শ্রদ্ধা
এক আলোকস্নাত ব্যক্তিত্ব
২২ আগস্ট মারা গেছেন বাংলা সাহিত্যের নন্দিত গবেষক গোলাম মুরশিদ। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা
১৯৮৫ সালে আমাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে হয় হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্প বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনার প্রয়োজনে। পশ্চিম-৭৬সি ঠিকানার সে বাসায় হাসান আজিজুল হকের বেশ কয়েকটি বুকশেলফে আমার দৃষ্টি আটকে যায়। এর কারণ, বইগুলোর অনেকগুলো ধ্রুপদি ঘরানার এবং অনেকগুলোর রচয়িতা বিশ্ববিখ্যাত। মেলে দেখি, সেসব বইয়ের অন্তর্গত পৃষ্ঠায় স্বাক্ষরিত গোলাম মুরশিদের নাম। জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান, অল্প কিছুকাল আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ ইংল্যান্ডে বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে তাঁর সংগ্রহের বইগুলো রেখে গেছেন হাসান আজিজুল হকের জিম্মায়।
সেখানেই আমি ডেভিড কফের লেখা ব্রিটিশ ওরিয়েন্টালিজম অ্যান্ড বেঙ্গল রেনেসাঁ বইটি পাই। গোলাম মুরশিদ ছিলেন হাসান আজিজুল হকের একান্ত সুহৃদ। ক্যাম্পাসে নক্ষত্রখচিত সন্ধ্যাগুলো দারুণ বাঙ্ময় হয়ে উঠত তাঁদের সম্মিলিত জীবনের সংযোগে। মনে পড়ে, আমিও হাসান আজিজুল হকের সূত্রে তাঁদের অনেকের সাহচর্য পেয়েছিলাম। রমেন্দ্রনাথ ঘোষ, শহীদুল ইসলাম, সনৎকুমার সাহা, আবুবকর সিদ্দিক, খোন্দকার সিরাজুল হক, জুলফিকার মতিন, আলী আনোয়ার—এ রকম সব নাম আজও তরঙ্গ জাগায়, যাঁরা তাঁদের শিক্ষকতার বিষয়কে ছাড়িয়ে যান স্বকীয় শক্তিতে।
এর প্রায় সাত বছর পরে গোলাম মুরশিদকে পেলাম ইংল্যান্ডে। আমি কেমব্রিজে, উনি লন্ডনে। পরে তিনি সেখানেই থিতু হয়ে যান। শিক্ষকতা করেন মলবেরি গার্লস কলেজে। পরীক্ষক নিযুক্ত হন বাংলা বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার অধীনে।
গোলাম মুরশিদ তাঁর নানামাত্রিক কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তবে সেসব কাজের একটি কেন্দ্রীয় দিক রয়েছে। তাঁর মৌল অন্বেষার বিষয়বস্তু ছিল বাঙালি–জীবনের শক্তি ও সম্ভাবনা। সেটা করতে গিয়ে বাঙালি ও বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য-শিল্প, ব্যক্তিত্ব ইত্যাকার যাবতীয় বিষয়ের ওপর তাঁর দৃষ্টিক্ষেপ ঘটে এবং একটি সামগ্রিক জীবনচেতনার নিরিখে সময় ও সংঘটনের চারিত্র্যকে তিনি উপস্থাপন করেন। যদিও চাইলে তাঁর মন ও মননের পরিপুষ্টতার নেপথ্যে একটি ধারাক্রম নির্ণয় করা যায়।
১৯৭০ থেকে ধরলে বিগত অর্ধশতাব্দীর অধিককালের বাংলা ও বাঙালির সমগ্র জীবনপ্রণালির সঙ্গে ছিল তাঁর সান্দ্র সম্পর্ক। সে সম্পর্ক কেবল তাঁর সাত্ত্বিক বর্তমানতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি তাঁর মাত্রিকতাসম্পন্ন কর্মের মধ্য দিয়ে নিজেকেই নিজে অতিক্রম করেন এবং নিজেকে পৌঁছে দেন এক অনন্য অবস্থানে। গোলাম মুরশিদ বললেই আমাদের মনে জেগে ওঠে উনিশ শতকের জাগরণ; বাংলা সাহিত্য, বিশেষ করে বাংলা গদ্য, বাঙালি ব্যক্তিত্ব—যাঁদের কল্যাণে বাঙালির মনন-ভুবন সমৃদ্ধ হয়েছে যুগপরম্পরায় এবং সেই চার শক্তিমান দিকপাল: বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। তাঁদের তিনি যে কেবল পাদপ্রদীপের নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেন, তা-ই নয়; তাঁদের প্রকৃত অবদানকে যুক্তিসংগত নির্মোহতা দিয়ে, সঠিক ঐতিহাসিক অবস্থানকে শনাক্ত করে রেখে যান উত্তরাধিকাররূপে।
আবার বাঙালি নারীর ঐতিহাসিক অবদানকেও সমান্তরালে রাখেন গোলাম মুরশিদ। তাঁর রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া গ্রন্থখানা পাঠ করলে সেই সম্পূর্ণতাকামী দৃষ্টিটি আমরা অনুধাবন করতে পারি। একটা বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। উনিশ শতক বা ‘বাংলার রেনেসাঁ’ যে কেবল পাশ্চাত্যেরই অবদান, সেটা মনে করেননি তিনি। তাঁর কাজগুলোর মধ্যে সে সত্যের প্রকাশ অনিবার্যরূপে দেদীপ্যমান। তিনি দেখিয়েছেন, বাঙালি মননের শক্তি এবং বাঙালির জীবন ও সমাজের গতিই সেই জাগরণকে সম্ভব করে তুলেছিল।
নিজের বিলেতবাসকে গোলাম মুরশিদ সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগান বাঙালি ও বাংলার ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক অনুসন্ধান ও পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে-উদ্দেশ্যে। বাংলা গদ্য নিয়ে তিনি যে অসাধারণ কাজটি করেন, সেটি তাঁর বিলেতবাস ব্যতিরেকে সম্ভবপর হতো না। একইভাবে বলা যায়, বাঙালি মাইকেল মধুসূদন দত্তের শ্রেষ্ঠ জীবনীগ্রন্থটি তিনি রচনা করতে পেরেছিলেন তাঁর ইউরোপপ্রবাসের স্থিতিকে কাজে লাগিয়ে। তিনি তাঁর প্রবাসজীবনটাকে অবাধ আরাম আর সন্তুষ্টির প্রবাহে গড়িয়ে যেতে দিতে পারতেন, কিন্তু তাঁর জীবনটা হয়ে ওঠে যুগপৎ অভিবাসী এবং প্রচণ্ড পরিশ্রম ও অধ্যবসায়নির্ভর।
বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ তুঙ্গতার পর্বে ঘটে গোলাম মুরশিদের সৃজন-মননের স্ফুরণ। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সরকারের চণ্ডাচরণ এবং এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলায় সচেতনতার জাগরণের ইতিহাসটিকে মনে রাখলে গোলাম মুরশিদের সাহিত্যজীবনের অভিষেক কালের স্বাতন্ত্র্য ও গুরুত্ব সম্যক বুঝতে পারা যায়।
১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় গোলাম মুরশিদ সম্পাদিত এবং তাঁর সাহিত্যজীবনের প্রথম কাজ বিদ্যাসাগর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের ১৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত এ গ্রন্থের পরিকল্পনাকারী ছিলেন গোলাম মুরশিদ ও সনৎকুমার সাহা। দুজনই সহকর্মী দুই ভিন্ন বিভাগের, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটির প্রকাশকাল সে বছরের ডিসেম্বর মাস। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ ডিসেম্বর। নির্বাচনে পূর্ব বাংলার ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে জয়ী হয় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এবারে তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থটির লেখক তালিকাটি লক্ষ করা যাক—আহমদ শরীফ, সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, রমেন্দ্রনাথ ঘোষ, মুখলেসুর রহমান, সনৎকুমার সাহা, মযহারুল ইসলাম, বদরুদ্দীন উমর, গোলাম মুরশিদ, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, অজিতকুমার ঘোষ ও আলী আনোয়ার। বাঙালি সংস্কৃতির বৈরী প্রতিপক্ষ পশ্চিম পাকিস্তানি চরমভাবাপন্নতা, বাঙালি মননের উদার-অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাতিঘর বিদ্যাসাগরকেন্দ্রিকতা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার লড়ুয়ে হয়ে ওঠার বৃহত্তর পটভূমিটিকে মনে রাখলে উপর্যুক্ত ব্যক্তিবর্গের মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালীন নিজ নিজ কর্মতৎপরতার দিকগুলো বিশেষভাবে অনুভব করা যাবে। তাঁদের সবাই নিজেদের কর্মগুণে আমাদের সাহিত্য-শিক্ষা-সংস্কৃতির জগৎকে মহিমান্বিত করেন। আর গোলাম মুরশিদ হয়ে ওঠেন বিরল বহুমাত্রিক। এ গ্রন্থের ভূমিকা রচনাকারী গোলাম মুরশিদের বয়স তখন ৩২ বছর। ভূমিকার অন্তিম পঙ্ক্তিতে কৃত তাঁর মন্তব্য থেকে দুটি দিক আমরা চিহ্নিত করতে পারি। প্রথমত, ব্যক্তিত্বকে নতুন আলোকে দেখার প্রযত্ন এবং দ্বিতীয়ত, নবযুগের চিন্তা দিয়ে পুরাতনকে নবদৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ। গোলাম মুরশিদ আমৃত্যু সে কাজই করে গেছেন।
গোলাম মুরশিদের অন্তর্চেতনায় যে একজন সংবেদনশীল বাঙালির উপস্থিতি ছিল, যে চেতনাকে তিনি তাঁর পাশ্চাত্যবাসের দিনগুলোতেও রক্ষা করে গেছেন সযত্নে, তার গৌরবময় প্রকাশ ঘটে তাঁর সুচারু গবেষণাকর্মে। গবেষণার মতো দুরূহ বিষয়কেও যে সৃজনশীলতা ও নতুন আলোর রশ্মিপাতে চিত্তাকর্ষক করে তোলা যায়, তার প্রমাণ তিনি দেন তাঁর একের পর এক গবেষণাকর্মে। যদি প্রশ্ন করা হয়, ঠিক কোন গ্রন্থটি তাঁর ‘ম্যাগনাম ওপাস’, সে কথার উত্তর চটজলদি দেওয়াটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ধরা যাক, বাংলা গদ্যের বিকাশ ও বিবর্তন সম্পর্কিত তাঁর যুগান্তকারী গবেষণা কালান্তরে বাংলা গদ্য (১৯৯২) গ্রন্থটির কথা। এ গ্রন্থ প্রকাশের ফলে বাংলা গদ্যের প্রচলিত ইতিহাস পুনর্গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়। একটি পাশ্চাত্যবাহী প্রায় স্থির অনুসিদ্ধান্ত হলো, বাংলা গদ্যের বিকাশের মূল কৃতিত্ব ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের। বিশেষ করে সেখানকার বাঙালি গদ্যকার এবং বিদেশিদের সম্মিলিত গদ্যচর্চাই বাংলা গদ্যের কাঁচা রাস্তা থেকে প্রশস্ত পথের ভিত গড়ে দেয়। অর্থাৎ ১৮০০ সালটাই বাংলা গদ্যের আনুষ্ঠানিক সূচনাকাল। তার আগেও গদ্য ছিল। সেটা প্রায় সব ইতিহাসকারই উল্লেখ করেন। এমনকি আনিসুজ্জামানের পুরোনো বাংলা গদ্য কিংবা দেবেশ রায়ের অষ্টাদশ শতকের বাংলা গদ্য–সম্পর্কিত গবেষণায়ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ–পূর্ববর্তী গদ্যের পর্যালোচনা হয়। কিন্তু সেসব পর্যালোচনায় শেষ পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের গুরুত্বকেই বাড়িয়ে দেয়।
গোলাম মুরশিদের গবেষণাই নতুন সত্যের প্রতিষ্ঠাকে অপরিহার্যতা এনে দিল। তিনি দেখালেন, ১৮০০ নয়, তারও ২০ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৮০ সাল থেকেই বাংলা গদ্যের যাত্রা শুরু এবং সেটা হয়েছিল প্রায় নিভৃতে। ইংল্যান্ডের লাইব্রেরিতে ঘটনাচক্রে ও কৌতূহলবশত পাওয়া ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত অজস্র বাংলা বিজ্ঞাপনের ভাষা বিশ্লেষণ করে তিনি দেখালেন, ডানকান, পিটস্, ফরস্টারের চেয়েও ভালো গদ্য ছিল এসব বিজ্ঞাপনের। তা ছাড়া এ প্রশ্নও মনে জাগা স্বাভাবিক, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে নিয়োগকৃত বাংলা গদ্যকারদের ভাইভা-ভোসি কারা নেন! নিশ্চয়ই বিদেশিদের সে পারঙ্গমতা ছিল না। আর যাঁরা কলেজে পণ্ডিত নিযুক্ত হন, তাঁদের চেয়ে ভালো বাংলা জানা লোকের সন্ধানও পাওয়া যায় না। গোলাম মুরশিদ দেখান, ওই সব বিজ্ঞাপনের মধ্যেই হয়তোবা লুকিয়ে ছিলেন রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার, গোলোকনাথ শর্মা প্রমুখ পণ্ডিত, যাঁদের দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল কলেজের। কাজেই উইলিয়াম কেরির যত অবদানই থাকুক না কেন, তার চেয়েও বেশি অবদান ছিল বাংলাভাষী বাঙালিদেরই। সে অবদান তাঁরা রাখেন কলেজ প্রতিষ্ঠারও আগে।
১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় গোলাম মুরশিদের লেখা মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনন্যসাধারণ জীবনীগ্রন্থ আশার ছলনে ভুলি। বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে বিপুলা পৃথিবী পর্যন্ত মধুসূদনের জীবনের যে বিস্তৃতি, তার সব খুঁটিনাটি নতুন আলোকের প্রক্ষেপণে ধরা পড়ে এ গ্রন্থে। এমন সব তথ্যের সন্নিবেশ তিনি ঘটালেন, যেসব পূর্ববর্তী কোনো জীবনীকারের পক্ষেই জোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি; কিন্তু যেসব তথ্য ও প্রমাণ মধুমানসের গঠনপ্রক্রিয়ায় ছিল অনিবার্য। যে মধুসূদন আত্যন্তিক গর্বভরে নিজেকে দত্তর পরিবর্তে ‘ডাট’ বলতেন, সেই তিনিই বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে পুনরায় সুস্পষ্ট ‘দত্ত’তেই প্রত্যাবর্তন করেন। এর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের অধ্যবসায় চালান গোলাম মুরশিদ। বিশপস্ স্টর্টফোর্ডের ১৮-উড লেনের বাসিন্দা মধুসূদন যে বিলেতে পা দিয়েই কোনো বর্ণবাদী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, গবেষকের সে উত্থাপনাকে গুরুত্ব দিতেই হয়। নইলে বিলেতে গিয়ে তাঁর ‘ডাট’ থেকে ‘ডাট’-তরই হওয়ার কথা।
তা ছাড়া বাঙালি মধুসূদনের অসাধারণ চারিত্রিক দৃঢ়তা ও আত্মসম্মানবোধের দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন গোলাম মুরশিদ। যে মধুসূদন স্ত্রী হেনরিয়েটাকে নিয়ে ইংল্যান্ডে ও ফ্রান্সের ভার্সাইয়ে দিন কাটান প্রচণ্ড অর্থকষ্টের মধ্যে, সেই তিনিই স্ত্রীবিয়োগের পর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ফরাসি সরকারের অর্থসহায়তার জন্য আবেদন করেন না। যদিও করুণ মিনতি নিয়ে অর্থেরই প্রয়োজনে পত্র লেখেন বিদ্যাসাগরের কাছে। আশার ছলনে ভুলি গ্রন্থটি হয়ে ওঠে মধুমানসের শ্রেষ্ঠ আর্কাইভ।
গোলাম মুরশিদের প্রতিটি গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। তাঁর রচনাবলি অবলম্বনে হতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণাও। স্বল্প পরিসরে তাঁর বিপুল মনীষার প্রকাশ–সংবলিত হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি কিংবা বিদ্রোহী কবি নজরুলের জীবনীগ্রন্থ বিদ্রোহী রণক্লান্ত, বাংলা গান–বিষয়ক গ্রন্থ বাংলা গানের ইতিহাস—এসব গ্রন্থের উল্লেখটুকুই সম্ভব। এর বাইরেও বিচিত্র বিষয়ে লেখা তাঁর বইগুলো সামনের দিনে আমাদের জোগাবে নতুন ভাবনার খোরাক।
গোলাম মুরশিদের সামগ্রিক কর্ম সামনে রেখে এ কথা বলতে পারা যায়, যে লোকায়ত ও সৃজনশীল জীবনের বিশাল পরিপ্রেক্ষিতে নিহিত ছিল বিশ্বমানচিত্রে বাঙালির জাতিসত্তায় বৃত হওয়ার বিবিধ-বিচিত্র উপাদান, সেগুলোকে অনন্যসাধারণ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রামাণিক ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে রেখে গেছেন তিনি।