এই সময়ের ধনী লেখকেরা

সারা বিশ্বে ধনী লেখকের সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবু কেউ কেউ তো লিখেই আয়েশি জীবন

যাপন করছেন। এখন লেখালেখি শুধু বই ছাপানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ই-বুক, অডিও বুক, পিডিএফ, কিন্ডল, উপন্যাস থেকে সিনেমা, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে গল্প বিক্রি করা—এরকম নানা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়ায় এখন লেখালেখি করে আয় করার সুযোগও বেড়েছে। ফলে ধনী লেখকদের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।

প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস প্রায় প্রতি বছর বিশ্বের ধনী লেখকদের তালিকা প্রকাশ করলেও ২০১৯ সালের পর কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি। এখানে সাহিত্যবিষয়ক সাময়িকী লিটারেরি হাবের দৃষ্টিতে বিশ্বের শীর্ষ ১৫ ধনী লেখকের তালিকা তুলে ধরা হলো।

১. জেমস প্যাটারসন

জেমস প্যাটারসন

জেমস প্যাটারসন সম্ভবত এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্যোপন্যাস লেখক। তাঁর অ্যালেক্স ক্রস সিরিজের নাম শোনেননি এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তিনি এখন পর্যন্ত শতাধিক বই লিখেছেন। তাঁর বেশির ভাগ বই চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্যাটারসনের বই ৪০ কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

লিটারেরি হাব জানয়িছে, জেমস প্যাটারসনের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার।

২. জে কে রাওলিং

জে কে রাওলিং

হ্যারি পটার কিংবা জে কে রাওলিং নিয়ে নতুন করে কীই বা বলার আছে। এই একটি সিরিজ রাওলিংকে জীবিত কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। তাঁকে এনে দিয়েছে অর্থ,খ্যাতি ও প্রতিপত্তি।

হ্যারি পটার থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি চলচ্চিত্র পেয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। লিটারারি হাব বলছে, জে কে রাওলিংয়ের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার।

৩. স্টিফেন কিং

স্টিফেন কিং

স্টিফেন কিংয়ের পাঠকদের বলা হয় ‘একনিষ্ঠ ভক্ত’। কারণ তারা সব সময় কিংয়ের বইয়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন এবং বই প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়ে যায়।

স্টিফেন কিংয়ের প্রকৃত নাম রিচার্ড বাচম্যান। ১৯৭৪ সালে লেখালেখিতে প্রবেশ করার পর ‘স্টিফেন কিং’ ছদ্মনাম নেন তিনি। প্রতি ২০ সপ্তাহ পর পর একটি করে বই প্রকাশ করতে শুরু করেন।

ভৌতিক উপন্যাস লেখাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন স্টিফেন কিং। এখন ভৌতিক উপন্যাস বলতেই পাঠক স্টিফেন কিংকে বোঝেন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৭০ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার।

৪. ড্যানিয়েল স্টিল

ড্যানিয়েল স্টিল

গত কয়েক দশক ধরেই রোমাঞ্চ উপন্যাস বিক্রির শীর্ষে রয়েছে ড্যানিয়েল স্টিলের বইগুলো। তিনি ১৯৭৩ সালে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে ১৮০টির বেশি বই লিখেছেন। বিশ্বব্যাপী তাঁর বইগুলো ৮০ কোটির বেশি বিক্রি হয়েছে। আর তাঁর উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র হয়েছে ২৩টি।

লিটারেরি হাব বলছে, ড্যানিয়েল স্টিলের সম্পদের পরিমাণ ৬০ কোটি মার্কিন ডলার।

৫. জন গ্রিশাম

জন গ্রিশাম

আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ জন গ্রিশাম। জন গ্রিশাম আইনবিষয়ক থ্রিলার লিখে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে রয়েছে আ টাইম টু কিল, দ্য ফার্ম দ্য রেইনমেকার। গ্রিশামের সব কটি বই থেকেই চলচ্চিত্র হয়েছে। বিশ্বজুড়ে তাঁর বই ৩০ কোটির বেশি বিক্রি হয়েছে। গ্রিশামের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

৬. জেফি কিনি

জেফি কিনি

বর্তমান সময়ের শিশুদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় বইটির নাম ডায়েরি অব আ উইম্পি কিড। এই সিরিজ লিখেই রাতারাতি তারকা বনে গেছেন এবং বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন জেফি কিনি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার।

৭. ই এল জেমস

ই এল জেমস

টোয়াইলাইট-এর ফ্যানফিকশন হিসেবে ফিফটি সেশড অব গ্রে লেখা শুরু করেছিলেন ই এল জেমস। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। এরপরই তো বাজিমাত। টোয়াইলাইট–এর জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে যেতে বসেছে ফিফটি শেডস অব গ্রে। টিকটকের বুকটকে এখন সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস এটি। ই এল জেমসের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার।

৮. জেনেট ইভানোভিচ

জেনেট ইভানোভিচ

১৯৭০-এর দশকে লেখালেখির জগতে পা রেখেছিলেন জেনেট ইভানোভিচ। তবে তিনি প্রথম সফলতার দেখা পান ১৯৯৪ সালে ওয়ান ফর দ্য মানি উপন্যাসের মাধ্যমে। এর সাফল্য এতটাই আকাশচুম্বী হয় যে তিনি এই রহস্যোপন্যাস সিরিজ লিখতে বাধ্য হন। এই সিরিজের সর্বশেষ উপন্যাস ডার্টি থার্টি ২০২৩ সালের হ্যালোইনে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪২ কোটি মার্কিন ডলার।

