করোনায় সংকটে ট্রাভেল ব্যবসা
করোনাভাইরাস আতঙ্কে বদলে গেছে নিউইয়র্কের জনজীবন। আতঙ্কে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গ্রোসারিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অনির্দিষ্টকাল ঘরে কাটাতে হবে—এমন আশঙ্কায় পণ্যের মজুত করছেন অনেকে। তবে এখন বিলাসি বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় কারও আগ্রহ নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে অনেক ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এতে বিপর্যয় নেমে এসেছে অর্থনীতিতে। করোনা–আতঙ্কে মানুষ ঘোরাফেরাও বন্ধ করে দিয়েছে। যাত্রী সংকটে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে উড়োজাহাজ চলাচল কমে গেছে। একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। এতে ধাক্কা লেগেছে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ব্যবসায়। যাত্রী না থাকায় তাদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এই ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এর সঙ্গে জড়িতরা।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায় জড়িত কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন বলেন, পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে, তারা বুঝতে পারছেন না। তবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে এই ব্যবসায় চরম বিপর্যয় নেমে আসবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।
জননী ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও কামরুজ্জামান বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস আতঙ্ক শুরুর আগে প্রতিদিন ২০/২৫টি বুকিংয়ের কল আসত। এখন কল আসছে আগে বুকিং দেওয়া টিকিটের ক্যানসেল বা বাতিল করার জন্য। অনেকেই টিকিটের রিফান্ড চাচ্ছেন। এসব রিফান্ড ইস্যু করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।’
কামরুজ্জামান বলেন, হোলসেলার কোম্পানির কাছ থেকে তারা টিকিট নিয়ে এসেছেন। এখন টিকিটের রিফান্ড করতে গিয়ে তাদের ফি ও মাশুল গুনতে হচ্ছে। গ্রাহক চাচ্ছেন ফুল রিফান্ড। একে তো কোনো নতুন বুকিং নেই, তার ওপর এখন এসব ঝুট–ঝামেলা সামাল দিতে হচ্ছে ট্রাভেল এজেন্সিকে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই অচলাবস্থা আর কিছুদিন চললে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকেই চাকরি হারাবেন।
কর্ণফুলী ট্রাভেল ইনকের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সেলিম হারুন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত। তিনিও বললেন একই কথা। সেলিম বলেন, বছরের এই সময়ে ব্যবসা চাঙা থাকে। প্রচুর মানুষ নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। এবার করোনার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকেই ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করেছে। সামার ভ্যাকেশন, হজ মৌসুমসহ ভ্রমণ বাণিজ্যের তুঙ্গের এই সময়ে এমন মন্দাবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেন তিনি।
সেলিম বলেন, প্রতি বছর নিউইয়র্ক থেকে ১০–১৫ হাজার মানুষ পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে যান। এবারে তা হচ্ছে না। একের পর দেশের সঙ্গে বিমান সংযোগ বন্ধ হচ্ছে। ব্যবসায়ী জীবনে এমন সংকটের অভিজ্ঞতা কারও আছে বলে জানা নেই। আর কিছুদিন এমন চললে ব্যবসাপাতি বন্ধ হয়ে পড়বে।
রহমানিয়া ট্রাভেল সার্ভিসেসের প্রেসিডেন্ট এম কে রহমান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাসের বিপর্যয়ের প্রথম ধাক্কা পড়েছে ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রির ওপর। নিউইয়র্কের কয়েক হাজার ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। একদিকে ভ্রমণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে আতঙ্কিত মানুষের ভ্রমণে অনাগ্রহ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎই এখন চিন্তার বড় কারণ।
গ্লোবাল ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুদ্দিন ও রশিদ ট্রাভেলসের হারুন রশীদ একই আশঙ্কার কথা জানালেন। বললেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, কমিউনিটিতে আমাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ রাখার। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কার্যত কিছুই করার নেই।’
তবে আশাবাদী এম কে রহমান। তাঁর বিশ্বাস, পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক, এর অবসান ঘটবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, এই পরিস্থিতির জন্য সবাইকে মূল্য দিতে হবে। কিন্তু সেটি কোথায় গিয়ে থামবে, সেটিই দেখার বিষয়। তাঁর আশা, হজ মৌসুমের আগেই পরিস্থিতি ভালো হবে। আবার লোকজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।