বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান ও ভাষার সীমানা

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১০ জুলাই ১৮৮৫—১৩ জুলাই ১৯৬৯)
ছবি: সংগৃহীত

বাংলা ভাষার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ যে সংকলিত-সম্পাদিত হলো ঢাকায়, পূর্ব বাংলায়, তা এক দিক থেকে কাকতালীয়। এ অর্থে যে এ ধরনের একটি অভিধান প্রণয়নের জ্ঞানতাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক আবহ কলকাতায় ছিল। উনিশ শতকের শেষ দিকে প্রাচ্যবিদ্যার ধারণায় একটা বড় পরিবর্তন ঘটেছিল। পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ক্ল্যাসিকের বদলে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির উপাদান ক্রমেই অধিকতর প্রাধান্য পেতে শুরু করেছিল। অন্য নানা প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে যদি শুধু বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করি, তাহলেও ওই বদলে যাওয়া মনোভাবের পরিচয় মিলবে। তখন আংশিকভাবে প্রান্তীয় তথা আঞ্চলিক নানা ভাষিক উপাদান সংগৃহীত হয়েছিল। তখনকার নামজাদা সক্রিয় পণ্ডিতদের অনেকেই সেসব উপাদান সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বেশ কিছু ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণও হয়েছিল।

ভারতবর্ষীয় ভাষাগুলোর শুমারি শুরু হয়েছিল এ সময়েই। গ্রিয়ারসনের নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে সংঘটিত এ মহাযজ্ঞের বাংলা খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে। এ অঞ্চলের এখন পর্যন্ত একমাত্র এ রকম সামগ্রিক শুমারি করার পেছনে নিঃসন্দেহে ঔপনিবেশিক শাসকের শাসন–সম্পর্কিত হিসাব-নিকাশ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তবে আব্রাহাম গ্রিয়ারসন নিজে ছিলেন যোগ্য ভাষাবিজ্ঞানী; আর তাঁর সঙ্গে স্থানীয় প্রতিনিধি বা বিশ্লেষক হিসেবে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁরাও অনেকে খুব যোগ্যতাসম্পন্ন ভাষাবিদ ছিলেন। যেমন বাংলা ভাষার কাজে তাঁর অন্যতম সহায়ক ছিলেন শ্যামাচরণ গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রিয়ারসন কাজটা করেছিলেন সেকালসম্মত ভাষাতাত্ত্বিক রীতি-পদ্ধতি মেনে। সব মিলিয়ে এ ব্যাপারে প্রায় কেউই সন্দেহ পোষণ করেন না যে সরকারি কাজ হলেও গ্রিয়ারসনের ‘লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে’ অত্যন্ত জরুরি এবং অনেক দূর পর্যন্ত মানসম্মত কাজ হয়েছে।

ওপরের উদাহরণগুলো থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, বাংলা আঞ্চলিক ভাষার অভিধান কলকাতায় সংকলিত-সম্পাদিত হতে পারত। কিন্তু হয়নি। হয়েছে ঢাকায়। পাকিস্তান সরকার অন্যতম ‘পাকিস্তানি’ ভাষা হিসেবে বাংলার উন্নতির জন্য নানাভাবে টাকাপয়সা খরচ করেছিল। অভিধান প্রণয়ন প্রকল্প ছিল তার একটি। বাংলা ভাষাচর্চা, প্রমিতায়নের ঝোঁক এবং অভিধান প্রণয়নের ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলা যাবে, এ ধরনের অভিধান যে ঢাকায় সম্পন্ন হয়েছিল, তা পুরোপুরি কাকতালীয় নয়। ব্রিটিশ আমলে বাংলা ভাষার যেসব রূপ-রূপান্তর সংঘটিত হয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে যেসব ভাষাবোধ ও ভাষাচৈতন্যের উদ্ভব ঘটেছিল, আর তার অধীনে ভাষা–সম্পর্কিত যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছিল, তার নিরিখে বিচার করলে আঞ্চলিক ভাষার প্রতি পূর্ব বাংলা তথা ঢাকার খানিকটা বেশি মনোযোগের কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে।

কলকাতায় বাংলা ভাষাচর্চার মূলধারাকে সংক্ষেপে প্রমিতায়ন প্রয়াস বলা যেতে পারে। যাকে আমরা পরে সাধুরীতি নাম দিয়েছি, মোটাদাগে তার রূপ নির্ধারণই ছিল গদ্যরচনা ও ভাষাচর্চার প্রধান প্রবণতা। উনিশ শতকে অভিধান প্রণীত হয়েছিল প্রধানত দুই ধারার। এক ধারায় প্রণীত হয়েছিল প্রচুর সংস্কৃত শব্দের অভিধান, যেন শব্দগুলো বাংলায় চালু হয় এবং শুদ্ধরূপে ব্যবহৃত হয়। অন্য ধারায় রচিত হয়েছিল বেশ কিছু ফারসি-আরবি শব্দের অভিধান, যেন সেগুলো চিনে নিয়ে ভাষা থেকে বাদ দেওয়া যায়। গদ্যরচনা ও ভাষাচর্চা মোটের ওপর ওই ধারাতেই প্রবাহিত হচ্ছিল। মাঝখানে ১৯০০ সালের আগে-পরে মোটামুটি তিন দশকের চর্চা ছিল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তখন বাংলা ভাষা চর্চায় বাংলা ভাষার স্বাতন্ত্র্য ও স্বায়ত্তশাসনের চিন্তাটা বেশ প্রবল হয়ে ওঠে। শ্যামাচরণ গঙ্গোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী এবং বিশেষভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখালেখিতে এ ধারা কিছু সময়ের জন্য প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল।

এ বাংলাপ্রবণ লিবারেল ধারার চর্চা অভিধানে আকার পেয়েছিল জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের হাতে। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত বাঙ্গালা ভাষার অভিধানকেই সাধারণভাবে প্রথম ভালো বাংলা অভিধান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এ অভিধানের ভিত্তিতেই তাঁর বিখ্যাত থিসিসটি লিখেছিলেন, যা বই আকারে প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে। তারপর বাংলা অভিধান ও ভাষাচর্চা আবার; বলা যায় একধরনের ‘পশ্চাৎপদ’ ধারায় অগ্রসর হয়েছিল। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়েরই ১৯৩৯ সালের ব্যাকরণ বইটি তার মোক্ষম প্রমাণ। অভিধানের জগতেও একই রকমের ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয় রাজশেখর বসুর বিখ্যাত অভিধান চলন্তিকা; আর ততোধিক বিখ্যাত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ–এর খণ্ডগুলো প্রকাশিত হতে শুরু করে ১৯৩৩ সাল থেকে। দুটিই অসামান্য অভিধান। কিন্তু দুটি অভিধানই ঘোষিতভাবে সংস্কৃতায়নকে নিজ নিজ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। সব সংস্কৃত শব্দই সম্ভাবনাময় বাংলা শব্দ—এ লক্ষ্য দুই অভিধানের কোনোটিই গোপন করেনি।

বাংলা অভিধান ও ভাষাচর্চার উল্লিখিত বড় পটভূমিতে মূল্যায়ন করলেই কেবল বিশ শতকের ষাটের দশকে ঢাকায় একটি আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রণীত হওয়ার তাৎপর্য অনুধাবন করা যাবে।