৯. নোরা রবার্টস

নোরা রবার্টস

জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রায়ই দন কিহোতের সঙ্গে তুলনা করা হয় নোরা রবার্টসকে। বলা হয়, তিনি ক্রমশ নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। রোমাঞ্চ-ফ্যান্টাসি-রহস্য ঘরানার এই লেখক ‘জে ডি রব’ নামেও লিখে থাকেন। এই ছদ্মনামে তাঁর রহস্য সিরিজ ইন ডেথ প্রকাশিত হয়।

এখন পর্যন্ত ২৩০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন নোরা বরার্টস। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা তাঁকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী লেখকে পরিণত করেছে।

১০. সুজানে কলিনস

সুজানে কলিনস

দ্য হাঙ্গার গেমস ট্রিলজির জন্য বিখ্যাত হয়ে গেছেন সুজানে কলিনস। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত এই সিরিজ থেকে চারটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তাঁর আরেকটি উপন্যাস দ্য ব্যালাড অব সংবার্ডস অ্যান্ড স্নেকস থেকেও ২০২৩ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। সুজানে কলিনসের সম্পদের পরিমাণ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার।

১১. ড্যান ব্রাউন

ড্যান ব্রাউন

দ্য ভিঞ্চি কোড নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এর লেখক ডন ব্রাউনকে নিয়েও নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ভিঞ্চি কোড ও ড্যান ব্রাউন বিশ্বজুড়ে এতটাই জনপ্রিয় যে ফুটপাতের দোকানিরাও তাঁকে চেনেন। আমাদের দেশেও ভিঞ্চি কোড নিয়ে মাতম কম নয়। 

২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সারা জাগানো  দ্য ভিঞ্চি কোড। উপন্যাসটি এখনো বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বইগুলোর একটি। এ পর্যন্ত দুবার চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে দ্য ভিঞ্চি কোড। আর বিশ্বব্যাপী বিক্রি হয়েছে ২৫ কোটির বেশি কপি।

তাঁর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

১২. দন কিহোতে

দন কিহোতে

এমন কোনো বইয়ের দোকান সম্ভবত পাওয়া যাবে না, যেখানে দন কিহোতের রহস্য উপন্যাস নেই। ১৯৬৮ সালে প্রথম উপন্যাস প্রকাশের পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে যাচ্ছেন কিহোতে। এ পর্যন্ত ১১০টি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। আর তাঁর প্রতিটি বই তুমুল পাঠকপ্রিয়।

সেলিব্রেটি নেটওর্থের বরাত দিয়ে লিটারেরি হাব বলছে, দন কিহোতের বর্তমান সম্পদ ২০ কোটি মার্কন ডলার।

১৩. রিক রিঅর্ডান

রিক রিঅর্ডান

মামুলি এক স্কুল শিক্ষক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী লেখক বনে গেছেন রিক রিঅর্ডান। গত শতকের ৯০-এর দশকের শেষের দিকে একটি ক্রাইম থ্রিলার লিখতে শুরু করেছিলেন তিনি। সেটি শেষ হয় ২০০৫ সালে। কে জানত, বইটি প্রকাশের পর রাতারাতি তাঁর জীবনটাই বদলে যাবে?

উপন্যাসটির নাম দ্য লাইটনিং থিফ। প্রকাশের পরপরই মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হতে থাকে বইটি। মার্কিন শিশুদের জীবনে গ্রিক, রোমান আর মিসরীয় পুরাণের অনবদ্য মিশেলের কারণেই হয়তো বইটি চূড়ান্তভাবে আকর্ষণ করেছিল পাঠকদের। রিক রিঅর্ডানের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১৩ কোটি মার্কিন ডলার।

১৪. স্টিফেন মেয়ার

স্টিফেন মেয়ার

২০০৫ সালে একটি বই সারা বিশ্বের কিশোর-তরুণদের মধ্যে ঝড় তুলেছিল। বইটির নাম টোয়াইলাইট। এই একটি বই স্টিফেন মেয়ারকে তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছে। আর দিয়েছে প্রভূত অর্থ-প্রতিপত্তি। এরপর মেয়ার আরও তিনিট উপন্যাস এবং পাঁচটি চিত্রনাট্য (চলচ্চিত্রের) লিখেছেন। তাঁর লেখালেখি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিপুল ভক্তশ্রেণি। গত ৮ বছরে শুধু বই লিখে মেয়ার আয় করেছেন ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তাঁর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১২ কোটি মার্কিন ডলার।

১৫. কেন ফলেট

কেন ফলেট

দ্য পিলার্স অব দ্য আট বইয়ের নাম শোনেননি এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই একটিমাত্র বই কেন ফলেটের জীবনকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। ১৯৮৯ সালে বইটি লিখেছিলেন কেন ফলেট। বিশ্বব্যাপী তাঁর বই বিক্রি হয় ১৬ কোটি কপি। ১ ডলার করে রয়্যালটি নিলেও তাঁর বছরে রয়্যালিটি দাঁড়ায় ১৬ কোটি ডলার। সন্দেহের কোনো কারণ নেই, ফলেট এর চেয়ে বহুগুণ বেশি র​য়্যালটি পেয়ে থাকেন। লিটারেরি হাব বলছে, কেন ফলেটের বর্তমান সম্পদ ৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার।