ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দিতে চান ট্রাম্প
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া পুরো নিয়ন্ত্রণ করার আগেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দিতে চান। তবে প্রভাবশালী রাজ্য গভর্নররা এ নিয়ে একমত নন। তাঁরা মনে করছেন, পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্ত এবং ছড়িয়ে পড়া সামাল না দেওয়া পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আত্মঘাতী।
মহামারি নিয়ে কাজ করা শীর্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, আমেরিকার করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি এখনো সহনীয় পর্যায়ে যায়নি। আগামী ১ মে থেকে লকডাউন নির্দেশনা উঠে যাবে। এরপরই আবার আক্রান্ত বাড়বে। সেই পরিস্থিতিকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। আমেরিকায় এখনো কোভিড-১৯–এর পরীক্ষাব্যবস্থা অপ্রতুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাস্তবতা মোকাবিলার কোনো না কোনো ব্যবস্থা ঠিক করে রাখতে হবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসম বলেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য–উপাত্ত পাওয়ার পরই রাজ্যের লকডাউন খুলে দেওয়া হবে।
নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফা রাজ্যগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিলে আদালতে তা মোকাবিলা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো রাজা নেই। রাজা চাইনি বলেই আমাদের একটি সংবিধান আছে এবং একজন প্রেসিডেন্টকে আমরা নির্বাচিত করে থাকি।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪ এপ্রিল এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘নিউইয়র্কের গভর্নর সবকিছুর জন্যই ভিক্ষা চাইতে শুরু করেছেন। আমি সব দিয়েছি। এখন তিনি স্বাধীনতা চাইছেন। তা হওয়ার নয়।’
এদিকে ইন্ডিয়ানা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ট্রেই হলিংসউর্থস ১৪ এপ্রিল এক রেডিও অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমেরিকার জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হলে মৃত্যুকেই বেছে নিতে হয়। আমেরিকার সরকারের অবস্থা সব সময় এমন।
এদিকে প্রভাবশালী তিনজন আইনপ্রণেতা কংগ্রেসে এক লাইনের একটি আইন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এ আইন প্রস্তাবে বলে হয়েছে, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেই ক্ষমতা সর্বময় নয়।
নিউজার্সির ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান টম মিলনস্কি, মিনোসেটা থেকে নির্বাচিত ডিন ফিলিপস এবং মিশিগান থেকে নির্বাচিত জাস্টিন অ্যামেশ যৌথভাবে এ আইন প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছেন। তাঁরা মনে করেন, সবার সম্মতিতে তাঁরা এ আইন পাস করতে পারবেন।
এর আগে ১৩ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অচিরেই রাজ্যগুলো খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেবেন। হোয়াইট হাউসে ১৪ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা যাচাই করে দেখার নির্দেশ দিয়েছি, তার আগপর্যন্ত তহবিল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি।’
এর আগেও গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচওকে চীনের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। সে সময় আমেরিকায় করোনাভাইরাসে হাজারো মানুষের প্রাণহানির জন্য সংস্থাটিকে দায়ী করেন ট্রাম্প।
আমেরিকা ডব্লিউএইচওর সবচেয়ে বড় একক তহবিলদাতা। গত বছর ৪০ কোটি ডলার দিয়েছে তারা, যা সংস্থাটির মোট বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশের কাছাকাছি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৬। মোট মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজার ৪৭ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৮ হাজার ৮২০ জন। এখন পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি রোগীর অবস্থা গুরুতর।