বাংলা ভাষার প্রমিতায়নের ধারাক্রমের মধ্যে পূর্ব বাংলার হিস্যা বাদ পড়েছিল। এটা বিশেষভাবে কোনো ষড়যন্ত্র বা অপরায়ণের ফল নয়। বরং বাস্তব পরিস্থিতির টানেই ঘটনাটা ঘটেছিল। প্রমিত বাংলার মূল ছাঁচ হিসেবে গৃহীত হয়েছিল নদীয়া-শান্তিপুরের উপভাষা। নগরায়ণ, পুরোনো ভাষাচর্চার ইতিহাস এবং পরবর্তী ভাষাচর্চাকারীদের সম্মতির ভিত্তিতেই এ ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু কারণ যা–ই হোক, পূর্ব বাংলার বিপুল মানুষের বাগ্‌ভঙ্গি তাতে অনুপস্থিত থেকে গেছে। পূর্ব বাংলার ভাষা-পরিস্থিতিকে যদি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করতে চাই তাহলে বলতে হবে, সাহিত্যিক রূপ হিসেবে এখানে লোকসাহিত্যের প্রতাপ ছিল; আর পূর্ব বাংলা উপভাষাবৈচিত্র্যে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। গ্রিয়ারসনের শুমারিতে তার সাক্ষ্য আছে। অন্য ব্যাখ্যাকারীরাও ব্যতিক্রমহীনভাবে এ বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধির সাক্ষ্য দিয়েছেন। মোটেই বিস্ময়কর নয়, বিশ শতকের চল্লিশের দশক থেকে কলকাতায় বা ঢাকায় পূর্ব বাংলার পক্ষ থেকে যেসব সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক-ভাষিক দাবি উঠেছিল, তার সব কটিতেই লোকসাহিত্য ও উপভাষার দাবি উচ্চারিত হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লোকসাহিত্য নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে। উপভাষাচর্চা নিয়েও প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে নিঃসন্দেহে স্বাতন্ত্র্যের ধারণা কার্যকর ছিল এবং পাকিস্তান সরকারও তার রাষ্ট্রপ্রকল্পের অংশ হিসেবে এসব উদ্যোগ-আয়োজন করেছিল। কিন্তু পুরো ব্যাপারটিকে আমাদের পরবর্তী চর্চায় যেভাবে ‘স্বাতন্ত্র্যবাদী’ নামে পরিত্যাজ্য ভাবা হয়েছে, তা ইতিহাসসম্মতও নয়, ভাষাসম্মতও নয়।

আঞ্চলিক ভাষার অভিধান ছিল এটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশবিশেষ। সাহিত্যিক শব্দাবলি নিয়ে একটি ব্যবহারিক অভিধান প্রণয়নও এ পরিকল্পনার অংশ। সে পরিকল্পনা পরে বাস্তবায়িত হয়েছে। বড় আয়োজনের তৃতীয় ও শেষ খণ্ডটি হওয়ার কথা ছিল একটা কোষগ্রন্থ, যা পরে আর হয়ে ওঠেনি। তবে আঞ্চলিক ভাষার অভিধানটিই প্রথম থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, আর আজতক গৌরবময় প্রাপ্তি হিসেবে অক্ষুণ্ন আছে। এর সঙ্গে সম্পাদক-পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন সৈয়দ আলী আহসান, মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ আবদুল হাই, মুনীর চৌধুরী, কাজী দীন মুহম্মদের মতো মানুষেরা। নামের তালিকা থেকেই কাজের ব্যাপ্তি ও লিপ্ততার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। বোঝা যায়, এ জনগোষ্ঠী কাজটি জাতীয় জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবেই গ্রহণ করেছিল।

কিন্তু এত জন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতের যুক্ততা সত্ত্বেও অভিধানটির ক্ল্যাসিক খ্যাতির পেছনে বস্তুত মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভূমিকাই সর্বপ্রধান। তিনি প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তখন ড. শহীদুল্লাহর যে খ্যাতি ও প্রতিপত্তি, তাতে তাঁর নাম যুক্ত থাকাই একটা বড় ঘটনা। কিন্তু তিনি কেবল নামসর্বস্ব হয়ে ছিলেন না। সব তথ্য-উপাত্ত বলছে, তিনি আক্ষরিক অর্থেই প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিশেষত, শব্দের শ্রেণীকরণ, অর্থ ও ব্যুৎপত্তি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অভিধানটি তাঁর পাণ্ডিত্যের কাছে বিশেষভাবে ঋণী। কেন অভিধানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষভাবে শহীদুল্লাহর পাণ্ডিত্য প্রয়োজন হয়েছিল, তা বুঝতে পারলে বাংলা ভাষাচর্চার সীমা প্রসারিত করার ক্ষেত্রে এ অভিধানের তাৎপর্যও বিশেষভাবে বোঝা সম্ভব হবে।

