারারুদ্ধ হচ্ছেন ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামীরা। চিত্তরঞ্জন দাশও কারারুদ্ধ হলেন। তাঁর স্ত্রী বাসন্তী দেবী দ্বারস্থ হলেন ২২ বছর বয়সী কাজী নজরুল ইসলামের। এ বিষয়ে নজরুলের বাল্যবন্ধু কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ তাঁর কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা বইয়ে লিখেছেন, ‘আমার সামনেই দাশ পরিবারের শ্রী সুকুমাররঞ্জন দাশ বাঙ্গালার কথার জন্য একটি কবিতা চাইতে এসেছিলেন। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নজরুল তখনই কবিতা লেখা শুরু করে দিল। সুকুমাররঞ্জন ও আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে নজরুল আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুহূর্তে রচিত কবিতাটি পড়ে শোনাতে লাগল।’ হুগলির জেলে দেশবন্ধুর সঙ্গে অন্য বন্দীরাও গাইতেন এই ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’।
ব্রিটিশ শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করতে তখন আন্দোলন শুরু হয়েছে দিকে দিকে। বিপ্লবীদের বন্দী করে পাঠানো হচ্ছে জেলে। এভাবে পুরো দেশটাই যেন হয়ে উঠেছিল কারাগার। এমন এক সময় বের হয় নজরুলের ভাঙার গান। বইটি ব্রিটিশ শাসনের মর্মমূলে আঘাত হেনেছিল। এই কাব্যগ্রন্থে কবি যখন বলেন, ‘বাঙলার শের বাঙলার শির/ বাঙলার বাণী বাঙলার বীর’ কিংবা ‘দুঃশাসনের রক্ত চাই।/ দুঃশাসনের রক্ত চাই।/ অত্যাচারী সে দুঃশাসন/ চাই খুন তার চাই শাসন’ কিংবা ‘আয় ভীম আয় হিংস্র বীর’, তখন ব্রিটিশরাজের সিংহাসন কি টলে ওঠে না? বাংলা তো শোষণের ক্ষেত্র, তারা বীর হবে কেন? এরা দুঃশাসনের রক্ত চায় কীভাবে! আবার ভীমকে ডাকে! পাগলা ভোলাকে আহ্বান করে প্রলয়ের টানে সব গারদের আগল ভেঙে দেওয়ার জন্য! সবচেয়ে বড় কথা, সবকিছুকে পায়ের ভৃত্য করে বন্দী বিপ্লবীদের সব কারাগারের তালা লাথি মেরে ভেঙে ফেলার কথা বলা হয় এখানে।
স্বভাবতই ব্রিটিশরা এগুলো ভালোভাবে নেয়নি। ভাঙার গান–এর প্রভাব ছিল গভীরতর। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘জেলে যখন ওয়ার্ডাররা লোহার দরজা বন্ধ করে, তখন মন যে কী আকুলি-বিকুলি করে, কী বলব। তখন বারবার মনে পড়ে কাজীর সেই গান—“কারার ঐ লোহ-কবাট”।’
পরাধীন ভারতে গানটির প্রভাব বুঝতে ওপরের ঘটনাটিই যথেষ্ট।
‘কারার ঐ লোহ-কবাট’–এর বহিরাঙ্গিকে কবাট ভাঙার কথা থাকলেও আদতে এতে বলা হয়েছে বৈষম্য ভাঙার কথা। সাম্প্রতিক কালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানেও এই গানের প্রবল উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। গ্রাফিতিতে এখনো গানটির কথা ও ভাব-চিত্র দৃশ্যমান। শতবর্ষ পরে বৈষম্যহীন সমাজের জন্য ছাত্র-জনতা আজ যে নিজের রক্ত ঝরাচ্ছে, জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে, তার শুরুটা তো করেছিলেন নজরুল নিজেই। কারাবন্দী অবস্থায় কবি যখন গানটি গাইতেন, তখন বন্দীদের জমানো ক্ষোভ গর্জে উঠত। একই দৃশ্য যেন দৃশ্যায়িত হলো শতবর্ষ পর। সেখানে কেবল শারীরিকভাবেই নজরুল অনুপস্থিত। বাকি সব আগের মতোই। আদতে ইতিহাস বারবার ফিরে আসে। হয়তো সে কারণেই নজরুলকে দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে সূচনা, শতবর্ষ পরেও তা চলমান।
ভাঙার গান মূলত গানের বই। এসব গানে আছে সব ধরনের অচলায়তন-দুর্বৃত্তপনা ও বৈষম্য ভাঙার কথা। ব্রিটিশরাজের ভয় ছিল যে এসব ভাঙলে তাদের সিংহাসনও ভেঙে যাবে। তাই তো আটকে দেওয়া হয়েছিল এ গানের সুর। কিন্তু যা শাশ্বত অধিকারের অংশ, তাকে কি নিষেধের বাধা দিয়ে আটকানো যায়! আটকানো যায়নি ভাঙার গান–এর সুরকেও। কোথাও কোনো অন্যায়–নিপীড়ন হলেই ওই সুর এখন আরও তীব্রভাবে বাজে।
বই কি কখনো নিষিদ্ধ করা যায়? এই প্রশ্নের এক জুতসই উত্তর দিয়েছেন রুশ লেখক মিখাইল বুলগাকভ তাঁর বই মাস্টার অ্যান্ড মার্গেরিটার মধ্যে, ‘পাণ্ডুলিপি কখনোই পোড়ে না।’ বই নিষিদ্ধ নিয়ে এর চেয়ে সত্য আর নেই।
বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ গ্রন্থের ইতিহাস ও পরিণতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেগুলোর প্রচার, প্রসার, পঠন, সংরক্ষণ কোনোটাই শেষ পর্যন্ত রহিত করা যায়নি; বরং নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর বেশির ভাগই পেয়েছে ব্যাপক প্রচার। বিষের বাঁশী বা ভাঙার গান–এর ক্ষেত্রেও এটি সমসত্য। আর এই দুই বইয়ের মধ্যে শৈল্পীর সৌকর্যের পাশাপাশি বিদ্রোহ ও বিপ্লবের যে চিরায়ত উপাদান, সেটিই একে কালোত্তীর্ণ করে তুলেছে। শিকল পরে শিকলকে বিকল করার কথা আছে নজরুলের গানে। এই বই দুটিও যেন নিষিদ্ধ হওয়ার ‘শিকল’ পরে প্রকারান্তরে কর্তৃত্ববাদী শাসকের ‘শিকল’ ভেঙে ফেলতে উৎসাহ জুগিয়েছে কালে কালে, বারবার।