তোমার জন্য একটি বিকেল
পাবলিক লাইব্রেরিতে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করছে নবনীতা। এক ঘণ্টা হতে চলল। একা একা এতক্ষণ বসে থাকা সত্যিই খুব বিরক্তিকর! কিন্তু নবনীতার বিরক্ত লাগছে না। শুভ্র অবশ্য ম্যাসেজ দিয়েছে। ওদের গাড়িটা রাস্তায় খারাপ হওয়ায় এক ঘণ্টা ডিলে হবে। এই এক ঘণ্টা রাস্তায় নবনীতার চেয়েও খারাপ সময় কাটছে শুভ্রর। নবনীতা সেটা অনুভব করল। একজন তার জন্য ২৬৪ মাইল দূর থেকে আসছে আজকের বিকেলটা একসঙ্গে কাটাবে বলে।
দু বছর আগে আজকের দিনে ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল। বইমেলায় নাসরীন জাহানের ‘উড়ুক্কু’ বইটার দিকে একসঙ্গে হাত বাড়িয়েছিল দুজন। হাতে হাত পড়েছিল অজান্তেই। সেটা লক্ষ্য করে আরও একটি উড়ুক্কু ধরিয়ে দেয় বিক্রেতা। তারপর মাঝেমধ্যে কথা, কখনো কখনো দেখা। মনোবীনার তারে টুংটাং সুর বাজতে বাজতে প্রেমের ফাঁদে বন্দী দুজন।
শুভ্র এলে বিকেল ৪টায়। বইমেলায় ঢোকার আগে কিছুক্ষণ নিরিবিলি কাটাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা। বিকেলের নরম আলোয় সবুজ ঘাসগুলো ঘন সবুজ দেখাচ্ছে। নবনীতা ভাবল, আচ্ছা এখানে কি কোকিলের ডাক শোনা যাবে? বসন্ত আসার আগেই গ্রামের গাছে গাছে কোকিলেরা কী মিষ্টি সুরে গায়! ইশ্ আশপাশে কোনো শিমুল গাছ নেই কেন? কৃষ্ণচূড়া আছে? পলাশ কই? একটু এগোতেই সারি সারি গাছ, কী ছায়া সুনিবিড়! অসাধারণ লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে লেকের ধারে এসে মুখোমুখি বসল দু’জন। শেষ বিকেলের আলো নবনীতার মুখে এসে পড়েছে। শুভ্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল নবনীতার দিকে। পৃথিবীর সবকিছু থেকে আলাদা হয়ে গেল ওরা। যেন অনন্তকাল এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবে।
শুভ্র অজান্তে একটি ঢিল ছুড়ে মারল লেকের পানিতে। লেকের শান্ত পানি তরঙ্গায়িত হলো চতুর্দিকে। নবনীতা সেটা খেয়াল করল। শুভ্রকে বলল, ‘লেকের পানিটা কত শান্ত ছিল শুভ্র, দেখ ঢিলটা পড়ার সাথে সাথে কেমন ঢেউয়ের পর ঢেউ সৃষ্টি হলো। আকাশের যে ছবিটা জলের মধ্যে পড়েছিল, সেটা কেমন মিলিয়ে গেল।’
শুভ্র বলল, ‘হুম্।’
‘শুভ্র, আমাদের জীবনটাও তেমনি ওই টলটলে পানির মতো। আমরা কেউ কখনো কারও দিকে ঢিল ছুড়ব না। জীবন ঘিরে যে ছবিটা আঁকব তা নষ্ট হতে দেব না।’