শব্দের ব্যুৎপত্তি ও অর্থ নির্ণয় যেমন ভাষাচর্চার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, ঠিক তেমনি এর সঙ্গে ভাষা-রাজনীতির সম্পর্কও ওতপ্রোত। উদাহরণ হিসেবে বলা যাক, বাংলা ভাষার প্রায় সব পণ্ডিতের অর্থ ও ব্যুৎপত্তি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অপর কোনো কোনো পণ্ডিত অতিরিক্ত সংস্কৃতনির্ভরতার অভিযোগ বা অনুযোগ তুলেছেন। প্রমিত রীতির তুলনায় আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে কাজটা অনেক বেশি জটিল। এক দিকে চর্চাগত সিলসিলার অভাব, অন্যদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাহিত্যিক ব্যবহার অপ্রতুল হওয়ায় অপরিচয়ের সংকট। প্রমিত বাংলার চর্চায় সংস্কৃত রেফারেন্স যেভাবে ব্যবহার করা যায়, আঞ্চলিক বাংলার ক্ষেত্রে তা প্রায় অসম্ভব। বাংলা ভাষার সঙ্গে পুরোনো অনার্য ভাষাগুলোর সম্পর্ক অতি গভীর। পূর্ব দিকের বেশ কিছু ভাষার সঙ্গে নিছক স্থানিক নৈকট্যজনিত কারণেই বাংলার আত্মীয়তা প্রগাঢ়। পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক রূপগুলোর ক্ষেত্রে এসব প্রভাব স্বভাবতই বেশি। তদুপরি পূর্ব বাংলার দক্ষিণি আঞ্চলিক রীতিগুলোতে ফারসি-আরবির প্রভাবও ঐতিহাসিক কারণে অনেক বেশি। এ ভাষাবৈচিত্র্যকে আভিধানিক শৃঙ্খলায় বিন্যস্ত করা এবং মানানসই ব্যাখ্যার বশীভূত করার জন্য দরকার ছিল এমন একজন পণ্ডিত, যিনি একদিকে বহুভাষাবিদ, অন্যদিকে দৃষ্টিভঙ্গিতে উদার ও গ্রহিষ্ণু। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মধ্যে এ দুই বিরল গুণের সমন্বয় ঘটেছিল। এ জন্যই কেউ কেউ মনে করেন, শহীদুল্লাহর অভিভাবকত্ব ছাড়া মানসম্মত আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সম্ভব হতো না। আবার এ কথাও উল্লেখ থাকা জরুরি, বাংলা ভাষার সংস্কৃতনির্ভর মূলধারার চর্চার আওতার মধ্যেই তাঁর ওই সক্ষমতা বিকশিত হয়েছিল।

ভাষার প্রমিত রীতিমাত্রই কৃত্রিম ও জনবিচ্ছিন্ন। প্রধানত ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার কারণে বাংলা ভাষায় এ কৃত্রিমতা ও জনবিচ্ছিন্নতার পরিমাণ অনেক বেশি। এ দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য আঞ্চলিক ভাষাগুলোর সহায়তায় গণতান্ত্রিক ব্যাকরণ রচনার প্রস্তাব প্রচার করেছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু সে ধরনের কোনো আয়োজন কলকাতায় দেখা যায়নি। পূর্ব বাংলায়ও কোনো ব্যাপক আয়োজন হয়নি। তারপরও ঢাকায় যে একটি আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সংকলিত হয়েছে, তার পেছনে হয়তো প্রমিত বাংলার সঙ্গে এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক দূরত্বের বোধই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এখানকার আঞ্চলিক ভাষাবৈচিত্র্য তো আছেই। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ অভিধান আমাদের প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেয়, নিরূপিত সীমানা ভাষার প্রকৃত বিস্তারকে খুব সামান্যই ধারণ করতে পারে। মনে করিয়ে দেয়, প্রচলিত-প্রতিষ্ঠিত প্রমিত বাংলা নিয়ে পূর্ব বাংলার সৃষ্টিশীল সাহিত্যিকদের ব্যাপক অস্বস্তির ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে। হয়তো এ অভিধান বাংলাভাষীদের কিছু অসম্পূর্ণ কাজেরও ইশারা দেয়, বাংলা আঞ্চলিক রীতিগুলো নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক ভাষাতাত্ত্বিক শুমারি এখন পর্যন্ত অসম্পন্নই থেকে গেছে।