কবিতা
মারজুক রাসেল
মারজুক শা সেতু
‘মারজুক শা সেতু’ পার হবার আগে
আমরা গেলবার যে দোকানে পান-ব্রেক নিছিলাম,
সেইখানে এইবার একটা টিউবওয়েল-বিক্রির-পাকাঘরকে
গোপালগঞ্জগামী যাত্রীবাহী-গাঙশালিক দেখল
গামছা-পরা, দাঁড়ানো দেশলাই খাইতেছে।
দেশলাই জ্বালাইতে হয় বিড়ি-সিগারেট দিয়া;
বিড়ি-সিগারেটদের যারা আগুন জোগায়, তাদের সাথে সূর্যের সম্পর্ক অন্ধকারের
অন্ধকারের মারে আমরা চিনি, তার জামাই পদ্মার পারে পানির ব্যবসা করে।
মাহবুব কবির
জন্তু
পাখিটাকে মনে পড়ে।
পোষা পাখিটাকে বলেছিলাম, মানুষ আর জন্তু
কাকে তুমি ভালোবাসো?
পাখি তিনবারই চেঁচিয়ে বলেছিল—জন্তু, জন্তু এবং জন্তু।
এই শুনে সংবিৎ ফিরে পেয়ে খাঁচাবন্দী পাখিটাকে মুক্ত করে দিলাম।
শেষবার সে আমাকে বলে গেল—
জন্তু পাখিদের ঘর ভাঙে না।
মানুষ পাখিদের ঘর ভাঙে, আবার ইট-কাঠ-লোহায়
ঘর বানিয়ে দিয়ে হুদাই ভালোবাসা দেখায়।
সেই থেকে এই ইস্পাতের শহরে আমি খাঁটি জন্তু হওয়ার সাধনায় আছি।
ফরিদা ইয়াসমিন
ভিন্ন
ঘোর নিয়ে লক্ষ করি কবিতার অন্তর্গত ভাবের মতো ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মন।
আরও বিস্ময় জাগে কবিতার দেহের মতো মানবদেহের ভিন্নতা দেখে!
দ্বিমেরু-ব্যাধির মতো উচ্ছ্বাস আর বিষণ্নতা সব সময় ঘুরেফিরে নয়, কখনো কখনো একসাথেও আসে।
পূর্ণিমার চাঁদে বাড়ে উপর্যুপরি কাতরতা! কিছুতে ঘোর কাটে না, বিস্ময় ঘোচে না—
বিপন্নতা পেয়ে বসে—
দেখি, মনের মতোই প্রতিটি শরীরও কী ভীষণ ভিন্ন!
নীহার লিখন
দেয়াল
আমরা যারা বিশাল শহরে থাকি না, মাঝে মাঝে যাই
তারা বোধ হয় এমনই, বেঁচে থাকার খুব পাশেই থাকে
মফস্বলি কাঁচাবাজারের সন্ধ্যা, কেরোসিন বাতির;
গন্ধের মধ্যে বাবার স্মৃতিরা, দাদা যেন শব্দ করে ওঠে—
খালুই থেকে ঢাকনায় বাড়ি মারা কোন মাছের লেঙ্গুড়
তোমরা যারা মাঝে মাঝে এইখানে আসো, তারা কেবল
দেখো সবজি, মাছ, কেরোসিনবাতি আর খুব নোংরা
একটা কাঁচাবাজার
চিরদিন আমাদের ফারাকটা সামান্যই, একই দৃশ্য
আমাদের চোখগুলো দেখে দেখে যায়
চিরদিন তবু ওই সামান্য ফারাকটাই কীভাবে যে ভিন্ন
ভিন্ন শক্ত দেয়ালের মতো ঠিকই থেকে থেকে যায়!