বললেন, ‘লেখো লেখো, সবাই ভুলে গেছে’
গতকাল রোববার রাতে প্রয়াত হয়েছেন ষাট দশকের অন্যতম কবি মোহাম্মদ রফিক। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন এক তরুণ কবি।
দেখা হতো না, কথাও অতটা আর হতো না, তবুও তো মনে হতো তিনি আছেন। এখনো আছেন। হঠাৎ করে সবটাই কেমন নেই হয়ে গেল! হঠাৎ চেনা পৃথিবীটা তাঁর নাম আর ছবিতে ছেয়ে গেল। কিন্তু তিনি নাকি কোথাও নেই! তিনি আর কথা বলবেন না! কোনোদিন না!
তিনি তো বলবার আনন্দে বলতেন। আমি সব মূর্খতা নিয়ে, সব অজ্ঞতা নিয়ে শুনে যেতাম তাঁর বাড়ির বারান্দায় বসে। যে বাড়ির ঠিকানা আমি বরাবর ভুলে যাই। শুধু পথ চিনে গেট দিয়ে ঢুকে যেতে পারি। শেষবার একটা ডাক পাঠাবার জন্য ঠিকানাটা চেয়েছিলাম।
অন্য কারও কাছে না পেয়ে তাঁকেই ফোন করলাম। ঠিকানা বললেন। শুরুতে নিজের নামটাও বললেন। আমি বললাম, নাম মনে আছে স্যার। তিনি বললেন, লেখো লেখো সবাই তো ভুলে গেছে। কয়েক দিন পর নিজেই গেলাম ডাক না পাঠিয়ে। ভীষণ আপ্লুত হলেন। বললেন, আর কেউ হলে আসতে না করে দিতাম, তুমি বলেই আসতে বললাম, সবাই তো ভুলে গেছে।
শেষ কবিতার বইটার উৎসর্গপত্রে তাঁর নাম লেখা ছিল। সেটা দিতেই যাওয়া। অতটা খুশি হবেন ভাবতে পারিনি। শুদ্ধ দা ফোন করলেন মাঝে। স্যার শুদ্ধ দাকে বইটা দেখিয়ে বললেন, দেখো, রুমন আমাকে বই উৎসর্গ করেছে! আমি ক্ষুদ্র। আমার কী সাধ্য তাঁকে দিই!
প্রাপ্তি তো আমার হলো! তাঁর সেই অনাবিল খুশিটুকু আমার প্রাপ্তি। সেটাই আমার সঞ্চয়ে থাকা তাঁর শেষ স্মৃতি। সেবারেও গল্পের ঝুলি খুললেন বরাবরের মতোই। তবে বিষয় বদলেছে টের পেলাম। স্পিরিচুয়ালিটি নিয়ে আগে ওভাবে বলতে শুনিনি। নতুন একটা শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচয় ঘটল। বললেন, আমি নিজেকে এখন সুফি মার্কিস্ট মনে করি।
তারপর বহুদিন ভাবনায় সুফি মার্কিস্ট কথাটা আনাগোনা করেছে।
না, ভুলিনি। কখনো ভুলিনি। তিনি তো পিতার মতো করে ছিলেন। দূরে থেকেও জানতাম, আছেন। বাবা চলে যাওয়ার পর একটা গানের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেলেন।
আগে শোনা ছিল না:
“ডু নট স্ট্যান্ড অ্যাট মাই গ্রেভ অ্যান্ড উইপ
আই অ্যাম নট দেয়ার; আই ডু নট স্লিপ।”
আজও যে আবার পিতৃহারা হলাম। আজ কার কাছে যাই!